Ajker Patrika

মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবার সংক্রমণ বিরল কিন্তু প্রাণঘাতী: জেনে নিন এর লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
নেগলেরিয়া ফাওলেরি নামের একটি এককোষী অ্যামিবা ‘মস্তিষ্কখেকো’ নামে পরিচিত। ছবি: সংগৃহীত
নেগলেরিয়া ফাওলেরি নামের একটি এককোষী অ্যামিবা ‘মস্তিষ্কখেকো’ নামে পরিচিত। ছবি: সংগৃহীত

‘মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবা’ নামটি যেমন ভয়ংকর, তেমনি চরিত্রে এটি বিপজ্জনক। নেগলেরিয়া ফাওলেরি নামের একটি এককোষী অ্যামিবা ‘মস্তিষ্কখেকো’ নামে পরিচিত। এই অ্যামিবা সাধারণত উষ্ণ মিঠাপানির উৎস; যেমন হ্রদ, নদী, উষ্ণ প্রস্রবণ এবং দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করা সুইমিংপুলে বসবাস করে। এটি মানুষের মস্তিষ্ক আক্রমণ করে প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনজোএনসেফালাইটিস নামের একটি রোগ তৈরি করে।

কীভাবে এটি সংক্রমিত হয়

নেগলেরিয়া ফাওলেরি মানুষের বা অন্য কোনো জীবের দেহের বাইরে বেঁচে থাকতে পারে। এটি সাধারণত ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উষ্ণ মিঠাপানিতে পাওয়া যায়।

নেগলেরিয়া ফাওলেরি নামের এই অ্যামিবা সংক্রমিত হয় নাকের মাধ্যমে দূষিত পানি শরীরে ঢুকলে। অ্যামিবাটি নাকের অভ্যন্তরীণ স্তর বা অলফ্যাক্টরি মিউকোসা দিয়ে ওলফ্যাক্টরি নার্ভ বা ঘ্রাণ নার্ভের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছায় এবং মস্তিষ্কের টিস্যু ধ্বংস করা শুরু করে। এটি বায়ু বা ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায় না। পাকস্থলীর অম্লতা এই অ্যামিবাকে ধ্বংস করার উপযুক্ত বলে দূষিত পানি পান করলে সাধারণত এটি সংক্রমিত হয় না।

লক্ষণ

নেগলেরিয়া ফাওলেরি মানুষের শরীরে সংক্রমিত হওয়ার পর ২ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে (গড়ে ৫ দিন) লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। এর প্রাথমিক লক্ষণ অনেকটা ভাইরাল মেনিনজাইটিসের মতো হতে পারে। যেমন—

  • তীব্র মাথাব্যথা
  • জ্বর
  • বমি বমি ভাব ও বমি
  • গলা শক্ত হওয়া

পরবর্তী ও আরও গুরুতর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে—

  • খিঁচুনি
  • বিভ্রান্তি, মনোযোগের অভাব
  • ভারসাম্য হারানো
  • মতিভ্রম বা হ্যালুসিনেশন
  • কোমায় চলে যাওয়া

নেগলেরিয়া ফাওলেরি নামের অ্যামিবার সংক্রমণে তৈরি হওয়া প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনজোএনসেফালাইটিস রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত এর লক্ষণ শুরু হওয়ার পর ১ থেকে ১৮ দিনের মধ্যে রোগীর মৃত্যু ঘটে।

কেন এটি এত মারাত্মক

  • দ্রুত বৃদ্ধি: রোগটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বলে এর নির্ণয় ও চিকিৎসা কঠিন। এর উপসর্গগুলো ভাইরাল মেনিনজাইটিস মতো বলে অনেক সময় এর ভুল চিকিৎসা হয়। যখন সে ভুল ধরা পড়ে, তখন আর কিছু করার থাকে না।
  • মস্তিষ্কে পৌঁছানোর ক্ষমতা: অ্যামিবাটি স্নায়ুর মাধ্যমে সরাসরি মস্তিষ্কে আক্রমণ করে।
  • চিকিৎসার সীমিত সুযোগ: খুব কম ওষুধ এই অ্যামিবার বিরুদ্ধে কার্যকর। চিকিৎসা সত্ত্বেও বেঁচে থাকার হার অত্যন্ত কম।

চিকিৎসা

প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনজোএনসেফালাইটিস রোগে আক্রান্ত মানুষের বেঁচে থাকার ঘটনা অত্যন্ত বিরল। এর চিকিৎসা সাধারণত অ্যামিবাসহ বিভিন্ন প্যারাসাইটের বিরুদ্ধে কার্যকর ওষুধ, কার্যকর অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক এবং অন্যান্য ওষুধের সমন্বয়ে করা হয়। তবে এর সফল চিকিৎসার প্রধান বিষয় হলো, অত্যন্ত দ্রুত রোগ শনাক্তকরণ ও দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা।

প্রতিরোধ

প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনজোএনসেফালাইটিস যেহেতু রোগটি প্রায়শই মারাত্মক, তাই প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। এ জন্য যা করা যেতে পারে—

  • হ্রদ, নদী বা জলাশয়ের মতো উষ্ণ মিঠাপানির উৎসে সাঁতার কাটা বা ডুব দেওয়া থেকে বিরত থাকা; বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে যখন পানির তাপমাত্রা বেশি থাকে।
  • যদি আপনাকে হ্রদ, নদী বা জলাশয়ে গোসল করতেই হয়, তাহলে নাক চেপে রাখুন বা নাকের ক্লিপ ব্যবহার করুন। অর্থাৎ নাক দিয়ে যেন পানি ভেতরে যেতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করুন।
  • পুকুর, নদী বা হ্রদে গোসল করার সময় মাথা ডোবানোর ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করুন।
  • নলকূপের পানি বা নিশ্চিতভাবে ক্লোরিনযুক্ত করা পানি ব্যবহার করুন। ঘরের নলের পানি পুরোপুরি নিরাপদ বা ঝুঁকিমুক্ত না হলে তা সেদ্ধ বা ফিল্টার করে ব্যবহার করুন।
  • বাড়িতে ওয়াটার হিটারে পানি গরম করার সময় তাপমাত্রা ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে সেট করবেন না। গরম পানি ব্যবহারের সময় ঠান্ডা পানি মেশান।

মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবার সংক্রমণ অত্যন্ত ভয়ংকর কিন্তু অত্যন্ত বিরল ঘটনা। তবে সম্প্রতি ভারতের কেরালায় ১৮ জন ও পশ্চিমবঙ্গে এর সংক্রমণ ১৬ জনের মৃত্যুর খবরে বিষয়টি বেশ আলোচিত হচ্ছে। করোনা মহামারির পর এবার পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালায় নতুন আতঙ্ক হয়ে উঠেছে এই মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবা। তাই সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই।

সূত্র

⦁ w ww.cdc.gov/parasites/naegleria/index

⦁ w ww.who.int/water_sanitation_health/emerging/naegleria/en/

⦁ doi. org/10.1128/AAC.01293-15

⦁ doi. org/10.1093/cid/cis626

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত