Ajker Patrika

শাক-ডাল দিয়ে ভাতে পিকনিকের আনন্দ

আল মামুন জীবন, বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও)
শাক-ডাল দিয়ে ভাতে পিকনিকের আনন্দ

‘সকাল থেইকা বিকেল পর্যন্ত কাম কইরা ৩০০ টাকা কামাই করি। সেই কামাই দিয়া নিজে খাই, ছুয়া দুইডাক খাওয়াই-পরাই। মোর কী আর পিকনিকে যাওয়ার থাকে বাপু, যে চাইলের দাম, মাছ, মাংস, তেলের দাম বাড়ছে। কয়দিন পর ক্যামনে চলমু, কী খামু হেয় চিন্তায় বাঁচি না। তোমরা কহিচেন পিকনিক করিছি। হামার এইডাই পিকনিক। ডাল-ভাত, শাক-ভাত দিয়া একলগে বসে সবদিন হামরা ভাত খাই।’

কথাগুলো ভাত খেতে খেতে বলছিলেন জোনাকি রাণী। তাঁর বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের আধাদীঘি গ্রামে।

সম্প্রতি বালিয়াডাঙ্গীর আমজানখোর ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকায় রাস্তা নির্মাণের কাজ করছিল একদল শ্রমিক। দুপুরে কাজের বিরতির পর একসঙ্গে গাছতলায় বসে খাওয়ার সময় ছবি তুলতে গেলে পিকনিক করছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে জোনাকি এসব কথা বলেন।

জোনাকি রাস্তা নির্মাণকাজে শ্রমিক হিসেবে ৩০০ টাকা মজুরিতে কাজ করেন। বাড়িতে দুই মেয়ে রয়েছে। এই রোজগার দিয়ে তিনি নিজে খান এবং সন্তানদের খাওয়ান। স্বামী ছেড়ে গেছেন কয়েক বছর আগে।

জোনাকির কথা শেষ হতে না হতেই পাশ থেকে ফাতেমা বেগম বলেন, ‘বাবারে কোরবানির সময় গরুর মাংস খায়ছিলাম। বছর ঘুরে কোরবানি ঈদ না এলে মনে হয় মাংস খাইতে পারুম না। সারা দিনের টাকা দিলেও আধা কেজি গরুর মাংস কেনা যায় না। এর পরে তেল, লবণ, মসলা, পেঁয়াজ তো রান্না করতে লাগেই। এগুলো কিনতে আরেক দিন কাম করা লাগবে।’

পাশ থেকে ফজলুল হক প্রশ্ন করেন, ‘তোমরা ফের কে? এইলা জিজ্ঞাসা করেছেন?’ সাংবাদিক পরিচয় শোনার পর তিনি এগিয়ে এসে বলেন, ‘হামার দুঃখ কী দেখার কেউ আছে? বাজারের ব্যাগটা হাতে ধরে গেলে বাজারে যেতে ভয় লাগে। তিন সন্তান রয়েছে, তাঁদের ভয়ে লুকিয়ে বাজারে ব্যাগ নেয়। যদি দেখে ভালো তরকারি কিনতে বলে, সে সামর্থ্য তো নাই।’

বালিয়াডাঙ্গীর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও মেহমানখানার উদ্যোক্তা হারুন অর রশিদ বলেন, ‘প্রতি শুক্রবার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এক বছরের বেশি সময় সপ্তাহে এক দিন মাছ-মাংস খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছি। প্রতি শুক্রবার ২০০ মানুষ মেহমানখানায় খেয়ে যান। তাঁদের সঙ্গে কথা বললেই বোঝা যায় দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে কতটা অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষ।’

ঠিকাদার রফিকুল ইসলাম জানান, ‘বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ছয় শতাধিক নারী-পুরুষ শ্রমিক রাস্তা নির্মাণের কাজ করেন। এলাকায় যখন কাজ হয় তখন কিছুটা শান্তিতে কাজ করতে পারেন এবং উপার্জন থেকে সঞ্চয় করতে পারেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফেল করায় বকা খেয়ে বাড়ি ছাড়ে বাংলাদেশি কিশোরী, ভারতে ৩ মাসে ২০০ লোকের ধর্ষণ

খালার সঙ্গে শত্রুতা মুহাম্মদ ইউনূসের, আমি ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’: টিউলিপ সিদ্দিক

৪০ পুলিশ কর্মকর্তার পদক প্রত্যাহার, অর্থ ফেরতের নির্দেশ

‘কাল দেখা হইবে, ভালো থাকিস’—ছেলেকে বলেছিলেন গণপিটুনিতে নিহত প্রদীপ

দেখো, ওর থেকে আরও ৫ লাখ নিতে পারো কি না—মেসেঞ্জার কলে এনসিপি নেতা নিজাম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত