Ajker Patrika

চাঁপাইয়ের উঁচু এলাকায় সুপেয় পানির সংকট

মো. তারেক রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১: ৫৬
চাঁপাইয়ের উঁচু এলাকায় সুপেয় পানির সংকট

চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাটির নিচ থেকে অপরিকল্পিতভাবে পানি তোলায় ধীরে ধীরে নিম্নমুখী হচ্ছে পানির স্তর। মাটির গভীরে ভূগর্ভে থাকা পাথরের স্তর, বালুসহ প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করার কারণে উঁচু এলাকাগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে না সুপেয় পানি। আর এর ফলে জেলার উঁচু ভূমি নাচোল, গোমস্তাপুর, ভোলাহাট ও শিবগঞ্জ উপজেলার আংশিক এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট হচ্ছে।

স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্যমতে, অপরিকল্পিত উপায়ে অগভীর নলকূপ স্থাপন করে লাগামহীনভাবে উত্তোলনের কারণে পানির স্তর ক্রমে নিচে নেমে যাচ্ছে।

জানা গেছে, মাটির নিচে ভারী মেশিন বসিয়ে দেড়, তিন, চার বা ছয় ইঞ্চি পাইপ স্থাপন করায় ৫৬ থেকে ৭৮ ফুট নিচে পাথরের স্তর পাওয়া যাচ্ছে। অত্যাধুনিক মেশিনে সেই পাথর কেটে মাটির আরও গভীরে গিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না ব্যবহারযোগ্য পানি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, মাটির গভীরতা ভেদ করে এমন অপরিকল্পিত পানি উত্তোলন রোধ করা না গেলে অদূর ভবিষ্যতে এ সংকট আরও বাড়বে। বিশেষ করে পাশের জেলা রাজশাহীর গোদাগাড়ী, তানোর এবং নওগাঁর নিয়ামতপুর, সাপাহার এলাকায় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়বে।

নাচোল এলাকার নেজামপুর এলাকার বাসিন্দা আফজাল হোসেন বলেন, যত দিন যাচ্ছে, ততই পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। ৫ বছর আগেও ৬০-৭০ মিটার মাটির গভীরে পাইপ দিয়ে টিউবওয়েল থেকে সুপেয় পানি তোলা যেত। কিন্তু এখন ২০০ ফুট পাইপ বসিয়েও পানি ওঠে না। ফলে বাধ্য হয়ে গভীর নলকূপের পানি সংগ্রহ করে পান করতে হয়।

ঝিলিম এলাকার কৃষক একরামুল হক বলেন, বিগত দিনগুলোতে ছোট শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ডিপটিউবওয়েল দিয়ে জমিতে সেচ দেওয়া যেত। এখন প্রায় সব শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ডিপটিউবওয়েল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে অধিক খরচ করে বরেন্দ্রর ডিপটিউবওয়েল থেকে পানি নিয়ে চাষাবাদ করতে হচ্ছে। ফলে খরচও বেড়েছে দ্বিগুণ। তা-ও আবার সময়মতো পানি পাওয়া যায় না।

ভোলাহাট এলাকার কৃষক আবু তালেব বলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ১৯ হাজার বিঘার বিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার বিলভাতিয়া। বর্ষা-বন্যা মৌসুমে কানায় কানায় পানিতে ভরা থাকে। জলজ উদ্ভিদ, দেশি মাছ, জলজ প্রাণীতে ভরা বৈচিত্র্যময় এই বিল। অথচ পানি কমে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে এর জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়ছে।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান, চৈত্র-বৈশাখে পদ্মা নদী শুকিয়ে গেলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় পাগলা নদী। বিপর্যস্ত প্রকৃতির বৈরিতায় পাগলা এখন মরা খাল। দূর-দূরান্তের কৃষকেরা ভারী মেশিনের সাহায্যে ৮ ও ১২ ইঞ্চি পাইপের সাহায্যে নদী থেকে পানি নিয়ে যান আবাদি জমিতে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তার দাবি, এর বিরূপ প্রভাব পড়ে প্রকৃতির ওপর। রুক্ষতা বাড়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার সাহা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ও অপরিকল্পিত পানি উত্তোলনের ফলে এ সংকট দেখা দিচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, বরেন্দ্রের বিধান ও কাঠামো অনুযায়ী গভীর নলকূপ স্থাপন না করে অতীতে স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে। এ কারণে সেচ নিয়ে কৃষকেরা দুর্ভোগে পড়েছেন। যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে প্রকৃতিতে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফেল করায় বকা খেয়ে বাড়ি ছাড়ে বাংলাদেশি কিশোরী, ভারতে ৩ মাসে ২০০ লোকের ধর্ষণ

রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আটক

আগামী সপ্তাহের মধ্যে ৫ ইসলামী ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু: গভর্নর

মৌচাকে হাসপাতালের পার্কিংয়ে প্রাইভেট কার থেকে উদ্ধার দুই মরদেহের পরিচয় মিলেছে

চলন্ত বাইকে বাঁধা নারীর লাশ, পুলিশের ধাওয়া

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত