Ajker Patrika

নগরীতে ‘অসুস্থ’ কোচিং বাণিজ্য

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০২১, ১২: ১৬
নগরীতে ‘অসুস্থ’ কোচিং বাণিজ্য

বরিশাল নগরীর স্কুল কলেজের সামনে কোচিং সেন্টারগুলোর প্রতিনিধিদের উৎপাতে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। সকাল হলেই বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের প্রচারপত্র হাতে অবস্থান নেন কিছু তরুণ-তরুণী। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আকৃষ্ট করাই তাদের কাজ।

জানা যায়, নগরীতে শতাধিক কোচিং সেন্টার পরিচালনার নেপথ্যে রয়েছে নামীদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা। লাখ লাখ টাকা শিক্ষাবাণিজ্য করা এসব কোচিং সেন্টারে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ শিক্ষক নেতারা। শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নগরীতে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো স্বীকৃতিই নেই।

জানতে চাইলে বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম বলেন, এসব কোচিং সেন্টারের বোর্ডের কোনো স্বীকৃতি নেই। স্কুলের আদলে যেগুলো চলছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে বোর্ড। মানহীন এসব কোচিং সেন্টার শিক্ষার নামে ফৌজদারি অপরাধ করছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় বগুড়া রোড সংলগ্ন বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে দেখা গেল তীব্র যানজট। বিদ্যালয়ের সামনে অভিভাবক, ছাত্রীর ভিড়ের মাঝে চলছে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের কর্মীদের প্রচার। তাদের লিফলেটে বিদ্যালয়ের গেটের সম্মুখভাগ থেকে শুরু করে সড়কও ভরে গেছে। কর্মীরা ছাত্র, অভিভাবকদের আকৃষ্ট করতে যেন টানাহেঁচড়া শুরু করে দিয়েছেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত নগরীর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর অভিভাবক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এদের জ্বালাতনে আমরা বিরক্ত। নানাভাবে তারা শিক্ষার্থীদের কোচিং এ ভর্তির চেষ্টা করায়। কিন্তু এগুলোর শিক্ষার মান কতটা তা যাচাই করা দরকার।’

কিছুক্ষণ পরে নগরীর হালিমা খাতুন বালিকা বিদ্যালয়, বরিশাল জিলা স্কুল, উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মহিলা কলেজ, অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়, বিএম কলেজের সামনে গিয়ে দেখা গেল একই চিত্র। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে শাহিন কোচিং সেন্টার, শিক্ষণ কোচিং সেন্টার, সাইন্স একাডেমি, জালাল একাডেমি, সবুজ একাডেমি, সৈকত একাডেমিসহ বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের লিফলেট বিতরণ করছেন কর্মীরা। অবশ্য এই কর্মীরা এ ব্যাপারে কোনো ধরনের কথা বলতে চাননি।

এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবুজ একাডেমি ও জালাল একাডেমির পরিচালককে ফোন দেওয়া হলে এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।

বরিশাল জেলা মাধ্যমিক স্বাধীনতা প্রধান শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘কোচিং সেন্টারগুলো অভিভাবকদের পার্কে পরিণত হয়েছে। সেখানে কেবল সিট দেওয়ার ফ্যাশন চলে। কারা এগুলোতে পাঠদান করান? তাদের লেখাপড়ার মানই বা কী। ভালো হলে কেন স্কুল কলেজের সামনে প্রচারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। এসব কিছু বিবেচনায় এনে খতিয়ে দেখা দরকার।’

বরিশাল শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যফ্রন্টের বিভাগীয় আহ্বায়ক অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, ‘স্কুল কলেজে পাঠদান হয় না। যে কারণে বাসাবাড়ি এখন কোচিং সেন্টারে পরিণত হয়েছে। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা এসব স্বীকৃতিহীন কোচিং সেন্টারে শিক্ষার মান নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ বা মনিটরিং নেই এগুলোতে। বরিশাল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, জিলা স্কুলসহ নামী দামি স্কুল-কলেজের শিক্ষকেরা নেপথ্যে থেকে এর সঙ্গে জড়িত।’ তিনি জানান, সম্প্রতি নগরীর ভাটিখানায় এক শিক্ষকের বাসায় গিয়ে শতাধিক জুতা দেখা যায় দরজার সামনে। ভেতরে দেখা গেল অভিভাবক আর শিক্ষার্থীতে ঠাসা। সায়েন্স এবং কমার্সের শিক্ষকেরা এভাবে শিক্ষা বাণিজ্য করছেন নগরময়। তিনি এ জন্য শিক্ষাবোর্ড, মাউশি এবং জেলা শিক্ষা অফিসকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বরিশাল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, কোচিং সেন্টারগুলো আইন মানতে বাধ্য। এগুলো কীভাবে চলে তা মনিটরিং করা দরকার। শিক্ষকেরা এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে কিনা তাও যাচাই-বাছাই করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ