Ajker Patrika

দখল-দূষণে মরণদশা বড়ালের

বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ০৭
দখল-দূষণে মরণদশা বড়ালের

নাটোরের বড়াইগ্রামে অপরিকল্পিত জলকপাট, অবৈধ স্থাপনা, দূষণ ও দখলে বড়াল নদ এখন বিপর্যস্ত। উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ৪০ কিলোমিটার নদের তীরে গড়ে তোলা ১ হাজার ১৭৮টি অবৈধ স্থাপনা এবং পানিদূষণের ১৪টি উৎস শনাক্ত করেছে প্রশাসন।

বড়াইগ্রাম সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চারঘাট থেকে যমুনা নদীর সংযোগ ২১০ কিলোমিটারের মধ্যে বড়াইগ্রাম অংশের বড়াল নদের আনুমানিক দৈর্ঘ্য ৪০ কিলোমিটার, প্রস্থ ৬০ ফুট, গড় গভীরতা প্রায় ১৫ ফুট। এ ছাড়া কয়েকটি বড় শিল্পকারখানার, দুটি পৌরসভার ৮টি সরকারি ক্লিনিক, পোলট্রি খামার, হোটেলের বর্জ্য নিষ্কাশন লাইন সরাসরি বড়াল নদের সঙ্গে যুক্ত। এসব কারণে পানিদূষণ অব্যাহত রয়েছে।

বড়াল রক্ষা আন্দোলনের বড়াইগ্রাম উপজেলা কমিটির সদস্যসচিব ডি এম আলম বলেন, বড়াল নদ একসময় বহমান ছিল। এ নদে চলমান প্রবাহের কারণে বহু হাটবাজার, থানা ও সরকারি বিভিন্ন অফিস গড়ে ওঠে। আগে এ নদ দিয়ে গয়নার নৌকাসহ বড়-বড় নৌকা চলাচল করত। এ ছাড়াও কলকাতা থেকে গঙ্গা নদী হয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নৌকা করে কুষ্টিয়ার শিলাইদহ এবং সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে তাঁর কুঠিবাড়িতে যাতায়াত করতেন।

বড়াল রক্ষা আন্দোলনের জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব মিজানুর রহমান বলেন, ১৯৮২ সালে রাজশাহী জেলা চারঘাট উপজেলায় ৫০০ ফুট চওড়া, ৩০ প্রায় ফুট গভীর নদের ওপর ৩০ ফুটের চওড়া ও ৮ ফুট উচ্চতার জলকপাট নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। যার ফলে ২১ হাজার কিউসেক পানি সরবরাহ হওয়ার বদলে ৫ হাজার কিউসেক পানি সরবরাহ হতে শুরু করে। পরের বছরই পদ্মা নদীতে চর পড়ে জলকপাটের মুখে পলি জমা হয়ে সেটি অচল হয়ে যায়। একই সময় পাবনার চাটমোহর উপজেলায় বড়াল নদের ওপরে আড়াআড়িভাবে বাঁধ দিয়ে তিনটি পাকা রাস্তা ও একটি এক দরজার জলকপাট নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়াও বড়াল নদের ওপর ছোট-বড় ৫৬টি সেতু, কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। যার কারণে ধীরে ধীরে জনগণ এটি দখল করে স্থাপনা, বাড়িঘর, দোকান নির্মাণ এবং দূষণ করে বড়ালকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে।

বনপাড়া পৌরসভার মেয়র কে এম জাকির হোসেন বলেন, বড়াল নদের বনপাড়া অংশে বড় বড় স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। কিছু দুস্থ মানুষ এ নদের পাড়ে বসবাস করেন। তাঁদের ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হবে।জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড উপবিভাগীয় প্রকৌশলী খালেদ বিন অলীদ বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ডিজাইনার) নাসিমা জাহানকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি নদটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তিনি আরও বলেন, দূষণরোধে উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া বড়াল নদ উচ্ছেদ অভিযান ও খননকাজ একসঙ্গে করার পরিকল্পনা আছে। যাতে উচ্ছেদের পর আবার কেউ দখল করতে না পারেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারিয়াম খাতুন বলেন, উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে বড়াল দখলমুক্ত করতে হবে। নদের প্রয়োজনীয়তা, উপকারিতা, রক্ষা, দূষণ ও সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা সভা করা হয়েছে। এ ছাড়াও ভৌগোলিক অবস্থান নির্ণয়, সিএস রেকর্ড অনুযায়ী বড়াল নদের সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে। বড়-বড় স্থাপনা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার রিপোর্ট অনুযায়ী দ্রুত উচ্ছেদের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। পদ্মা-যমুনার সঙ্গেই বড়াল নদকে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের অন্তর্ভুক্ত করে অচল নদ সচল করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০-১২তম গ্রেডে নিয়োগ: প্রতি পদের বিপরীতে দুজন থাকবেন অপেক্ষমাণ

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

ইতিহাস গড়ে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে আইএসআইপ্রধান

সাবেক ‘র’-এর প্রধানের নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত