Ajker Patrika

গরিবের হাটে চাঁদাবাজি

গাজীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২২, ১০: ৪০
গরিবের হাটে চাঁদাবাজি

‘লইয়া জান, ভাই লইয়া যান, যেটা নিবেন দুই শ টাকা। একদম অরিজিনাল, সরাসরি এক্সপোর্টের মাল, লইয়া যান, ভাই লইয়া যান।’ এভাবেই ডেকে ডেকে ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন কামরুজ্জামান। তিনি গাজীপুর মহানগরীর মুক্তমঞ্চ থেকে জয়দেবপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কের একজন হকার। ভ্যানগাড়িতে গার্মেন্টসের তৈরি গেঞ্জি বিক্রি করেন তিনি। এ রাস্তায় প্রতি মঙ্গলবার বসে গরিবের ঈদবাজার।

কিন্তু অস্থায়ী এ বাজার থেকেও চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। হকার কামরুজ্জামান দুঃখ করে বলেন, ‘যা কিছু বিক্রি করি না কেন, দিনে আমাদের লাভ বেশি থাকে না। দোকান বসানোর কারণে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। পুলিশের নাম করে প্রতি দোকান থেকে ২০০ টাকা এবং স্থানীয় নেতাদের নাম করে ২০০-৩০০ টাকা, এভাবে প্রতিদিন মোট ১ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়।’

জানা গেছে, জয়দেবপুর বাজারের সড়কের আশপাশের দোকান ও অভিজাত বিপণি বিতানগুলোতে প্রতি মঙ্গলবার থাকে সাপ্তাহিক ছুটি। দোকানপাট বন্ধ থাকায় রাস্তাও থাকে ফাঁকা। এ সুযোগ এখানে অস্থায়ী দোকানের পসরা সাজিয়ে বসেন দেড় শতাধিক ভ্যানগাড়িওয়ালা হকার।

এখানেই গত মঙ্গলবার রাতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গরম কাপড় কিনছিলেন মহানগরীর নীলেরপাড়া এলাকার আজহার। এখানে কেন কাপড় কিনতে এলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন অভিজাত দোকানে জিনিসপত্রের অনেক দাম রাখা হয়। কিন্তু এখানে প্রায় একই জিনিস পাওয়া যায় অনেক কম দামে। তাই কম দামে কেনার জন্য এখানে এসেছি।’

হকার কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের ঘর ভাড়া দিতে হয় না। কোনো অগ্রিম দিতে হয় না। অস্থায়ী ভ্যানগাড়িতে কাপড় বিক্রি করি। ফলে আমাদের কাছ থেকে কম দামে কাপড় কিনতে পারে মানুষ।’

এখানেই কথা হয় মিনহাজ নামের এক কিশোরের সঙ্গে। সে-ও একটি ভ্যানগাড়িতে তৈরি পোশাক সাজিয়ে বিক্রি করছে। তার নিজের পোশাক দেখে ঠিক হকার মনে হয়নি তাঁকে। তিনি জানান, সে মহানগরীর শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। বাড়তি আয়ের আশায় লেখাপড়ার পাশাপাশি দোকানদারি করে সে।

দোকানদারিতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে মিনহাজ গলার স্বর নিচু করে ফেলে এবং বলে, ‘এখানে কয়েকজন লোক আসে বিভিন্ন পরিচয়ে। আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলে যায়।’ কারা কী জন্য টাকা নেয় জানতে চাইলে সে জানায়, ‘পুলিশের কথা বলে এক লোক এসে ২০০ টাকা নিয়ে যায় এবং আরও দু-তিনজন বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ধমক দিয়ে ২০০-৩০০ টাকা করে নিয়ে যায়।’

রাজিব এখানে শীতের কাপড়, গেঞ্জি, সোয়েটার—এসব বিক্রি করেন। তিনিও একই অভিযোগ করে জানান, তিন-চারজন লোককে এখানে দোকানের জন্য ১ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। তা না হলে হকারদের এখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

মহানগরীর বোর্ড বাজার এলাকার বাসিন্দা রিফাত। তিনিও এখানে ভ্যানগাড়িতে কাপড় বিক্রি করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, কথা বললে বিপদ হতে পারে। কোনো ভয় নেই জানিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে দোকান করার জন্য সর্বনিম্ন ৫০০ এবং সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়।’ চাঁদা না দিলে অসুবিধা কী জানতে চাইলে তিনি জানান, তাহলে এখানে আর দোকানদারি করতে দেবে না তারা। তাঁর দাবি, চাঁদাবাজি না হলে তাঁরা আরও কম দামে এখানে কাপড়চোপড় বিক্রি করতে পারতেন।

এ বিষয়ে উপ পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) জাকির হাসান বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসনের কারও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও যেহেতু কথা উঠেছে, তাই আগামী মঙ্গলবার থেকে এখানে সিভিল পোশাকে নজরদারি করা হবে। কারা চাঁদা আদায় করে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। যেকোনো উপায়ে এ চাঁদাবাজি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইরানের ‘দানবীয় ক্ষেপণাস্ত্রের’ সামনে উন্মুক্ত ইসরায়েলের ‘অ্যাকিলিস হিল’

ভারতীয় বিমানবন্দরে ১১ দিন ধরে পড়ে আছে ব্রিটিশ এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, ঘনাচ্ছে রহস্য

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফল আজ, যেভাবে দেখবেন

মা-মেয়ের ত্রিভুজ প্রেম, বিয়ে ও একটি খুন

মামদানি শতভাগ কমিউনিস্ট উন্মাদ, দেখতেও খারাপ: ট্রাম্প

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত