Ajker Patrika

দ্বীপ এলাকা থেকে বিদ্যালয় সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা

আরিফুল হক তারেক, মুলাদী
আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২২, ১৩: ৪০
দ্বীপ এলাকা থেকে বিদ্যালয় সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা

মুলাদীতে দ্বীপ এলাকা থেকে একমাত্র নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়টি সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। উপজেলার গাছুয়া ইউনিয়নে জয়ন্তী নদীর উত্তরপাড়ে কৃষ্ণপুর এলাকা থেকে সৈয়দা শাহাজাদী বেগম নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি আগের স্থানে সরিয়ে নিতে চাইছেন প্রধান শিক্ষক ও তার সহযোগীরা। এতে দ্বীপ এলাকার শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা অভিভাবকদের।

তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের সময়ের চুক্তি অনুযায়ী আগের জায়গায় বিদ্যালয়টি নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

জানা গেছে, ১৯৭২ সালে গাছুয়া ইউনিয়নের উত্তর গাছুয়া এলাকায় সৈয়দা শাহাজাদী বেগম নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে কিছু শিক্ষার্থী থাকলেও পরবর্তীতে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিদ্যালয়টির কাছাকাছি সৈয়দেরগাঁও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ইসলামাবাদ নেছারিয়া আলিম মাদরাসা থাকায় নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রায় অচল হয়ে পরে।

নদী ভাঙনে বিলীন হওয়ার উপক্রম হলে ২০১০ সালে সৈয়দা শাহাজাদী নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়টি দ্বীপ এলাকা কৃষ্ণপুর গ্রামে স্থানান্তর করা হয়। ওই এলাকায় কোনো বিদ্যালয় না থাকায় প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছেলে-মেয়েরা বাড়ির থেকেই লেখাপড়া করার সুযোগ পায়।

কৃষ্ণপুর গ্রামের মিলু বেপারী জানান, সৈয়দা শাহাজাদী বেগম নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়টি উত্তরগাছুয়া এলাকায় থাকাকালীন প্রায় শিক্ষার্থী শূন্য হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থী না থাকায় স্কুলটি বন্ধ হওয়ারও উপক্রম হয়েছিল। ২০০৫-২০০৬ সালের দিকে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১০ সালে নদী ভাঙনের সময় বিদ্যালয়টি কৃষ্ণপুরে স্থানান্তর করা হয়। নদী বেষ্টিত এলাকায় অন্য কোনো বিদ্যালয় না থাকায় প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পায়। এখন বিদ্যালয়টি অনেক ভালোভাবে চলছে। বর্তমানে প্রায় ১৮০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

একই গ্রামের মোতালেব খন্দকার বলেন, বিদ্যালয়টি নিম্নমাধ্যমিক হলেও শিক্ষার্থীরা ৬ষ্ঠ থেকে এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করতে পারছে। পার্শ্ববর্তী একটি বিদ্যালয় থেকে ৯ম শ্রেণির নিবন্ধন করে এসএসসি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ের নামে ৫২ শতাংশ জমি দেওয়া হয়েছে। এলাকায় বিদ্যালয় রক্ষার্থে প্রয়োজনে আরও জমি দেওয়া হবে। কিন্তু একটি মহল বিদ্যালয়টি আগের জায়গায় নিতে চাইছে। এতে বিদ্যালয়টি পুনরায় শিক্ষার্থী শূন্য হয়ে পরবে এবং কৃষ্ণপুর গ্রামের ছেলে মেয়েদের নদী পার হয়ে বিদ্যালয় যেতে হবে।

বিদ্যালয়ের জমি দাতা দেলোয়ার হোসেন রাড়ী জানান, কৃষ্ণপুর প্রত্যন্ত ও অবহেলিত জনপদ। এখানে বিদ্যালয়টির অনেক প্রয়োজন। যদিও বিদ্যালয়টি অস্থায়ী ভাবে এখানে আনা হয়েছিল। কিন্তু এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বেড়েছে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বঞ্চিত জনপদে একটি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া এই এলাকায় কোনো সাইক্লোন শেল্টার কিংবা বড় ভবন নেই। সেই হিসেবে সাংসদ গোলাম কিবরিয়া টিপু বিদ্যালয়ের

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফরোজা বেগম জানান, নদী ভাঙনের ফলে বিদ্যালয়টি অস্থায়ী ভাবে কৃষ্ণপুর এলাকায় স্থানান্তর করা হয়। ওই সময় চুক্তি ছিল, নদী ভাঙন বন্ধ হলে বিদ্যালয়টি পূর্বের স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। ২০১৬ সালে নদী ভাঙন বন্ধ হয়ে যায়। এর পরে বিদ্যালয়টি পূর্বের স্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে কিছু লোক বাধা দেন। বিদ্যালয়ের নামে একটি নতুন তিনতলা ভবন বরাদ্দ হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন স্থানেই ভবনটি নির্মাণ হওয়ার কথা। সে অনুযায়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা দপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া উত্তরগাছুয়া এলাকার সাধারণ মানুষ বিদ্যালয়টি আগের জায়গায় নিয়ে আসার জন্য মানববন্ধনও করেছেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সাংসদ শাহাজাদী বেগম নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একটি ভবন নির্মাণের জন্য নির্দেশনা (ডিও লেটার) দিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী ভবনটি নির্মাণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...