Ajker Patrika

জীবিকায় হাত, তবু সুখ সেতুটা হয়েছে

রোকনুজ্জামান মনি, ঢাকা
আপডেট : ২২ জুন ২০২২, ১২: ৪৩
জীবিকায় হাত, তবু সুখ সেতুটা হয়েছে

দিন গড়িয়ে রাত, রাত গড়িয়ে ভোর নামলেও এখানে কোলাহল লেগে থাকে যানবাহনের যাত্রী, ড্রাইভার, স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকানদার আর দর্শনার্থীদের। মানুষ-গাড়ি-সওদাপাতি আর ইলিশ ভাজার গন্ধে গমগম করে পদ্মার দুই তীরের ফেরিঘাট। তবে সেতু চালু হলে ফেরিঘাটের চিরায়ত এই ব্যস্ততার যবনিকাপাত হয়ে যাবে ধীরে ধীরে। এ আশঙ্কা স্থানীয়দের। ফলে স্বাভাবিকভাবে নিজেদের জীবিকা নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন ভাসমান দোকানি ও হকাররা। তবে জীবিকার এই সংকটেও সেতু পেয়ে তাঁদের মুখে আনন্দের হাসি।

১৬ বছর ধরে ফেরিতে বাদাম বিক্রি করেন বিল্লাল হোসেন (৩২)। এটাই তাঁর জীবিকা। এই করেই চলত ছয় সদস্যের সংসার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিও তিনি। সেতু চালু হলে কী হবে, এ নিয়ে তিনি চিন্তিত। সামনে কীভাবে সংসার চলবে, তা-ও তাঁর জানা নেই। তবে কোনো একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে ভেবেই নিজেকে শক্ত করছেন তিনি। বিল্লাল বলেন, ‘জানি না কীভাবে সামনে সংসার চলবে। তবে আল্লাহ একটা ব্যবস্থা করবেই। এই সেতুটা আমাদের খুব দরকার ছিল। নিজেদের কিছু কষ্ট হলেও সেতু পেয়ে আমরা খুশি।’

বিল্লালের মতো বিনয় সরকারও (৫০) জীবনের প্রায় ৩০ বছর কাটিয়ে দিলেন ফেরিঘাটে। ছোটবেলায় বাবার বেতের মোড়া বানানো শিখে সেটাকেই জীবিকা বানিয়েছিলেন তিনি। ফেরিতে মোড়া বিক্রি করে বড় করেছেন সন্তানদের। বিয়ে দিয়েছেন দুই মেয়েকে। ছেলে বড় হয়েছে, বাবার সঙ্গে মোড়াও বিক্রি করে। ঘুরতে ঘুরতে বিনয় সরকারের সঙ্গে দেখা। তিনি বলেন, ‘সারাটা জীবন এখানেই কেটে গেল। এই ঘাটে আমাদের কত স্মৃতি তা কেমনে বোঝাই। এই ঘাট আমাদের সুখ-দুঃখের সাক্ষী। ফেরি বন্ধ হলে আমাদের এত দিনের কাজের ধারা বদলে যাবে। জীবন তো থেমে থাকবে না। তাই গ্রামে গ্রামে ঘুরে মোড়া বিক্রি করব। সবকিছু নতুনভাবে শুরু করতে হবে। তবে সেতু পেয়ে আমরা খুশি। এখন আমাদের এই অঞ্চলের আরও উন্নয়ন হলে আমরা উপকৃত হব।’

চার বছর ধরে ফেরিতে ডিম বিক্রি করে রাব্বি (১৫)। সকাল থেকে রাত কাটে তার ফেরিতে—ঘুমও সেখানে। মা-বাবা বেঁচে নেই। তাই এখানেই গড়ে উঠেছে তার ভাসমান সংসার আর ব্যবসা। সেতু চালু হলে ফেরি বন্ধ হবে, সে কথা জানে রাব্বি। তাই ঠিক করেছে ঢাকায় চলে আসবে। গার্মেন্টসে কাজ নেবে। অথচ এই শহরে তার পরিচিত কেউ নেই। ঘরসংসার, পরিবার বলতে তার সেই ফেরি আর ফেরিঘাট। মায়া আর পিছুটানের সেই ঘাট ছেড়ে আসার কথা বলতেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে রাব্বি। তবে ‘মাইনসের খুব উপকার হইবো ছার’ বলে তৃপ্তির চোখে তাকায় উত্তাল পদ্মার দিকে।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু সম্পর্কে সবশেষ খবর পেতে - এখানে ক্লিক করুন 

জীবিকার কী হবে—প্রশ্নটা সবার। তবে বিল্লাল হোসেন, বিনয় সরকার কিংবা রাব্বির মতো ভাসমান ব্যবসায়ীদের কাছে প্রশ্নটা আরও বড়। অথচ এই মানুষগুলোই নিজেদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় রেখেও ভাবছেন, দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন হবে, মানুষের ভোগান্তি কমবে। জীবিকার আশঙ্কার এই সময়েও এক বিরাট জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বপ্ন আর ভোগান্তি কমার সম্ভাবনা এই মানুষদের কাছেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

পদ্মা সেতু সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পুলিশের তিন পদে অতিরিক্ত: তিনজনে একজন বাড়তি

ট্রেনের কেবিনের বালিশ, চাদর, কম্বলের ভাড়া দ্বিগুণ করার চিন্তা

ভারতে পোশাকের অর্ডার স্থগিত করছে মার্কিন ক্রেতারা, বাংলাদেশ-ভিয়েতনামে কারখানা স্থানান্তরের পরামর্শ

মোবাইল-টাকা ছিনতাইয়ের পর দুই তরুণীকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৩

ডোপ টেস্টে পজিটিভ, চবিতে শিক্ষকতা থেকে বাদ দুই প্রার্থী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত