Ajker Patrika

পিপিআরসির গবেষণা: ৫৩% পরিবারে দীর্ঘমেয়াদি রোগী

মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮: ২১
পিপিআরসির গবেষণা: ৫৩% পরিবারে দীর্ঘমেয়াদি রোগী

দেশের মানুষের দীর্ঘমেয়াদি ও অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার ক্রমেই বাড়ছে। প্রতিবছর যত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, তার দুই-তৃতীয়াংশের বেশি মারা যাচ্ছেন এসব রোগের কারণে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশের প্রায় ৫৩ শতাংশ পরিবারের অন্তত একজন সদস্য কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত। বড় রোগের এ বোঝা চিকিৎসার জন্য রোগীর নিজের ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে, যাকে বিশেষজ্ঞরা বলেন, আউট-অব-পকেট এক্সপেনডিচার বা ওওপি।

জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা তথা অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে এ বিষয়টি।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেশে দীর্ঘমেয়াদি রোগের পরিস্থিতির এ তথ্য উঠে এসেছে। ‘ইকোনমিক ডায়নামিকস অ্যান্ড মুড অ্যাট হাউসহোল্ড লেভেল ইন মিড ২০২৫’ শীর্ষক এ গবেষণাটি ৮ হাজার ৬৭টি পরিবারের ৩৩ হাজার ২০৭ জন সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে সম্পন্ন করা হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবারের অন্তত একজন দীর্ঘমেয়াদি রোগে (ক্রনিক ডিজিজ) আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। কোনো কোনো পরিবারে একাধিক সদস্য এ ধরনের রোগে ভুগছেন। সবচেয়ে বেশি লোক যে দীর্ঘমেয়াদি অসুখে আক্রান্ত, তা হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ। ৩৪ দশমিক ৬ শতাংশ পরিবারের সদস্য এ রোগে ভুগছেন। সংখ্যার হিসাবে এর পরে রয়েছে যথাক্রমে গ্যাস্ট্রিক আলসার (২৬ দশমিক ৫ শতাংশ), ডায়াবেটিস (২৩ শতাংশ), হৃদ্‌রোগ বা হৃদ্‌রোগের জটিলতা (১৫ দশমিক ৭ শতাংশ), চর্মরোগ বা অ্যালার্জি (১১ দশমিক ২ শতাংশ), অ্যাজমা (১০ দশমিক ৪ শতাংশ), হাড়ের সমস্যা অস্টিওপোরোসিস বা ক্যালসিয়াম ঘাটতির রোগ (৯ দশমিক ৭ শতাংশ) চোখের সমস্যা (৭ শতাংশ), বাত বা আর্থ্রাইটিস (৪ দশমিক ৫ শতাংশ) এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগ (৪ দশমিক ৮ শতাংশ)।

পিপিআরসি বলছে, দীর্ঘমেয়াদি রোগের ক্ষতি শুধু আক্রান্ত ব্যক্তির দুর্ভোগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর চিকিৎসার ব্যয় পরিবার ও রাষ্ট্রের ওপর প্রভাব ফেলে। দীর্ঘমেয়াদি রোগের বোঝা এবং তার আর্থিক প্রভাব ব্যাপকভাবে অনুভূত একটি সাধারণ সমস্যা। এটি ধনী কিংবা গরিব, শহর বা গ্রামবাসী-নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলতে পারে। তাই স্বাস্থ্যনীতি ও সেবা পরিকল্পনায় এর ওপর বিশেষ মনোযোগ দেওয়া জরুরি।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) সংজ্ঞামতে, যেসব স্বাস্থ্য সমস্যা এক বছর বা তার বেশি স্থায়ী থাকে এবং যার জন্য নিয়মিত চিকিৎসা প্রয়োজন হয়; কিংবা দৈনন্দিন কাজকর্ম সীমিত করতে হয়—তা-ই দীর্ঘমেয়াদি রোগ। ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, বাতের মতো সাধারণ হয়ে ওঠা রোগ ছাড়া ক্যানসার ও কিডনির অসুখও এর মধ্যে পড়ে। ধূমপান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যসূচি, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা ও মদপান—এ চারটি ঝুঁকিপূর্ণ অভ্যাসের কারণে অনেক দীর্ঘমেয়াদি রোগের সৃষ্টি হয়, যেগুলো কি না প্রতিরোধযোগ্য।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) অনুযায়ী, দীর্ঘমেয়াদি রোগের মধ্যে অসংক্রামক রোগ (এনসিডি) এবং সংক্রামক রোগ—দুই ধরনের অসুখই রয়েছে। এর মধ্যে এনসিডি রোগগুলো সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী এবং ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে মৃত্যুর প্রধান কারণ হৃদ্‌রোগ বা ক্যানসারের মতো এনসিডি।

পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ও গবেষণার মুখ্য গবেষক ড. হোসেন জিল্লুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশে কত শতাংশ পরিবারে দীর্ঘমেয়াদি অসুখের রোগী রয়েছেন, তা জানা ছিল না। পিপিআরসির গবেষণায় প্রথমবারের মতো ধারণা পাওয়া গেল যে, দেশের ৫০ শতাংশের বেশি পরিবারে এ রকম রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি রয়েছেন। নিয়মিত ওষুধসহ সার্বিক চিকিৎসার খরচ বেশির ভাগ পরিবারের ওপর বড় ধরনের অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছে। এই চাপ কমানোর জন্য কার্যকর কোনো সহায়তা নেই।

ড. জিল্লুর রহমান বলেন, সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ওষুধের খরচ কমাতে নতুন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির কথা বিবেচনা করা উচিত। এ ছাড়া রোগগুলো প্রতিরোধযোগ্য। তাই যথাযথ প্রতিরোধ কার্যক্রম চালাতে হবে। জনস্বাস্থ্যের এ বড় সমস্যাটিকে কমানোর জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে একত্রে কাজ করতে হবে। পরিবেশ দূষণ, অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার ও জীবনাচার—এসবও এ ধরনের রোগ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ বুলেটিন দেশের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা। গত বছরের জুনে প্রকাশিত ‘হেলথ বুলেটিন ২০২৩’-এ বলা হয়েছে, দেশ এখন সংক্রামক রোগ থেকে অসংক্রামক রোগের দিকে ধাবিত হচ্ছে। অসুস্থতা ও মৃত্যুর প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে অসংক্রামক রোগ। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, ক্যানসার এবং দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগ ব্যাপকভাবে দেখা যাচ্ছে। দেশে এখন বিভিন্ন রোগে মোট মৃত্যুর ৭০.২৬ শতাংশই ঘটছে অসংক্রামক রোগে। এর মধ্যে হৃদ্‌রোগে ৩৪ শতাংশ, ক্যানসারে ১০ শতাংশ, দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসতন্ত্রের রোগে ৭ শতাংশ, ডায়াবেটিসে ৪ শতাংশ এবং অন্যান্য অসংক্রামক রোগে ১১ শতাংশ মানুষের মৃত্যু ঘটে। অন্যদিকে সংক্রামক রোগে মৃত্যুর হার ২৩ শতাংশ।

দীর্ঘমেয়াদি রোগের অর্থনৈতিক প্রভাবের দুটি দিক তুলে ধরেছেন স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদেরা। তাঁরা বলেছেন, কেউ এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর অসুস্থতা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও আগের মতো অর্থনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন না। এতে করে তাঁদের আয় কমে যায়। পাশাপাশি চিকিৎসার খরচ বেড়ে যাওয়ায় পরিবারের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল বলেন, দীর্ঘমেয়াদি রোগ দেশের সামগ্রিক দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রভাব ফেলছে। অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকারি পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় দীর্ঘমেয়াদি রোগও বাড়ছে। যদি সরকারিভাবে সময়মতো যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া যায়, তাহলে এসব রোগ মারাত্মক হয়ে উঠবে না এবং চিকিৎসা ব্যয়ও কম থাকবে।

ডব্লিউএইচওর পরিভাষা অনুযায়ী, স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার জন্য ব্যক্তি বা পরিবার যে অর্থ নিজের পকেট থেকে খরচ করে, তাকে ‘আউট-অব-পকেট’ (ওওপি) ব্যয় বলা হয়। ওওপির হার বেশি হলে তা দারিদ্র্য ও আর্থিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে। কারণ এটি অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যাঘাত ঘটায়। ওওপি ৪০ শতাংশের বেশি হলে তাকে বিপর্যয়কর স্বাস্থ্য ব্যয় বলা হয়। উচ্চ ওওপি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপরও চাপ সৃষ্টি করে।

সরকারের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট জানিয়েছে, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় (ওওপি) ৬৭ শতাংশ। তবে বিশ্বব্যাংকের হিসাবে এটি ৭৪ শতাংশ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) তথ্য অনুযায়ী, চিকিৎসার উচ্চ ব্যয়ের কারণে দেশের ১৮ শতাংশ পরিবার বিপর্যয়কর অবস্থার মধ্যে পড়েছে। ২০২২ সালে এ কারণে দেশে ৬১ লাখের বেশি মানুষ দরিদ্র হয়েছেন।

পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট (ইলেক্ট) অধ্যাপক ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রায় পুরোপুরি চিকিৎসাভিত্তিক (কিউরেটিভ), ততটা প্রতিরোধমূলক নয়। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করতে হলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার আইন করা জরুরি, যাতে সরকার এ সেবা দিতে বাধ্য হয়।

আবু জামিল ফয়সাল আরও বলেন, দীর্ঘমেয়াদি ও অসংক্রামক রোগের নিয়ন্ত্রণ এখনো নজরের বাইরে। শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যথেষ্ট নয়, এখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্যশিক্ষা, পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস, জীবনাচার এবং বিপজ্জনক রাসায়নিক ও কীটনাশকের অতি ব্যবহার—এসব বিষয় জড়িত। এ জন্য সমন্বিত কার্যক্রম ছাড়া কার্যকর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আইসিডিডিআরবির গবেষণা

নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে প্রাণঘাতী ছত্রাক

  • হাসপাতালে সংক্রমণ বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্যগত উদ্বেগ।
  • ৩৭৪টির মধ্যে ৩২ নবজাতকের শরীরে ক্যান্ডিডা অরিস ছত্রাক।
  • সিডিসি এই ছত্রাককে বড় হুমকি হিসেবে ঘোষণা করেছে।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে প্রাণঘাতী ছত্রাক

দেশের হাসপাতালে নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) ক্যান্ডিডা অরিস নামের একধরনের সম্ভাব্য প্রাণঘাতী ছত্রাক (ফাঙ্গাস) ছড়িয়ে পড়ছে বলে এক গবেষণায় জানা গেছে। ‘অরিস’ জাতের ছত্রাকটি একাধিক অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠায় একে ‘অতি জরুরি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স হুমকি’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এটি প্রতিরোধে বাড়তি সতর্কতা এবং পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা।

হাসপাতাল সূত্রে ঘটা সংক্রমণ (এইচএআই) এখন বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ। এসব সংক্রমণের জন্য দায়ী রোগজীবাণু বা পরজীবীর একটি হচ্ছে ক্যান্ডিডা অরিস নামের ছত্রাক। ‘ক্যান্ডিডা’ গণের আওতায় অরিসসহ বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক রয়েছে। সাম্প্রতিককালে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ছত্রাক সংক্রমণের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে ক্যান্ডিডা অরিস।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যান্ডিডা অরিস দেশের নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে। আইসিডিডিআরবি এবং সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) যৌথ উদ্যোগে চালানো হয়েছে গবেষণাটি। এতে অর্থায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ জনস্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)। একাধিক অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ প্রতিরোধী হওয়ায় অরিস ছত্রাককে সিডিসিই ২০১৯ সালে ‘অতি জরুরি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স হুমকি’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল।

২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকার একটি সরকারি ও একটি বেসরকারি হাসপাতালের এনআইসিইউতে ভর্তি থাকা ৩৭৪টি নবজাতকের ওপর ওপরের গবেষণাটি পরিচালিত হয়। দেখা যায়, ৩২টি (৯ শতাংশ) নবজাতক ত্বকে ক্যান্ডিডা অরিস বহন করছিল। একজনের রক্তেও সংক্রমণ প্রবেশ করে। এদের মধ্যে ১৪টি নবজাতক হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময়ই ছত্রাকে আক্রান্ত ছিল। আর ১৮টি নবজাতক সংক্রমিত হয় ভর্তি হওয়ার পর। আক্রান্ত ৩২টি নবজাতকের মধ্যে রক্তে সংক্রমিতসহ ৭টি নবজাতকের মৃত্যু ঘটে। গবেষকেরা বলছেন, এই ফল ইঙ্গিত দেয়, এনআইসিইউর ভেতরেই প্রায়শ ছত্রাকটির সংক্রমণ ঘটছে।

আইসিডিডিআরবির আরেকটি সাম্প্রতিক গবেষণায়ও দেখা গেছে, এর আওতায় পর্যবেক্ষণ করা রোগীদের কেউই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে স্থানীয়ভাবে ক্যান্ডিডা অরিসে আক্রান্ত হয়নি।

নতুন গবেষণায় সংগৃহীত ছত্রাকের নমুনার ৮২ শতাংশই ফ্লুকোনাজোল নামের একটি ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ছিল। অর্থাৎ নির্দিষ্ট এই ছত্রাকের চিকিৎসায় ওষুধটির কার্যকারিতা বিভিন্ন মাত্রায় কমে যেতে পারে। অথচ ক্যান্ডিডা অরিসের বিরুদ্ধে ফ্লুকোনাজোল প্রথম সারির ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এমআরএসের মতো ‘সুপারবাগ’ (অতি প্রাণঘাতী জীবাণু) কোনো ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠার অর্থ দীর্ঘ মেয়াদে ওষুধটি কার্যত পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়া। আর ক্যান্ডিডা অরিসকে আইসিডিডিআরবির বিশেষজ্ঞ ফাহমিদা চৌধুরী ‘সুপারবাগ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, সংক্রমিত নবজাতকদের ৮১ শতাংশেরই জন্ম হয়েছে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে। গবেষকদের মতে, সিজারিয়ান পদ্ধতিতে ডেলিভারির পর নবজাতক তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ সময় হাসপাতালে অবস্থান করায় এই ছত্রাকের সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

আইসিডিডিআরবি থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্যান্ডিডা অরিস এমন এক ধরনের ছত্রাক, যা মানুষের ত্বকে কোনো লক্ষণ ছাড়াই অবস্থান করতে এবং দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে পারে। প্রায় ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে এই অবস্থান সংক্রমণে রূপ নেয়; বিশেষ করে যখন এটি রক্তের মতো জীবাণুমুক্ত অংশে প্রবেশ করে এবং রোগটিকে অত্যন্ত প্রাণঘাতী করে তোলে।

গবেষণায় দেখা গেছে, অনুন্নত ও স্বল্পোন্নত দেশে ক্যান্ডিডা অরিসজনিত রোগে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মৃত্যুহার প্রায় ৭০ শতাংশ। দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি, গুরুতর অসুস্থ রোগী এবং অপরিণত নবজাতকেরা এই সংক্রমণের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।

আইসিডিডিআরবির সহযোগী বিজ্ঞানী ও সংক্রামক রোগ বিভাগের এএমআর গবেষণা শাখার প্রধান ফাহমিদা চৌধুরী বলেন, ‘এই গবেষণা নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ঝুঁকিপূর্ণ বাচ্চাদের মধ্যে সুপারবাগ সংক্রমণের গুরুতর প্রমাণ দিয়েছে। প্রশাসনিক ও নীতিগতভাবে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার গবেষণাটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রথম ধাপ।’

সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা সুপারিশ হিসেবে হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ও ব্যবহার্য সামগ্রী ক্লোরিনভিত্তিক জীবাণুনাশক দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করা এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের হাত ধোয়ার অভ্যাস উন্নত করার তাগিদ দিয়েছেন। একই সঙ্গে এনআইসিইউতে ক্যান্ডিডা অরিস সংক্রমণের ওপর ধারাবাহিকভাবে নজরদারি চালিয়ে যাওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন তাঁরা। এতে আক্রান্ত নবজাতকদের দ্রুত শনাক্ত এবং আলাদা করে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রশিক্ষণ আয়োজন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
‘টোয়েন্টি আওয়ার ট্রেইনিং ফর কেয়ারার’ শেষে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত
‘টোয়েন্টি আওয়ার ট্রেইনিং ফর কেয়ারার’ শেষে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত

‘টোয়েন্টি আওয়ার ট্রেইনিং ফর কেয়ারার’ সম্পন্ন করলেন ১৫ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি। তাঁদের সঙ্গে অংশগ্রহণকারী দলে আরও ছিলেন ৩ জন সহকারী, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষকেরা এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সন্তানদের মায়েরা।

৭ নভেম্বর মিরপুরের ব্যাপ্টিস্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেডের (বিএমআইএস) প্রশিক্ষণকক্ষে শুরু হওয়া এই প্রশিক্ষণ শেষ হয় ৯ নভেম্বর। এর আয়োজন করে প্যা‌লি‌য়ে‌টিভ কেয়ার সোসাইটি অব বাংলা‌দেশ (পিসিএসবি) এর অঙ্গসংগঠন ইনস্টিটিউট অব প্যালিয়েটিভ কেয়ার-বাংলাদেশ (আইপিসিবি)। পিসিএসবি-এর সদস্যসচিব অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়ার পরিকল্পনায় আয়োজিত এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে রিয়েল ভিউর প্রধান ব্যক্তিত্ব ফাহিমা খাতুন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করে রিয়েল ভিউ নামের এই সংগঠনটি।

প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণকারীদের সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইপিসিবির সদস্যসচিব অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া, পিসিএসবির কোষাধ্যক্ষ সালাহউদ্দীন আহমাদ, ডা. নূরজাহান বেগম, ডা. তাসনিম জেরিন, ডা. সীমা রানী সরকার, ডা. নাদিয়া ফারহীন, লেখক আসিফ নবী, খালিদ আরাফাত অব্যয়, ফারজানা মালা, শাহাদৎ রুমন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ডা. সানজিদা শাহরিয়া বলেন, ‘এই প্রশিক্ষণ মানবিক স্বাস্থ্যসেবায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্যালিয়েটিভ কেয়ারে যুক্ত করা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’

‘টোয়েন্টি আওয়ার ট্রেইনিং ফর কেয়ারার’ শিরোনামের প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষদের কয়কেজন। ছবি: সংগৃহীত
‘টোয়েন্টি আওয়ার ট্রেইনিং ফর কেয়ারার’ শিরোনামের প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষদের কয়কেজন। ছবি: সংগৃহীত

ব্যাপ্টিস্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেড স্কুলের অধ্যক্ষ গ্লোরিয়া চন্দ্রানী বাড়ৈ বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমন মানবিক প্রশিক্ষণের অংশ হতে পেরে গৌরব অনুভব করছি। এই উদ্যোগ শুধু অংশগ্রহণকারীদের নয়, আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও অনুপ্রেরণা, সহমর্মিতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭৭ সালে রেভা. ভেরনিকা এন ক্যাম্পবেল দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য এই ব্যাপ্টিস্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেড স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন, যা বাংলাদেশের প্রথম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আবাসিক সুবিধাও দেয়। এখান থেকে প্রথম ব্রেইল বইয়ের প্রচলন শুরু হয় বাংলাদেশে।’

ইনস্টিটিউট অব প্যালিয়েটিভ কেয়ার-বাংলাদেশের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সত্যিই আজ আমি অভিভূত। বিশ্বে যেখানে কেউ এই বিশেষ সীমাবদ্ধ মানুষদের নিয়ে ভাবেনি, সেখানে আমরা এই বিশেষভাবে সীমাবদ্ধ মানুষদের নিয়ে একটি বিশেষায়িত সেবার প্রশিক্ষণ সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি। এই সাফল্যের মূল কৃতিত্ব অবশ্যই প্রশিক্ষণার্থীদের। তাঁদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। আশা করি, বাংলাদেশের এই ধারণা ভবিষ্যতে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বিস্তার লাভ করবে।’

অনুষ্ঠান শেষে ব্যাপ্টিস্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেড স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন অতিথি ও অংশগ্রহণকারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডেঙ্গুতে শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১১৯৫

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ১ হাজার ১৯৫ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

আজ রোববার (৯ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১১৫, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৩২, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৭৮, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২২০, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১১৫, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১১৪, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৯, রাজশাহী বিভাগে ১১৩ (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ও সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) নয়জন রয়েছে।

২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ১০৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৭৪ হাজার ৮৯৩ জন রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। চলতি বছরের ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭৮ হাজার ৫৪৩ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মারা যাওয়াদের মধ্যে ৫ বছরের ছেলে শিশু রয়েছে। এ ছাড়া তিনজন নারী ও বাকি দুজন পুরুষ। তাদের বয়স যথাক্রমে ৬৫, ৩২, ৭০, ৪৮ ও ৪০ বছর।

চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৩১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে জানুয়ারিতে ১০, ফেব্রুয়ারিতে ৩, এপ্রিলে ৭, মে মাসে ৩, জুনে ১৯, জুলাইয়ে ৪১, আগস্টে ৩৯, সেপ্টেম্বরে ৭৬ ও অক্টোবরে ৮০ জন মারা গেছে। মার্চে কারও মৃত্যু হয়নি। আর নভেম্বরে এখন পর্যন্ত ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যেসব তথ্যে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না

মো. ইকবাল হোসেন
যেসব তথ্যে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না

ডায়াবেটিস রোগের প্রথম ও প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে ডায়েট বা খাবার ব্যবস্থাপনা। এটি একটি লাইফস্টাইল ডিজিজ। তাই এই রোগ হলে লাইফস্টাইলে নানা পরিবর্তন আনতে হয় সুস্থ থাকতে। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ ব্যবস্থাপনা এবং পুষ্টিবিদের পরামর্শে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে পারলে সুস্থ থাকা যায় ডায়াবেটিস থেকে।

ডায়াবেটিস ভালো হয় না—বিষয়টি রোগীদের বেশি চিন্তিত করে তোলে। এই দুশ্চিন্তা থেকে রোগীরা অনেক সময় সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারেন না। সেই সঙ্গে রোগীরা খাওয়া নিয়েও অনেক ভুল ধারণা পোষণ করেন।

কিটো ডায়েটে ডায়াবেটিস ভালো হয়

কথাটি বহুল প্রচলিত। বেশির ভাগ ডায়াবেটিস রোগী কিটো ডায়েটে অভ্যস্ত হতে চেষ্টা করেন; কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময় পর আর পেরে ওঠেন না। কিটো ডায়েটে রক্তের সুগার বেশ ভালো নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু একটা লম্বা সময় কিটো ডায়েট করলে আমাদের শরীরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি সৃষ্টি হয়। ফলে শরীরের অন্য অঙ্গগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। কিটো ডায়েটে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় লিভার ও কিডনি। তাই এসব বিষয়ে প্রত্যেক ডায়াবেটিস রোগীর সচেতন থাকতে হবে।

কিটো ডায়েটে ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তার মানে এই নয় যে আপনার ডায়াবেটিস সেরে যাবে। আপনি যখন কিটো ডায়েট ছেড়ে আবার স্বাভাবিক ডায়েটে আসবেন, তখন আপনার রক্তের সুগার আবারও বেড়ে যাবে।

মিষ্টিজাতীয় খাবার খেলে ডায়াবেটিস হয়

এই তথ্যও একেবারে সঠিক নয়। আপনার ডায়াবেটিস যদি হয়, তাহলে মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। ডায়াবেটিস না থাকলে খাওয়া যেতে পারে মিষ্টিজাতীয় খাবার পরিমিতভাবে। তবে অতিরিক্ত যদি খান, তাহলে অন্যান্য শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। একজন সুস্থ ব্যক্তি মিষ্টিজাতীয় তৈরি খাবার প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৩০ গ্রাম খেতে পারেন।

ডাল ও বীজজাতীয় খাবার নয়

অনেকে বলে থাকেন, ডায়াবেটিস রোগীদের ডাল ও বিভিন্ন বীজজাতীয় খাবার নিষেধ। এটিও ভুল তথ্য। ডাল এবং বীজজাতীয় খাবার অবশ্যই পরিমিত খাওয়া যাবে। শরীরের চাহিদার অতিরিক্ত যেকোনো খাবার ক্ষতিকর। তবে ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনির সমস্যা থাকলে ডাল ও বীজজাতীয় খাবার বন্ধ থাকবে।

মাঝেমধ্যে মিষ্টি খেতে হয়

বহুল প্রচলিত বাণী এটি। মাঝেমধ্যে মিষ্টি না খেলে ডায়াবেটিস নীল হয়ে যায়—এটা ভুল তথ্য। এতে ডায়াবেটিস বেড়ে রোগীর ক্ষতি হতে পারে। তবে রক্তের সুগার (হাইপোগ্লাইসিমিয়া) স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে কিছুটা মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে হয়। তবে রুটিনমাফিক খাবার খেলে এবং চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেলে রক্তের সুগার কমে যাওয়ার শঙ্কা খুব কম।

হাইপোগ্লাইসিমিয়া হলে, তখন ৩ চা-চামচ চিনি অথবা মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া যাবে।

মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে শিশু বুকের দুধ খেতে পারবে না

মায়ের ডায়াবেটিস থাকলেও তিনি শিশুকে নিশ্চিন্তে বুকের দুধ পান করাতে পারেন। বরং বুকের দুধ পান না করালেই শিশু অপুষ্টিতে ভুগবে। তার সঠিক বৃদ্ধি হবে না। জন্মের প্রথম ৬ মাস শিশুর সব পুষ্টির চাহিদা শুধু মায়ের বুকের দুধ থেকে পূরণ হয়। অন্য কোনো উপায়ে তা পূরণ করা সম্ভব নয়।

ভুল ধারণা

ডায়াবেটিস সেরে যায়

ডায়াবেটিস রোগ কখনো সেরে যায় না। এই রোগীদের এ ধরনের দুর্বলতার সুযোগ অনেক অসাধু ব্যক্তি নিয়ে থাকে। ‘ডায়াবেটিস ভালো হয়’ এমন চটকদার বিজ্ঞাপন দেখা যায় বিভিন্ন জায়গায়। এতে রোগীরা আকৃষ্ট হন। সেসব জায়গায় চিকিৎসা নেওয়ার পর ডায়াবেটিস তো ভালো হয়ই না; উল্টো রোগীদের ডায়াবেটিসের অন্যান্য জটিলতা আও বেড়ে যায়।

অনেকে বলেন, হোমিওপ্যাথি বা কবিরাজি চিকিৎসায় ডায়াবেটিস ভালো হয়। এগুলোও ভুল তথ্য। ডায়াবেটিস ভালো করার কোনো ফর্মুলা যদি আবিষ্কৃত হয়, তাহলে সে খবর সবার আগে দেশের এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট ও ডায়াবেটিস হাসপাতালগুলো জানবে। তাই এমন চটকদার বিজ্ঞাপনের প্রলোভনে নিজের স্বাস্থ্য আর কষ্টার্জিত অর্থ নষ্ট করবেন না। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আপনার চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত