Ajker Patrika

সচ্ছলেরাও পেলেন সরকারি ঘর

আশরাফুল আলম আপন, বদরগঞ্জ (রংপুর)
সচ্ছলেরাও পেলেন সরকারি ঘর

রংপুরের বদরগঞ্জে আবাসনের ঘরে বসবাসের উপযোগী তেমন সুযোগ-সুবিধা না থাকায় অনেকে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। নিম্নাঞ্চলে ঘর নির্মাণসহ মজবুত ভিত্তি করা হয়নি। এ ছাড়া যাদের জমি ও পাকা বাড়ি আছে, এমন ব্যক্তিদের ঘর দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, আবাসনের ঘরগুলোর অবস্থান বদরগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের চম্পাতলী এলাকায় চিকলী নদীর চরে।প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে স্থানীয় প্রশাসন দুই শতক করে জমির ওপর ৭৪টি আধা পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়। প্রতিটি ঘরে নির্মাণে সরকারের ব্যয় হয় ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। দুই বছর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে ৭৪টি তালিকাভুক্ত পরিবারকে ঘরের দলিল ও চাবি হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু সেখানে বসবাস করছেন মাত্র ১৮ জন। অতিথির হাত থেকে ৫৬ জন বাড়ির দলিল ও চাবি নিয়ে গেছেন, আর ফেরেননি।

আবাসনে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে ঘর বরাদ্দ না পাওয়া পরিবারসহ মোট ৪২টি পরিবার বসবাস করছে। তাদের মধ্যে ২৪টি পরিবার আছে আতঙ্কে। কারণ, তাদের নামে বাড়ির দলিল নেই। দলিল বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিরা সেখানে না আসায় ঘরবঞ্চিত অন্য ভূমিহীনেরা পরিবার নিয়ে ওই সব ঘরে উঠেছে। আর দলিল ও চাবি নেওয়া ১৮টি পরিবার আছে শুরু থেকেই।

স্থানীয় লোকজন জানান, দামোদরপুর ইউনিয়নের আসমতপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ আলী, হামিদুল ইসলামসহ অনেকের নিজেদের জমির ওপর দালানঘর ও আবাদি জমি আছে। এরপরও তাঁরা পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর।

এ বিষয়ে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমি সরকারি বাড়ি চাইনি। আমাকে দেওয়া হয়েছিল। পরে আমি অন্যজনকে ঘরের চাবি দিয়ে থাকতে বলেছি। সেখানে কখনো যাব না মর্মে লিখিত দিয়েছি।’ হামিদুলের স্ত্রী মহসিনা বলেন, ‘ওখানে তো কিছুই নাই। ওখানে থাকলে হামার বাড়ি ঘরোত কয় থাকে?’ বাড়ি বরাদ্দ নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে মহসিনা বলেন, ‘চেয়ারম্যান-মেম্বার আইডি কার্ড নিয়েছিল, ভাবছিলাম সরকারি অন্য সুবিধা পাওয়া যাবে, কিন্তু সেখানে বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হবে তা জানতাম না।’

দামোদরপুর ইউনিয়নের বারবিঘা গ্রামের আমেনা বেগমের বাড়িঘর নেই। অন্যের জমিতে বসবাস করতেন। চেয়ারম্যান-মেম্বারের কাছে ধরনা দিয়েও সরকারি বাড়ি বরাদ্দ পাননি। আমেনা তাঁর বৃদ্ধা মা ও মেয়েকে নিয়ে আবাসনের ঘরে উঠেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার নামে এখানে দলিল নাই। কখন ঘরের মালিক এসে বের করে দেন, তার ঠিক নাই।’

ঘর বরাদ্দ পাওয়া ভোপেন চন্দ্র রায় বলেন, ‘নিচু জায়গায় ঘর বরাদ্দ পেয়েছি, সেই ঘরের ভিত্তি নেই। পরিবার নিয়ে ভয়ে থাকি। এখানে চলাচলের রাস্তাও নেই। অন্যের জায়গা দিয়ে চলাচল করি। অনেকে ঘর ছেড়ে চলে গেছেন।’

দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল বলেন, সুবিধাভোগীদের তালিকা আমরা তৈরি করিনি। ওই সময়ে সরাসরি অনেকেই জমি থাকার পরও আবেদন করেছেন ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। আমরা ভূমি অফিসকে সহযোগিতা করেছি মাত্র। যাচাই-বাছাই তাঁরাই করেছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) বাবুল চন্দ্র রায় বলেন, ‘ওই জায়গাটি নিম্নাঞ্চল। সেখানে বাড়িঘর নির্মাণ করতে আমি তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু সময়ের অজুহাত দিয়ে সেই নিষেধ তিনি শোনেননি।’

ইউএনও বলেন, ‘সরকারি ঘর বরাদ্দ পেলে অবশ্যই সেখানে থাকতে হবে। যাঁরা বরাদ্দ পেয়ে থাকেন না, তদন্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত