Ajker Patrika

ডেঙ্গুতে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু ও ভর্তির রেকর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ডেঙ্গুতে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু ও ভর্তির রেকর্ড

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে; যা এক দিনের মধ্যে এ বছরের সর্বোচ্চ সংখ্যা। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭৪০ জন। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও এক দিনে সর্বোচ্চ।

আজ রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ড্যাশবোর্ডে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে আজ রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ১২ জনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়। পরবর্তী সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো ই-মেইলে বলা হয়, আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর এর আগের ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত (২০ সেপ্টেম্বর) ৩টি মৃত্যু সংযুক্ত করে ১২টি দেখানো হয়েছে।

গত দুই দিনে যে ১২ জন মারা গেছেন, তাঁদের মধ্যে তিনজন বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে, দুজন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে, দুজন বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং ঢাকা মেডিকেল, মুগদা মেডিকেল, ডিএনসিসি কোভিড-১৯ হাসপাতাল, ময়মনসিংহ মেডিকেল ও চট্টগ্রামের এভার কেয়ার হাসপাতালে একজন করে মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে ছয়জন পুরুষ ও ছয়জন নারী। তাঁদের বয়স যথাক্রমে ২৪, ৬০, ২৯, ৬৩, ৫৭, ৩৪, ৬৫, ২৬, ২৫, ৪৫, ৩০ ও ৪৮ বছর।

এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে সেপ্টেম্বর মাসে। এর আগে জুলাই মাসে মারা যায় ৪১ জন। এ ছাড়া জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩, এপ্রিলে ৭, মে মাসে ৩, জুনে ১৯ জন, আগস্ট মাসে ৩৯ জন মারা গেছেন। মার্চ মাসে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি।

এদিকে এ বছর হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি ভর্তি হয়েছে জুলাই মাসে ১০ হাজার ৬৮৪ জন। এ ছাড়া জানুয়ারিতে ১ হাজার ১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬, এপ্রিলে ৭০১, মে মাসে ১ হাজার ৭৭৩, জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫১ এবং আগস্টে ১০ হাজার ৪৯৬ জন। ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১০ হাজার ৩৫৫ জন রোগী।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আজকের মৃত্যুর সংখ্যাটি মূলত দুই দিনের। বর্তমান আবহাওয়া এডিস মশার প্রজননের জন্য উপযোগী। এক মাস ধরে একটু বৃষ্টি, একটু রোদ—এমন আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে।’

মুশতাক হোসেন বলেন, ‘সরকার ডেঙ্গুকে গতানুগতিকভাবে মোকাবিলা করছে। ডেঙ্গু নিয়ে স্বতন্ত্র প্রশাসন প্রয়োজন। তার আগে ডেঙ্গুকে জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা হিসেবে গণ্য করতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ, রোগ প্রতিরোধ—এসব একক কোনো কর্তৃপক্ষ দিয়ে সম্ভব নয়। মশা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি রোগী খুঁজে বের করতে হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন, যা নেওয়া হচ্ছে না।’

ডেঙ্গু নিয়ে গবেষণার প্রসঙ্গে তিনি জানান, আইইডিসিআর, জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি), বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ গবেষণা করলেও সরকার সে অনুযায়ী কাজ করছে না।

কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, সামনের মাসগুলোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও তীব্র হতে পারে। দেশে ডেঙ্গুর চার ধরনের মধ্যে বর্তমানে ডেন-২ ও ডেন-৩ সংক্রমণ বেশি। তবে জিনগত গবেষণা না থাকায় মিউটেশন হচ্ছে কি না, তা জানা যাচ্ছে না। রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুর বৃদ্ধির পেছনে দায়ী পরিবেশগত পরিস্থিতি, জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ ও যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাব।

এদিকে সরকার ডেঙ্গুবিষয়ক পরিসংখ্যান মূলত নির্ধারিত কিছু সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের তথ্যের ওপর নির্ভর করে। এর বাইরে সারা দেশে বহু হাসপাতালে রোগী থাকলেও তাদের তথ্য নেওয়া হয় না। অনেকে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে থাকছে বা মারা যাচ্ছে, সেগুলো পর্যবেক্ষণের বাইরে থেকে যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত