Ajker Patrika

কুয়াশায়ও বেপরোয়া নৌযান

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ৪৫
কুয়াশায়ও বেপরোয়া নৌযান

শীত মৌসুমে কুয়াশার কারণে বরিশাল-ঢাকা নৌপথে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এ রুটের একাধিক স্থানে পানি কমে যাওয়া এবং চর জেগে ওঠার পরও রাতের আঁধারে বেপরোয়া গতিতে চলছে নৌযান। যাত্রীবাহী লঞ্চের পাশাপাশি মালবাহী জাহাজও প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে ঘন কুয়াশায় দুর্ঘটনায় পড়ছে।

চাঁদপুরের মেঘনায় ঘন কুয়াশায় অন্য এক জাহাজের ধাক্কায় গত মঙ্গলবার হালিমা সোবাহান-১ নামে একটি মালবাহী জাহাজ ডুবে গেছে। বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছে, কুয়াশার পাশাপাশি বেশি গতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এদিকে বরিশাল-ঢাকা নৌপথের যেসব স্পটে পানি কমে নৌযান চলাচল ব্যাহত হয়েছে, সেগুলো মার্কিং হয়েছে বলে বিআইডব্লিউটিএর নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

বরিশাল-ঢাকা রুটের এমভি সুন্দরবন-১০ লঞ্চের মাস্টার মজিবর রহমান বলেন, শীতে কুয়াশা পড়া শুরু করায় লঞ্চ চলাচলে গভীর রাতে কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। কেননা কয়েকটি জায়গায় পানি কমে গেছে; বিশেষ করে ঢাকা-বরিশাল রুটের হিজলা-বাবুগঞ্জ এলাকার মেঘনার শাখার ২ কিলোমিটার জুড়ে ভাটায় পানি থাকে সাড়ে ৪ মিটার। যদিও বিআইডব্লিউটিএর চাঁদপুরের কর্মকর্তারা গত পরশু এসে মার্কিং দিয়ে লাল বয়া বসিয়ে গেছেন। তবে ভাটায় যে পানি থাকে, তা লঞ্চের তলানি ছুঁই ছুঁই করে। ঢাকা থেকে বরিশালে আসতে দুই দিন আগে রাতে তাঁর লঞ্চই মাটির সঙ্গে ঘষা লেগেছিল। তবে গতি কমিয়ে দেওয়ায় দুর্ঘটনার হাত থেকে রেহাই পান। নলবুনিয়া-বাবনির চরের মেঘনার শাখারও এক কিলোমিটার নৌপথে পানি কমে গেছে। সেখানেও বয়া বসানো হয়েছে। শুকনো মৌসুমে সামনের দিকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। তিনি বলেন, বিআইডব্লিউটিএ বলেছে, এ দুটি জায়গা জরিপ করে দেখা হচ্ছে।

লঞ্চের মাস্টার মজিবর বলেন, নিয়ম হলো ঘন কুয়াশায় লঞ্চ নোঙর করতে হবে। কিন্তু অনেকে না থামিয়ে পাল্লা দিতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে। যে কারণে গত মঙ্গলবার ভোরে চাঁদপুরের নয়ারহাটে দুটো জাহাজের ধাক্কায় একটি মালবাহী জাহাজ ডুবে গেছে।

শীতের সময় ঢাকা-বরিশাল নৌপথে এ ধরনের ঘটনা ঘটে প্রতি বছরই। ২০২০ সালে ১৩ জানুয়ারি ঘন কুয়াশায় চাঁদপুরের মেঘনায় দুটি লঞ্চের সংঘর্ষে বরিশাল থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে এমভি কীর্তনখোলা-১০ এর যাত্রী মা ও শিশু মারা যায়। ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি ঘন কুয়াশায় বরিশালের কালীগঞ্জের মেঘনায় লঞ্চের ধাক্কায় অপর এক লঞ্চের যাত্রী সাকিব নিহত হন।

বিআইডব্লিউটিএর নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগ চাঁদপুরের যুগ্ম পরিচালক মাহমুদুল হাসান জানান, মেঘনার হিজলা-বাবুগঞ্জের দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার পথে বয়া দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে ভাটায় পানি কম থাকলেও ১০-১৫ মিনিটে ঘুরে যাওয়া যাবে। যে কারণে মার্কিং করে দেওয়ায় ওই স্পটটি এখনই খননের দরকার নেই। তিনি বলেন, একে অপরকে অতিক্রম করতে গিয়েই কুয়াশায় দুর্ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার ভোরে যে জাহাজটি ডুবেছে, সেটিকে অন্য একটি ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দিয়েছে। ডুবে যাওয়া মালবাহী জাহাজটি হচ্ছে হালিমা সোবাহান-১। এটিকে ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেয় অপর মালবাহী জাহাজ আকিজ লজিস্টিক-২৩। এ দুর্ঘটনার কারণ কুয়াশা ও খামখেয়ালিপনা। পরিস্থিতি এমন ছিল যে জাহাজটি ডুবতে দেখেও অপর জাহাজটি উদ্ধারে সহায়তা করেনি। পাইলট নিয়ে না চলায় কিংবা কুয়াশায় সতর্ক না হওয়ায় এমন দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানান তিনি।

ঢাকায় কর্মরত মেহেদী হাসান নামে বরিশালের এক বাসিন্দা বলেন, প্রতি সপ্তাহে লঞ্চে আসতে হয় শঙ্কা নিয়ে। কখনো কখনো গভীর রাতে লঞ্চ বেপরোয়াভাবে চলে। কুয়াশায় এখন আরও বড় চিন্তা।

এদিকে বিআইডব্লিউটিএর নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের বরিশালের উপপরিচালক বাকের হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, মেঘনার শাখা এলাকা নলবুনিয়া-বাবনির চরে পানি কমে যাওয়ায় তাঁরা চিহ্নিত করে দিয়েছেন। এ সময়টায় বিশেষ করে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পানি কমবেই। কিছু কিছু জায়গায় ডুবোচর হয়েছে। এ ধরনের কম গভীরতার জায়গা চিহ্নিত করা ও বয়া দেওয়া হয়েছে। হিজলার ট্যাকে সমস্যা ছিল, তা-ও ঠিক করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, তাঁর আওতাধীন বরিশাল থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত মার্কিং সম্পন্ন করেছেন।

উপপরিচালক বাকের হোসেন দাবি করেন, অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল অধ্যাদেশ অনুযায়ী ঘন কুয়াশায় নৌযান নোঙর করে রাখতে হবে। কিন্তু মাস্টাররা সাহস করে চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন। এই অবস্থা রোধে বিআইডব্লিউটিএর উচ্চপর্যায় থেকে তদারকি টিম করা হবে বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, কুয়াশায় লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচলে সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার। মাস্টার ও সুকানিদের এমন নির্দেশনা তাঁরা দেবেন। প্রয়োজনে ধীরে চলবে। জানমালের নিরাপত্তায় এক ঘণ্টা বিলম্বে গেলে সমস্যা নেই। রাতে লঞ্চ চলাচলে প্রতিযোগিতা থাকতে পারবে না। তিনি এটি নিশ্চিত করার জন্য বিআইডব্লিউটিএকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...