Ajker Patrika

১০০ টাকা ও বাজার

সম্পাদকীয়
১০০ টাকা ও বাজার

কেউ যদি এখন ১০০ টাকার একটি নোট নিয়ে বাজারে যান, তাহলে তিনি কী কী পণ্য কিনে ঘরে ফিরতে পারবেন? নিম্ন আয়ের মানুষই শুধু এখন এই সংকটে ভুগছেন না, যাঁরা নিজেদের মধ্য আয়ের মানুষ বলে মনে করতেন, তাঁরাও বুঝতে পারছেন ট্যাঁকে টান পড়েছে।

আমরা সবাই জানি, করোনা আর রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে দাম বাড়তি। এ কথা আমজনতাকে বারবার বোঝানো হয়েছে। এর সবটাই কি শুভংকরের ফাঁকি নয়? এই দুই সংকট যে অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করেছে, তা নিয়েও আমাদের দ্বিমত নেই। সারা বিশ্বই এই দুই কারণে ভুগছে। কিন্তু এটাই তো একমাত্র কারণ নয়। আরও কিছু কারণ যুক্ত হওয়ার ফলেই আমাদের সংকটটা এত গভীর হয়ে উঠেছে।

লক্ষ করলেই দেখা যাবে, চাহিদা ও জোগানের স্বাভাবিক নিয়মে বাজার নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে না। বাজারে ব্যবসায়ীদের কারসাজি এখন ওপেন সিক্রেট। খোদ বাণিজ্যমন্ত্রীই তো বলেছিলেন, সিন্ডিকেটের ওপর হাত দিলে সংকট তৈরি হতে পারে। এতে সিন্ডিকেটভুক্ত মুনাফাখোরেরা যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হঠাৎ করে কিছুদিনের জন্য বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা মুনাফা করছে তারা। ওপরমহলের সঙ্গে যোগসাজশ না থাকলে এ রকম ঘটনা ঘটা কঠিন।

সবজির বাজারে ১০০ টাকা হাতে নিয়ে ঢুকলে এখন নিজেকে খুবই অসহায় ও অনিরাপদ ভাবা ছাড়া উপায় নেই। আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটিতে দেখা যাচ্ছে, এক স্কুলশিক্ষক পাঁচমিশালি সবজি দিয়ে আর সকালের নাশতা করতে পারছেন না। শুধু পেঁপেভাজি দিয়ে নাশতা করছেন। এই চিত্র আরও ভয়ংকর হয়ে বিজ্ঞাপিত হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষের ঘরে।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক সদিচ্ছা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু এই সদিচ্ছার পিঠে ছুরি মারছে তাঁরই দলের লোকেরা। বাজার অস্থিতিশীল রেখে ফায়দা লোটা বন্ধ করা না হলে সাধারণ জনগণের পারিবারিক বাজেট মেলাতে গলদঘর্ম হবে।

সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, অল্প কিছু সময়ের মধ্যে পণ্যের দাম কোথাও কোথাও দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেলেও মানুষের আয় দাঁড়িয়ে রয়েছে আগের জায়গাতেই। ফলে মানুষ খুব দ্রুত গরিব হয়ে যাচ্ছে। সরকার নানা ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমে গরিব মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে বটে, কিন্তু এটা তো দীর্ঘদিনের প্রক্রিয়া হতে পারে না। আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করে এই দারিদ্র্যের মোকাবিলা করতে হবে। লাইনে দাঁড়িয়ে কম দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ—এটা কোনো কাজের কথা নয়।

সবজির দাম প্রায় সব ক্ষেত্রেই সেঞ্চুরি করায় ১০০ টাকা এখন হয়ে গেছে মূল্যহীন। ভাবা যায়, একের পরে দুটো শূন্য যোগ হওয়া কড়কড়ে নোটটির মূল্যমানে শূন্যতা নেমে এসেছে!

বদমাশ মুনাফাখোর সিন্ডিকেটে কারা আছে, তারা কী করে বেড়াচ্ছে, সেটা সরকারি মহল জানে না, তা হতে পারে না। এদের ডাকাতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে কে? বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার প্রশ্ন এলে দেখা যাবে, আশপাশে সবই তো বিড়াল!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা–ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

ভারত–বাংলাদেশ বাণিজ্য বিধিনিষেধের মূল্য গুনছেন ব্যবসায়ীরা

সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষকেরা পাচ্ছেন গেজেটেড মর্যাদা

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে আরেকটি প্রক্সি ওয়ারে জড়াতে চায়: ফরহাদ মজহার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত