Ajker Patrika

এনসিডি কর্নার ৮ মাস ধরে স্থবির: সারা দেশে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের রোগীরা ঝুঁকিতে

  • নতুন রোগী নিবন্ধনে অচলাবস্থা।
  • আগামী মাসেই ওষুধ সংকটের আশঙ্কা।
  • অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ।
  • চালু রাখতে ‘পরিকল্পনার’ কথা বলছে সরকার।
মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৫, ০২: ৩৯
এনসিডি কর্নার ৮ মাস ধরে স্থবির: সারা দেশে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের রোগীরা ঝুঁকিতে

ডায়াবেটিস বা হৃদ্‌রোগের মতো দীর্ঘমেয়াদি ও অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি কমাতে সরকারের অন্যতম উদ্যোগ হচ্ছে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (এনসিডিসি) কর্মসূচি। এর অধীনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এনসিডি কর্নারের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ের জনসাধারণকে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস-বিষয়ক বিভিন্ন জরুরি সেবা দেওয়া হয়। তবে সরকারের ৫ বছর মেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনা (অপারেশনাল প্ল্যান বা ওপি) কার্যকর না থাকায় আট মাস ধরে এনসিডি কর্নারের কার্যক্রমে স্থবিরতা চলছে। আগামী মাসে ওষুধের বড় ধরনের সংকটের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।

দেশের স্বাস্থ্য খাতের সিংহভাগ অবকাঠামো, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, হাসপাতালের সেবা ব্যবস্থাপনা, সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং টিকা, পুষ্টি কার্যক্রমসহ ৩০টির বেশি কর্মসূচি পরিচালিত হয় পাঁচ বছর মেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনা বা ওপির মাধ্যমে। সর্বশেষ ওপি ‘চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি (এইচপিএনএসপি)’ শেষ হয় গত বছরের জুনে। ওই বছরের জুলাই মাসেই পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য ১ লাখ ৬ হাজার ১০০ কোটি টাকার পঞ্চম এইচপিএনএসপি শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা অনুমোদন করেনি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। তবে এখন ওপি থেকে বের হওয়ার কথাই ভাবছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। নতুন সেক্টর কর্মসূচি না নিয়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক কার্যক্রমগুলো রাজস্ব খাতে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এর সময় ধরা হয়েছে গত বছরের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। পরিকল্পনা কমিশনও সেক্টর কর্মসূচির বিকল্প ভাবার পরামর্শ দিয়েছে।

প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার স্তরে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মডেল বাস্তবায়ন করা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য। ২০১৮ সালের অক্টোবরে দেশের মধ্যে প্রথম সিলেটের চারটি উপজেলায় এনসিডি কর্নার চালু করা হয়। এতে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস শনাক্ত, চিকিৎসা ও রোগ নিয়ন্ত্রণ, ওষুধ বিতরণ ও রোগীদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়। রোগীদের নিবন্ধন করে নিয়মিত ফলোআপ করা হয়। দেশের ৪২৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ১০টি জেলা হাসপাতালে এই কর্নার রয়েছে। এনএইচএফবি, জাইকা, আইসিডিডিআর,বি, ব্র্যাক হেলথসহ আটটি প্রতিষ্ঠান কর্নারগুলো স্থাপনে সরকারকে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে। পাশাপাশি এগুলো স্থাপন এবং যন্ত্রপাতি ও ওষুধের খরচ চালানো হয় ওপির টাকায়। বর্তমানে ওপি না থাকায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত নিবন্ধিত ১০ লাখ রোগী এখন চাহিদামতো ওষুধ পাচ্ছে না। এপ্রিল মাসে সংকট ভয়াবহ পর্যায়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। নিবন্ধিত রোগীদের চিকিৎসা, ফলোআপ এবং ওষুধ পাওয়ার জন্য একটি ‘সবুজ বই’ দেওয়া হয়, যা ছাপার কাজ অর্থাভাবে বন্ধ রয়েছে। ইতিমধ্যেই রক্তের শর্করা পরিমাপের গ্লুকোমিটার স্ট্রিপের বেশ অভাব দেখা দিয়েছে।

অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সূত্রে জানা যায়, এনসিডি কর্নারে মূলত ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের জন্য মেটফরমিন ও গ্লিক্লাজাইড, উচ্চ রক্তচাপের জন্য অ্যামলোডিপিন, লোজারটেন পটাশিয়াম, হাইড্রোক্লোরোথায়াজাইড ইত্যাদি ওষুধ দেওয়া হয়। এ ছাড়া হৃদ্‌রোগীরা পান অ্যাসপিরিন ও রোজুভাসটেটিন। ওষুধগুলো সুলভ ও সহজলভ্য হলেও ওপি বন্ধ থাকায় তা নতুন করে কেনা হচ্ছে না। অথচ কর্নারে প্রতি মাসে নতুন করে ৬ থেকে ৭ হাজার রোগীর নিবন্ধিত হচ্ছে।

ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো স্বাস্থ্যসমস্যার রোগীদের নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ ও চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে থাকতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের তথ্যমতে, এ অসুখ দুটি হৃদ্‌রোগ, কিডনি, স্নায়বিক সমস্যা, ক্যানসারসহ বিভিন্ন অসংক্রামক ও দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। আবার ডায়াবেটিস রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ অন্যদের তুলনায় দ্বিগুণ। ডায়াবেটিসে অসুস্থতা ও মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো হৃদ্‌রোগ। এই ঝুঁকি উচ্চ রক্তচাপের কারণে আরও বেড়ে যায়।

বাংলাদেশ সরকারের সর্বশেষ স্বাস্থ্য বুলেটিন বলছে, দেশে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব ধীরে ধীরে কমলেও বাড়ছে অসংক্রামক ব্যাধি। রোগে মৃত্যুর ৭০ শতাংশই হচ্ছে অসংক্রামক রোগের কারণে। সব মিলিয়ে মোট মৃত্যুর ৩৪ শতাংশ হৃদ্‌রোগ এবং ৪ শতাংশ ডায়াবেটিসের কারণে হচ্ছে।

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে একটি এনসিডি কর্নার। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জামসেদ ফরিদী আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, এ কর্নারে এখন পর্যন্ত ওষুধের সংকট দেখা যায়নি। তবে তারা হিসাব করে ওষুধ খরচ করছেন।

অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ওপি ছাড়া কার্যক্রম কীভাবে চলবে সরকারকে তা ৩১ মার্চের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সে অনুযায়ী কর্মসূচির পরিকল্পনা করছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তাদের এনসিডি কর্নার চালু রাখার দায়িত্ব দিয়ে প্রতি বছর নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে। ওপি না থাকলেও কর্নারের কার্যক্রম যাতে চলমান থাকে তা ভাবা হচ্ছে। তবে এতে কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা আর থাকবে না।

উপকর্মসূচি ব্যবস্থাপক ডা. রাহাত ইকবাল চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ বছর থেকে জেলা হাসপাতাল এবং পরবর্তী সময়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতেও এনসিডি কর্নার চালুর কথা ছিল। এখন ওপি না থাকায় কর্নারগুলো আর হচ্ছে না। বই বিতরণ, যন্ত্রাংশ, ওষুধের সংকট রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যেন এনসিডির কাজ থেমে না যায়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অর্গানোগ্রামে এটি রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

এনসিডি কর্নারের গুরুত্ব তুলে ধরে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, ‘এনসিডি কর্নারের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষকে হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকে বাঁচানো গেছে। বিশেষ করে দরিদ্রদের। কর্নারে শুরুতে যাঁরা চিকিৎসার জন্য আসতেন, তাঁদের বেশির ভাগই প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ। ওপি না থাকার কারণে এনসিডির কাজ থেমে গেলে তা হবে চরম ব্যর্থতা।’

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘ওপি না থাকলে যেন কোনো কার্যক্রমই বন্ধ না হয় সে বিষয়ে আমরা পরিকল্পনা করছি।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ১৩
হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

গুলিবিদ্ধ হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক। গুলিতে তাঁর মস্তিষ্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তাঁর ফুসফুসেও আঘাত রয়েছে। তাঁকে কনজারভেটিভ ম্যানেজমেন্টে অর্থাৎ অস্ত্রোপচার ছাড়া নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড।

১৪ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে এভারকেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাদির জন্য যে মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে, তাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন হাসপাতালটির আইসিইউ ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. জাফর ইকবাল।

এভারকেয়ার হাসপাতালের পরিচালক (মেডিকেল সার্ভিসেস) ডা. আরিফ মাহমুদ আজ শনিবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমরা মেডিকেল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। এই মুহূর্তে মিডিয়া ব্রিফের চেয়ে তার চিকিৎসার দিকেই আমাদের মনোযোগ বেশি। তার ভাই তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। হাদির বর্তমান অবস্থা তার পরিবারকে আমরা ব্রিফ করেছি।’

মেডিকেল বোর্ডের পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত তুলে ধরে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়, রোগীর মস্তিষ্ক ‘মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে। তাকে কনজারভেটিভ ম্যানেজমেন্টে রাখা হয়েছে। ব্রেন প্রোটেকশন প্রটোকল (স্ট্রোক বা মস্তিষ্কের আঘাতের পর মস্তিষ্ককে আরও ক্ষতি থেকে বাঁচাতে বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতি ও যত্ন) অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা চালু থাকবে। শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলে আবার ব্রেনের সিটি স্ক্যান করা হতে পারে। হাদির ফুসফুসেও আঘাত রয়েছে। চেস্ট ড্রেইন টিউব (বুকের ভেতর থেকে বাতাস, রক্ত বা অন্যান্য তরল বের করতে ব্যবহৃত নমনীয় নল) দিয়ে অল্প পরিমাণ রক্ত নির্গত হওয়ায় তা চালু রাখা হয়েছে। ফুসফুসে সংক্রমণ ও এআরডিএস (তীব্র শ্বাসকষ্ট সিন্ড্রোম ফুসফুসের একটি গুরুতর অবস্থা) প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট অব্যাহত রাখা হবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা ফিরে এসেছে। এটি বজায় রাখতে পূর্বনির্ধারিত ফ্লুইড ব্যালেন্স (শরীরে প্রবেশ করা তরল এবং শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া তরলের মধ্যকার ভারসাম্য) যথাযথভাবে চালিয়ে যাওয়া হবে। পূর্বে শরীরে রক্ত জমাট বাঁধা ও রক্তক্ষরণের মধ্যে অসামঞ্জস্যতা (ডিআইসি) দেখা দিলেও তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এ অবস্থা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী রক্ত ও রক্তজাত উপাদান সঞ্চালন অব্যাহত থাকবে।

মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, হাদির মস্তিষ্কের নিচের অংশ বা গুরুমস্তিষ্কে আঘাতের (ব্রেন স্টেম ইনজুরি) কারণে রোগীর অবস্থা অত্যন্ত সংবেদনশীল; রক্তচাপ ও হৃৎস্পন্দনের ওঠানামা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে যে সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে, তা চলমান থাকবে। যেকোনো মুহূর্তে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে পারে। তাই রোগীকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসে রাখা হয়েছে। হৃৎস্পন্দন বিপজ্জনকভাবে কমে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে টেম্পোরারি পেসমেকার (হৃদপিণ্ডের স্পন্দনের ধীরগতি বা অনিয়মিত গতি ঠিক রাখতে অস্থায়ী চিকিৎসা যন্ত্র) স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট টিম সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।

মেডিকেল বোর্ডের বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদির শরীরে আপাতত নতুন কোনো অস্ত্রোপচার বা হস্তক্ষেপ করা হবে না, পর্যবেক্ষণভিত্তিক চিকিৎসাই চলবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার, রেডিওলজি, আইসিইউ, অ্যানেস্থেশিয়া, নিউরোসার্জারি ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসক ও সাপোর্টিভ স্টাফদের অসাধারণ ও মানবিক অবদানের জন্য মেডিকেল বোর্ড তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।

হাসপাতালে ভিড় না করতে; কোনো ধরনের অনুমানভিত্তিক বা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার না করে মেডিকেল বোর্ডের প্রতি আস্থা রাখতে এবং রোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও মর্যাদা রক্ষায় সবাইকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়েছে মেডিকেল বোর্ড।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে ওসমান হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে সন্ধ্যার পর তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন।

হাদির শারীরিক অবস্থার বিষয়ে শুক্রবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, বাম কানের ওপর দিয়ে ঢুকে ডান দিক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বুলেট হাদির মস্তিষ্কের কাণ্ড বা ব্রেন স্টেম পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানে ‘ম্যাসিভ ব্রেন ইনজুরি’ হিসেবে বিবেচিত।

তিনি জানান, আগামী ৭২ ঘণ্টা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং এ অবস্থায় কোনো ধরনের নতুন ইন্টারভেনশন করা হবে না। হাদি বর্তমানে ‘খুবই ক্রিটিক্যাল’ অবস্থায় রয়েছেন এবং তাকে আপাতত কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসে রাখা হয়েছে। তবে চিকিৎসকেরা এখনও আশার কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতে যেসব খাবার মন শান্ত রাখবে

মো. ইকবাল হোসেন
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৫২
শীতে যেসব খাবার মন শান্ত রাখবে

ডিসেম্বর মানেই হাড়কাঁপানো শীত। আর শীত মানেই খাবারের উৎসব। খেজুরের রস, পিঠা পায়েসের কমতি হয় না এ ঋতুতে। কনকনে ঠান্ডার বিপক্ষে যুদ্ধে আমাদের প্রধান হাতিয়ার খাবার। তবে সঠিক খাবার বাছাই করা না গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

মানুষের শরীরের গঠন অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। পৃথিবীর বেশির ভাগ প্রাণীর চেয়ে মানুষের খাদ্যাভ্যাস ভিন্ন। আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জন্য আলাদা পুষ্টির প্রয়োজন হয়। যেমন চোখের যত্নে ভিটামিন এ, ত্বকের যত্নে ভিটামিন বি, হাড়ের যত্নে ভিটামিন ডি ইত্যাদি। এসব চাহিদা পূরণ করে খাবার খেলে শরীরে সুখের হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায় এবং আমাদের সুখানুভূতি হয়, মন শান্ত থাকে।

ডোপামিন হরমোনের জন্য খাবার

মন ভালো রাখার অন্যতম হরমোন ডোপামিন। এটি নিঃসরণে খাবারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। আমাদের অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা যত বাড়বে, ডোপামিনের নিঃসরণও তত বাড়বে। তাই অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়াতে গুড ফ্যাট বা ভালো চর্বিসমৃদ্ধ, গাঁজানো এবং আঁশসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

সে ক্ষেত্রে চমৎকার খাবার হতে পারে শীতকালীন বিভিন্ন শাকসবজি। শিমের বিচি, মটরশুঁটি, বরবটিসহ অন্যান্য শাকসবজি ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়াতে চমৎকার কাজ করে। এ ছাড়া সামুদ্রিক মাছ, মাছের তেল, অলিভ অয়েল, টক দই ইত্যাদি খাবারও পর্যাপ্ত খেতে হবে। আঁশের উৎস হিসেবে লালশাক, পালংশাক, সবুজ শাক খেতে হবে। ভাজাপোড়া, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং ডুবোতেলে ভাজা খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।

সেরোটোনিন হরমোনের জন্য খাবার

আমাদের মন ভালো রাখার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন হচ্ছে সেরোটোনিন। ৯০ শতাংশ সেরোটোনিন উৎপন্ন হয় অন্ত্রের এন্টেরোক্রমাফিন কোষের এন্টেরিক নার্ভাস সিস্টেম থেকে। এ জন্য অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখা বেশি জরুরি। অন্ত্রের পেশি নড়াচড়ায় সেরোটোনিন সাহায্য করে। মাত্র ১ শতাংশ সেরোটোনিন মস্তিষ্কে নিঃসৃত হয়। এই ১ শতাংশ সেরোটোনিন মুড, ঘুম, স্মৃতি, ক্ষুধা, মন ভালো থাকা ইত্যাদির ওপর প্রভাব বিস্তার করে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, আয়রন এবং আঁশসমৃদ্ধ খাবার, ভিটামিন বি-১২ এবং ভিটামিন ডি সেরোটোনিনের নিঃসরণ বাড়ায়। খাবারের পাশাপাশি রাতে ভালো ঘুম সেরোটোনিনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। সে ক্ষেত্রে পরিমিত রেডমিট, ব্রকলি, বাঁধাকপি, শিম, গাজরসহ সব ধরনের শীতকালীন সবজি এবং শীতের মিষ্টি রোদ দারুণ কাজ করে।

এ ছাড়া অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি গুণসমৃদ্ধ খাবার, যেমন দারুচিনি, লবঙ্গ, হলুদ, ফ্ল্যাক্স সিড, চিয়া সিড খাদ্যতালিকায় যোগ করতে হবে।

এন্ডোরফিন হরমোনের জন্য খাবার

শীতে শরীরে ব্যথার প্রকোপ কিছুটা হলেও বেড়ে যায়। তবে এন্ডোরফিন নামক হরমোন প্রাকৃতিকভাবে ব্যথা উপশম করে। শারীরিক বা মানসিকভাবে আহত হলে এন্ডোরফিন সক্রিয় হয়ে আমাদের ব্যথা নিরাময় করে। অতিরিক্ত ওজন, বিষণ্নতা, উচ্চ রক্তচাপ এন্ডোরফিনের নিঃসরণ কমিয়ে দেয়। তবে কিছু খাবার আছে; যেগুলো খেলে এন্ডোরফিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়ে। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবারগুলো শরীরে ভিটামিন সি-এর চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এন্ডোরফিন নিঃসরণে সহযোগিতা করে। তাই শীতে মন ভালো রাখতে পর্যাপ্ত পাতিলেবু, মোসাম্বি, পেয়ারা, কলা, জাম্বুরা ও কমলা খেতে হবে।

এর পাশাপাশি টমেটো, কাঁচা মরিচ, ক্যাপসিকাম ও পালংশাক শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি-এর জোগান দিতে পারে; সঙ্গে মেটায় আঁশ, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতিও।

এ ছাড়া শীতকালীন প্রায় সব শাকসবজি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর এবং ক্যানসার প্রতিরোধী গুণসমৃদ্ধ। এগুলো যদি নিয়মিত খাওয়া যায়, তাহলে শরীরে বাড়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। শীতকালীন পালংশাক, গাজর, টমেটো, বিটরুট, ক্যাপসিকাম, ব্রকলি হয়ে উঠতে পারে সুস্থ থাকার অন্যতম হাতিয়ার। শীতকালীন সবজি ভালো কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দিতে এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে অত্যন্ত উপযোগী। তাই শীতকালে সুস্থতার অন্যতম চাবিকাঠি হতে পারে এসব সবজি।

আমাদের শরীরের অবহেলিত অঙ্গ ক্ষুদ্রান্ত্র। আমরা বিভিন্ন রকমের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাই। সেসবের প্রভাব পড়ে ক্ষুদ্রান্ত্রের ওপর। এসব অস্বাস্থ্যকর খাবারের ফলে আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমতে থাকে।

ফলে গ্যাসের সমস্যা, ফ্যাটি লিভার, কোলেস্টেরল, কোষ্ঠকাঠিন্য বা কিডনি সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। আবার বিভিন্ন ধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও কমে যায় এসব ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা। তাই সুস্থ থাকতে এবং মন ভালো রাখতে শীতকাল হতে পারে আপনার জীবনের সেরা সময়।

আরও যা মনে রাখবেন

খাবার খাওয়ার পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে—

  • গ্যাস্ট্রিকসহ অন্যান্য ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া যাবে না।
  • লাল আটা এবং আঁশসমৃদ্ধ চালের ভাত খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
  • ফার্মেন্টেড ফুড; যেমন টক দই বা পান্তা খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
  • প্রতিদিন এক বেলা ৩০-৪০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস বা ব্যায়াম করতে হবে।
  • সপ্তাহে অন্তত দুই দিন সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
  • অন্তত প্রতি ১৫ দিনে এক দিন কাছাকাছি দূরত্বে ঘুরতে যেতে হবে।
  • রাতে কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।

পুষ্টিবিদ ও জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুরুষ বন্ধ্যত্ব: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

ডা. অবন্তি ঘোষ
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চিকিৎসাবিজ্ঞানে সব বন্ধ্যত্বের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের জন্য পুরুষের সমস্যা দায়ী। এ ছাড়া পুরুষের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে গেলে, শুক্রাণুর গতি কম থাকলে কিংবা একেবারেই শুক্রাণু না পাওয়া গেলে এবং স্বামী-স্ত্রী নিয়মিত সহবাসের পরও যদি এক বছরের মধ্যে গর্ভধারণ না হয়, তাহলে সেটিকে বলা হয় পুরুষ বন্ধ্যত্ব।

জীবনযাপন ও অভ্যাসের কারণ

  • নিয়মিত ধূমপান
  • অ্যালকোহল ও অন্য নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ
  • দীর্ঘ সময় বসে থাকা অথবা কম নড়াচড়া করা
  • অতিরিক্ত ওজন
  • অনিয়মিত ঘুম
  • মানসিক চাপ

শরীরের ভেতরের হরমোন ও শারীরবৃত্তীয় কারণ

  • টেস্টোস্টেরন হরমোনের সমস্যা
  • থাইরয়েড হরমোনের অস্বাভাবিকতা
  • প্রোল্যাকটিন হরমোনের বৃদ্ধি
  • জিনগত সমস্যা

সংক্রমণ ও শারীরিক রোগ

  • ক্ল্যামাইডিয়া বা গনোরিয়া সংক্রমণ
  • অণ্ডকোষের টিউমার
  • ভেরিকোসিল
  • মামস-পরবর্তী অণ্ডকোষের প্রদাহ
  • শুক্রনালির ব্লকেজ

পরিবেশগত কারণ

  • যাঁদের দীর্ঘ সময় গরম পরিবেশে কাজ করতে হয়
  • যাঁরা নিয়মিত গরম পানিতে গোসল করেন

পুরুষ বন্ধ্যত্ব যেভাবে নির্ণয়

বীর্য পরীক্ষার পর শুক্রাণুর সংখ্যা, গতি, আকৃতি, পরিমাণ ইত্যাদি

দেখা হয়।

  • অন্তত তিন দিন সহবাস বন্ধ রেখে নমুনা দিতে হয়
  • প্রথম পরীক্ষার রিপোর্ট খারাপ হলে এক মাস পর আবার পরীক্ষা করা হয়
  • দ্বিতীয় পরীক্ষাও স্বাভাবিক না হলে অণ্ডকোষের আলট্রাসনোগ্রাম এবং হরমোন পরীক্ষা করা হয় এসব পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় সমস্যা কোথায়, কতটা এবং কোন ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন।

চিকিৎসা

চিকিৎসা নির্ভর করে সমস্যা কেমন এবং কোন স্তরে রয়েছে, তার ওপর। সাধারণভাবে চিকিৎসা কয়েকটি ধাপে করা হয়।

জীবনযাপনের পরিবর্তন

ওষুধ ও পুষ্টিগুণ

শুক্রাণুর সংখ্যা ও গতি উন্নত করতে কিছু পুষ্টি উপাদান এবং ভিটামিন দেওয়া হয়, যেমন:

ওষুধ শুরুর পর রোগীকে তিন মাস পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। কারণ, নতুন শুক্রাণু তৈরিতে প্রায় ৭৫ দিন লাগে।

স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণের চেষ্টা

ওষুধে উন্নতি হলে স্বামী-স্ত্রী স্বাভাবিক পদ্ধতিতে গর্ভধারণের চেষ্টা করতে পারেন। প্রয়োজনে স্ত্রীকে ডিম্বাণু উৎপাদন বাড়ানোর ওষুধ দেওয়া হয়।

বিশেষ চিকিৎসা

  • যদি শুক্রাণুর সংখ্যা বা গতি মাঝারি কম হয়, তাহলে আইইউআই (গর্ভাশয়ে শুক্রাণু প্রবেশ করানো) করা যায়।
  • সংখ্যা খুব কম হলে বা গতি খুব খারাপ হলে আইসিএসআই (শুক্রাণু সরাসরি ডিম্বাণুর মধ্যে প্রবেশ করানো) করা হয়।

অস্ত্রোপচার

ভেরিকোসিল কিংবা শুক্রনালির ব্লকেজ থাকলে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।

অ্যাজোস্পার্মিয়া হলে করণীয়

যাঁদের বীর্যে একেবারেই শুক্রাণু পাওয়া যায় না, যাকে অ্যাজোস্পার্মিয়া বলা হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে অণ্ডকোষ থেকে সরাসরি শুক্রাণু সংগ্রহ করে আইসিএসআই করাই সবচেয়ে কার্যকর।

গাইনি, প্রসূতি ও বন্ধ্যাত্ব রোগ বিশেষজ্ঞ, আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর-১০

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতকালীন নানা রোগ থেকে মুক্ত থাকবেন যেভাবে

ডা. কাকলী হালদার
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ২৪
শীতকালীন নানা রোগ থেকে মুক্ত থাকবেন যেভাবে

শীতকাল মানেই শুষ্ক, ঠান্ডা আবহাওয়া এবং তার সঙ্গে রোগজীবাণুর সহজ সংক্রমণ। এ সময় প্রধানত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত শ্বাসতন্ত্রের রোগগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে আমাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কিছুটা দুর্বল হয় এবং বদ্ধ জায়গায় মানুষ কাছাকাছি থাকায় রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

ভাইরাসজনিত সংক্রমণ

সাধারণ সর্দি-কাশি: রাইনোভাইরাস দিয়ে সংক্রমণ হলে হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া এবং হালকা গলাব্যথা পর্যন্ত হতে পারে।

ইনফ্লুয়েঞ্জা: ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ হলে সাধারণ সর্দির চেয়ে গুরুতর সমস্যা দেখা যায়। এর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে উচ্চ জ্বর, শরীর ও পেশিতে প্রচণ্ড ব্যথা, ক্লান্তি এবং গাঢ় কাশি।

রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস বা আরএসভি: এটি শিশুদের মধ্যে ব্রঙ্কিওলাইটিসের মতো গুরুতর শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ঘটায়।

ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ

এ ধরনের রোগ নিউমোনিয়া অথবা স্ট্রেপটোকক্কাসজনিত গলাব্যথার মতো কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের দিকে মোড় নিতে পারে, যা অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

রোগ প্রতিরোধের উপায়

সংক্রমণ এড়াতে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে কিছু সহজ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেমন—

ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা: নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে খাওয়ার আগে, টয়লেট ব্যবহারের পরে, হাঁচি-কাশি দেওয়ার পরে, অপরিচ্ছন্ন কিছু স্পর্শ করার পর হাত ধোয়া জরুরি। হাঁচি-কাশির সময় রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করা এবং ব্যবহৃত টিস্যু নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা উচিত।

পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং পানি পান করা: পর্যাপ্ত ভিটামিন ‘সি’সমৃদ্ধ ফল; যেমন লেবু, কমলা, আমলকী ইত্যাদি এবং শাকসবজি খেয়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে হবে। পানিশূন্যতা এড়াতে হালকা গরম পানি পান করুন।

উষ্ণতা বজায় রাখা: কান, মাথা ও গলা ঢেকে গরম জামাকাপড় পরুন। ঘর উষ্ণ রাখুন এবং সরাসরি ঠান্ডা বাতাস এড়িয়ে চলুন।

ভিড় এড়িয়ে চলা: অসুস্থতা চলাকালে যেকোনো ভিড় অথবা জনসমাগমপূর্ণ স্থানে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

টিকা নেওয়া: শিশু, বয়স্ক বা দীর্ঘমেয়াদি রোগীদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোনিয়ার টিকা নিতে পারেন।

সহকারী অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত