Ajker Patrika

হকার বসিয়ে আদায় লাখ টাকা

অরূপ রায়, সাভার
হকার বসিয়ে আদায় লাখ টাকা

‘আমাদের টাকায় অনেকের বাসায় বাজার যায়, অনেকের গাড়ি-বাড়ি হয়। কিন্তু আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না। হয় না ব্যবসা করার জন্য স্থায়ী জায়গার ব্যবস্থা।’

সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকার হকার আনোয়ার হোসেন এমন মন্তব্য করেন। প্রায় ১০ বছর ধরে ফুটপাতে বসে পণ্য বিক্রি করেন তিনি। এ জন্য প্রতিদিন তাঁকে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিতে হয়। এ ছাড়া ফুটপাতে পসরা সাজিয়ে বসার জন্য তাঁকে এককালীন টাকা দিতে হয়েছে বলে জানান।

সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকার পূর্ব পাশে নিউমার্কেট থেকে ধসে পড়া রানা প্লাজা, পশ্চিম পাশে মাশরুম সেন্টার থেকে মনসুর মার্কেট পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উভয় পাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় সড়কের আংশিকসহ ফুটপাতজুড়ে কয়েক হাজার হকার পসরা সাজিয়ে বসেন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে বেচাকেনা।

তবে শুধু ১৬ ডিসেম্বর ও ২৬ মার্চ এবং ভিভিআইপিদের আগমনে পুলিশের তাড়া খেয়ে তাঁদের ফুটপাত ছাড়তে হয়।

হকাররা জানান, ফুটপাত ও মহাসড়কে বসে ব্যবসা করলেও তাঁদের নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। স্থানীয় হকার্স লীগ ও সরকারি দলের নেতাসহ প্রভাবশালীদের কথা বলে কতিপয় ব্যক্তি প্রতিদিন সন্ধ্যায় তাঁদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে থাকেন। এভাবে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় হয়। কেউ চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলেই তাঁদের দোকান তুলে দেওয়া হয়, অথবা মারধরের শিকার হতে হয়।

গত বৃহস্পতিবার সকালে নিউমার্কেটের সামনে মহাসড়কের লোকাল লেনে বসে শীতের কাপড় বিক্রি করছিলেন এক হকার। এতে ঢাকামুখী যানবাহনের লাইন পড়ে যায়।

যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটিয়ে মহাসড়কে শীতের কাপড় বিক্রি বিষয়ে জানতে চাইলে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন এ প্রতিবেদকের কাছে এসে ভুল শিকার করেন। তাঁদের একজন বাংলাদেশ হকার্স লীগ সাভার শাখার সভাপতি কাদের মোল্লাহ। তিনি শীতের কাপড়গুলো তাঁর বলে দাবি করেন, যা তিনি হকারকে দিয়ে বিক্রি করাচ্ছিলেন।

হকার বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ সম্পর্কে কাদের মোল্লা বলেন, ‘মহাসড়কের পূর্ব পাশ নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ হকার্স লীগ আর পশ্চিম পাশের নিয়ন্ত্রণ আওয়ামী হকার্স লীগের কাছে। বাংলাদেশ হকার্স লীগের পক্ষ থেকে প্রতিদিন প্রতিটি দোকান থেকে ৩০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। আদায়কৃত টাকা পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পেছনে ব্যয় করা হয়। এ ছাড়া ফুটপাত থেকে আর কোনো চাঁদা আদায় করা হয় না।’

তবে মহাসড়কের পূর্ব পাশের কয়েকজন হকার বলেন, পরিচ্ছন্নতার নামে ৩০ টাকার বাইরেও তাঁদের কাছ থেকে দোকানের আকার ও স্থানভেদে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়।

এদিকে মহাসড়কের পশ্চিম পাশে গিয়েও একই চিত্র চোখে পড়ে। ফুটপাতের ভাসমান দোকানের কারণে পথচারীদের গা ঘেঁষে চলতে দেখা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পশ্চিম পাশের এক হকার বলেন, দিন বিশেক আগে অভিযান চালিয়ে পুলিশ বাসস্ট্যান্ড এলাকা হকারমুক্ত করে দিলে তাঁর ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়।

কয়েক দিন পরে হকাররা আবার বসার সুযোগ পেলেও তাঁকে বসতে দেওয়া হয়নি।

ওই হকার আরও বলেন, যেখানে ভ্যান দাঁড় করিয়ে তিনি পণ্য বিক্রি করতেন, ১৫ হাজার টাকা পেয়ে ছাত্রলীগের এক নেতার আত্মীয় সেখানে অন্য একজনকে বসার সুযোগ করে দিয়েছেন। তিনি বিষয়টি ফাঁস করে দেওয়ায় ওই ছাত্রলীগ নেতার ঘনিষ্ঠজন শাহীন তাঁকে হুমকি দিচ্ছেন। শাহীনের তাঁর তত্ত্বাবধানে অন্তত ১৫টি ভাসমান দোকান চলে, যা থেকে তিনি চাঁদা আদায় করেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের সামনের ফুটপাতজুড়ে হাজারো ভাসমান দোকান। সামনের মহাসড়কের লোকাল লেনের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে অর্ধশত লেগুনা (হিউম্যান হলার)। এসব কারণে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের চিকিৎসক মামুনুর রহমান বলেন, মাঝেমধ্যে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বাসস্ট্যান্ড এলাকা হকারমুক্ত করে দেয়। কিন্তু দিন কয়েক পরে আবার হকাররা তা দখল করে নেয়। বছরের পর বছর ধরে এভাবেই চলে আসছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে আওয়ামী হকার্স লীগ সাভার শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. লিটন বলেন, হকারদের জন্য স্থায়ী জায়গার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জায়গা হলেই তাঁরা বাসস্ট্যান্ড এলাকা ছেড়ে দেবে।

সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ‘বাসস্ট্যান্ড এলাকা হকারমুক্ত রাখতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। পুলিশ হকারদের সরিয়ে দিলেও পুলিশের অবর্তমানে আবার তাঁরা বসে পড়ে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

রাখাইনে মানবিক করিডর কি প্রক্সি যুদ্ধের ফাঁদ হবে, ভারত-চীন কীভাবে দেখবে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত