Ajker Patrika

সামনে অপার সম্ভাবনা, অনেক দুয়ার খোলা

ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া
সামনে অপার সম্ভাবনা, অনেক দুয়ার খোলা

ইতিমধ্যে সিংহভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা হয়ে গেছে। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে যেসব শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহৎ আঙিনায় প্রবেশ করতে যাচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিষয় নির্বাচনসহ নানা বিষয় নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া

কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা চান্স পায়নি, তাদের কী করণীয়? 
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছে স্বপ্নের জায়গা। ভালোমানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন প্রায় সবারই থাকে। ইতিমধ্যে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকে চান্স পেলেও কেউ কেউ ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় না টিকে হতাশ। কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেলেই জীবন বৃথা এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওনি তাতে কী হয়েছে! সামনে অপার সম্ভাবনা, অনেক দুয়ার খোলা। তুলনামূলক বেশি পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পেলেও জীবন থেমে থাকবে না। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়াশোনার সুযোগ আছে। তোমরা মনে রাখবে, একটি পথ বন্ধ হলে বহু পথ খুলে যায়! নামডাক আছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়তে হবে এমন নয়। দেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেগুলো মানসম্পন্ন। এ রকম যেকোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারো। শুরু থেকেই পড়ায় মনোযোগী হয়ে যদি ভালো ফল করতে পারো, জীবনে সাফল্য এমনিতেই ধরা দেবে। মেধার পরিচয় দিতে না পারলে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও লাভ নেই। তাই যে বিশ্ববিদ্যালয়েই সুযোগ পাও, ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করে দাও।

অনেকে মনে করে উচ্চশিক্ষা মানে 
হয় ডাক্তারি, না হয় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হবে-
দুনিয়াটা ডাক্তারি-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সীমাবদ্ধ নেই। বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা, কলা, সামাজিক বিজ্ঞান বা অন্য যে অনুষদেই পড়ো না কেন, সফল হওয়ার সম্ভাবনা কারও কম নয়! যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে নতুন নতুন বিষয় খুলছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এসব বিষয়ের চাহিদাও অনেক। একটু খোঁজখবর করলেই এসব বিষয়ের সন্ধান পাবে। চাহিদাসম্পন্ন বিষয় থাকতে পারে খুব বেশি নামডাক নেই এমন বিশ্ববিদ্যালয়েও। 

ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে অপছন্দের বিষয় পেলে কী করবে? 
এ বিষয়টি নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় থাকে। অপছন্দের বিষয়ে অনিচ্ছায় ভর্তি হলে, কিন্তু বিষয়টি ভালো না লাগলে পড়েও লাভ হবে না। মনে রাখবে, নিজের আগ্রহ, যোগ্যতা, চাকরির বাজারের চাহিদা, ভবিষ্যতের সম্ভাবনা—এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার বিষয় নির্বাচন করা উচিত। আগ্রহের বিষয়ে পড়ার সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই মেধার স্বাক্ষর রাখতে পারবে। আর হ্যাঁ, পছন্দের বিষয়ে কোনোভাবেই ভর্তির সুযোগ না পেলে তো আর পড়াশোনা বন্ধ রাখা যাবে না! ভর্তি হলে দেখবে হয়তো সে বিষয়টিই ভালো লেগে গেছে। 

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যারা প্রবেশ করতে যাচ্ছে, তাদের উদ্দেশে আপনার পরামর্শ-
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল আঙিনায় যারা প্রবেশ করতে যাচ্ছে, তাদের উদ্দেশে বলব, ছাত্রজীবনে পড়াশোনাকে খুব সিরিয়াসলি নিতে হবে, বেশি বেশি বই পড়তে হবে। ক্লাসে মনোযোগী হতে হবে, শিক্ষকদের সান্নিধ্যে থেকে তাঁদের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। কেবল পাঠ্যবই পড়লেই চলবে না, বাইরের বইও পড়তে হবে। আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনা শুধু লেখাপড়ার জায়গা নয়। এটি স্বপ্নপূরণের জায়গা। একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তার জীবনের গতিপথ খুঁজে পায়। মনে রাখবে, নিজেকে, সমাজকে, দেশকে, সর্বোপরি বিশ্বকে জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় একটি আদর্শিক স্থান। একজন শিক্ষার্থীকে সত্যিকার অর্থে দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয় সাহায্য করে থাকে। এটি একজন শিক্ষার্থীর ভিত গড়ে দেয়। 

বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে সহপাঠ ক্রমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ? 
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমেই সত্যিকারভাবে একজন শিক্ষার্থী পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। একজন শিক্ষার্থীর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক বিকাশ, সর্বোপরি প্রতিটি ক্ষেত্রেই অবাধ বিচরণের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়। জীবনে বড় হওয়া, পরিপূর্ণ মানুষ হওয়া—এসব বিষয়ে বাতিঘরের মতো পথ দেখায় একটি বিদ্যাপীঠ। নিজেকে ইতিবাচক কাজের সঙ্গে যুক্ত করবে, যাতে আলোকিত ও পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারো। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরু থেকেই বিভিন্ন সাহিত্য, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, ক্রীড়া সংগঠন বা ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। বিতর্ক, নাটক, আবৃত্তি, সাহিত্য, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রম, সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে হবে। এসব একজন শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। নিজের ভিত শক্ত করার এটাই উপযুক্ত সময়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যার ভিত যত শক্ত হবে, সে জীবনে তত বেশি সফল হবে। 

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: শেখ শাহরিয়ার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত