Ajker Patrika

আলু এখন দুশ্চিন্তার কারণ

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সিরাজদিখান (মুন্সিগঞ্জ)
আপডেট : ১১ মে ২০২২, ১২: ৪৩
আলু এখন দুশ্চিন্তার কারণ

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে চলতি মৌসুমে উৎপাদিত আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। বাড়িতে আলু স্তূপাকারে রাখা হলেও মিলছে না পাইকার। লাভ তো হচ্ছেই না বরং উৎপাদন খরচ তোলা নিয়েই সংশয়ে রয়েছেন হাজারো কৃষক। এ অবস্থায় অবিক্রীত আলু সংরক্ষণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। সংরক্ষণ করা অনেকের আলুতে পচনও ধরেছে।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার বয়রাগাদী ইউনিয়নের বিভিন্ন বাড়িতে আলু সংরক্ষণ করতে দেখা যায়। এবার মৌসুমের শুরুতেই উত্তরবঙ্গের আলুতে সিরাজদিখান উপজেলার হিমাগারগুলো ভরে যাওয়ায় এই উপজেলার বেশির ভাগ কৃষক আলু হিমাগারে রাখতে পারেননি। সংরক্ষণ করতে না পারায় অনেকের আলুতে পচন ধরতে শুরু করেছে। পাইকার না পাওয়ায় আলু বিক্রি নিয়ে কৃষকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। তাঁরা সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর এ উপজেলায় ৯ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছিল। এ বছর ৯ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার ২৫০ হেক্টর কম আবাদ হয়।

জানা যায়, উপজেলার হিমাগারগুলোতে উত্তরবঙ্গের আলু মজুত করায় এই উপজেলার উৎপাদিত আলু সংরক্ষণ করতে পারছেন না কৃষকেরা। আলুর উৎপাদন খরচ মণপ্রতি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা হলেও বর্তমানে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দামেও বিক্রি হচ্ছে না। আবার পাইকার না পাওয়ায় উৎপাদিত আলু এখন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বছর সিরাজদিখানে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৩৫০ হেক্টর। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের কারণে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। দ্বিতীয়বার যে আলু রোপণ করা হয়, সে বীজের মানও খারাপ ছিল। এতেই বিপাকে পড়েন কৃষকেরা।

গোবরদী গ্রামের কৃষক মো. ইয়াসিন বলেন, ‘আমি এবার ৩০ বিঘা জমিতে আলু রোপণ করছি। দুইবারে আমার খরচ হয়েছে ২১ লাখ টাকার মতো। এবার যে পরিমাণ আলু হয়েছে তাতে আমার এই টাকা উঠবে না। গত কয়েক দিনের তীব্র গরমে আলুতে পচন ধরেছে। আমি ২২৫ বস্তা আলু ৩০০ টাকা দরে প্রতি মণ (৪০ কেজি) বিক্রি করেছি। কিন্তু এতে আমার ২০০ টাকা করে লোকসান হচ্ছে। ৫০০ টাকার ওপরে আমাদের খরচ হয়েছে। দুইবারে আলু রোপণ করতে হয়েছে। এতে করে এবারও অনেক টাকা লোকসানের মুখে পড়তে হবে।’

আরেক কৃষক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার পাশের এক কৃষকের আলুতে পচন ধরেছে, এটা দেখে আমার আলু বিক্রি করে ফেলেছি। আমি ৩০০ টাকা দরে আলু বিক্রি করেছি। আমার অনেক টাকার লোকসান হলো। এবার কী হবে আমাদের, আল্লাহই ভালো জানেন।’

আরও কয়েকজন কৃষক জানান, মৌসুমের শুরুতে টানা বৃষ্টিতে আলু নষ্ট হলে দ্বিতীয় দফায় ধারদেনা করে আবাদ করেন। এতে উৎপাদন খরচ হয় দ্বিগুণ। উপরন্তু আলুর ফলন কম ও মান ভালো না হওয়ায় উভয়সংকটে পড়েন তাঁরা। আলু চাষাবাদ করে তাঁরা এবার লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোজিনা আক্তার বলেন, ‘আলু আমাদের চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদিত হয়। সে ক্ষেত্রে কৃষকদের আমরা পরামর্শ দিচ্ছি লাভজনক ভুট্টা, হাইব্রিড বোরো ধান ও শাকসবজি চাষ করতে। এ ছাড়া ডাল ও তেলজাতীয় ফসল চাষ করার বিষয়ে প্রশিক্ষণের কথা আমরা বলি। কিন্তু আলু মুন্সিগঞ্জের একটি ঐতিহ্যবাহী ফসল। কৃষক লাভ-লোকসানটাকে কিছুই মনে করেন না। তাঁরা মনে করেন ঐতিহ্যটা ধরে রাখবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুদ্ধের পর এ যেন এক নতুন ইরান, জনগণের মতো বদলে গেছে সরকারও

ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা ভাবছেন ট্রাম্প

সাইপ্রাসে বিপুল জমি কিনছে ইসরায়েলিরা, দেশ বেদখলের শঙ্কা রাজনীতিবিদদের

হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহার নিষিদ্ধ করল বিমান বাংলাদেশ

বংশরক্ষায় মৃত ছেলের শুক্রাণু চান মা, সংরক্ষণের নির্দেশ মুম্বাই হাইকোর্টের

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত