Ajker Patrika

সেবা নিয়ে নানা প্রশ্ন

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫: ২৮
সেবা নিয়ে নানা প্রশ্ন

সংকট এলেই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে তৎপর হয়ে ওঠেন রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি ও স্বাস্থ্যসেবা কমিটি। কিন্তু এরপর আর কারও খোঁজ থাকে না। যে কারণে দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান এ হাসপাতালে সারা বছরই চিকিৎসাসেবা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়।

গত শুক্রবার লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ রোগীদের ভিড় শেবাচিম হাসপাতালে দেখার পর একই ঘটনা ঘটেছে। বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয় চক্ষু বিভাগে। দুই বছর ধরে সশরীরে স্বাস্থ্যসেবা কমিটির সভা না হওয়ায় সংকট লেগেই আছে এ হাসপাতালে। হাসপাতালের স্টাফদের ছুটি বাতিল করলেও পোড়া রোগীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে না পেড়ে ছুটছেন পাশের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।

এদিকে নেতা নামধারী দর্শনার্থীদের ভিড়ে ব্যাহত হচ্ছে আগুনে পোড়া রোগীদের সেবা কার্যক্রম। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাসপাতালে আসা ৭ জন বার্ন বিশেষজ্ঞ সদস্যের মেডিকেল টিম জানিয়েছেন, ভর্তি থাকা ৩৫ জন এই মুহূর্তে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নেই।

বরিশাল আইন মহাবিদ্যালয়ের সাবেক নেত্রী চায়না আক্তার অগ্নিদগ্ধ রোগীদের ওয়ার্ডে ঘুরঘুর করছেন শনিবার দুপুর থেকে। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এলে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে সেলফিও তুলছেন। নগরীর সিটি কাউন্সিলর কহিনুর বেগমকেও দেখা গেছে ওই ওয়ার্ডে। একই সময়ে বরগুনার সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে দেখা গেল ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরছেন তিনি। তাঁর সহচরেরা মোবাইল ফোনে ছবি তুলছেন।

এর আগে শনিবার সকালে বরগুনার সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেনসহ দলে দলে নেতারা এখন আগুনে পোড়া রোগীদের দেখতে আসছেন। তাঁদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওয়ার্ডের সামনে স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করা হয়েছে। ওই ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করা অর্ধশত স্বেচ্ছাসেবক হিমশিম খাচ্ছেন নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে।

শনিবার দুপুরে কথা হয় অগ্নিদগ্ধদের ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত রেড ক্রিসেন্টের টিম লিডার রেজওয়ান চৌধুরী সাকিবের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখানে বড় সমস্যা নানা শ্রেণির মানুষের ভিড়। তাঁরা রোগীদের কাছে গিয়ে নানা প্রশ্ন করেন, ছবি তোলেন। এতে নানা ধরনের জীবাণু ছড়াতে পারে। আমরা রেড ক্রিসেন্টের ৪০ জন সদস্য এখানে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি।’

একই কথা জানিয়েছেন স্কাউট সদস্য নেছার উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে সমস্যা। আমি এ পর্যন্ত দুজনকে হাসপাতালের পাশের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে পরীক্ষা করিয়েছি।’

হাসপাতালের এক্স-রে বিভাগ ঘুরে দেখা গেছে, শনিবার অগ্নিদগ্ধ মাত্র দুজনের এক্স-রে করা হয়েছে। সেখানকার টেকনিশিয়ান গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘শনিবার সরকারি ছুটি, তাই পরীক্ষা কম হচ্ছে।’ তবে সেখানকার একাধিক স্টাফ জানান, ফোন দিয়ে মোস্তফাকে আনানো হয়েছে। তাঁর আগে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের বাইরে পরীক্ষা করাতে পাঠানো হয়।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দু বছর ধরে শেবাচিম হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা সশরীরে হচ্ছে না। এ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। তিনি গত শুক্রবার দুপুরে হেলিকপ্টারে করে অনেক দিন পর শেবাচিম হাসপাতালে পৌঁছান। পরে অগ্নিদগ্ধদের অবস্থা দেখে ওই হেলিকপ্টারে করেই ঢাকায় ফেরেন।

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলার সাধারণ সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, ‘এটা প্রমাণিত হলো যে শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার সংকট রয়েছে। সেখানে বার্ন ইউনিট বন্ধ। এই অব্যবস্থাপনা এড়াতে পারবে না কেউ। দুর্ঘটনা হয়েছে, তাই দলে দলে নেতারা দেখতে আসছেন। কিন্তু এত দিন তাঁরা কোথায় ছিলেন? কী দেখতে তাঁরা পোড়া রোগীদের কাছে ঘেঁষছেন? বিভাগীয় শহর হিসেবে হাসপাতালের কমিটিগুলো অন্তঃসারশূন্য। দায়িত্ব নিতে না পারলে ছেড়ে দিচ্ছেন না কেন?’

বরিশালের নারীনেত্রী রহিমা সুলতানা কাজল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ অব্যবস্থাপনা এক দিনে হয়নি। দেশে একটি রেওয়াজ হয়ে গেছে, বড় একটি ঘটনা ঘটলে দেখা যায় নেতা ও আমলাদের সরব উপস্থিতি আর বুলি আওড়ানো। কয়েক দিন পর সব থেমে যায়।’

এ ব্যাপারে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পর গত দুই বছর স্বাস্থ্যসেবা কমিটির সশরীরে উপস্থিতির সভা হয়নি। তবে কমিটির ভার্চুয়াল সভা নিয়মিত হচ্ছে। সেখানে হাসপাতালের সমস্যাগুলো নিয়ে নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে।’

ডা. সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘শেবাচিম কলেজ ও হাসপাতাল নির্মিত হয় ১৯৬৮ সালে। তখনকার জনসংখ্যার বিবেচনায় হাসপাতালের ভবন ও জনবলকাঠামো তৈরি করা হয়েছিল। সেটা দিয়ে এখনো চলছে। ফলে সংকট এখানে নিয়মিত ঘটনা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত