Ajker Patrika

প্রজন্মের ভার এবং

আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩: ৩০
প্রজন্মের ভার এবং

অনেকেই এই প্রবাদটার অনেক উদাহরণ পেয়ে থাকবেন— গোবরে পদ্মফুল ফোটে। গোবর বলতে নিশ্চয়ই সমাজের কোনো অসম্মানীত ব্যক্তিকে বোঝানো হয়। ওই অসম্মানীত ব্যক্তির কোনো বংশধর যদি কোনো কারণে সম্মান অর্জন করেন তবে সমাজে ধীরে ধীরে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। তিনি তাঁর কর্মের মধ্য দিয়েই সম্মানটা অর্জন করে নেন। এটা ইতিবাচক বিষয়। কিন্তু এমনও অনেক ব্যক্তি আছেন যারা হাজার চেষ্টা করলেও পূর্বপুরুষের কর্মফল নিজেদের ভোগ করতে হয়। সেটা দুঃখজনক বটে।

সেদিন এক সহকর্মী কথায় কথায় বলে উঠলেন, ‘বাস্টার্ড মানে কী? কেন আমি একজনকে বেজন্মা বলে গালি দেব? কারও মা যদি তাকে পতিতালয়ে জন্ম দেয় সেটা কি তার দোষ? কাউকে যদি আমরা বলি তার জন্মের ঠিক নেই, সেটা কি তার দোষ? একজন যৌনকর্মীর সন্তানের পিতার পরিচয় না পাওয়া গেলেও তার মা তো আছে। তাকে কেন বাস্টার্ড বলে ডাকতে হবে?’ সহকর্মীর মন্তব্যের সঙ্গে একমত। তিনি যদিও আক্ষরিক অর্থে কথাগুলো বলেছেন। তবে এমনও হয় যে, অনেক সময় আমরা জন্ম পরিচয় জেনেও মনের অজান্তে বা ইচ্ছা করে কোনো ব্যক্তিকে ‘বাস্টার্ড’ বা ‘বেজন্মা’ বলে তিরস্কার করে থাকি। তাতে ওই ব্যক্তির জাত যাক বা না যাক, নিজেদের হীন মানসিকতার যে প্রকাশ পায়, সেটা আমরা বুঝতে চাই না।

থাকুক সেসব কথা। ‘গোবরে পদ্মফুল’ হিসেবে একজনের কথা বলি। হয়তো কেউ কেউ তাকে ‘বাস্টার্ড’ বলেও তিরস্কার করতে পছন্দ করতেন! তাঁর নাম ওমর বিন লাদেন। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, ওসামা বিন লাদেনের ছেলে তিনি। আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনকে কে না চেনে? ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে ভয়াবহ হামলার পেছনে কৌশলী নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ওসামা। স্বাভাবিকভাবেই ধারণা হতে পারে বাবার কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা গ্রহণ করে আল-কায়েদার নেতৃত্ব দেবেন ওমর।

কিন্তু ওই যে শুরুতেই যেটা বলেছিলাম, পূর্বপুরুষের স্রোতের ধারায় ওমর নিজেকে বইয়ে দেননি। তিনি পিতার পথে না হেঁটে নিজের পথ বের করে নিয়েছেন। পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন ব্যবসা। পরিচিতি পেয়েছেন আর্টিস্ট হিসেবে। মায়ের সঙ্গে মিলে বইও লিখেছেন। অথচ বাবার দেওয়া প্রশিক্ষণে ভয়ংকর হয়ে ওঠার কথা ছিল তাঁর। আল-কায়েদার আর সব প্রশিক্ষণার্থীর যা শেখানো হতো, ছোটবেলা থেকে তাঁকেও সেসব শিখতে বাধ্য করা হতো। কিন্তু শিল্পীর মন কি আর কাউকে হত্যার মতো জঘন্য কাজে সায় দিতে পারে। ওমরের মন সায় দেয়নি। ছবি আঁকার মধ্য দিয়ে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন তিনি। আর দশটা শিশুর মতো খেলার জন্য তাঁকে কোনো খেলনা দেওয়া হতো না। তাতে কি? শিশুর সুন্দর কল্পনাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি আল-কায়েদার প্রশিক্ষণ। দুঃস্বপ্নের মতো অতীতকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে গেছেন ওমর বিন লাদেন। আমরা চাইলেই তাঁকে বাহবা দিতে পারি।

ওমরের মতো এমন আরও অনেকেই বাস করেন আমাদের আশপাশে। চাইলে তাঁদের স্বীকৃতিটাও এই আমরাই দিতে পারি। এর আগে আমাদের যে তিরস্কার করার মানসিকতা আছে, সেটাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে হবে। ‘বেজন্মা’-র মতো শব্দগুলোকে অভিধান থেকে মুছে দিতে হবে। তাহলে আমরা মানুষকে সহজেই ভালোবাসতে পারব। মানুষকে ভালোবাসতে পারলে পৃথিবীতে শান্তির দূত হিসেবে কাজ করতে পারব। নিজেদেরই নিজেরা প্রশ্ন করে দেখুন—আমরা কি শান্তি চাই না? 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোদিজি—বিহারে কোনো বাংলাদেশি নেই, তবে দিল্লিতে আপনার বোন বসে আছেন: ওয়াইসি

অধ্যক্ষকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বের করে দেওয়া হলো কলেজ থেকে

বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, বৃষ্টি কবে— জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ: নবনির্বাচিত ভিপি মৃদুল, জিএস রায়হান

যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হবে তুরস্ক, চুক্তি স্বাক্ষর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত