Ajker Patrika

৩০০ শয্যার হাসপাতালে জনবল-সংকট, ভোগান্তি

সাবিত আল হাসান, নারায়ণগঞ্জ
আপডেট : ২৫ মে ২০২২, ০৮: ৩৯
৩০০ শয্যার হাসপাতালে  জনবল-সংকট, ভোগান্তি

নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুরে অবস্থিত ৩০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল চলছে জনবল-সংকট নিয়ে। ৫০২টি পদের মধ্যে ১৪৯টি বর্তমানে খালি রয়েছে। জনবল-সংকটের কারণে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কর্মচারীরা পড়ছেন ভোগান্তিতে, তেমনি দুর্ভোগ পোহান রোগীরাও।

সরকারি চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এই হাসপাতালটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। করোনা মহামারির আগে ও পরে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার সেবাপ্রার্থী এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। নারায়ণগঞ্জের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য অন্যতম ভরসা এই হাসপাতাল। তবে জনবল-সংকট দেখা দেওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে। এই বিষয়ে একাধিকবার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েও সুরাহা পায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৮৬ সালে জাপান সরকারের সহায়তায় ২০০ শয্যার হাসপাতাল স্থাপন করা হয়। পাঁচ বছর জাপান সরকার হাসপাতালটি পরিচালনা করে হস্তান্তর করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে। ২০১০ সালের পর থেকে বাড়তে থাকে জনবল-সংকট। ২০১৩ সালে হাসপাতালটিকে ২০০ শয্যা থেকে উন্নীত করে ৩০০ শয্যা করা হয়। নতুন নিয়োগ না হওয়ায় একেকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অন্তত পাঁচজনের কাজ সম্পন্ন করতে হয়। এই হাসপাতালকে ৫০০ শয্যা করতে নির্মাণযজ্ঞ চলছে।

জানা যায়, বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসক পদ রয়েছে মোট ৫০টি, এর মধ্যে কর্মরত ৪১ জন এবং শূন্য পদ রয়েছে ৯টি। নার্সদের মোট পদ রয়েছে ২৫১টি, এর মধ্যে কর্মরত ২৪৮ জন এবং শূন্য পদ রয়েছে ৩টি। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য পদ রয়েছে ৪৯টি, এর মধ্যে কর্মরত ৩২ জন এবং শূন্য পদ রয়েছে ১৭টি। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য পদ রয়েছে ১৪৩টি, এর মধ্যে কর্মরত ৬৮ জন এবং শূন্য পদ রয়েছে ৭৫টি। ৫০২টি পদের মধ্যে ১৪৯টি পদই বর্তমানে খালি রয়েছে।

হাসপাতালের এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নিরাপত্তাকর্মী, আয়া, মেডিকেল টেকনোলজিস্টের মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে পর্যাপ্ত জনবল নেই। বিশেষ করে চতুর্থ শ্রেণির অনেক কাজ নার্সরা বাধ্য হয়ে করছেন। এটা তাঁদের দায়িত্বের মধ্যে নয়। ফলে অনেকেই নিজ নিজ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে পারছেন না। এতে করে রোগীরা যেমন সেবা থেকে বঞ্চিত হন, তেমনি হাসপাতালকে ঘিরে অন্যান্য বেসরকারি মেডিকেল ব্যবসা করার সুযোগ পায়।

শুধু তাই নয়, যাঁরা এখনো কর্মস্থলে স্ব স্ব পদে আছেন তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে হয় তিনটি শিফটে। ফলে প্রতি শিফটে পর্যাপ্ত লোকবল থাকছে না। মহামারি করোনা শুরু হলে এই খানপুর হাসপাতালকে করোনা হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সে সময় প্রায় ৪০ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে আউটসোর্সিং হিসেবে ছয় মাসের জন্য যুক্ত করে ইউনিসেফ। নির্ধারিত সময় শেষে তাঁরা বিনা বেতনে কাজ করে যাচ্ছেন সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত হওয়ার আশায়। তাঁদের বিষয়টি জানতে পেরে তিন মাসের বেতন নিজ উদ্যোগে পরিশোধ করেন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। বর্তমানে প্রায় ৩৪ জন আউটসোর্সিং কর্মচারী বিনা বেতনে কাজ করে যাচ্ছেন।

এই বিষয়ে হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের সহকারী সোহেল রানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে আউটসোর্সিংয়ের ভিত্তিতে কর্মচারী নিয়োগের জন্য হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তার কোনো জবাব এখনো আসেনি। কর্মচারীদের অভাবে হাসপাতাল অনেক বেশি নোংরা ও সেবাদানে দেরি হচ্ছে। এই সুযোগে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের দালালেরা রোগীদের প্রলুব্ধ করে অন্যত্র নিয়ে যান। রোগীরা নানা অভিযোগ করতে থাকেন, কিন্তু আমরাও এক্ষেত্রে অসহায়। আয়া বা পরিচ্ছন্নতার কাজ তো চিকিৎসকেরা এসে করতে পারবেন না। আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে সহায়ক জনবল নিয়োগের প্রশাসনিক অনুমোদন না দেওয়ায় প্রদত্ত অর্থ ব্যয় করতে পারে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।’

হাসপাতালের অন্য এক কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, ৩০০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার পরেও কয়েকটিতে পদসংখ্যার পরিবর্তন আনা হয়নি। এসব বিষয় সমাধানের জন্য তিন থেকে চারবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে কার্যত কোনো সমাধান আসছে না। অন্যদিকে ২০১০ সাল থেকে সরকারি নিয়োগ অনেকটাই থমকে আছে। এই অবস্থায় আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দিয়ে কাজ চালাতে চাইলেও সেটাতে অনুমোদন দিচ্ছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এসব অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল বাশার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসক ও নার্স নিয়ে তেমন সমস্যা নেই। কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর অভাবে হাসপাতাল পরিচালনা করতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আমরা একাধিকবার এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছি। ৫০০ শয্যায় উন্নীত হতে চলছে এই হাসপাতাল। ফলে আমাদের আরও জনবল প্রয়োজন হবে। এসব বিষয় মাথায় রেখে শূন্য পদ পূরণ হওয়া খুবই জরুরি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তেহরান ওপর থেকে সুন্দর, একদিন যেতে চাই: ইরানে বোমা ফেলা ইসরায়েলি পাইলট

ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা ভাবছেন ট্রাম্প

জুলাই অভ্যুত্থান: নিজেদের মামলা তদন্তে ‘বেশি সতর্ক’ পুলিশ

সাইপ্রাসে বিপুল জমি কিনছে ইসরায়েলিরা, দেশ বেদখলের শঙ্কা রাজনীতিবিদদের

ট্রাম্পের প্রশংসায় পঞ্চমুখ এরদোয়ানও

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত