Ajker Patrika

বাঁশঝাড়িয়া যেন মিনি সুন্দরবন

মাসুদ পারভেজ, কালীগঞ্জ (সাতক্ষীরা)
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭: ২৯
বাঁশঝাড়িয়া যেন মিনি সুন্দরবন

সুন্দরবনের সৌন্দর্য হৃদয়কে স্পর্শ করে না—এমন মানুষ কমই আছে। সেই সুন্দরবনের নানা প্রজাতির উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণীর দেখা মিলছে কালীগঞ্জের কালিন্দী নদীপাড়ের বাঁশঝাড়িয়ায়। তাই সময় ও অর্থ বাঁচাতে অনেকেই ঘুরতে আসছেন এখানে।

সুন্দরবনের মূল ভূখণ্ড থেকে ৪০-৫০ কিলোমিটার উত্তরে কালীগঞ্জের ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের কালিন্দী নদীর বুক চিরে জেগে ওঠা চর বাঁশঝাড়িয়া। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা এখানে আসেন সৌন্দর্যের টানে। তাই এটি বর্তমানে মিনি সুন্দরবন নামে পরিচিতি লাভ করেছে।

বাঁশঝাড়িয়ায় দেখা মিলছে সুন্দরী, কেওড়া বাইন গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-গাছালি। এ ছাড়াও রয়েছে নানা পাখি ও বন্য প্রাণী। বনের চারপাশে ঘিরে থাকা জলরাশি আর গাছের শীতল ছায়া আপ্লুত করে পর্যটকদের মন। চারপাশে জলরাশি বেষ্টিত এ বনভূমিটি সৌন্দর্য পিপাসুদের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিলে এ বন দেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে আশা করছেন স্থানীয়রা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯২৬ সালের দিকে বাঁশঝাড়িয়া মৌজায় প্রায় ৩০০ একর জমি কালিন্দী নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এর ১৫ বছর পর ১৯৪০ সালের দিকে কালিন্দী নদীর বাংলাদেশের সীমানায় জেগে ওঠে একটি বিশাল চর। তখন এই চরকে বাঁশঝাড়িয়া চর নামে ডাকা হতো। বর্তমানে যা মিনি সুন্দরবন নামে পরিচিতি লাভ করেছে।

১৯৭৭ সালের দিকে হাজারো ভারতীয় মৎস্য শিকারিরা এ বন দখলের চেষ্টা চালায়। তাঁরা বাঁশঝাড়িয়া বনে জোরপূর্বক প্রবেশ করে। এ সময় মৎস্য শিকারের সুবিধার্থে তাঁরা বাংলাদেশের সীমানায় বাঁধ দিতে শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

সমস্যার সমাধান করতে ১৯৭৮ সালে ভারতের নয়াদিল্লিতে বিডিআর ও বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যত দিন পর্যন্ত উভয় দেশের মধ্যে যৌথ সীমানা জরিপ সম্পন্ন না হবে তত দিন পর্যন্ত বিরোধপূর্ণ ওই বনভূমির মালিকানা কেউ দাবি করতে পারবে না।

এরপর ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও সম্পন্ন হয়নি সীমানা জরিপের কাজ। ফলে বাঁশঝাড়িয়া বনভূমি সংক্রান্ত বিরোধেরও কোনো নিষ্পত্তি হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা আকবার আলী গাজী (৮০) ও পিয়ার আলী গাইন (৭৫) বলেন, ‘ভারতীয় জেলেরা এক সময় এটি দখলের চেষ্টা করেছে। কিন্তু বর্তমানে এ বন মালিকানাহীন। তবে এখানে অনেক মানুষ ঘুরতে আসেন। যথাযথ ব্যবস্থা নিলে এ বন একটি সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।’

বাঁশঝাড়িয়া বিজিবি ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার ক্যাম্প কমান্ডার আশরাফুল ইসলাম জানান, বর্তমানে চর ও বনভূমি নিয়ে কোনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নেই। তবে যারা ঘুরতে আসেন তাঁদের বনে যেতে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাঁশঝাড়িয়া মিনি সুন্দরবনে পর্যটকদের আগমন দিন দিন বাড়ছে। সরকারিভাবে এখানে যদি পর্যটকদের জন্য আবাসন তৈরি করা হয় তাহলে এটি দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত