Ajker Patrika

৮ বছর পর শিকলমুক্ত

মো. শামীমুল ইসলাম, আগৈলঝাড়া
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮: ৪৪
৮ বছর পর শিকলমুক্ত

আগৈলঝাড়ায় ৮ বছর ধরে শিকলে বন্দী করে রাখা হয়েছিল জাহাঙ্গীর হোসেন তোতা মিয়াকে। গতকাল স্থানীয় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুশান্ত বালা সেখানে যাওার পর শিকলমুক্ত করা হয়েছে তাঁকে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ তোতা মিয়া মানসিকভাবে শিকলে বেধে রাখার মতো অসুস্থ নয়। সম্পত্তির লোভে ছোট ভাই তাঁকে এভাবে বন্দী করে রেখেছিলেন। ভালো মতো চিকিৎসাও করাচ্ছেন না । তবে পরিবারের দাবি তোতা মিয়া মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় এভাবে শিকলবন্দী করে রাখতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা।

তোতা মিয়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রাংতা গ্রামের আলতাব হোসেনের বড় ছেলে। গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, তোতা মিয়ার ডান পায়ে লোহার শিকল পরিয়ে ঘরের খুঁটির সঙ্গে তালা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। এর আগে বাম পায়ে শিকল ছিল। সেখানে ঘাঁ হলে ডান পায়ে শিকল দেওয়া হয়। এভাবে পা বদলিয়ে দিনের পর দিন আটকে রাখা হয়েছিল তাঁকে।

স্বাভাবিকভাবে দেখলে সুস্থই মনে হয় তোত মিয়াকে। বাড়িতে স্থানীয় লোকজন যাওয়ার পর তোতা তাঁদের পা জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘ভাই আমি পাগল না। আমাকে বিনা কারণে শিকলবন্দী করে রাখা হয়েছে।’ শিকলবন্দী জীবন থেকে মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিও জানাতেন তখন তোতা।

স্থানীয় বাসিন্দা কামরুজ্জামান সবুজ বলেন, ছোট একটি টিনের চালার ঘরে থাকেন তোতা।

ফারুক হাওলাদার নামে এক গ্রামবাসী জানান, তিন বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় জাহাঙ্গীর হোসেন তোতা। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ঢাকা তিতুমীর কলেজে পড়াশোনা করা অবস্থায় মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পরেন। পরে পরিবার থেকে বিয়ে করালেও মানসিক সমস্যার কারণে স্ত্রী তাকে ১০ বছর আগে ছেড়ে চলে যান।

স্থানীয় দুলাল মাতুব্বর জানান, রাংতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মানিক মিয়া তোতা মিয়ার ছোট ভাই। কিন্তু আট বছর থেকে বড় ভাইকে চিকিৎসা করাচ্ছেন না। নিজে থাকার জন্য দুতলা পাকা ভবন নির্মাণ করলেও বড় ভাইকে রাখা হচ্ছে ধানের গোলা ঘরে। দলিলে স্বাক্ষর করে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে তাঁর সম্পত্তি।

রাংতা ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, ছোট ভাই মানিক মিয়ার অবহেলার কারণে ৮ বছর ধরে জাহাঙ্গীর হোসেন তোতা শিকলবন্দী। শুধুমাত্র সম্পত্তি নিজের নামে করতে একমাত্র বড় ভাইকে সুচিকিৎসা না করিয়ে শিকলবন্দী করে রেখেছেন।

জাহাঙ্গীর হোসেন তোতার মা হাওয়া বেগম বলেন, ‘২৮ বছর ধরে মানসিক সমস্যা নিয়ে অসুস্থ অবস্থায় আছে আমার ছেলে তোতা। ৮ বছর আগে বাড়ির পাশের সেলিম মল্লিকের স্ত্রী মাকসুদা বেগমকে মারধর করার কারণে তখন থেকে তোতাকে শিকল দিয়ে বন্দী করে রাখা হয়েছে।’

জাহাঙ্গীর হোসেন তোতার ছোট ভাই রাংতা মানিক মিয়া বলেন, ‘আমার বড় ভাইকে মানসিক সমস্যার কারণেই শিকলবন্দী করে রাখা হয়েছে। ভাইয়ের চিকিৎসা করতে গিয়ে আর্থিক সংকটে পরেছি। তাকে বর্তমানে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। ভালো চিকিৎসার সুযোগ পেলে তোতার চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। তাঁর স্বাক্ষর নিয়েছি জমির কাগজপত্র ঠিক করার জন্য।’

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুশান্ত বালা জানান, রাংতা গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন তোতাকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিকলেবন্দী থেকে মুক্ত করা হয়েছে। শিকলে বাধা জাহাঙ্গীরের জমি তাঁর ছোট ভাইয়ের নামে লিখে নেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে তা আজ সোমবারের মধ্যে তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাশেম বলেন, সরেজমিন তদন্ত সাপেক্ষে সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বৈপ্লবিক পরিবর্তন করার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে

ব্যাংকের চাকরি যায় জাল সনদে, একই নথি দিয়ে বাগালেন স্কুল সভাপতির পদ

৬৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ: ডেলটা গ্রুপের চেয়ারম্যান ফারুকসহ ১৫ জনের নামে মামলা

১ লাখ ৮২২ শিক্ষক নিয়োগ: যোগ্য প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা চলতি সপ্তাহে

‘বউ আমাকে মিথ্যা ভালোবাসত, টাকা না থাকলে ছেড়ে যাবে, তাই মরে গেলাম’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত