Ajker Patrika

বরজে কাজ করেও জিপিএ-৫ পেল হাসান

মো. খায়রুল ইসলাম, গৌরনদী
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ১৬: ০৬
বরজে কাজ করেও জিপিএ-৫ পেল হাসান

সহপাঠীরা তখন পরীক্ষার ফল জানার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে স্কুলে ছুটছে কিংবা ফল জেনে স্বজনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করছে। তখন গৌরনদী উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লি এলাকায় বরজে কাজ করছিল মো. হাসান সরদার। তখনো সে জানে না এবারের এসএসসি পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। দুপুরে সহপাঠীদের মাধ্যমে জানতে পারে নিজের সাফল্যের সংবাদ। তবে আর্থিক অনটনের কারণে ভবিষ্যতে লেখাপড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে অদম্য মেধাবী হাসান সরদার।

স্থানীয় লোকজন, স্কুলশিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঁদশী পশ্চিমপাড়া গ্রামের আক্কেল আলী সরদারের (৬৪) নিজের জমি নেই। ভ্যান চালান তিনি। স্ত্রী পারভিন বেগম (৪৬) শ্রমিকের কাজ করেন। তিন মেয়ে এক ছেলের মধ্যে হাসান সরদার ছোট। আক্কেল আলী ও পারভিন বেগমের সামান্য আয়ে সংসার চলছিল না। তাই পানবরজে কাজ করতে হয় হাসান সরদারকে।

হাসান সরদার বলে, ‘আমার স্বপ্ন পড়ালেখা করে অনেক বড় হব, মা-বাবার কষ্ট লাঘব করব। তাই কাজের ফাঁকে ফাঁকে কষ্ট করে হলেও নিয়মিত লেখাপড়া চালিয়ে গেছি।’

এবারের এসএসসি পরীক্ষায় হাসান সরদার চাঁদশী ঈশ্বর চন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। হাসানের সাফল্যের খবর পেয়ে ওই বাড়িতে গেলে গ্রামের মো. হেদায়েত হোসেন, মো. আব্দুর রহমানসহ অনেকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, বরজে কাজ করায় নিয়মিত ক্লাস করার সুযোগ ছিল না হাসানের। নিজের চেষ্টা ও শিক্ষকদের সহায়তা তার এই ভালো ফলের মূলে।

হাসান সরদার বলে, ‘পানবরজের কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরতাম। অনেক রাত জেগে পড়াশোনা করতাম। সহপাঠীদের কাছ থেকে ক্লাসের পাঠদানের খবরাখবর জেনে নিতাম। এই ছোট্ট জীবনে অনেক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি। লেখাপড়া করে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হতে চাই। শ্রমিকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে চাই।’

চাঁদশী ঈশ্বর চন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক এইচ এম কাজী আসাদুজ্জামান জানান, হাসানের বাবা বয়সের ভারে অনেকটাই কর্মশক্তিহীন কিন্তু সংসারের অভাবের কারণে ভ্যান চালাতে হয়। তাতে সংসার চলে না, তাই হাসান কিশোর বয়সেই পানবরজে কাজ করে। ফাঁকে ফাঁকে বিদ্যালয়ে ক্লাস ও পড়াশোনা করেছে। সে খুব মেধাবী। প্রাথমিক ও জেএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করেছিল।

স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার জানান, হাসান সরদার মেধাবী হওয়ায় স্কুল থেকে তার বেতন ও উপকরণসহ সহায়তা প্রদানের চেষ্টা করা হয়েছে। এ ছাড়া স্কুলের শিক্ষকেরা পড়াশোনায় উৎসাহ দিতেন।

চাঁদশী ঈশ্বর চন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অঞ্জনা রানী মন্ডল বলেন, ‘হাসান সরদার খুব মেধাবী। পড়াশোনায় তার ইচ্ছাশক্তির কাছে দারিদ্র্য হার মেনেছে। আমরা বিদ্যালয় থেকে তাকে সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’

হাসানের মা পারভিন বেগম ছেলের সাফল্যে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘পোলারে লেহাপড়া করানো মোগো সম্ভব অইতো না, ওর ইচ্ছা আর চেষ্টা আছিল। আর হগোলডির দোয়া।’

বাবা আক্কেল আলী সরদার ছেলের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘পাস তো করেছে, এ্যাহন কি দিয়া কলেজে পড়ালেহা করামু। সবাই যদি সাহায্য করে হেলে ওর লেহাপড়া করাইতো পারমু, নইলে লেহাপড়া এই পর্যন্ত শেষ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাবেক সিইসি নূরুল হুদার গলায় ‘জুতার মালা’ দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

ইরানের পতন হলে, এরপরই রাশিয়া—অভিমত রুশ বিশ্লেষকদের

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর মোদির সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্টের ফোনালাপ

অনেক দেশ ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র দিতে প্রস্তুত, দাবি পুতিনের শীর্ষ সহযোগীর

মার্কিন হামলার পর ইসরায়েলে ‘খোররামশহর-৪’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত