Ajker Patrika

কিশোর গ্যাং নিয়ে আরও একবার

সম্পাদকীয়
কিশোর গ্যাং নিয়ে আরও একবার

ঈদ ও নববর্ষের ছুটির আগে কিশোর গ্যাং মোকাবিলার বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথাগতভাবে যেভাবে অপরাধীদের সঙ্গে আচরণ করা হয়,কিশোর গ্যাং মোকাবিলায় সেই দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকার কথাই বলেছেন তিনি। কিশোরেরা যেন দীর্ঘ মেয়াদে অপরাধীতে পরিণত না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

রাজধানীসহ বড় বড় শহরে কিশোরদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। এদের বেশির ভাগই ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক কারবার, জমি দখলে সহায়তা, ইন্টারনেট-সংযোগ, কেব্‌ল টিভির (ডিশ) ব্যবসা ও ময়লা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ, উত্ত্যক্ত, যৌন হয়রানি করা, হামলা, মারধরসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। স্থানীয় রাজনীতিবিদদের কাছ থেকেও এরা মদদ পায়। অভিযোগ আছে, নিজেদের মিটিং-মিছিলে এদের ব্যবহার করেন নেতারা। জনপ্রতিনিধিদের মদদ পেলে এরা যে ধরাকে সরা জ্ঞান করবে, এ তো খুবই স্বাভাবিক বিষয়।

নৈতিক মূল্যবোধের অভাব ঘটলে সমাজে অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যায়। কিশোর গ্যাং যেসব ঘটনা ঘটিয়ে থাকে, তাতে স্পষ্ট বোঝা যায়, এদের কর্মকাণ্ডে নৈতিকতার কোনো বালাই নেই। এ রকম অপরাধী হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে পরিবারের দায় রয়েছে। পারিবারিক শিক্ষার অভাব, শিক্ষায়তনে সত্যিকারভাবে গাইড করা না হলে শিশু বয়স থেকেই নানা ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এই কিশোরেরা মাস্তানে পরিণত হয়। ‘একটু সাহসের সঙ্গে’ অপরাধ করা শুরু করলে অপরাধীরা ওদের লুফে নেয়। এখন রাজনীতির যেসব এলাকায় পেশিশক্তির প্রয়োজন রয়েছে, সেই সব এলাকায় ভিড়ে যায় এই কিশোরেরা। এ অবস্থায় পরিবারের পক্ষ থেকে সন্তানকে শাসন করা দুরূহ হয়ে ওঠে। অভিভাবকদের তখন আর ক্ষমতা থাকে না এদের নিয়ন্ত্রণের।

ঢাকা শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে এসব কিশোর গ্যাং। বলা হয়, অন্তত ৮০টি গ্যাংয়ের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে রাজধানীতে। ১০ থেকে ৫০ জন করে সদস্য একেকটি গ্যাংয়ের। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, তথা মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ডেমরা ও সূত্রাপুরে গ্যাংয়ের সংখ্যা বেশি। যখন একই এলাকায় মাস্তানি করার জন্য গড়ে ওঠে একাধিক গ্যাং, তখন ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে তাদের মধ্যে বিবাদ বাধে। সেই বিবাদে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাও ঘটতে থাকে।

এই কিশোরদের শুধু আইনের ভয় দেখিয়ে পোষ মানানো যাবে না। পরবর্তীকালে এই সব এলাকায় যেন নতুন করে গ্যাংয়ের সৃষ্টি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সবচেয়ে জরুরি কথা হলো, এরা যদি রাজনীতিকদের কাছ থেকে পৃষ্ঠপোষকতা না পায়, পুলিশ যদি এদের ধরার ক্ষেত্রে প্রভাবশালী কারও হস্তক্ষেপে বিব্রত হয়ে না পড়ে, তাহলে গ্যাংয়ের আবহে জীবনযাপন করা কিশোরদের ঠিক পথে আনা সম্ভব। তখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে শোধনাগারে নিয়ে ওদের জীবন বদলে দেওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। কিন্তু সবচেয়ে বড় দরকার, একজন সহজ-সরল কিশোরকে মাস্তান হতে সমাজের যে উপাদানগুলো লোভ দেখায়, সেই উপাদানগুলোর উৎপাটন। সে কাজটি করা না হলে সবকিছুই অরণ্যে রোদন বলে পরিগণিত হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত