Ajker Patrika

রাস্তা বিলীন মাছের ঘেরে

মিজানুর রহমান রনি, উজিরপুর
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৩: ৪১
রাস্তা বিলীন মাছের ঘেরে

উজিরপুর উপজেলার সাতলা-হারতা-জল্লা ইউনিয়নে প্রতিবছরই মাছের ঘেরে রাস্তাঘাট ধসে যায়। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্চা যায় বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘেরে মাছ চাষ করে কিছু লোক লাভবান হলেও ভাঙা রাস্তাঘাট নিয়ে বিপাকে পড়েন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তবে প্রতিবছর রাস্তা মেরামত করলেও রাস্তাগুলো ঘেরের মাছের পেটে চলে যায় বলে দাবি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অয়ন শাহার।

সরেজমিনে দেখা যায়, জল্লা ইউনিয়নের কারফা থেকে সাতলা ১১ কিলোমিটার সড়কটি দুই পাশে ধারসহ ২৬ ফুট থাকার কথা। কিন্তু রাস্তা ধসে ঘেরে যাওয়ায় বর্তমানে রয়েছে ৮-১০ ফুট। টাকাবাড়ি থেকে মুন্সিরতাল্লুক ওপদা রাস্তা পর্যন্ত পৌনে চার কিলোমিটার সড়কের ২ বার দরপত্র (টেন্ডার) হলেও ঠিকাদারেরা কাজ না করে চলে যান। পুনরায় দরপত্র হলে আধা-কিলোমিটার রাস্তা কার্পেটিং করলেও বাকি রাস্তা করতে পারেনি ঠিকাদার। ওই সড়কটি ১২ ফুট থাকার কথা, বর্তমানে আছে ৫-৬ ফুট। পীরের পাড় রাস্তা থেকে মুন্সির তাল্লুক পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সড়ক ২০২০-২১ অর্থ বছরে নির্মাণ করা হলেও ধসে যাওয়ায় ৪-৫ ফুট আছে।

কারফা স্কুলের পূর্ব পাশের রাস্তা হতে দক্ষিণ দিকে শহীদ স্মরণিকা ডিগ্রি কলেজ, সাড়ে ৩ কিলোমিটার রাস্তাটিরও একই অবস্থা। কুড়লিয়া বাজার হয়ে অবণি বাড়ৈ বাড়ি থেকে দক্ষিণ দিকে হারতা সড়ক পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা একই। ওই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শহীদুল ইসলাম মল্লিক জানান, জল্লা ইউনিয়নসহ সাতলা ও হারতা ইউনিয়ন মিলে দুই শতাধিক মাছের ঘের রয়েছে। ঘেরের কারণে রাস্তাগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে। এতে জনগণের ভোগান্তি বাড়ছে। অচিরেই এর সমাধান না হলে সাতলা-হারতা-জল্লা ইউনিয়নের সমস্ত গ্রামীণ অবকাঠামো রাস্তাগুলো বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। সরকারের প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে রাস্তার পেছনে। কিন্তু সুফল পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। হারতা ইউনিয়নের কালবিলা থেকে হারতা সড়কসহ ১০-১৫টি রাস্তা বেহাল।

সাতলা রাজাপুর আদর্শ মাছের ঘেরের মালিক ও সভাপতি রেজাউল করিম জানান, মাছের ঘেরের কারণে রাস্তার সমস্যা হচ্ছে এটা ঠিক। কিন্তু মাছ চাষের কারণে বেকারত্বও দূর হচ্ছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অয়ন শাহা বলেন, ‘সাধারণ মানুষের চলাচলের সুবিধার জন্য রাস্তা মেরামত ও পুনর্নির্মাণের জন্য সরকার বরাদ্দ দেয়। সেই বরাদ্দ দিয়ে রাস্তা মেরামত করলেও ঘেরে চাষ করা মাছগুলো রাস্তা খেয়ে ফেলছে। ঘেরের মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা ও অব্যবস্থাপনায় মাছ চাষ করার কারণে অচিরেই ওই তিন অঞ্চলে রাস্তা বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ভোগান্তি আরও বাড়বে।’

ঠিকাদার নজরুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, ‘ওই তিন ইউনিয়নে কাজ করতে গেলে আমাদের সিকিউরিটির টাকাও থাকে না। এ ছাড়া কাজ করার দুই-চার মাসের ভেতর রাস্তা ভেঙে পড়ে। তাই কোনো ঠিকাদার ওই তিন ইউনিয়নে কাজ করতে চান না।’

উপজেলা প্রকৌশলী মাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সরকার রাস্তা করছে। আর সেই রাস্তা মাছের ঘেরের কারণে বিনষ্ট হচ্ছে এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। ওই তিন ইউনিয়নে কোনো ঠিকাদার কাজ পেলে করতে যেতে চান না। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী রাস্তা করতে গেলে বিপাকে পড়তে হয় ঠিকাদারদের।’

ইউএনও প্রণতি বিশ্বাস জানান, মাছের ঘেরের কারণে রাস্তা টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না এ কথা সত্য। এ বিষয়ে ঘেরের মালিকদের নোটিশ করা হবে। সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী রাস্তার এজিং (ধার) থেকে ১০ ফুট দূরত্ব রেখে চারদিকে নেট ও প্লাসাইটিং করে মাছের ঘেরসহ বিভিন্ন স্থাপনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যারা এই আইন অমান্য করে মাছের ঘের সহ স্থাপনা করবে তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ