Ajker Patrika

নারী শিক্ষকও বাদ যান না!

সম্পাদকীয়
নারী শিক্ষকও বাদ যান না!

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির ঘটনা কমবেশি অনেকেই শুনেছেন। শিক্ষক বা ছাত্ররা ছাত্রীদের জীবনে এই বিভীষিকা নিয়ে আসেন বলে অভিযোগ থাকে। এখন দেখা যাচ্ছে, এই হয়রানি থেকে নারী শিক্ষকেরাও মুক্ত নন। পুরুষ সহকর্মীর হাতে নির্যাতিত হচ্ছেন তাঁরাও।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজন করেছিল মতবিনিময় সভার। ‘নারীবিদ্বেষী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন: বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও উত্ত্যক্তকরণ প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভায় বক্তারা যে বিষয়গুলো বলেছেন, তা শুনে লজ্জায় মাথা কাটা যাবে যে কারও। নারীর ক্ষমতায়ন কত দূর এগিয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। প্রকৃতপক্ষেই নারীরা কি ক্ষমতার অংশীদার হতে পেরেছেন? খুব কম প্রতিষ্ঠানই পাওয়া যাবে, যেগুলো নারীবান্ধব। নারীকে হয়রানি করা হলে অনেক সময় রাজনৈতিক কারণে তা ধামাচাপা দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে হলে যে গুণাবলির অধিকারী হতে হয়, তার মধ্যে শিষ্টাচার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ না থাকলে শিক্ষকেরা শিক্ষক হবেন কেন? স্থূল যৌনতা যদি শিক্ষকের রসনার বিষয় হয়ে ওঠে, তাহলে তাতে যে কেউ মর্মাহত হবে। পড়াশোনায় আচারনিষ্ঠ কোনো কোনো শিক্ষককেও দেখা গেছে অনৈতিক সম্পর্কে জড়াতে বাধ্য করছেন নারী শিক্ষক বা ছাত্রীকে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থেকে মানুষে মানুষে সম্পর্ক হতে পারে, সেই সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলা ঠিক নয়। কিন্তু যে বিষয়বস্তু নিয়ে কথা বলা হচ্ছে, তা অনৈতিক এবং নারীবিদ্বেষী। অবশ্যই তা রোধ করা দরকার।

হাইকোর্টের নির্দেশ রয়েছে, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন রোধে অভিযোগ কমিটি গঠন, কার্যক্রম পরিচালনা এবং কমিটির কাজ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। সেভাবে হয়তো গঠনও করা হয় কোথাও কোথাও। কিন্তু তারপর? সত্যিই কি কমিটিগুলো কাজ করতে পারে? যৌন নিপীড়নের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে উত্থাপন করতেও গড়িমসি করেন কোনো কোনো উপাচার্য—এমন কথাও উঠে এসেছে মতবিনিময় সভায়। ভুক্তভোগী তদন্ত কমিটির কাছে গেলে নানা চাপের কারণে বিচার পান না।

আইন আছে, সেই আইন ভাঙাও হয়। আইন মেনে চলার অভ্যাস সবার থাকে না। তারা সব সময়ই আইন ভাঙতে থাকে। নারীর প্রতি নির্যাতনের ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটে। আর যা ঘটে, তা হলো পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের কারণে নারীকে অবজ্ঞা করে এবং সেই অবজ্ঞাই জন্ম দেয় নারী নির্যাতন বা নারীকে হয়রানি করার প্রবণতার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক নারীকে যৌন হয়রানি করছেন—এটার কি কোনো ব্যাখ্যা হয়? অনেক ক্ষেত্রেই হয়তো শুধু পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবে ভরা কমিটির কারণে দোষী ব্যক্তি পার পেয়ে যায়। কিন্তু সেটা যে আখেরে পুরো প্রতিষ্ঠানকেই কলুষিত করে তোলে, সে কথা বলবে কে?

শিক্ষকেরা যদি নিজের সম্মান নিজে রক্ষা করতে না পারেন, সহকর্মী এবং সন্তানসম ছাত্রীদের যৌন তাড়না নিবারণের আধার ভেবে থাকেন, তাহলে তিনি আসলে শিক্ষক নামের যোগ্য নন। তাঁর জায়গা আর যেখানেই হোক, বিশ্ববিদ্যালয়ে হতে পারে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত