Ajker Patrika

উচ্ছেদে ক্ষতি ব্যবসায়ীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার
আপডেট : ৩১ মে ২০২২, ১৫: ৪১
উচ্ছেদে ক্ষতি ব্যবসায়ীদের

জমজম ব্যাটারি অ্যান্ড টায়ারের মালিক সোলায়মান হোসেন ৭ লাখ টাকা জামানত দিয়ে সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকার ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন মনসুর মার্কেট থেকে একটি দোকান ভাড়া নিয়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে এক্সকাভেটর দিয়ে সেই দোকান গুঁড়িয়ে দেন। দোকান ও ব্যবসা হারিয়ে তিনি এখন পথে পথে ঘুরছেন।

শুধু সোলায়মান হোসেনের দোকানই নয়, বৃহস্পতিবারের অভিযানে সরকারি জমির ওপর গড়ে তোলা মনসুর মার্কেটের আরও ১১টি দোকান একইভাবে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকটি দোকান চিহ্নিত করা হয়েছে, যা খুব শিগগিরই উচ্ছেদ করা হবে বলে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সাভার রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বেশ কয়েক একর পরিত্যক্ত সম্পত্তি রয়েছে। সাভার রাজালাখ হর্টিকালচার সেন্টারকে সেখান থেকে ৬৮০ শতাংশ জমি ইজারা দেওয়া হয়। স্থানীয় এক প্রভাবশালী ওই জমির অংশ দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাহিদুর রহমান ওই সব স্থাপনার অধিকাংশই গুঁড়িয়ে দেন।

হর্টিকালচার সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে মজিদপুরের জনৈক আবুল কালাম মোহাম্মদ মনসুর ও তাঁর লোকজন তাঁদের (হর্টিকালচার) প্রতিষ্ঠানের পূর্ব পাশের ৫ শতাংশ জমি দখল করে সেখানে বেশ কিছু আধা পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া দেন। কয়েক মাস আগে তাঁদের বাধা উপেক্ষা করে সেই সব স্থাপনা পাকা করা হয়। ওই সব স্থাপনা উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে গত মার্চে সাভারের ইউএনওকে পত্র দেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার ১২টি পাকা স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

আবুল কালাম মোহাম্মদ মনসুর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত আসামি। রায় ঘোষণার আগেই তিনি গোপনে দেশ ছাড়েন। এর পর আর দেশে ফেরেননি। দেশের বাইরে থাকলেও মনসুরের লোকজন তাঁর নামেই হর্টিকালচারের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মনসুর মার্কেটের পেছনে হর্টিকালচার সেন্টার আর সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও নালা। মনসুর মার্কেটের অবৈধ স্থাপনার জন্য নালা বাঁকা হয়ে মহাসড়কে ঢুকে পড়েছে। মহাসড়কের চলমান উন্নয়নকাজের অংশ হিসেবে সম্প্রতি ওই নালা নির্মাণ করা হয়।

মনসুর মার্কেটের রিমিক মটরসের মালিক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমি ৯ বছর আগে ৭ লাখ টাকা জামানত দিয়ে মনসুর মার্কেট থেকে একটি দোকান ভাড়া নিই। প্রতি মাসে ভাড়া দিচ্ছি ১৫ হাজার টাকা। আমার দোকানটিও সরকারি জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মার্কেটের মালিক মনসুর দেশে না থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।’

চা বিক্রেতা সুমন আহমেদ বলেন, ‘ধারদেনা করে জামানতের তিন লাখ টাকা জোগাড় করেছিলাম। দোকানটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এখন আমার সংসার চালানোই কষ্টকর হয়ে পড়েছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেই নালা নির্মাণ করার কথা ছিল। কিন্তু মনসুরের লোকজন সওজের ঠিকাদারের স্থানীয় প্রতিনিধিদের টাকা দিয়ে মার্কেটের পাশ দিয়ে নালা নির্মাণ করিয়ে নেন। মনে করেছিলাম এই মার্কেট হয়তো উচ্ছেদ করা হবে না।’

আবুল কালাম মোহাম্মদ মনসুর দেশের বাইরে পলাতক থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। মনসুরকে না পেয়ে কথা বলার জন্য তাঁর ছেলে শামসুদ্দিন পলাশকে ফোন দেওয়া হয়। তিনিও ফোন ধরেননি। মেয়ে দিলরুবা আক্তারকে ফোন দেওয়া হলে, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।

হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ আবু সাঈদ শুভ্র বলেন, ‘মনসুর দেশে থাকা অবস্থায় এবং তাঁর লোকজন হর্টিকালচারের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেন। প্রথম ধাপের অভিযানে ১২টি দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। খুব শিগগিরই বাকি স্থাপনা উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আবু সাঈদ শুভ্র আরও জানান, উচ্ছেদের পর থেকে তিনি বেশ চাপের মধ্যে আছেন। বিভিন্ন নম্বর থেকে তাঁকে ফোন করে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রাখতে বলা হচ্ছে।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাহিদুর রহমান বলেন, বাকি অবৈধ স্থাপনা দ্রুত উচ্ছেদ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত