ডা. মো. শামীম হায়দার তালুকদার

বাংলাদেশে মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি এবং চিকিৎসা অবহেলিত, বিশেষ করে শহর ও গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে। অনেক ক্ষেত্রে তারা তো জানতেও পারে না যে তাদের মনের রোগ হয়েছে। জ্বর হলে চিকিৎসকের কাছে না গেলেও ঝটপট প্যারাসিটামল খেয়ে সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করেন আপনি, কিন্তু কখনো কি খোঁজ নিয়েছেন মনের স্বাস্থ্য কেমন আছে? ২০১৯ সালে মহামারির আগে সারা বিশ্বে আনুমানিক আটজনের মধ্যে একজন মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন। একই সময়ে, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সেবা, দক্ষতা এবং তহবিল ছিল প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম। কোভিড-১৯ মহামারি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশ্বব্যাপী সংকট তৈরি করেছে, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি চাপ বাড়িয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য দুর্বল করেছে। মহামারির প্রথম বছরে উদ্বেগ ও হতাশাজনিত ব্যাধি উভয় মিলে ২৫ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সেবাগুলো মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।
বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, যার জনসংখ্যার ঘনত্ব অন্য যেকোনো বড় দেশের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি। গ্রামের তুলনায় শহরের জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। নানা কারণে নগরবাসীর মানসিক স্বাস্থ্য বিঘ্নিত হচ্ছে। মানসিক স্বাস্থ্য প্রভাবিত করে এমন কয়েকটি কারণের মধ্যে রয়েছে জনসংখ্যার ঘনত্ব, আবাসন, অর্থনৈতিক অবস্থা, কর্মসংস্থান, জীবনের অভিজ্ঞতা ও রোগের বোঝা। সাধারণ জনগণের আর্থিক অবস্থা প্রভাবিত করে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে। করোনাকালে এ সমস্যা আরও প্রকটতর হয়। মহামারির প্রাথমিক পর্যায়ে, অনেক হাসপাতাল কোভিড-১৯-এর চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত ছিল না এবং পরীক্ষার সুবিধা সীমিত ছিল। এই পরিস্থিতি অনেক বাংলাদেশির মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করেছে। ২৬ মার্চ ২০২০ থেকে লকডাউন কার্যকর হওয়ার পর সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। দিনের পর দিন মানুষ ঘরবন্দী থাকতে বাধ্য হয়। আর এসব কারণে বিষণ্নতাসহ অন্যান্য মানসিক রোগ দানা বাঁধতে থাকে মানুষের মাঝে। সাধারণ বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবসংক্রান্ত একটি গবেষণা থেকে দেখা যায়, সাধারণ জনসংখ্যার মধ্যে একাকিত্ব ৭১, বিষণ্নতা ৩৮, উদ্বেগ ৬৪ ও ঘুমের ব্যাঘাতের প্রাদুর্ভাবের হার ছিল ৭৩ শতাংশ।
বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রথম জাতীয় জরিপ পরিচালিত হয়েছিল ২০০৩-০৫ সালে। আর দেশব্যাপী প্রতিনিধি সমীক্ষা পরিচালিত হয়েছিল ২০১৯ সালে। করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯ মহামারি বাংলাদেশি জনগণের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিষণ্নতা ৫৭ দশমিক ৯, স্ট্রেস ৫৯ দশমিক ৭ ও উদ্বেগ ৩৩ দশমিক ৭ শতাংশ উপসর্গ এখন প্রাক্-মহামারি হারের তুলনায় অনেক বেশি। ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত বাংলাদেশে শিশুদের ওপর একটি পদ্ধতিগত পর্যালোচনায় দেখা যায়, তাদের মানসিক অসুস্থতা ১৩ দশমিক ৪ থেকে ২২ দশমিক ৯ শতাংশের মধ্যে। ২০১৯ সালের দেশব্যাপী প্রতিনিধি সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের আত্মহত্যার প্রবণতা কম। বাংলাদেশে শূন্য দশমিক ২ এবং শূন্য দশমিক ৮ শতাংশের মধ্যে অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারের আছে বলে জানা যায়। ২০১৯ সালের গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ বিষণ্নতার বিস্তার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ১৫ মাসের মধ্যে উদ্বেগের প্রবণতা ২৭ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। শহর ও আধা শহুরে স্কুলের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ২০১৮ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ হতাশার লক্ষণে ভুগছে, যার মধ্যে মেয়েরা ৪২ দশমিক ৯ এবং ছেলেরা ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১৩ সালের একটি সমীক্ষা থেকে জানা গেছে যে শহরের স্কুলগুলোতে ২৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর বিষণ্নতার লক্ষণগুলো দেখা যায়। এর মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা ৩০ আর ছেলেদের ১৯ শতাংশ। ২০১৩ সালের অপর এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশি মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা ছিল ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশ।
এই সমস্যার পেছনের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তার মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা, অপ্রাপ্তি, অসহনীয় সামাজিক চাপ, শৈশবকালীন বিলম্বিত বিকাশ, অপুষ্টি, যথাযথভাবে প্রতিপালনের অভাব, নিরক্ষরতা, আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাব, মানসিক ও যৌন হয়রানি, সহিংসতা, যৌতুকের চাপ, পরকীয়া ও দাম্পত্য কলহ ইত্যাদি। এই উপাদানগুলো মানসিক সমস্যা তৈরি করার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও শারীরিক সমস্যা বৃদ্ধি করছে। যেমন ডায়াবেটিস, ক্যানসার, হৃদ্রোগ, হাঁপানি, মাইগ্রেন ইত্যাদি। একজন ব্যক্তি যখন মানসিক চাপে থাকে, তখন তার শারীরিক সমস্যাগুলো বৃদ্ধি পায়, আবার দীর্ঘদিন ধরে শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকলে মানসিকভাবেও সে ভেঙে পড়ে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যক্তি মানসিক অসুস্থতার বিষয়টি নিজের মধ্যে চেপে রাখে। অসুস্থতা মারাত্মক পর্যায়ে গেলে খোঁজ পড়ে মনোরোগ চিকিৎসক অথবা মনোরোগবিদের।
বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির বিষয়টি মূলত শহরকেন্দ্রিক। সারা দেশ থেকে প্রতিবছর আনুমানিক ৭ হাজার শিক্ষার্থী চিকিৎসাশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করলেও মনোচিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন মাত্র কয়েকজন। মানসিক স্বাস্থ্যসেবাগুলো মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, সাইকিয়াট্রিক নার্স ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টদের দ্বারা দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশে তাঁদের মধ্যে কোনো ধরনের সমন্বয় চোখে পড়ে না। মানসিক স্বাস্থ্যসেবাগুলো প্রায়ই বিভাগীয় স্তরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, যেখানে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা শহরের মধ্যে অবস্থিত তৃতীয় স্তরের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। মাত্র ২৬০ জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ১৬২ মিলিয়নের দেশে সেবা দিচ্ছেন। তাই জনসংখ্যার বেশির ভাগই মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা গ্রহণ করতে পারছে না।
বাংলাদেশে মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি এবং চিকিৎসা অবহেলিত, বিশেষ করে শহর ও গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে। অনেক ক্ষেত্রে তারা তো জানতেও পারে না যে তাদের মনের রোগ হয়েছে। বস্তিগুলোতে অন্যান্য অসংক্রামক রোগের পাশাপাশি মানসিক রোগের ব্যাপারেও সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রতিটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে অন্তত একজন মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শক থাকা জরুরি। যেহেতু এ ক্ষেত্রে জনবলের অভাব একটি বড় সমস্যা, তাই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাড়াতে হবে জনবল। জনসাধারণের মানসিক স্বাস্থ্য সুবিধার অভাব, দক্ষ মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের অভাব ইত্যাদি কারণ বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবাদানে বড় বাধা। জাতীয় মনোসামাজিক কাউন্সিল নীতিমালায় এ ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছার প্রমাণ মেলে। আমরা প্রত্যাশা করি, নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সবার মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সুনিশ্চিত হোক।
ডা. মো. শামীম হায়দার তালুকদার, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এমিনেন্স অ্যাসোসিয়েটস ,ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট, ইউনিসেফ

বাংলাদেশে মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি এবং চিকিৎসা অবহেলিত, বিশেষ করে শহর ও গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে। অনেক ক্ষেত্রে তারা তো জানতেও পারে না যে তাদের মনের রোগ হয়েছে। জ্বর হলে চিকিৎসকের কাছে না গেলেও ঝটপট প্যারাসিটামল খেয়ে সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করেন আপনি, কিন্তু কখনো কি খোঁজ নিয়েছেন মনের স্বাস্থ্য কেমন আছে? ২০১৯ সালে মহামারির আগে সারা বিশ্বে আনুমানিক আটজনের মধ্যে একজন মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন। একই সময়ে, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সেবা, দক্ষতা এবং তহবিল ছিল প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম। কোভিড-১৯ মহামারি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশ্বব্যাপী সংকট তৈরি করেছে, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি চাপ বাড়িয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য দুর্বল করেছে। মহামারির প্রথম বছরে উদ্বেগ ও হতাশাজনিত ব্যাধি উভয় মিলে ২৫ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সেবাগুলো মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।
বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, যার জনসংখ্যার ঘনত্ব অন্য যেকোনো বড় দেশের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি। গ্রামের তুলনায় শহরের জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। নানা কারণে নগরবাসীর মানসিক স্বাস্থ্য বিঘ্নিত হচ্ছে। মানসিক স্বাস্থ্য প্রভাবিত করে এমন কয়েকটি কারণের মধ্যে রয়েছে জনসংখ্যার ঘনত্ব, আবাসন, অর্থনৈতিক অবস্থা, কর্মসংস্থান, জীবনের অভিজ্ঞতা ও রোগের বোঝা। সাধারণ জনগণের আর্থিক অবস্থা প্রভাবিত করে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে। করোনাকালে এ সমস্যা আরও প্রকটতর হয়। মহামারির প্রাথমিক পর্যায়ে, অনেক হাসপাতাল কোভিড-১৯-এর চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত ছিল না এবং পরীক্ষার সুবিধা সীমিত ছিল। এই পরিস্থিতি অনেক বাংলাদেশির মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করেছে। ২৬ মার্চ ২০২০ থেকে লকডাউন কার্যকর হওয়ার পর সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। দিনের পর দিন মানুষ ঘরবন্দী থাকতে বাধ্য হয়। আর এসব কারণে বিষণ্নতাসহ অন্যান্য মানসিক রোগ দানা বাঁধতে থাকে মানুষের মাঝে। সাধারণ বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবসংক্রান্ত একটি গবেষণা থেকে দেখা যায়, সাধারণ জনসংখ্যার মধ্যে একাকিত্ব ৭১, বিষণ্নতা ৩৮, উদ্বেগ ৬৪ ও ঘুমের ব্যাঘাতের প্রাদুর্ভাবের হার ছিল ৭৩ শতাংশ।
বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রথম জাতীয় জরিপ পরিচালিত হয়েছিল ২০০৩-০৫ সালে। আর দেশব্যাপী প্রতিনিধি সমীক্ষা পরিচালিত হয়েছিল ২০১৯ সালে। করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯ মহামারি বাংলাদেশি জনগণের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিষণ্নতা ৫৭ দশমিক ৯, স্ট্রেস ৫৯ দশমিক ৭ ও উদ্বেগ ৩৩ দশমিক ৭ শতাংশ উপসর্গ এখন প্রাক্-মহামারি হারের তুলনায় অনেক বেশি। ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত বাংলাদেশে শিশুদের ওপর একটি পদ্ধতিগত পর্যালোচনায় দেখা যায়, তাদের মানসিক অসুস্থতা ১৩ দশমিক ৪ থেকে ২২ দশমিক ৯ শতাংশের মধ্যে। ২০১৯ সালের দেশব্যাপী প্রতিনিধি সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের আত্মহত্যার প্রবণতা কম। বাংলাদেশে শূন্য দশমিক ২ এবং শূন্য দশমিক ৮ শতাংশের মধ্যে অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারের আছে বলে জানা যায়। ২০১৯ সালের গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ বিষণ্নতার বিস্তার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ১৫ মাসের মধ্যে উদ্বেগের প্রবণতা ২৭ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। শহর ও আধা শহুরে স্কুলের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ২০১৮ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ হতাশার লক্ষণে ভুগছে, যার মধ্যে মেয়েরা ৪২ দশমিক ৯ এবং ছেলেরা ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১৩ সালের একটি সমীক্ষা থেকে জানা গেছে যে শহরের স্কুলগুলোতে ২৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর বিষণ্নতার লক্ষণগুলো দেখা যায়। এর মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা ৩০ আর ছেলেদের ১৯ শতাংশ। ২০১৩ সালের অপর এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশি মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা ছিল ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশ।
এই সমস্যার পেছনের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তার মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা, অপ্রাপ্তি, অসহনীয় সামাজিক চাপ, শৈশবকালীন বিলম্বিত বিকাশ, অপুষ্টি, যথাযথভাবে প্রতিপালনের অভাব, নিরক্ষরতা, আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাব, মানসিক ও যৌন হয়রানি, সহিংসতা, যৌতুকের চাপ, পরকীয়া ও দাম্পত্য কলহ ইত্যাদি। এই উপাদানগুলো মানসিক সমস্যা তৈরি করার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও শারীরিক সমস্যা বৃদ্ধি করছে। যেমন ডায়াবেটিস, ক্যানসার, হৃদ্রোগ, হাঁপানি, মাইগ্রেন ইত্যাদি। একজন ব্যক্তি যখন মানসিক চাপে থাকে, তখন তার শারীরিক সমস্যাগুলো বৃদ্ধি পায়, আবার দীর্ঘদিন ধরে শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকলে মানসিকভাবেও সে ভেঙে পড়ে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যক্তি মানসিক অসুস্থতার বিষয়টি নিজের মধ্যে চেপে রাখে। অসুস্থতা মারাত্মক পর্যায়ে গেলে খোঁজ পড়ে মনোরোগ চিকিৎসক অথবা মনোরোগবিদের।
বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির বিষয়টি মূলত শহরকেন্দ্রিক। সারা দেশ থেকে প্রতিবছর আনুমানিক ৭ হাজার শিক্ষার্থী চিকিৎসাশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করলেও মনোচিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন মাত্র কয়েকজন। মানসিক স্বাস্থ্যসেবাগুলো মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, সাইকিয়াট্রিক নার্স ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টদের দ্বারা দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশে তাঁদের মধ্যে কোনো ধরনের সমন্বয় চোখে পড়ে না। মানসিক স্বাস্থ্যসেবাগুলো প্রায়ই বিভাগীয় স্তরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, যেখানে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা শহরের মধ্যে অবস্থিত তৃতীয় স্তরের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। মাত্র ২৬০ জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ১৬২ মিলিয়নের দেশে সেবা দিচ্ছেন। তাই জনসংখ্যার বেশির ভাগই মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা গ্রহণ করতে পারছে না।
বাংলাদেশে মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি এবং চিকিৎসা অবহেলিত, বিশেষ করে শহর ও গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে। অনেক ক্ষেত্রে তারা তো জানতেও পারে না যে তাদের মনের রোগ হয়েছে। বস্তিগুলোতে অন্যান্য অসংক্রামক রোগের পাশাপাশি মানসিক রোগের ব্যাপারেও সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রতিটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে অন্তত একজন মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শক থাকা জরুরি। যেহেতু এ ক্ষেত্রে জনবলের অভাব একটি বড় সমস্যা, তাই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাড়াতে হবে জনবল। জনসাধারণের মানসিক স্বাস্থ্য সুবিধার অভাব, দক্ষ মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের অভাব ইত্যাদি কারণ বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবাদানে বড় বাধা। জাতীয় মনোসামাজিক কাউন্সিল নীতিমালায় এ ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছার প্রমাণ মেলে। আমরা প্রত্যাশা করি, নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সবার মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সুনিশ্চিত হোক।
ডা. মো. শামীম হায়দার তালুকদার, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এমিনেন্স অ্যাসোসিয়েটস ,ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট, ইউনিসেফ
ডা. মো. শামীম হায়দার তালুকদার

বাংলাদেশে মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি এবং চিকিৎসা অবহেলিত, বিশেষ করে শহর ও গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে। অনেক ক্ষেত্রে তারা তো জানতেও পারে না যে তাদের মনের রোগ হয়েছে। জ্বর হলে চিকিৎসকের কাছে না গেলেও ঝটপট প্যারাসিটামল খেয়ে সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করেন আপনি, কিন্তু কখনো কি খোঁজ নিয়েছেন মনের স্বাস্থ্য কেমন আছে? ২০১৯ সালে মহামারির আগে সারা বিশ্বে আনুমানিক আটজনের মধ্যে একজন মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন। একই সময়ে, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সেবা, দক্ষতা এবং তহবিল ছিল প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম। কোভিড-১৯ মহামারি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশ্বব্যাপী সংকট তৈরি করেছে, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি চাপ বাড়িয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য দুর্বল করেছে। মহামারির প্রথম বছরে উদ্বেগ ও হতাশাজনিত ব্যাধি উভয় মিলে ২৫ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সেবাগুলো মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।
বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, যার জনসংখ্যার ঘনত্ব অন্য যেকোনো বড় দেশের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি। গ্রামের তুলনায় শহরের জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। নানা কারণে নগরবাসীর মানসিক স্বাস্থ্য বিঘ্নিত হচ্ছে। মানসিক স্বাস্থ্য প্রভাবিত করে এমন কয়েকটি কারণের মধ্যে রয়েছে জনসংখ্যার ঘনত্ব, আবাসন, অর্থনৈতিক অবস্থা, কর্মসংস্থান, জীবনের অভিজ্ঞতা ও রোগের বোঝা। সাধারণ জনগণের আর্থিক অবস্থা প্রভাবিত করে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে। করোনাকালে এ সমস্যা আরও প্রকটতর হয়। মহামারির প্রাথমিক পর্যায়ে, অনেক হাসপাতাল কোভিড-১৯-এর চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত ছিল না এবং পরীক্ষার সুবিধা সীমিত ছিল। এই পরিস্থিতি অনেক বাংলাদেশির মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করেছে। ২৬ মার্চ ২০২০ থেকে লকডাউন কার্যকর হওয়ার পর সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। দিনের পর দিন মানুষ ঘরবন্দী থাকতে বাধ্য হয়। আর এসব কারণে বিষণ্নতাসহ অন্যান্য মানসিক রোগ দানা বাঁধতে থাকে মানুষের মাঝে। সাধারণ বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবসংক্রান্ত একটি গবেষণা থেকে দেখা যায়, সাধারণ জনসংখ্যার মধ্যে একাকিত্ব ৭১, বিষণ্নতা ৩৮, উদ্বেগ ৬৪ ও ঘুমের ব্যাঘাতের প্রাদুর্ভাবের হার ছিল ৭৩ শতাংশ।
বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রথম জাতীয় জরিপ পরিচালিত হয়েছিল ২০০৩-০৫ সালে। আর দেশব্যাপী প্রতিনিধি সমীক্ষা পরিচালিত হয়েছিল ২০১৯ সালে। করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯ মহামারি বাংলাদেশি জনগণের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিষণ্নতা ৫৭ দশমিক ৯, স্ট্রেস ৫৯ দশমিক ৭ ও উদ্বেগ ৩৩ দশমিক ৭ শতাংশ উপসর্গ এখন প্রাক্-মহামারি হারের তুলনায় অনেক বেশি। ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত বাংলাদেশে শিশুদের ওপর একটি পদ্ধতিগত পর্যালোচনায় দেখা যায়, তাদের মানসিক অসুস্থতা ১৩ দশমিক ৪ থেকে ২২ দশমিক ৯ শতাংশের মধ্যে। ২০১৯ সালের দেশব্যাপী প্রতিনিধি সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের আত্মহত্যার প্রবণতা কম। বাংলাদেশে শূন্য দশমিক ২ এবং শূন্য দশমিক ৮ শতাংশের মধ্যে অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারের আছে বলে জানা যায়। ২০১৯ সালের গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ বিষণ্নতার বিস্তার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ১৫ মাসের মধ্যে উদ্বেগের প্রবণতা ২৭ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। শহর ও আধা শহুরে স্কুলের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ২০১৮ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ হতাশার লক্ষণে ভুগছে, যার মধ্যে মেয়েরা ৪২ দশমিক ৯ এবং ছেলেরা ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১৩ সালের একটি সমীক্ষা থেকে জানা গেছে যে শহরের স্কুলগুলোতে ২৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর বিষণ্নতার লক্ষণগুলো দেখা যায়। এর মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা ৩০ আর ছেলেদের ১৯ শতাংশ। ২০১৩ সালের অপর এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশি মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা ছিল ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশ।
এই সমস্যার পেছনের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তার মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা, অপ্রাপ্তি, অসহনীয় সামাজিক চাপ, শৈশবকালীন বিলম্বিত বিকাশ, অপুষ্টি, যথাযথভাবে প্রতিপালনের অভাব, নিরক্ষরতা, আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাব, মানসিক ও যৌন হয়রানি, সহিংসতা, যৌতুকের চাপ, পরকীয়া ও দাম্পত্য কলহ ইত্যাদি। এই উপাদানগুলো মানসিক সমস্যা তৈরি করার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও শারীরিক সমস্যা বৃদ্ধি করছে। যেমন ডায়াবেটিস, ক্যানসার, হৃদ্রোগ, হাঁপানি, মাইগ্রেন ইত্যাদি। একজন ব্যক্তি যখন মানসিক চাপে থাকে, তখন তার শারীরিক সমস্যাগুলো বৃদ্ধি পায়, আবার দীর্ঘদিন ধরে শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকলে মানসিকভাবেও সে ভেঙে পড়ে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যক্তি মানসিক অসুস্থতার বিষয়টি নিজের মধ্যে চেপে রাখে। অসুস্থতা মারাত্মক পর্যায়ে গেলে খোঁজ পড়ে মনোরোগ চিকিৎসক অথবা মনোরোগবিদের।
বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির বিষয়টি মূলত শহরকেন্দ্রিক। সারা দেশ থেকে প্রতিবছর আনুমানিক ৭ হাজার শিক্ষার্থী চিকিৎসাশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করলেও মনোচিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন মাত্র কয়েকজন। মানসিক স্বাস্থ্যসেবাগুলো মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, সাইকিয়াট্রিক নার্স ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টদের দ্বারা দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশে তাঁদের মধ্যে কোনো ধরনের সমন্বয় চোখে পড়ে না। মানসিক স্বাস্থ্যসেবাগুলো প্রায়ই বিভাগীয় স্তরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, যেখানে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা শহরের মধ্যে অবস্থিত তৃতীয় স্তরের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। মাত্র ২৬০ জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ১৬২ মিলিয়নের দেশে সেবা দিচ্ছেন। তাই জনসংখ্যার বেশির ভাগই মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা গ্রহণ করতে পারছে না।
বাংলাদেশে মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি এবং চিকিৎসা অবহেলিত, বিশেষ করে শহর ও গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে। অনেক ক্ষেত্রে তারা তো জানতেও পারে না যে তাদের মনের রোগ হয়েছে। বস্তিগুলোতে অন্যান্য অসংক্রামক রোগের পাশাপাশি মানসিক রোগের ব্যাপারেও সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রতিটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে অন্তত একজন মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শক থাকা জরুরি। যেহেতু এ ক্ষেত্রে জনবলের অভাব একটি বড় সমস্যা, তাই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাড়াতে হবে জনবল। জনসাধারণের মানসিক স্বাস্থ্য সুবিধার অভাব, দক্ষ মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের অভাব ইত্যাদি কারণ বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবাদানে বড় বাধা। জাতীয় মনোসামাজিক কাউন্সিল নীতিমালায় এ ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছার প্রমাণ মেলে। আমরা প্রত্যাশা করি, নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সবার মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সুনিশ্চিত হোক।
ডা. মো. শামীম হায়দার তালুকদার, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এমিনেন্স অ্যাসোসিয়েটস ,ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট, ইউনিসেফ

বাংলাদেশে মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি এবং চিকিৎসা অবহেলিত, বিশেষ করে শহর ও গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে। অনেক ক্ষেত্রে তারা তো জানতেও পারে না যে তাদের মনের রোগ হয়েছে। জ্বর হলে চিকিৎসকের কাছে না গেলেও ঝটপট প্যারাসিটামল খেয়ে সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করেন আপনি, কিন্তু কখনো কি খোঁজ নিয়েছেন মনের স্বাস্থ্য কেমন আছে? ২০১৯ সালে মহামারির আগে সারা বিশ্বে আনুমানিক আটজনের মধ্যে একজন মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন। একই সময়ে, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সেবা, দক্ষতা এবং তহবিল ছিল প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম। কোভিড-১৯ মহামারি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশ্বব্যাপী সংকট তৈরি করেছে, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি চাপ বাড়িয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য দুর্বল করেছে। মহামারির প্রথম বছরে উদ্বেগ ও হতাশাজনিত ব্যাধি উভয় মিলে ২৫ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সেবাগুলো মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।
বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, যার জনসংখ্যার ঘনত্ব অন্য যেকোনো বড় দেশের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি। গ্রামের তুলনায় শহরের জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। নানা কারণে নগরবাসীর মানসিক স্বাস্থ্য বিঘ্নিত হচ্ছে। মানসিক স্বাস্থ্য প্রভাবিত করে এমন কয়েকটি কারণের মধ্যে রয়েছে জনসংখ্যার ঘনত্ব, আবাসন, অর্থনৈতিক অবস্থা, কর্মসংস্থান, জীবনের অভিজ্ঞতা ও রোগের বোঝা। সাধারণ জনগণের আর্থিক অবস্থা প্রভাবিত করে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে। করোনাকালে এ সমস্যা আরও প্রকটতর হয়। মহামারির প্রাথমিক পর্যায়ে, অনেক হাসপাতাল কোভিড-১৯-এর চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত ছিল না এবং পরীক্ষার সুবিধা সীমিত ছিল। এই পরিস্থিতি অনেক বাংলাদেশির মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করেছে। ২৬ মার্চ ২০২০ থেকে লকডাউন কার্যকর হওয়ার পর সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। দিনের পর দিন মানুষ ঘরবন্দী থাকতে বাধ্য হয়। আর এসব কারণে বিষণ্নতাসহ অন্যান্য মানসিক রোগ দানা বাঁধতে থাকে মানুষের মাঝে। সাধারণ বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবসংক্রান্ত একটি গবেষণা থেকে দেখা যায়, সাধারণ জনসংখ্যার মধ্যে একাকিত্ব ৭১, বিষণ্নতা ৩৮, উদ্বেগ ৬৪ ও ঘুমের ব্যাঘাতের প্রাদুর্ভাবের হার ছিল ৭৩ শতাংশ।
বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রথম জাতীয় জরিপ পরিচালিত হয়েছিল ২০০৩-০৫ সালে। আর দেশব্যাপী প্রতিনিধি সমীক্ষা পরিচালিত হয়েছিল ২০১৯ সালে। করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯ মহামারি বাংলাদেশি জনগণের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিষণ্নতা ৫৭ দশমিক ৯, স্ট্রেস ৫৯ দশমিক ৭ ও উদ্বেগ ৩৩ দশমিক ৭ শতাংশ উপসর্গ এখন প্রাক্-মহামারি হারের তুলনায় অনেক বেশি। ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত বাংলাদেশে শিশুদের ওপর একটি পদ্ধতিগত পর্যালোচনায় দেখা যায়, তাদের মানসিক অসুস্থতা ১৩ দশমিক ৪ থেকে ২২ দশমিক ৯ শতাংশের মধ্যে। ২০১৯ সালের দেশব্যাপী প্রতিনিধি সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের আত্মহত্যার প্রবণতা কম। বাংলাদেশে শূন্য দশমিক ২ এবং শূন্য দশমিক ৮ শতাংশের মধ্যে অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারের আছে বলে জানা যায়। ২০১৯ সালের গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ বিষণ্নতার বিস্তার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ১৫ মাসের মধ্যে উদ্বেগের প্রবণতা ২৭ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। শহর ও আধা শহুরে স্কুলের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ২০১৮ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ হতাশার লক্ষণে ভুগছে, যার মধ্যে মেয়েরা ৪২ দশমিক ৯ এবং ছেলেরা ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১৩ সালের একটি সমীক্ষা থেকে জানা গেছে যে শহরের স্কুলগুলোতে ২৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর বিষণ্নতার লক্ষণগুলো দেখা যায়। এর মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা ৩০ আর ছেলেদের ১৯ শতাংশ। ২০১৩ সালের অপর এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশি মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা ছিল ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশ।
এই সমস্যার পেছনের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তার মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা, অপ্রাপ্তি, অসহনীয় সামাজিক চাপ, শৈশবকালীন বিলম্বিত বিকাশ, অপুষ্টি, যথাযথভাবে প্রতিপালনের অভাব, নিরক্ষরতা, আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাব, মানসিক ও যৌন হয়রানি, সহিংসতা, যৌতুকের চাপ, পরকীয়া ও দাম্পত্য কলহ ইত্যাদি। এই উপাদানগুলো মানসিক সমস্যা তৈরি করার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও শারীরিক সমস্যা বৃদ্ধি করছে। যেমন ডায়াবেটিস, ক্যানসার, হৃদ্রোগ, হাঁপানি, মাইগ্রেন ইত্যাদি। একজন ব্যক্তি যখন মানসিক চাপে থাকে, তখন তার শারীরিক সমস্যাগুলো বৃদ্ধি পায়, আবার দীর্ঘদিন ধরে শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকলে মানসিকভাবেও সে ভেঙে পড়ে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যক্তি মানসিক অসুস্থতার বিষয়টি নিজের মধ্যে চেপে রাখে। অসুস্থতা মারাত্মক পর্যায়ে গেলে খোঁজ পড়ে মনোরোগ চিকিৎসক অথবা মনোরোগবিদের।
বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির বিষয়টি মূলত শহরকেন্দ্রিক। সারা দেশ থেকে প্রতিবছর আনুমানিক ৭ হাজার শিক্ষার্থী চিকিৎসাশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করলেও মনোচিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন মাত্র কয়েকজন। মানসিক স্বাস্থ্যসেবাগুলো মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, সাইকিয়াট্রিক নার্স ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টদের দ্বারা দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশে তাঁদের মধ্যে কোনো ধরনের সমন্বয় চোখে পড়ে না। মানসিক স্বাস্থ্যসেবাগুলো প্রায়ই বিভাগীয় স্তরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, যেখানে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা শহরের মধ্যে অবস্থিত তৃতীয় স্তরের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। মাত্র ২৬০ জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ১৬২ মিলিয়নের দেশে সেবা দিচ্ছেন। তাই জনসংখ্যার বেশির ভাগই মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা গ্রহণ করতে পারছে না।
বাংলাদেশে মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি এবং চিকিৎসা অবহেলিত, বিশেষ করে শহর ও গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে। অনেক ক্ষেত্রে তারা তো জানতেও পারে না যে তাদের মনের রোগ হয়েছে। বস্তিগুলোতে অন্যান্য অসংক্রামক রোগের পাশাপাশি মানসিক রোগের ব্যাপারেও সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রতিটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে অন্তত একজন মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শক থাকা জরুরি। যেহেতু এ ক্ষেত্রে জনবলের অভাব একটি বড় সমস্যা, তাই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাড়াতে হবে জনবল। জনসাধারণের মানসিক স্বাস্থ্য সুবিধার অভাব, দক্ষ মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের অভাব ইত্যাদি কারণ বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবাদানে বড় বাধা। জাতীয় মনোসামাজিক কাউন্সিল নীতিমালায় এ ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছার প্রমাণ মেলে। আমরা প্রত্যাশা করি, নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সবার মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সুনিশ্চিত হোক।
ডা. মো. শামীম হায়দার তালুকদার, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এমিনেন্স অ্যাসোসিয়েটস ,ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট, ইউনিসেফ

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

বাংলাদেশে মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি এবং চিকিৎসা অবহেলিত, বিশেষ করে শহর ও গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে। অনেক ক্ষেত্রে তারা তো জানতেও পারে না যে তাদের মনের রোগ হয়েছে।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

বাংলাদেশে মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি এবং চিকিৎসা অবহেলিত, বিশেষ করে শহর ও গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে। অনেক ক্ষেত্রে তারা তো জানতেও পারে না যে তাদের মনের রোগ হয়েছে।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

বাংলাদেশে মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি এবং চিকিৎসা অবহেলিত, বিশেষ করে শহর ও গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে। অনেক ক্ষেত্রে তারা তো জানতেও পারে না যে তাদের মনের রোগ হয়েছে।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

বাংলাদেশে মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি এবং চিকিৎসা অবহেলিত, বিশেষ করে শহর ও গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে। অনেক ক্ষেত্রে তারা তো জানতেও পারে না যে তাদের মনের রোগ হয়েছে।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫