Ajker Patrika

বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে সরকার ‘ভিকটিম অব সাকসেস’

অরুণ কর্মকার
বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে সরকার ‘ভিকটিম অব সাকসেস’

শিরোনামের বাক্যটি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রমের একটি বক্তৃতা থেকে নেওয়া। ৬ সেপ্টেম্বর শেভরন বাংলাদেশের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাঁর দেওয়া সে বক্তৃতাটি অনেকেরই মনে হয়েছে কবিতার মতো বাঙ্ময়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি যেমন বলেছেন যে তোমরা (যুক্তরাষ্ট্র) গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসনে বিশ্বাস করো। অথচ বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিকে দেশে ফেরত পাঠাতে দ্বিধাগ্রস্ত। তেমনি তিনি যে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সেই বিষয়েই আত্মসমালোচনা করেছেন। সাধারণত সরকারের অংশ কোনো উচ্চপদস্থ ব্যক্তিকে যা করতে দেখা যায় না।

আত্মসমালোচনা করতে গিয়েই তিনি বলেছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকার ‘ভিকটিম অব সাকসেস’। বিদ্যুতের উৎপাদন অব্যাহতভাবে বাড়ানোর মতো জ্বালানি সরবরাহের পরিকল্পনা হয়তো যথাযথভাবে হয়নি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে জ্বালানির উচ্চমূল্য। ফলে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। জ্বালানি সরবরাহে ঘাটতি পড়েছে।

‘ভিকটিম অব সাকসেস’ একটি বাগ্‌ধারা (ইডিয়ম)। বাগ্‌ধারায় কতিপয় শব্দ বা পদগুচ্ছ কিংবা বাক্যাংশ বিশিষ্টার্থক প্রয়োগের ফলে আভিধানিক অর্থ ছাপিয়ে বিশেষ কোনো অর্থের দ্যোতক হয়ে ওঠে। ‘ভিকটিম অব সাকসেস’-এর সরলার্থ হলো, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি কিংবা সাফল্য সত্ত্বেও বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া। এখন আমরা তা-ই হয়েছি। বিদ্যুৎ খাতে সরকারের অনেক বড় সাফল্য সর্বজনস্বীকৃত। কিন্তু জ্বালানির সংস্থান না থাকায় সেই সাফল্য বিরূপ পরিস্থিতির শিকার। ফলে অভাবনীয় সাফল্য সত্ত্বেও সরকার এখন সমালোচিত। সেই সাফল্যের ভিকটিম।

এর সঙ্গে বিশ্ববাণিজ্যে লেনদেনের মাধ্যম মার্কিন ডলারের অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যের কথাও অনেকে বলতে পারেন, যা আমাদের এ অবস্থায় ফেলেছে। না হলে তো এমনটা হওয়ার কথা নয়! হ্যাঁ, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে এটি সত্যের পূর্ণরূপ নয়।

কেননা, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার আগেও আমরা চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি, বিশেষ করে গ্যাস সরবরাহ করতে পারিনি। দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন কমে যাচ্ছিল। আবার চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ গ্যাস আমদানি করার মতো অবকাঠামোও ছিল না বা নেই। সুতরাং বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধিই দেশে গ্যাস সরবরাহ কমার একমাত্র কারণ নয়। দেশে গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা বেশি থাকলে বিশ্ববাজার আমাদের গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত করতে পারত না।

উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতিতে, যেকোনো সময় জ্বালানির বিশ্ববাজারের অস্থিতিশীলতার আশঙ্কার কথাও আমাদের অজানা নয়। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের সক্ষমতা যে সীমিত, তা-ও আমরা জানি। তা সত্ত্বেও নিজেদের জ্বালানি সম্পদ আহরণের সক্ষমতা বাড়িয়ে অন্তত আপৎকালীন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো কোনো পদক্ষেপ আমরা নিইনি। নিলে আমাদের গ্যাস সরবরাহে বিশেষ কোনো ঘাটতি হতো না। বিদ্যুৎ, সার, শিল্প উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা যেত। একেবারে ‘ভিকটিম অব সাকসেস’-এর পর্যায়ে পৌঁছাতে হতো না।

তবে হ্যাঁ, জ্বালানি তেলের বিষয়টি আলাদা। আমাদের নিজেদের জ্বালানি তেল নেই। অন্তত এখন পর্যন্ত নেই বলা যায়। অনেকে অবশ্য কিছুটা হলেও সম্ভাবনার কথা বলেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো জ্বালানি তেলে আমরা সম্পূর্ণরূপে আমদানিনির্ভর।

অরুণ কর্মকার

কিন্তু আমাদের গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে জ্বালানি তেলের বিষয়টিও নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ হয়ে যেত। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেলের ব্যবহার সর্বনিম্ন স্তরে নিয়ে যেতে পারি। আর দাম বাড়িয়ে, পরিকল্পিতভাবে সাশ্রয় করে আমরা তেলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি, যা এখন আমরা করছি। কিন্তু সমস্যাটা তখনই ‘ভিকটিম অব সাকসেস’-এর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, যখন গ্যাস এবং জ্বালানি তেল দুটিতেই টান পড়েছে। এই টানাটানির 
মধ্যে আমাদের পড়ার কোনো সংগত কারণ ছিল না।

অনেকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, আবিষ্কার, উত্তোলন ও সরবরাহ বিপুল ব্যয়সাপেক্ষ বলে উল্লেখ করে এ কাজে দেশের আর্থিক অসামর্থ্যের কথা বলেন। কথাগুলো অসত্য নয়। আবার পূর্ণ সত্যও নয়। তেল-গ্যাস অনুসন্ধান বিপুল ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ তো বটেই, একটি অনিশ্চিত যাত্রাও। বিপুল ব্যয় করেও কিছুই না পাওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বড় রকম আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি থাকে।

কিন্তু পাওয়া গেলে, বিশদ আর্থিক হিসেবে সেখান থেকে ব্যয়ের ৭০০ গুণ পর্যন্ত রিটার্ন আসে। আর আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত গ্যাস পাওয়ার হার ৩: ১। অর্থাৎ তিনটি কূপ খনন করে একটিতে পাওয়া গেছে। এখন অবশ্য এই হার থাকবে না। কেননা, সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় জায়গাগুলো আগে খনন করা হয়েছে। এখন হয়তো ৪: ১ হবে। পৃথিবীতে গড়ে এই হার ৫: ১। এই হারে পাওয়া গেলেও তা বিশাল মুনাফা নিয়ে আসে।

তবে কথা হলো, একটি কূপে গ্যাস পাওয়ার জন্য ওই তিন-চারটি কূপ তো খনন করতে হবে। সেই টাকা বিনিয়োগ করাও সব সময় সরকারের পক্ষে সম্ভব হয় না। এই প্রেক্ষাপটে ২০০৯ সালে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) একটি ঐতিহাসিক কাজ করেছে। ওই সময় বিইআরসির কাছে গ্যাসের দাম বাড়ানোর আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু গণশুনানি শেষে বিইআরসি দাম না বাড়ানোর রায় ঘোষণা করে। একই সঙ্গে ‘গ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (জিডিএফ)’ নামে একটি তহবিল গঠন করে বিইআরসি গ্রাহকের একটি দায়িত্ব দেয়।

দায়িত্বটি হলো, গ্রাহক প্রতি ঘনমিটার গ্যাসে ৪৬ পয়সা বেশি দাম দেবে। এই ৪৬ পয়সা কোনো কোম্পানির অ্যাকাউন্টে যাবে না। জমা হবে জিডিএফে। তাতে বছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা জমা হবে। এই টাকা গ্যাস অনুসন্ধান ও নতুন কূপ খননে ব্যবহার করা হবে; অর্থাৎ সরকার গ্যাস অনুসন্ধানের অনিশ্চিত বিনিয়োগে 
অনাগ্রহী বা অসমর্থ হলেও যাতে গ্রাহকের টাকায় গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন অব্যাহত রাখা যায়।

একটি কূপ খননে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্সের ব্যয় হয় সর্বোচ্চ ১০০ কোটি টাকা। সুতরাং জিডিএফের অর্থ দিয়ে বাপেক্স প্রতিবছর প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান ও কূপ খনন করা সম্ভব হবে—এই বিবেচনায় বিইআরসি জিডিএফ প্রবর্তন করেছিল। গ্রাহকেরাও সেটা মেনে নিয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, জিডিএফের টাকা গ্যাস খাত উন্নয়নে যেভাবে ব্যয় হওয়ার কথা, সেভাবে হয়নি।

দ্বিতীয় বিকল্প হচ্ছে, উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি)। বর্তমানে দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে প্রতিদিন যে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে, তার প্রায় ৬০ শতাংশ আসছে পিএসসির অধীনে কর্মরত দুটি বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে। পিএসসির সুবিধা হলো, সরকারের বিনিয়োগের কোনো দায় নেই। গ্যাস পাওয়া না গেলে গচ্চা যাবে সংশ্লিষ্ট বিদেশি কোম্পানির। আর গ্যাস পাওয়া গেলে তা ভাগাভাগি হবে। এই পদ্ধতিও আর্থিক বিচারে বিপুল লাভজনক।

কিন্তু সরকার এর কোনো কিছুই না করে, শুধু আমদানিনির্ভরতার পথযাত্রী হওয়ায় ‘ভিকটিম অব সাকসেস’ হওয়ার পথ নিজেই তৈরি করেছে। এ থেকে ভবিষ্যতের জন্য অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত