Ajker Patrika

সড়ক দাপাচ্ছে নিষিদ্ধ যান

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি 
আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ১৪: ৩২
সড়ক দাপাচ্ছে নিষিদ্ধ যান

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সড়কগুলো দীর্ঘদিন ধরে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত গাড়ির দখলে রয়েছে। অথচ এসব গাড়ির সড়কে চলাচলের কোনো অনুমোদন নেই। মজবুত ব্রেক না থাকলেও শ্যালো ইঞ্জিনের এসব নিষিদ্ধ গাড়ি চলে বেপরোয়া গতিতে। বিকট শব্দ করে চলা এই গাড়িতে বাজানো হয় হাইড্রোলিক হর্ন। এত কিছুর পরেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এসব গাড়ি চলাচল বন্ধের বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না।

উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শীত মৌসুমে চালু হয় ইটভাটা। একই সঙ্গে শুরু হয় এখানকার পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। এ ছাড়া বিভিন্ন মাঠ থেকেও মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা হয়। আর এ বালু ও মাটি পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হয় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত চালিত লাটাহাম্বা, বাটাহাম্বা, আলগামনসহ বিভিন্ন নামে সড়কে চলা নিষিদ্ধ এসব গাড়ি। ইট পরিবহনের ক্ষেত্রেও এসব গাড়ি ব্যবহার করা হয়। এর মধ্য সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত স্টিয়ারিং গাড়ি। এগুলোর নেই হার্ড ব্রেক, নেই চালকের দক্ষতা। কোনো কোনো দুর্ঘটনায় থানায় মামলা হলেও বেশির ভাগ ঘটনাতেই মামলা হয় না।

এ বিষয়ে একাধিক পথচারী ও মোটরসাইকেল চালক বলেন, ‘পেছন থেকে হর্ন দিলেও এসব নিষিদ্ধ গাড়ি সাইড দেয় না। আবার সড়কের প্রচলিত নিয়মকানুন না মেনে ওভারটেকও করে। এদের জন্য আমাদের রাস্তায় চলতে অসুবিধা হয়। থাকতে হয় দুর্ঘটনার আতঙ্কে।’ অন্য দিকে ব্যাটারিচালিত যানগুলোও রাস্তায় আরেক বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান তাঁরা।

ইটভাটা মালিকেরা জানিয়েছেন, পরিবহন খরচ কম হওয়ার কারণে শ্যালো ইঞ্জিনের স্টিয়ারিং গাড়িগুলোই বেশি ব্যবহার করা হয়। তবে বালু, মাটি ও ইট পরিবহনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ট্রাকও ব্যবহার করেন তাঁরা।

প্রায় দিনই উপজেলার কোথাও না কোথাও শ্যালো ইঞ্জিনচালিত এসব গাড়ির কারণে ছোটবড় দুর্ঘটনা ঘটছে। গত কয়েক দিনে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত বাহনের ধাক্কায় কয়েকজন আহত হয়েছেন। গত ৮ জানুয়ারি দৌলতপুর উপজেলা থেকে পাশের উপজেলা মিরপুরে যাওয়ার পথে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত স্টিয়ারিং গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর আহত হন মাছরাঙা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি তাশরিক সঞ্চয়। এ বিষয়ে তাশরিক সঞ্চয় দৌলতপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। গত বুধবার রাতে পুলিশ মামলাটি নেয়। তবে এখন পর্যন্ত আসামি গ্রেপ্তার বা স্টিয়ারিং গাড়িটি জব্দ করতে পারেনি পুলিশ।

এ বিষয়ে আহত সাংবাদিক তাশরিক সঞ্চয় জানান, সড়কগুলো খুবই অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। এখানে রাস্তার পাশে নির্দেশনা চিহ্ন নেই। ফুটপাতও তাদের দখলে আছে। আর এসব স্টিয়ারিং গাড়ির ধাক্কায় বা চাপায় প্রতিবছর উদ্বেগজনকভাবে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, ‘পুলিশ ও প্রশাসনের চোখের সামনেই এ সমস্ত নিষিদ্ধ ও ভয়ংকর গাড়ি দৌলতপুর উপজেলার রাস্তাঘাট দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মালবাহী অন্যান্য ট্রাকও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বা বেপরোয়া গতিতে চলাফেরা করছে। বৃহত্তর স্বার্থে এখনই সময় এগুলোর দিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া।’

দৌলতপুর থানার ওসি এসএম জাবীদ হাসান জানান, সাংবাদিক তাশরিকের দুর্ঘটনার বিষয়টি শুরু থেকেই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁর দেওয়া অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার রাতেই মামলা নেওয়া হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তার এবং তাঁকে ধাক্কা দেওয়া সেই স্টিয়ারিং গাড়িটি জব্দের চেষ্টা চলছে। পলাতক আসামিকে যেকোনো মুহূর্তে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

উপজেলা নির্বাহীর কর্মকর্তা আব্দুল জাব্বার জানান, নিষিদ্ধ যানের পাশাপাশি সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত