Ajker Patrika

মন্ত্রীর জেলায়ও অভিযান ব্যর্থ

নওগাঁ প্রতিনিধি
মন্ত্রীর জেলায়ও অভিযান ব্যর্থ

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের জেলা নওগাঁয় ইরি-বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে চাল সংগ্রহে সফলতা এলেও ব্যর্থ হয়েছে ধান সংগ্রহ অভিযান। লক্ষ্যমাত্রার প্রায় শতভাগ চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে খাদ্য বিভাগ। তবে জেলায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধান সংগ্রহ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ধান সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হলেও সরকারের মূল উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। কারণ কৃষক ধানের ভালো দাম পেয়েছেন। অন্যদিকে চুক্তিবদ্ধ চালকল মালিকেরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাল সরবরাহ করায় প্রায় শতভাগ অর্জন সম্ভব হয়েছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ এপ্রিল থেকে জেলায় বোরো ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। শেষ হয় ৩১ আগস্ট। জেলার ১১টি উপজেলায় ৪০ টাকা কেজি দরে সেদ্ধ চালের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫৩ হাজার ৩২ মেট্রিক টন। এর মধ্যে অর্জিত হয়েছে ৪৬ হাজার ৮০৪ দশমিক ২৩০ মেট্রিক টন, অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার ৯৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

এই জেলায় চুক্তিবদ্ধ চালকলের সংখ্যা ছিল ৫৯২টি। এর মধ্যে হাস্কিং চালকল ৫৩৮ এবং অটো রাইস মিল ৫৪টি। এ ছাড়া ৩৯ টাকা কেজি দরে আতপ চালের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮৩৯ মেট্রিক টন, এর মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে ৭০৩ মেট্রিক টন।

অন্যদিকে ধান সংগ্রহে সরকার ২৭ টাকা (১০৮০ টাকা মণ) মূল্য নির্ধারণ করেছিল। জেলার ১৯টি খাদ্যগুদামে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৬ হাজার ৩৪ মেট্রিক টন, যেখানে সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ১৪০ দশমিক ৪০০ মেট্রিক টন। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

এর মধ্যে নওগাঁ সদরে সংগ্রহ ৩৭৮ দশমিক ৯২০ মেট্রিক টন, আত্রাইয়ে ২৫৫ দশমিক ৩২০, রানীনগরে ১ দশমিক ৮৮০, মান্দায় ৬৬ দশমিক ৬৪০, বদলগাছীতে ৫৫, নিয়ামতপুরে ২৫৪, পোরশায় ১২৮ দশমিক ৬৪০ মেট্রিক টন সংগ্রহ হয়েছে। এ ছাড়া জেলার সাপাহার, মহাদেবপুর, পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলায় কোনো ধরনের ধান সংগ্রহ হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ইরি-বোরো মৌসুমে কৃষকের ঘরে ধান ওঠার কিছু আগেই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে ধান উৎপাদন ব্যাহত হয়। সে সময় থেকে নতুন ধান বাজারে চড়া দামে বিক্রি হতে থাকে। বর্তমানেও প্রকারভেদে বোরো মৌসুমের ধান বাজারে ১১০০-১৫৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ধানের বাজারও ছিল ঊর্ধ্বমুখী।

স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গুদামে ধান কেনার জন্য সরকারনির্ধারিত ধানের দামের চেয়ে জেলার হাট-বাজারগুলোতে দাম বেশি ছিল। এ পরিস্থিতিতে কৃষকেরা গুদামে ধান দেননি। তার ওপর কৃষকের অতীত অভিজ্ঞতা বলে, সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে গেলে অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। আর্দ্রতার কথা বলে 
প্রতি মণে দুয়েক কেজি করে বেশি ধান নেওয়া হয়; কিন্তু স্থানীয় বাজারে এসব ঝামেলা নেই।

মাতাজি এলাকার কৃষক আবু সাঈদ বলেন, ‘গ্রেডিং, শুষ্কতা, পরিবহন খরচ, মজুরি খরচের হিসাব বিবেচনা করলে বাড়ি থেকে পাইকারের কাছে অথবা পার্শ্ববর্তী বাজারে কাছাকাছি দামে বিক্রি করাই অনেক সুবিধাজনক।’

মোহরপুর গ্রামের কৃষক জামাল হোসেন বলেন, গত ইরি-বোরো মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বাজারে দর ছিল ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। কিছুদিন পর ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়। এ কারণে গুদামে ধান দেওয়া হয়নি।

সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হওয়ার কারণ জানতে চাইলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আলমগীর কবির বলেন, ধানের বাজারমূল্য অনেক বেশি থাকায় কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য পেয়েছেন। এ জন্য ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।

এদিকে গত মঙ্গলবার জেলা সার্কিট হাউসে সংবাদ সম্মেলন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ইরি-বোরো মৌসুমে বাজারে ধানের দাম বেশি ছিল। এ জন্য কৃষকেরা সরকারের কাছে ধান দেওয়ার চেয়ে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করেছেন। তারপরও ৫০ শতাংশ ধান সংগ্রহ এবং চাল প্রায় শতভাগ সংগ্রহের আশাবাদী ছিলেন তিনি। 
ওই দিন মন্ত্রী আরও বলেন, ‘সরকার দুটি কারণে ধান কেনে। একটি হলো জাতীয় মজুত গড়ে তোলার জন্য, অন্যটি হলো কৃষকদের ন্যায্যমূল্য দেওয়া, অতএব আমরা দুটিতেই সাকসেসফুল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

আইপিএলে চাহালের রেকর্ড হ্যাটট্রিকের রাতে রহস্যময় পোস্ট এই নারীর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত