Ajker Patrika

৫০ বছর ধরে একই স্থানে বসে চুল কাটছেন বাদল

আব্দুল আউয়াল, বানারীপাড়া
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ০১
৫০ বছর ধরে একই স্থানে বসে চুল কাটছেন বাদল

বরিশালের বানারীপাড়ায় চাখার ইউনিয়নে ৫০ বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে একই স্থানে চুল কাটছেন বাদল শীল। আশি ছুঁই ছুঁই বাদল শীলের চোখের সামনেই চারপাশে ঘটে গেছে অনেক পরিবর্তন।। একে একে গজিয়ে উঠেছে আধুনিক সব সেলুন। কিন্তু তিনি চুল কেটে যাচ্ছেন আগের মতোই।

বাদল শীল বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে পিরোজপুর জেলায় বাস করতেন। দেশ স্বাধীনের পর বাবা বেধন্দ শীলের সঙ্গে চাখার ইউনিয়নে স্থায়ীভাবে থাকে শুরু করেন। এরপর বাবার চুল কাটা ব্যবসায় যোগ দেন।

বাদল শীল জানান, চাখার ইউনিয়নের এই বাজারে একসময় ১০-১৫ জনেরও বেশি নরসুন্দর ইটের ওপর পিঁড়িতে বসিয়ে চুল কাটতেন। এখন কেবল তিনিই এভাবে চুল কেটে যাচ্ছেন। পার্থক্য বলতে, ইটের বদলে চুল-দাঁড়ি কামাতে আসা মানুষকে বসতে দেন জল চৌকিতে। একটি প্লাস্টিকের চেয়ারও রেখেছেন।

বাদল শীল জানান, প্রথমে পারিশ্রমিক নিতেন ৫ পয়সা দাঁড়ি কাটা ও চুল কাটার পারিশ্রমিক নিতেন ১০ পয়সা। এখনো তাঁর সে অর্থে চাহিদা নেই। মানুষ চুল কাটিয়ে ৩০-৪০ টাকা যে যত দিয়ে যায় তাতেই খুশি। তাঁর চোখের সামনে ছোট্ট চাখার হাটে এখন কত পাকা দালান গড়ে উঠেছে। এই পেশাতে থেকেই মানুষ করেছেন দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে। মেয়ে দুজনকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে এম এ পাশ করে ভালো একটি চাকরির আশায় ঢাকায় আছে এখন।

চাখার ইউনিয়নের বড় চাউলাকাঠীতে বাদল শীলের গ্রামের বাড়ি সন্ধ্যা নদী ভাঙনের কবলে কয়েকবার এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে নিতে হয়েছে। এর কারণে পড়তে হয়েছে তাকে চরম বিপাকে। ভিটা মাটি হারিয়ে জীবন-জীবিকার উদ্দেশে কখনো পিছু হটেননি। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চুল কাটতেন। বানারীপাড়া উপজেলার চাখার ইউনিয়ন এক সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে বর্তমানে। হাটের দিন ৬০০-৭০০ টাকা রোজগার হয়। তার কাছে একটু বয়স্কদের চুল দাঁড়ি কাটার জন্য আসে। অল্প টাকায় চুল দাঁড়ি কাটার জন্য সুবিধাবঞ্চিত লোকদের আসতে দেখা যায় বেশি।

চুল কাটা অবস্থায় তার কাস্টমার রিপনের সঙ্গে কথা হয়। রিপন বলেন, ‘২০ বছর ধরে আমি তাঁর কাছে চুল কাটছি। যে টাকা দিই তা-ই খুশি মনে নেন।’

রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর সিরিয়াল আসার অপেক্ষায় থাকা মো. দুলাল মিয়া বলেন, ‘আমি ৩০ বছরের বেশি বাদল শীলের কাছে চুল দাঁড়ি কাটি। আমার বাবাও তাঁর কাছে চুল দাঁড়ি কাটতেন।’

বাদল শীল বলেন, ‘যতদিন বেঁচে থাকব এভাবে কাজ করে যাব। কেননা মানুষের ভালোবাসার কাছে আমি ঋণী।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত