Ajker Patrika

৫ কারণে আ.লীগের পরাজয়

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২১, ১৬: ২৩
৫ কারণে আ.লীগের পরাজয়

বরিশাল সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ৮ টিতেই কর্তৃত্ব ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। কিন্তু এবার দুই দফার ভোটে অর্ধেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) হাতছাড়া হলো দলটির। অপরদিকে সদরে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাওয়া চরমোনাই পীরের দল হাতপাখার অবস্থান শক্ত হয়েছে আরও। গোটা উপজেলায় ভোটে বিএনপির প্রভাবও চোখে পড়েছে। কেন এভাবে ৫টি ইউপি খোয়াতে হলো ক্ষমতাসীন দলকে, এসব খুঁজতে গিয়ে নেতা-কর্মী, ভোটার, প্রতিদ্বন্দ্বীসহ সংশ্লিষ্টরা ৫টি কারণ দেখিয়েছেন।

এগুলো হচ্ছে আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী প্রার্থী, প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে প্রশ্ন, সদর আসনের সাংসদ কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারীদের অবমূল্যায়ন, নৌকার বিরোধিতায় বিএনপি এবং বিগত সময়ের অপেক্ষা সুষ্ঠ ভোট হওয়া।

দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে গত বৃহস্পতিবার বরিশাল সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে রায়পাশা-কড়াপুর, চরকাউয়া ও শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। অপর ৩টি ইউপির মধ্যে চরমোনাইতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা, চাঁদপুরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র এবং চন্দ্রমোহনে বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এর আগে গত ২১ জুন বরিশাল সদরের ৪টি ইউপি নির্বাচনে কাশীপুর ও চরবাড়িয়ায় নৌকা, টুঙ্গিবাড়িয় স্বতন্ত্র ও জাগুয়ায় হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী জয়ী হয়েছিল।

বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত ফলে দেখা গেছে, ছয় ইউনিয়নে নৌকার প্রাপ্ত ভোট ২৮ হাজার ৮৫৩ এবং হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থীরা পেয়েছেন ২৮ হাজার ৩৫২ ভোট। 
প্রাপ্ত ভোটে দেখা গেছে, চন্দ্রমোহন, চাঁদপুরা ও রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন। এর মধ্যে চন্দ্রমোহনে বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র, চাঁদপুরায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী এবং রায়পাশা কড়াপুরে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জয়ী হন।

চরমোনাইতে হাতপাখাকে দমাতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি একাট্টা হয়ে হিতে বিপরীত হয়েছে। সেখানে বিগত বছরগুলোর চেয়ে বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন হাতপাখার প্রার্থী পীরের ভাই মুফতি সৈয়দ মো. জিয়াউল করীম। ২০০২ সাল থেকে টানা চার মেয়াদ এ ইউনিয়নে পীর পরিবারে সদস্যেরা জয়ী হলেন।

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হালিম রেজা মোফাজ্জেল বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা ছিল সদ্য শেষ হওয়া ৬টি ইউনিয়নেই নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হবেন। কিন্তু হয়তো তাদের ভুলভ্রান্তি ছিল। বিশেষ করে চরমোনাইতে নৌকার প্রতি জনগণের যে আগ্রহ ছিল বাস্তবে তা দেখা যায়নি।’ সদর আসনের সাংসদের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাংসদ শামীম তো আর নৌকার বিরোধিতা করতে পারেন না। দুই টার্মের নির্বাচনে ৫টি আসন হাতছাড়া হওয়া প্রসঙ্গে জানান, হয়তো তাঁদের ব্যর্থতা ছিল তাই এই ফলাফল।

সদর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ হোসন বলেন, ‘চাঁদপুরায় বিজয়ী বিদ্রোহী প্রার্থী জাহিদ সদর আসনের এমপির সঙ্গে রাজনীতি করেন। বিদ্রোহী না থাকলে সদরের এভাবে হাতছাড়া হওয়া ৫টি ইউনিয়নেই নৌকা পাশ করত। আসলে মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিএনপিও নীরবে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এবারের ভোটে বিএনপি প্রকাশ্যে না এলেও হয় নৌকায়, না হয় স্বতন্ত্রের পক্ষে নেমেছে। এরপরও হাতপাখার ভোট আগের তুলনায় বেড়েছে। মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শাসন দেখে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এ কারণে হাতপাখাকেই ভোটাররা বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে মনে করেন।

তবে চরকাউয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য ও পূর্বাঞ্চলীয় উন্নয়ন পরিষদের আহ্বায়ক  মুনাওয়ারুল ইসলাম অলি বলেন, এবারের ভোটে মানুষের মধ্যে উদ্দীপনা ছিল। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ একজন প্রার্থী দাঁড় করাতে পাড়লেও এবার বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল তাঁদের। যে কারণে নৌকার ভোট ভাগ হয়েছে। তিনি বলেন, মনোনয়নে ভুল হয়নি, জ্যেষ্ঠদের দেওয়া হয়েছে। তবে যিনি জনগণের পাশে ছিলেন তিনিই বিজয়ী হয়েছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...