Ajker Patrika

নেতাদের নিয়ে মানামীর যাত্রা

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১০: ৪৮
নেতাদের নিয়ে মানামীর যাত্রা

বরিশাল নৌবন্দর থেকে যাত্রীসেবার লঞ্চ এমভি মানামী মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টায় ছেড়েছে। ঢাকা-বরিশাল রুটের বিলাসবহুল ও আধুনিক এ লঞ্চের যাত্রীদের কেবিন ফেরত দেওয়া হয় মঙ্গলবার সকাল থেকে। এর কারণ, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশসহ ৬০-৭০ জন নেতা-কর্মী এমভি মানামীতে চড়েই বরিশাল থেকে মধ্যরাতে রাজধানীর উদ্দেশে যান।

মানামী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সরকারি দলের লোকজনের পক্ষ থেকে রিজার্ভ নেওয়ায় যাত্রীদের টিকিট ফেরত দেওয়া হয়েছে। তবে বিআইডব্লি্উটিএ এই বক্তব্য নাকচ করে দিয়ে জানিয়েছে, মানামী টাইম টেবিল অনুযায়ী যায়নি, স্পেশাল সার্ভিস বা রিজার্ভের অনুমতিও নেয়নি। এদিকে যাত্রী সার্ভিসে থাকা লঞ্চ মানামী সূচি অনুযায়ী গন্তব্যে না যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন লঞ্চের যাত্রীরা।

গত মঙ্গলবার রাত ১১টায় বরিশাল নৌবন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, বন্দরের সব লঞ্চ ছেড়ে গেছে। কিন্তু গোটা পন্টুন ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীতে ঠাসা। অদূরে কীর্তনখোলা নদীর পূর্ব প্রান্তে যাত্রী শূন্য এমভি মানামী লঞ্চটি জ্বলজ্বল করছিল। উপস্থিত একাধিক নেতা-কর্মী জানান, যুবলীগ চেয়ারম্যান পরশ ভাই যাবেন, তাই মানামী রিজার্ভ নিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নির্দেশে শ্রমিক লীগ নেতা পরিমল চন্দ্র দাস ও আওয়ামী লীগ নেতা নিরব হোসেন টুটুল।

জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর বরিশাল নৌবন্দর কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, এমভি মানামীর টাইম টেবিল ছিল রাত ৯টা ৫০ মিনিটে। ওই লঞ্চটিসহ মোট ৭টি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরকারি দলের অনুরোধে লঞ্চটি রাত ২টায় ছেড়েছে। তিনি বলেন, এমভি মানামী সময়সূচি অনুযায়ী যাওয়ার কথা। কিন্তু বিশেষ কারণে ছাড়তে বিলম্ব হয়েছে। মানামী রিজার্ভ কিংবা স্পেশাল ট্রিপের ছিল না। স্পেশাল ট্রিপ হলে স্পেশাল অনুমতি নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে অনুমতি নেওয়া হয়নি। মানামী মূলত রোটেশনের নিয়মিত লঞ্চ ছিল। এই লঞ্চের যেসব যাত্রী কেবিনের টিকিট কেটেছেন তাঁদের ভোগান্তি প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটি সরকারি দলের লোকজনই বলতে পারবেন।’

এমভি মানামী লঞ্চের মাস্টার মো. মানিক হোসেন বলেন, ‘রাত ২টায় লঞ্চ বরিশাল বন্দর থেকে ছাড়া হয়েছে। তাতে যাত্রী ছিলেন ৬০ থেকে ৭০ জন। মঙ্গলবার সকালে জানতে পারি যাত্রীদের বুকিং বাতিল করা হচ্ছে। এটি আওয়ামী লীগের লোকজন রিজার্ভ করেছেন।’

মাস্টার মো. মানিক হোসেন জানান, রাত ২টায় মাত্র ৬০-৭০ জন লোক নিয়ে ঢাকায় গেছেন। লঞ্চে কমপক্ষে ৭০০ যাত্রী যেতে পারতেন।

এমভি মানামীর বরিশাল বুকিং অফিসের সুপারভাইজার মো. রিপন বলেন, লঞ্চটি রিজার্ভ নেওয়ায় যেসব যাত্রীর বুকিং ছিল তাঁদের অন্য লঞ্চে কেবিনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএর পরিদর্শক কবির হোসেন বলেন, ‘মঙ্গলবার বরিশাল বন্দর থেকে ৭টি লঞ্চ ছাড়ার কথা ছিল। এমভি মানামী ছাড়ার টাইম টেবিল ছিল ৯টা ৫০ মিনিট। এটি রিজার্ভ নেওয়ার সুযোগ নেই। যদি কোনো প্রোগ্রাম থাকে তাহলে আগে জানাতে হয়। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএকে অবহিত করেনি মানামী কর্তৃপক্ষ।’

এমভি মানামী লঞ্চের বরিশালের দায়িত্বপ্রাপ্ত আহমেদ জাকি অনুপমকে এ বিষয়ে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও ধরেননি। তবে লঞ্চের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগ চেয়ারম্যান যাবেন এ জন্য একাধিক ভিআইপি কেবিন চাওয়া হয়। চাহিদামতো না দেওয়ায় গোটা লঞ্চই রিজার্ভ করেন আওয়ামী লীগের লোকজন।

এদিকে লঞ্চের সংখ্যা একটি কমে যাওয়ায় মঙ্গলবার রাতে অন্য সব লঞ্চে কেবিন সংকট ছিল তীব্র। অনেকে বাধ্য হয়ে ২৫০০ টাকার কেবিন ৩০০০ টাকায় নিয়েছেন। নৌবন্দরের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেওয়া মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাসকে এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।

লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু জানান, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। মানামী হয়তো রিজার্ভ নেওয়া হয়েছে। রিজার্ভ নেওয়ার জন্য বিআইডব্লিটিএ এর কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা রিন্টু বলেন, এটি মানামী কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...