আসিফ
যাওয়ার খুব একটা ইচ্ছা ছিল না। তবু নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সঙ্গে কক্সবাজার ভ্রমণে যেতে হলো। এবার আমরা যাত্রা করেছিলাম ট্রেনে করে। মনে পড়ে গেল সেই কিশোরবেলার কথা, ট্রেনে করে যাওয়ার জন্য টিকিটে কনসেশন পাওয়ার কত রকমের চেষ্টা! তা–ও চট্টগ্রাম পর্যন্ত। এবারও সেই ট্রেনযাত্রা, তবে শুধু চট্টগ্রাম নয়, সরাসরি কক্সবাজার যাওয়া। ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার ট্রেনের জন্য নতুন পথ তৈরি হয়েছে।
কক্সবাজার থেকে টেকনাফের দিকে চলে যাওয়া মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে অবস্থিত হিমছড়ি সৈকত। এক পাশে খাড়া উঁচু পাহাড়, আরেক পাশে দিগন্তবিস্তৃত সমুদ্র। এই সৈকতটা একটু নির্জন। কেমন যেন প্রাচীন পৃথিবীর অনুভূতি ঘিরে ধরে। সেখানে হেঁটে বেড়ানোর আকাঙ্ক্ষাও কাজ করেছে, জানতে ইচ্ছে করেছে কেন মৃত তিমিরা এখানে ভেসে আসে? এবার কক্সবাজারে যাওয়ার আগে এ ব্যাপারটা খুব কাজ করছিল। বছর তিনেক আগে একটা তিমি এই হিমছড়ির উপকূলে মৃত অবস্থায় ভেসে আসে। তাকে সমুদ্রসৈকতে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল কঙ্কালটি উদ্ধার করার জন্য। এটা সমুদ্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের গবেষণায় শুধু নয়, পর্যটকদের দৃষ্টিসীমাও প্রসারিত করবে। ঠিক কী কারণে এবং কোথায় তারা মারা গিয়েছিল, সে ব্যাপারে স্পষ্ট জানা না গেলেও এটা কোন প্রজাতির, সেটা এখন বের করা হয়েছে। ব্রাইডস তিমির বালাইনোপ্টেরা ইডেনি প্রজাতির।
কক্সবাজার পৌঁছে হোটেল ওশান প্যারাডাইজে উঠে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলাম। প্রথমে কয়েকজনের কাছে শুনলাম তিমির কঙ্কালটা উঠিয়ে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে কক্সবাজারের এক সংবাদকর্মী মামুন জানালেন, এটা কক্সবাজারে অবস্থিত বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটে রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২১ এপ্রিল হিমছড়ির বালুচরে ভেসে আসা তিমিটির ওজন ছিল ৯ টন, দৈর্ঘ্য ৪৬ ফুট ও প্রস্থ ১৬ ফুট। ধারণা করা হয়, গভীর সাগরের মধ্যে তিমিটির মৃত্যু হয়েছিল। পুঁতে ফেলা তিমিটিকে সম্প্রতি উত্তোলন করা হয়েছে। কঙ্কাল সংগ্রহের কাজে নামেন কক্সবাজারে অবস্থিত বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞরা। জানা যায়, কঙ্কালটি জাতীয় জাদুঘরে প্রদর্শন করা হবে। আমি একটু হোঁচট খাই; যেখানে সবকিছু ঢাকায় হয়, সেখানে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মূল কক্সবাজারে হয়েছে এটা সরকারের শুভ ও সঠিক পদক্ষেপ। কিন্তু তিমির এ কঙ্কালটিকে ঢাকা জাতীয় জাদুঘরে নিতে হবে কেন? ডলফিন, তিমি বা সিটাসিয়ান শ্রেণির প্রাণীদের অবশেষ দিয়ে এখানে বড় একটি জাদুঘর গড়ে তোলা তো যেত, যা শুধু গবেষণার দিকেই নয়, কক্সবাজারের পর্যটনেরও গুরুত্ব বাড়াবে। তিমির মতো একটি প্রাণীকে এ রকম পর্যবেক্ষণ বা অধ্যয়নের মধ্যে নিলে মানবিকতার সম্প্রসারণ ঘটবে। এর আগে আরও কিছু তিমি মেরিন ড্রাইভের দরিয়ানগর ও হিমছড়িতে ভেসে এসেছে।
ভেসে আসা এ ধরনের তিমি প্রসঙ্গে এক সামুদ্রিক প্রাণবিশেষজ্ঞ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের জলসীমায় এত বিশালাকার তিমির সচরাচর দেখা মেলে না; গভীর সাগরে বড় জাহাজের ধাক্কায় অথবা শিকারিদের হত্যার কারণে তিমিটির মৃত্যু হতে পারে। মহাসাগরীয় এই প্রাণী দলছুট হয়ে পড়লে মান-অভিমান বা হতাশায় অনেক সময় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
এই তিমিগুলো বালাইনোপ্টেরা গোত্রের; এদের ৮টি প্রজাতি রয়েছে। এই গোত্রের যেমন নীল তিমি, ফিনব্যাক তিমি, হাম্পব্যাক তিমি, ব্রাইডস তিমি। শান্ত প্রকৃতির এই তিমিরা তাদের বাচ্চাদের স্তন্য পান দিয়ে লালন-পালন করে। তাদের আছে দীর্ঘ শৈশবকাল, যে সময়ের মধ্যে পূর্ণবয়স্করা তরুণদের শিক্ষা দেয়। খেলাধুলা তাদের সাধারণ অবসর-বিনোদন।
এগুলো স্তন্যপায়ীদের স্বাভাবিক ধর্ম এবং বুদ্ধিমান প্রাণীদের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ।
তিমিকে এক আশ্চর্য ও রহস্যময় প্রাণী বললেও ভুল হবে না। সম্প্রতি একটি রহস্য সমাধান হয়েছে বলে জানা গেছে। যেমন নীল, হাম্পব্যাক, ধূসর তিমির মতো ১৪ প্রজাতির মধ্যে বালিন একটি। এই তিমির দাঁতের পরিবর্তে বালিন নামের একধরনের থালা থাকে। এটি ব্যবহার করে পানি থেকে ছোট প্রাণীর বিশাল বহরকে খেতে পারে তারা। কিন্তু এত দিন এই তিমি কীভাবে রহস্যময় গান গাইত, তা বের করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে ইলিম্যানসের নেতৃত্বে এক দল গবেষক মৃত তিমির স্বরযন্ত্র বা ভয়েসবক্স আলাদা করে দেখান যে মানুষের ক্ষেত্রে কণ্ঠনালির মধ্যে বাতাস থেকে যে কম্পন তৈরি হয়, তা থেকে স্বর আসে। এ ছাড়া তিমির ক্ষেত্রে স্বরযন্ত্রের ওপরে ইংরেজি ইউ অক্ষরের মতো একটি চর্বির স্তর থাকে। এই গঠনের কারণে তিমি বায়ু পুনর্ব্যবহার করে গান গাইতে পারে। এতে স্বরযন্ত্রে পানিও ঢুকতে পারে না।
তিমির পূর্বপুরুষেরা সেই ডেভোনিয়ান যুগে মাটিতে উঠে এলেও পরবর্তী সময়ে তারা আবার ফিরে গিয়েছিল পানিতে। বেশির ভাগ ডাঙার প্রাণী যখন বিবর্তনের পথ বেয়ে মাটির বুকে অভিযোজিত হয়েছে, তখন তিমির পূর্বপুরুষেরা তাদের বহুদিন আগে ছেড়ে আসা আবাসস্থল সেই গভীর সমুদ্রকেই আবার বেছে নেয়। বিবর্তনের মহাযাত্রায় যেন উল্টোপথের যাত্রী তারা। ক্রমান্বয়ে বিবর্তিত হয়ে সমুদ্রের গভীরে জায়গা করে নেয় এই স্তন্যপায়ীরা, প্রায় দেড় কোটি বছর ধরে। উল্লেখ্য, মাছদের শ্বাস নেওয়ার জন্য ফুলকা থাকে, কিন্তু তিমি শ্বাস নেওয়ার জন্য ফুসফুস ব্যবহার করে।
সাগর হলো ঝাপসা, প্রায় অন্ধকার একটা জায়গা। স্থলে প্রাণীদের ক্ষেত্রে দৃষ্টিশক্তি ও ঘ্রাণশক্তি যত ভালোভাবে কাজ করে, মহাসাগরের গভীরে তত ভালোভাবে কাজ করে না। সুতরাং বিবর্তনের মাধ্যমে অন্য একটি পদ্ধতির উদ্ভব ঘটেছিল। তিমিদের বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে এটাই কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা: শব্দ ইন্দ্রিয়ের। দুটো তিমি পৃথিবীর দুই প্রান্তে অবস্থান করেও পরস্পরের সঙ্গে ২০ হার্জ ফ্রিকোয়েন্সিতে যোগাযোগ করতে পারে, কথা বলতে পারে। তিমিদের ইতিহাসের বেশির ভাগ সময় ধরে তারা হয়তো প্রতিষ্ঠা করে থাকতে পারে এ ধরনের বিশ্বজনীন যোগাযোগের জাল। পরস্পর থেকে তারা ১৫ হাজার কিলোমিটার দূরত্বে থাকলেও অতল গভীরতার মধ্য দিয়ে ভালোবাসার গানে পরিপূর্ণ কণ্ঠস্বর তারা পাঠাতে পারে। বিশালদেহী, বুদ্ধিমান ও যোগাযোগের ক্ষমতাসম্পন্ন এই প্রাণী প্রায় এক কোটি বছর ধরে কোনো প্রাকৃতিক শত্রু ছাড়াই বিকশিত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে মানুষ নামে দুপেয়ে জীবদের দ্বারা ভয়াবহভাবে আক্রান্ত।
আমরা জানি না, ভেসে আসা তিমিগুলো কী কারণে মারা যায়—পরিবেশদূষণে, মানুষের শিকারে, জাহাজের আঘাতে? তবে প্রতিটি প্রাণীর জন্য বাস্তুসংস্থান গুরুত্বপূর্ণ। তাই শুধু মানুষের জন্য নয়, অস্তিত্ব রক্ষায় তিমি ও অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে মানবিক আচরণ জরুরি। তিমিদের সঙ্গে সহনশীল অভিজ্ঞতাই আমাদের শেখাতে পারে শুধু দুই জাতির মানুষ নয়, প্রজাতি নয়, দুটি সম্পূর্ণ আলাদা গোত্রের বুদ্ধিমান প্রাণীও একসঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারে।
লেখক: আসিফ, বিজ্ঞান বক্তা ও সম্পাদক, মহাবৃত্ত
যাওয়ার খুব একটা ইচ্ছা ছিল না। তবু নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সঙ্গে কক্সবাজার ভ্রমণে যেতে হলো। এবার আমরা যাত্রা করেছিলাম ট্রেনে করে। মনে পড়ে গেল সেই কিশোরবেলার কথা, ট্রেনে করে যাওয়ার জন্য টিকিটে কনসেশন পাওয়ার কত রকমের চেষ্টা! তা–ও চট্টগ্রাম পর্যন্ত। এবারও সেই ট্রেনযাত্রা, তবে শুধু চট্টগ্রাম নয়, সরাসরি কক্সবাজার যাওয়া। ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার ট্রেনের জন্য নতুন পথ তৈরি হয়েছে।
কক্সবাজার থেকে টেকনাফের দিকে চলে যাওয়া মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে অবস্থিত হিমছড়ি সৈকত। এক পাশে খাড়া উঁচু পাহাড়, আরেক পাশে দিগন্তবিস্তৃত সমুদ্র। এই সৈকতটা একটু নির্জন। কেমন যেন প্রাচীন পৃথিবীর অনুভূতি ঘিরে ধরে। সেখানে হেঁটে বেড়ানোর আকাঙ্ক্ষাও কাজ করেছে, জানতে ইচ্ছে করেছে কেন মৃত তিমিরা এখানে ভেসে আসে? এবার কক্সবাজারে যাওয়ার আগে এ ব্যাপারটা খুব কাজ করছিল। বছর তিনেক আগে একটা তিমি এই হিমছড়ির উপকূলে মৃত অবস্থায় ভেসে আসে। তাকে সমুদ্রসৈকতে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল কঙ্কালটি উদ্ধার করার জন্য। এটা সমুদ্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের গবেষণায় শুধু নয়, পর্যটকদের দৃষ্টিসীমাও প্রসারিত করবে। ঠিক কী কারণে এবং কোথায় তারা মারা গিয়েছিল, সে ব্যাপারে স্পষ্ট জানা না গেলেও এটা কোন প্রজাতির, সেটা এখন বের করা হয়েছে। ব্রাইডস তিমির বালাইনোপ্টেরা ইডেনি প্রজাতির।
কক্সবাজার পৌঁছে হোটেল ওশান প্যারাডাইজে উঠে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলাম। প্রথমে কয়েকজনের কাছে শুনলাম তিমির কঙ্কালটা উঠিয়ে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে কক্সবাজারের এক সংবাদকর্মী মামুন জানালেন, এটা কক্সবাজারে অবস্থিত বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটে রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২১ এপ্রিল হিমছড়ির বালুচরে ভেসে আসা তিমিটির ওজন ছিল ৯ টন, দৈর্ঘ্য ৪৬ ফুট ও প্রস্থ ১৬ ফুট। ধারণা করা হয়, গভীর সাগরের মধ্যে তিমিটির মৃত্যু হয়েছিল। পুঁতে ফেলা তিমিটিকে সম্প্রতি উত্তোলন করা হয়েছে। কঙ্কাল সংগ্রহের কাজে নামেন কক্সবাজারে অবস্থিত বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞরা। জানা যায়, কঙ্কালটি জাতীয় জাদুঘরে প্রদর্শন করা হবে। আমি একটু হোঁচট খাই; যেখানে সবকিছু ঢাকায় হয়, সেখানে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মূল কক্সবাজারে হয়েছে এটা সরকারের শুভ ও সঠিক পদক্ষেপ। কিন্তু তিমির এ কঙ্কালটিকে ঢাকা জাতীয় জাদুঘরে নিতে হবে কেন? ডলফিন, তিমি বা সিটাসিয়ান শ্রেণির প্রাণীদের অবশেষ দিয়ে এখানে বড় একটি জাদুঘর গড়ে তোলা তো যেত, যা শুধু গবেষণার দিকেই নয়, কক্সবাজারের পর্যটনেরও গুরুত্ব বাড়াবে। তিমির মতো একটি প্রাণীকে এ রকম পর্যবেক্ষণ বা অধ্যয়নের মধ্যে নিলে মানবিকতার সম্প্রসারণ ঘটবে। এর আগে আরও কিছু তিমি মেরিন ড্রাইভের দরিয়ানগর ও হিমছড়িতে ভেসে এসেছে।
ভেসে আসা এ ধরনের তিমি প্রসঙ্গে এক সামুদ্রিক প্রাণবিশেষজ্ঞ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের জলসীমায় এত বিশালাকার তিমির সচরাচর দেখা মেলে না; গভীর সাগরে বড় জাহাজের ধাক্কায় অথবা শিকারিদের হত্যার কারণে তিমিটির মৃত্যু হতে পারে। মহাসাগরীয় এই প্রাণী দলছুট হয়ে পড়লে মান-অভিমান বা হতাশায় অনেক সময় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
এই তিমিগুলো বালাইনোপ্টেরা গোত্রের; এদের ৮টি প্রজাতি রয়েছে। এই গোত্রের যেমন নীল তিমি, ফিনব্যাক তিমি, হাম্পব্যাক তিমি, ব্রাইডস তিমি। শান্ত প্রকৃতির এই তিমিরা তাদের বাচ্চাদের স্তন্য পান দিয়ে লালন-পালন করে। তাদের আছে দীর্ঘ শৈশবকাল, যে সময়ের মধ্যে পূর্ণবয়স্করা তরুণদের শিক্ষা দেয়। খেলাধুলা তাদের সাধারণ অবসর-বিনোদন।
এগুলো স্তন্যপায়ীদের স্বাভাবিক ধর্ম এবং বুদ্ধিমান প্রাণীদের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ।
তিমিকে এক আশ্চর্য ও রহস্যময় প্রাণী বললেও ভুল হবে না। সম্প্রতি একটি রহস্য সমাধান হয়েছে বলে জানা গেছে। যেমন নীল, হাম্পব্যাক, ধূসর তিমির মতো ১৪ প্রজাতির মধ্যে বালিন একটি। এই তিমির দাঁতের পরিবর্তে বালিন নামের একধরনের থালা থাকে। এটি ব্যবহার করে পানি থেকে ছোট প্রাণীর বিশাল বহরকে খেতে পারে তারা। কিন্তু এত দিন এই তিমি কীভাবে রহস্যময় গান গাইত, তা বের করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে ইলিম্যানসের নেতৃত্বে এক দল গবেষক মৃত তিমির স্বরযন্ত্র বা ভয়েসবক্স আলাদা করে দেখান যে মানুষের ক্ষেত্রে কণ্ঠনালির মধ্যে বাতাস থেকে যে কম্পন তৈরি হয়, তা থেকে স্বর আসে। এ ছাড়া তিমির ক্ষেত্রে স্বরযন্ত্রের ওপরে ইংরেজি ইউ অক্ষরের মতো একটি চর্বির স্তর থাকে। এই গঠনের কারণে তিমি বায়ু পুনর্ব্যবহার করে গান গাইতে পারে। এতে স্বরযন্ত্রে পানিও ঢুকতে পারে না।
তিমির পূর্বপুরুষেরা সেই ডেভোনিয়ান যুগে মাটিতে উঠে এলেও পরবর্তী সময়ে তারা আবার ফিরে গিয়েছিল পানিতে। বেশির ভাগ ডাঙার প্রাণী যখন বিবর্তনের পথ বেয়ে মাটির বুকে অভিযোজিত হয়েছে, তখন তিমির পূর্বপুরুষেরা তাদের বহুদিন আগে ছেড়ে আসা আবাসস্থল সেই গভীর সমুদ্রকেই আবার বেছে নেয়। বিবর্তনের মহাযাত্রায় যেন উল্টোপথের যাত্রী তারা। ক্রমান্বয়ে বিবর্তিত হয়ে সমুদ্রের গভীরে জায়গা করে নেয় এই স্তন্যপায়ীরা, প্রায় দেড় কোটি বছর ধরে। উল্লেখ্য, মাছদের শ্বাস নেওয়ার জন্য ফুলকা থাকে, কিন্তু তিমি শ্বাস নেওয়ার জন্য ফুসফুস ব্যবহার করে।
সাগর হলো ঝাপসা, প্রায় অন্ধকার একটা জায়গা। স্থলে প্রাণীদের ক্ষেত্রে দৃষ্টিশক্তি ও ঘ্রাণশক্তি যত ভালোভাবে কাজ করে, মহাসাগরের গভীরে তত ভালোভাবে কাজ করে না। সুতরাং বিবর্তনের মাধ্যমে অন্য একটি পদ্ধতির উদ্ভব ঘটেছিল। তিমিদের বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে এটাই কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা: শব্দ ইন্দ্রিয়ের। দুটো তিমি পৃথিবীর দুই প্রান্তে অবস্থান করেও পরস্পরের সঙ্গে ২০ হার্জ ফ্রিকোয়েন্সিতে যোগাযোগ করতে পারে, কথা বলতে পারে। তিমিদের ইতিহাসের বেশির ভাগ সময় ধরে তারা হয়তো প্রতিষ্ঠা করে থাকতে পারে এ ধরনের বিশ্বজনীন যোগাযোগের জাল। পরস্পর থেকে তারা ১৫ হাজার কিলোমিটার দূরত্বে থাকলেও অতল গভীরতার মধ্য দিয়ে ভালোবাসার গানে পরিপূর্ণ কণ্ঠস্বর তারা পাঠাতে পারে। বিশালদেহী, বুদ্ধিমান ও যোগাযোগের ক্ষমতাসম্পন্ন এই প্রাণী প্রায় এক কোটি বছর ধরে কোনো প্রাকৃতিক শত্রু ছাড়াই বিকশিত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে মানুষ নামে দুপেয়ে জীবদের দ্বারা ভয়াবহভাবে আক্রান্ত।
আমরা জানি না, ভেসে আসা তিমিগুলো কী কারণে মারা যায়—পরিবেশদূষণে, মানুষের শিকারে, জাহাজের আঘাতে? তবে প্রতিটি প্রাণীর জন্য বাস্তুসংস্থান গুরুত্বপূর্ণ। তাই শুধু মানুষের জন্য নয়, অস্তিত্ব রক্ষায় তিমি ও অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে মানবিক আচরণ জরুরি। তিমিদের সঙ্গে সহনশীল অভিজ্ঞতাই আমাদের শেখাতে পারে শুধু দুই জাতির মানুষ নয়, প্রজাতি নয়, দুটি সম্পূর্ণ আলাদা গোত্রের বুদ্ধিমান প্রাণীও একসঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারে।
লেখক: আসিফ, বিজ্ঞান বক্তা ও সম্পাদক, মহাবৃত্ত
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
৫ দিন আগেপাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
৫ দিন আগেভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
৫ দিন আগেঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫