Ajker Patrika

প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন জরুরি

মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান
প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন জরুরি

প্রাথমিক শিক্ষা হলো আনুষ্ঠানিক শিক্ষার মূল ভিত্তি। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপে শিক্ষাক্ষেত্রে ইতিবাচক উন্নতি লক্ষণীয়। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত নিয়োগ কার্যক্রম, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমিয়ে আনা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি, অবকাঠামো উন্নয়ন প্রভৃতি।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত নারী শিক্ষক শতকরা ৬৪.২ জন। এই শিক্ষকেরা এখনো নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক, পারিপার্শ্বিক ও অবকাঠামোগত অপ্রতুলতার কারণে নারী শিক্ষকদের পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রদানে মনোনিবেশ করা অনেক সময় সম্ভব হচ্ছে না। যেমন অনেক নারী শিক্ষককে তাঁদের কম বয়সী শিশুকে নিয়ে ক্লাসে আসতে হচ্ছে অথচ আজ পর্যন্ত এই অল্প বয়সী বাচ্চাদের যত্ন নেওয়ার সুবিধাসংবলিত কোনো  ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি।

আমি এটিও লক্ষ্য করেছি, একটি বিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষককে ১ থেকে ৩ বছর বয়সী শিশুসহ ক্লাস নিতে হচ্ছে। ক্লাস চলাকালে শিশুটির যত্ন নেওয়া বা দেখভাল করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরা হিমশিম খাচ্ছেন। ফলে এ ধরনের সমস্যা দূরীকরণে বিদ্যালয়গুলোতে ডে-কেয়ার সেন্টার বা দিবাযত্ন কেন্দ্র চালু করা যেতে পারে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনাক্রমে দেখা যায়, চাহিদাভিত্তিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পে (প্রথম পর্যায়) ৩০০০টি (তিন হাজার) বিদ্যালয়ে শিশুদের জন্য প্লে কর্নার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এই প্লে কর্নারের সঙ্গে সংযুক্ত করে যদি দিবাযত্ন কেন্দ্র চালু করা যায় সে ক্ষেত্রে শিক্ষকেরা স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে মনোনিবেশ করতে পারবেন।

সারা দেশে একযোগে দিবাযত্ন কেন্দ্র চালু করার আগে প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে অগ্রাধিকারক্রমে পাইলটিং প্রকল্পের আওতায় আনার লক্ষ্যে বিদ্যালয়ের তালিকা তৈরি করা যেতে পারে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সহযোগিতায় শিশুদের জন্য নির্ধারিত কক্ষে খেলাধুলার সরঞ্জাম, চিত্রাঙ্কনের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, শিশুখাদ্য ইত্যাদি রাখা যেতে পারে।

শিক্ষক ও ছাত্রীদের জন্য যথাযথ স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিচালনার নিমিত্তে সরকারিভাবে প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখা যেতে পারে।

একটি কথা খেয়াল রাখতে হবে, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার জন্য বদ্ধপরিকর। এজন্য প্রাথমিক পর্যায়েই সরকারের বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন। ডে-কেয়ার সেন্টারের জন্য জনবল নিয়োগও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ প্রক্রিয়ায় আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এই প্রকল্পে প্রয়োজন অনুযায়ী জনবলের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

সর্বোপরি প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রকৃত উন্নতিকল্পে গোটা ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় মৌলিক বিষয়গুলো নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

শিক্ষকদের জন্য উপযুক্ত পাঠদানের পরিবেশ নিশ্চিত করলে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে অন্তর্নিহিত উন্নয়নেরই একটি বিরাট অংশে পরিগণিত হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। 

লেখক: উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,ভাঙ্গুড়া, পাবনা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

আইসিএক্স বাদ দিলে ঝুঁকিতে পড়বে দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব, বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত