Ajker Patrika

অসাধ্য সাধন করতে হবে বাংলাদেশকে

তাসনীম হাসান, চট্টগ্রাম থেকে
আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২১, ১০: ২৯
অসাধ্য সাধন করতে হবে বাংলাদেশকে

সকাল থেকেই খাঁ খাঁ করছিল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারি। লিটন দাস-ইয়াসির আলী রাব্বির ব্যাটে যখন এগোচ্ছিল বাংলাদেশ, তখন আবার স্টেডিয়াম অভিমুখে দর্শকের স্রোত বাড়তে থাকে। সময় যত গড়িয়েছে, গ্যালারি আবারও শূন্য হয়ে গেছে। দর্শকদের এই আসা-যাওয়া থেকেই পরিষ্কার, চট্টগ্রাম টেস্টের পরিণতি কী হতে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম টেস্ট বাংলাদেশ পঞ্চম দিনে নিয়ে গেছে, এই টেস্টে মুমিনুল হকের দলের পক্ষে বাজি ধরার লোক হয়তো দুরবিন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না! জয়ের সুবাস নিয়েই গতকাল চতুর্থ দিনের খেলা শেষ করেছে পাকিস্তান। বাংলাদেশের সম্ভাবনা পাশের বঙ্গোপসাগরের পানিতে ছুড়ে চতুর্থ দিনেই জয়ের অর্ধেকেরও বেশি কাজ সেরে রেখেছেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার। আজ শেষ দিনে জিততে পাকিস্তানের লাগবে ৯৩ রান। আর বাংলাদেশকে করতে হবে এক অসাধ্যসাধন।

প্রথম ইনিংসে ৪৪ রানের লিড পেয়েও কেন ‘ব্যাকফুটে’ চলে গেল বাংলাদেশ—এটির কারণ খুঁজতে গেলে সেই পুরোনো ক্ষতই স্পষ্ট হবে। দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং-ব্যর্থতায় ডুবতে বসেছে বাংলাদেশ। বাজে ব্যাটিংয়ের পর ছন্নছাড়া আর নির্বিষ বোলিংয়ে হতাশার ষোলোকলা পূর্ণ হয়েছে। আর তাতেই নির্বিঘ্ন ব্যাটিংয়ে আবারও শতরানের (১০৯) জুটি গড়ে ফেলেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার আবিদ আলী ও আবদুল্লাহ শফিক। দুজনই ফিফটি তুলে আছেন অপরাজিত। আগের দিন বোলিংয়ে ঝলক দেখানো তাইজুল ইসলাম, ইবাদত হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজরা গতকাল ছিলেন একেবারেই নির্বিষ। আউট দূরে থাক, চতুর্থ ইনিংসের ১৯৮ বলে কোনো সম্ভাবনাই জাগাতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা।

তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে ৪ উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশের সমর্থকেরা তাকিয়ে ছিলেন মুশফিকুর রহিম, ইয়াসির আলী রাব্বি আর লিটন দাসের ব্যাটের দিকে। চতুর্থ দিনের প্রথম বলেই হাসান আলীকে দারুণ এক বাউন্ডারিতে স্বাগত জানিয়ে সে আশা আরও বাড়ান মুশফিক। কিন্তু দুই বল পর আশায় গুঁড়েবালি। বাউন্ডারির বদলা নিয়ে মুশফিকের বেল উড়িয়ে পাকিস্তানকে দিনের শুরুতেই হাসালেন হাসান আলী।

এরপরই নিজেদের বড় জুটিটা পায় বাংলাদেশ। লিটন দাসকে নিয়ে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এ টেস্টেই অভিষেক হওয়া ইয়াসির আলী। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান লিটন দাস দলকে পথ দেখাচ্ছিলেনই, কবজির মোচড়ে দুর্দান্ত সব বাউন্ডারিতে নিজের আগমনী বার্তা দিচ্ছিলেন ইয়াসিরও। ষষ্ঠ উইকেটে ৪৭ রানের জুটিতে পাকিস্তানের ওপর চাপ বাড়াচ্ছিলেন দুজন। এমন সময়ে বড় আঘাত—৩০তম ওভারের শেষ বলটা ব্যাক অব লেংথ থেকে তুলেছিলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। বলটা ডাক করতে গিয়ে হেলমেটে আঘাত পান ইয়াসির। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আবারও ব্যাটিং শুরু করেছিলেন চট্টগ্রামের তরুণ ব্যাটার। কিন্তু এক ওভার যেতেই অস্বস্তিবোধ করায় মাঠ থেকে সরাসরি হাসপাতালে যেতে হয় ইয়াসিরকে। আর তাতেই ছয় বাউন্ডারিতে করা ইয়াসিরের ৩৬ রানের লড়াকু ইনিংসটির সমাপ্তি।

ইয়াসিরের বদলে ‘কনকাশন সাব’ হিসেবে নুরুল হাসান সোহান ব্যাটিং করার সুযোগ পান। ইয়াসিরকে হারানোর পর ছন্দটা সে যে হারাল, আর ফিরে পায়নি বাংলাদেশ। দারুণ ব্যাটিংয়ে ফিফটি তুলে নিয়ে লিটন ফিরতেই (৫৯) তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। চার রানেই শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ অলআউট ১৫৭ রানে।

শেষ দিনে জিততে হলে পাকিস্তানের ১০ উইকেট নিতে হবে বাংলাদেশকে। কাজটি ভীষণ কঠিন। তবে এখানে মুমিনুলরা অনুপ্রেরণা পেতে পারেন পাঁচ বছর আগের সেই ঐতিহাসিক টেস্ট জয় থেকে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে মিরপুরে ২৭‌৩ রান তাড়ায় সেদিনও উদ্বোধনী জুটিতেই শতরান করে ফেলেছিল ইংল্যান্ড। বাকিটা ইতিহাস। এক সেশনেই ইংল্যান্ডের ১০ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশ পেয়েছিল ১০৮ রানের অনবদ্য এক জয়।

সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে হলে মুমিনুলদের আজ অসাধ্যসাধনই করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত