Ajker Patrika

রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় নার্গিসকে

জামালপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১: ২৯
রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় নার্গিসকে

জামালপুরের মেলান্দহে রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় মৌসুমী আক্তার নার্গিসকে। বনিবনা না হওয়ায় স্বামীর সংসার ত্যাগ করেন নার্গিস। পরে তাদের মধ্যে তালাক হয়। এর পরও কৌশলে মেয়েটিকে ঢাকা থেকে জামালপুরের মেলান্দহে নিয়ে এসে হত্যা করে লাশ একটি ইট ভাটার পাশে রেখে দেওয়া হয়।

পরে স্থানীয়রা অজ্ঞাত লাশ দেখে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ লাশের হাতের আঙুলের ছাপ নিয়ে পরিচয় শনাক্ত করে এবং হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মেয়েটির সাবেক স্বামীকে গ্রেপ্তার করে। নার্গিসের বাড়ি লালমনিরহাট জেলায়। পিবিআইর পুলিশ সুপার এম এম সালাহ উদ্দীন গত শনিবার এই তথ্য জানিয়েছেন।

পুলিশ ও পরিবার সূত্র জানায়, কষ্টের সংসারে মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারিবার। অভাবের সংসারে একটু সুখ এনে দিতে ঢাকায় চলে আসে নার্গিস। সাভারের একটি পোশাক কারখানায় কাজ নিয়েছিল। সেই কারখানায় পরিচয় হয় জাহিদের সঙ্গে। জাহিদ তার সঙ্গে পোশাক কারখানায় কাজ করতো। একপর্যায়ে নার্গিসের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন জাহিদ।

বাবা-মাকে না জানিয়ে জাহিদকে বিয়ে করে। এরপর চলে আসে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার নাপিতেরচরে শ্বশুর বাড়িতে। শ্বশুরবাড়িতে আসার পর থেকেই প্রায়ই নার্গিসকে শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে মারধর শুরু করে।

একপর্যায়ে স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে স্বামীর সংসার ছেড়ে চলে যায়। ঢাকায় গিয়ে আশুলিয়া আবারও কাজ নেয় পোশাক কারখানায়। এরপর জাহিদ মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে যোগযোগ শুরু করে। মোবাইলে কথা কাটি ও ঝগড়ার একপর্যায়ে জাহিদকে তালাক দেয় নার্গিস। তালাকের পর ফোনে নার্গিসকে নিয়ে আবারও সংসার জীবনে ফিরে আসতে নানা ভাবে চাপ দেয় জাহিদ। এরপর গত ১ ফেব্রুয়ারি জাহিদ ইসলামপুর থেকে জয়দেবপুরে যায়।

এরপর আশুলিয়ার জিরানী বাজারে গিয়ে নার্গিসের সঙ্গে দেখা করেন। পরে ২ ফেব্রুয়ারি রাতে নার্গিসকে নিয়ে জামালপুর জেলার ইসলামপুরে নিয়ে আসে। পথে ইসলামপুরের ডেফলা ব্রিজের কাছে জামালপুর-মেলান্দহ সড়কের একটি ইটেরভাটায় নিয়ে মাথায় রড দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। তখন লাশ ফেলে রেখে বাড়িতে চলে যায় জাহিদ। ৩ ফেব্রুয়ারি অজ্ঞাত এক নারীর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে থানা পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। থানা পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে ছায়া তদন্তে নামে। জামালপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার এম এম সালাহ উদ্দীনের নির্দেশে পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে একটি টিম রাতেই অজ্ঞাতের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে তার পরিচয় পায়। সেখানেই পরিচয় মেলে মৌসুমী আক্তার নার্গিসের। সে লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার উত্তর বত্রিশহাজারীর গ্রামের জাকির হোসেনের মেয়ে। এরপর রাতেই তার সাবেক স্বামী জাহিদ হাসানকে তার বাড়ি থেকে আটক করে। তাকে পিবিআই জামালপুর এনে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করে। পিবিআই তাকে মেলান্দহ থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। মেলান্দহ থানার পুলিশ নার্গিসের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করে। ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই ঘটনায় নিহত মৌসুমী আক্তার নার্গিসের মা ববিতা আক্তার বাদী হয়ে জাহিদ হাসানকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ গ্রেপ্তারকৃত জাহিদ হাসানকে আদালতের সোপর্দ করলে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করে।

পিবিআই জামালপুরের পুলিশ সুপার এম এম সালাহ উদ্দীন জানিয়েছেন, নার্গিস হত্যাকান্ডের রহস্যমূল রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হওয়ার জেরেই সাবেক স্বামী জাহিদ হাসান তাকে রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করেছে। পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের হত্যার কথা স্বীকার করেছেন জাহিদ হাসান। মেয়ে মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে আসেন মা ববিতা আক্তার। মেয়ে হত্যা বিচার চেয়ে মেলান্দহ থানায় দায়ের করেছেন হত্যা মামলা। ববিতার দাবি রাষ্ট্র যেন তার মেয়ে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

কোটি টাকা ‘ভর্তুকি’র জিম্বাবুয়ে সিরিজে বাংলাদেশ যা পেল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত