Ajker Patrika

মামলার ফাঁদে ৩৮ বছর ধরে একই ভাড়া

এস এম নূর মোহাম্মদ, ঢাকা
মামলার ফাঁদে ৩৮ বছর ধরে একই ভাড়া

দোকানের ভাড়া ছিল মাসিক ৫০০ টাকা। তিন বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষে মালিক ভাড়া বাড়াতে চান, তাতে রাজি হননি ভাড়াটেরা। মালিকের পক্ষ থেকে দোকান ছেড়ে দিতে নোটিশ দেওয়া হলে ভাড়াটেরা যান আদালতে। দোকান ছেড়ে দিলে ব্যবসার ক্ষতি হওয়ার যুক্তি দেখিয়ে তাঁরা ঢাকার সাবজজ আদালতে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তখন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদালতের মাধ্যমে ভাড়া পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ভাড়াটেদের উচ্ছেদ চেয়ে মালিকও পাল্টা মামলা করেন। ১৯৮৫ সাল থেকে এভাবেই চলছে ভাড়াটে ও মালিকের আইনি লড়াই।

জানা যায়, রাজধানীর মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় চারটি দোকান নিয়ে একই মালিকের করা আলাদা মামলা চলছে আদালতে। মামলার কারণে ৩৮ বছরেও বাড়েনি ভাড়া। আদালতের মাধ্যমে ভাড়া পরিশোধ করে দোকান দখল করে আছেন ভাড়াটেরা। আর মালিক ঘুরছেন আদালতে। মামলার বাদী-বিবাদী উভয়েই মারা গেছেন। এখন তাঁদের সন্তানেরা মামলা চালান। সম্প্রতি একটি মামলায় রুল নিষ্পত্তি করে এক বছরের মধ্যে বিচার শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

মালিকের ছেলে ও বর্তমানে মামলা পরিচালনাকারী আশফাক এ রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাবা ১৯৮৫ সালে মামলা করেছিলেন। ওই মামলা এখনো শেষ হয়নি। সে কারণে ৫০ হাজার টাকার দোকানের ভাড়া এখনো আদালতের মাধ্যমে ৫০০ টাকা নিতে হচ্ছে। চারটি দোকানের বিষয়ে এ রকম মামলা আদালতে বিচারাধীন। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় আমরা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, তেমনি সরকারও আমার আয়কর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’

আদালত সূত্রে জানা যায়, আব্দুর রহমান মতিঝিলে তাঁর বেশ কয়েকটি দোকান ভাড়া দিয়েছিলেন। এগুলোর মধ্যে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে ওষুধের ব্যবসা করেন সামছুল হুদা। ১৯৮৭ সালের ৯ অক্টোবর তিনি মারা গেলে তাঁর ছেলে নুরুল আনোয়ারসহ ৭ জন মামলায় পক্ষভুক্ত হতে আবেদন করেন। তবে ওই আবেদন নিষ্পত্তির আগেই তাঁদের আইনজীবী আদালতে আবেদন করেন মামলা বাতিল চেয়ে। তাঁর যুক্তি, বাদী এই মামলার মৃত বিবাদীর উত্তরাধিকারদের পক্ষভুক্ত করতে আবেদন করেননি। তাই এই মামলা চলতে পারে না। আদালত শুনানি শেষে ১৯৮৮ সালের ৩০ জানুয়ারি মামলা বাতিল করে আদেশ দেন। পরে বাদী আব্দুর রহমানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম পুনরায় চালু করার নির্দেশ দেন আদালত।

এদিকে মামলার কার্যক্রম পুনরায় চালুর আদেশ চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে হাইকোর্টে সিভিল রিভিশন আবেদন করেন বিবাদীরা। হাইকোর্ট তাতে রুল জারি করেন। রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মারা যান বাদী আব্দুর রহমান। পরে তাতে পক্ষভুক্ত হন তাঁর সন্তান আশফাকসহ ৪ জন। ওই রুল নিষ্পত্তির জন্য কয়েক দফা আইনজীবী পরিবর্তন করা হয়। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম মাসুদ রানার কাছে যান আশফাক। শুনানি শেষে গত ১৭ জুলাই রুল নিষ্পত্তি করে রায় দেন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ। সেই সঙ্গে এক বছরের মধ্যে মামলার বিচারকাজ শেষ করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

আশফাক বলেন, ‘বাবার করা মামলা আমি চালাচ্ছি। আমারও বয়স হয়েছে। আমি চাই, এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হোক। নইলে আদালতের প্রতি মানুষ আস্থা হারাবে।’ প্রতিবছর ভাড়া বৃদ্ধির হার অনুযায়ী তাঁর দোকানভাড়া হিসাব করে ক্ষতিপূরণও দাবি করেন তিনি।
মালিকপক্ষের আইনজীবী এম মাসুদ রানা বলেন, এই মামলা এখন বিচারিক আদালতে নিষ্পত্তি হবে। বিচারিক আদালত চাইলে কমিশন গঠন করে দিতে পারেন। কমিশন ওই এলাকায় ভাড়া বৃদ্ধির হার হিসাব করে বছর অনুযায়ী ভাড়াটেদের কাছ থেকে বর্ধিত ভাড়া আদায়ের সুপারিশ করলে দোকানমালিক তাঁর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত