Ajker Patrika

পরিত্যক্ত পণ্যে ভাগ্যবদল

শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২২, ১২: ১৮
পরিত্যক্ত পণ্যে ভাগ্যবদল

প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি বোতল, চেয়ারসহ যেকোনো দ্রব্য দীর্ঘদিনেও মাটিতে পচে না। এতে যেমন পরিবেশ দূষণ হয়, অন্যদিকে মাটি হারায় উর্বরতা। পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের এসব সামগ্রী কেন্দ্র করে বগুড়ার শিবগঞ্জে গড়ে উঠেছে ১০টি কারখানা। এসব কারখানায় মেশিনের সাহায্যে তৈরি হচ্ছে প্লাস্টিকের গুঁড়ো।

এমনই ব্যবসা করেন গোলজার হোসেন। বগুড়ার শিবগঞ্জ পৌরসভার দহিলা গ্রামের বাসিন্দা। অভাবের সংসারে চার সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন ছিল। অবশেষে বেশ কয়েকজনের অনুপ্রেরণায় শুরু করেন পুরোনো প্লাস্টিকের ব্যবসা।

১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ২০১১ সালে ক্ষুদ্র পরিসরে শিবগঞ্জের বিহার রোডসংলগ্ন দহিলা এলাকায় এ ব্যবসা শুরু করেন। দিনে দিনে বেড়েছে বেচাকেনা। বৃদ্ধি পেয়েছে আয়। আর তাই ছোট্ট ব্যবসাটি আজ আলোর মুখ দেখেছে।

গোলজার হোসেনের পরিচালিত বিসমিল্লাহ প্লাস্টিক হাউসে গেলে তিনি জানান তাঁর উঠে আসার গল্প। একসময় চার সন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবন কাটিয়েছেন। কিন্তু এখন প্লাস্টিকের ব্যবসা তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। এখান থেকে এখন লাখ টাকার ব্যবসা করছেন। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেদের পড়াশোনাও শিখিয়েছেন।

পুরোনো প্লাস্টিকের বিভিন্ন সামগ্রী কীভাবে সংগ্রহ করেন—জানতে চাইলে বলেন, গ্রামগঞ্জের ফেরিওয়ালাদের থেকে কেনেন। শ্রেণিভেদে কেজি ২০-৩০ টাকা দরে। তারপর সেগুলো বাছাই করে মেশিনে কাটেন। এরপর ভালোভাবে ধুয়ে মেশিনের সাহায্যে গুঁড়ো করে বিক্রির জন্য বস্তা করেন। প্রতি বস্তায় ২০-৩০ কেজি গুঁড়ো থাকে। প্রতি বস্তা ৬০০-৮০০ টাকা দরে বগুড়া ও ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। প্রতি ১ লাখ টাকার প্লাস্টিক বিক্রি করে সব খরচ বাদ দিয়ে ১৫-২০ হাজার টাকা লাভ হয় তাঁর।

এসব কাজে সহযোগিতা করেন ছোট ছেলে জিলহজ্জ। সে শিবগঞ্জ ফাজিল মাদ্রাসায় ১০ম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। জানা গেছে, গোলজার হোসেনের বিসমিল্লাহ প্লাস্টিক হাউস ছাড়াও উপজেলায় ১০ জন খুচরা প্লাস্টিক ব্যবসায়ী এ ব্যবসা করছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে কুলসুম সম্পা জানান, গোলজার হোসেনের মতো অনেকে দেশের শিল্প খাতে ব্যাপক অবদান রেখে চলেছেন। তাঁদের সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসন সব সময় পাশে থাকবে।

পরিত্যক্ত প্লাস্টিক আবর্জনা থেকে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি জমির উর্বরতা অটুট থাকছে। এ বিষয়ে বগুড়ার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মুনতাসির মামুন (মুন) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রুট লেভেলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এসব প্লাস্টিক ব্যবসায়ীরা প্লাস্টিকের বোতলসহ নানা পরিত্যক্ত জিনিস সংগ্রহ করে পরিবেশের উপকার করছেন। এর ফলে দূষণ থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাচ্ছি আমরা। সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিকভাবে তাঁদের সাহায্য করে আরও উৎসাহিত করা উচিত বলে মনে করি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত