Ajker Patrika

ইশিতার প্রতারণার ফাঁদ

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২২, ১৮: ৩১
ইশিতার প্রতারণার ফাঁদ

লুৎফন নাহার ইশিতা ৩০ বছর বয়সেই চড়েন দামি গাড়িতে, থাকেন বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে। সময়ে সময়ে চাকরি করেন স্পা হোটেলে। তবে এই চাকরি তাঁর পেশা নয়। একাধিক বিয়ের তথ্য গোপন করে তাঁর টার্গেটে থাকেন বিত্তশালীরা।

তাঁদের কখনো বিয়ের প্রলোভন, কখনো প্রেমে জড়ানোর চেষ্টা করেন। দরিদ্র ও অসহায় নারী সেজে তাঁদের কাছে স্বল্প বেতনে চাকরিও নেন। পরে সুযোগ বুঝে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা থাকতেন ইশিতা।

প্রতারণার একাধিক মামলার আসামি ইশিতা অবশেষে গত মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন। তাঁর বাড়ি ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার কামার গ্রামে।

গত অক্টোবরে ঢাকা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রতারণার একটি মামলায় পরোয়ানা জারির পর ওই নারীকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানা-পুলিশ। একই মামলার আসামি ওই নারীর স্বামী আবদুল্লাহ আল মামুন ও তাঁর সহযোগী দেলোয়ার হোসেনও গ্রেপ্তার হন।

ঢাকা কেরানীগঞ্জ মডেল থানার বাসিন্দা মাহদি প্রপার্টিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজুল আলম বাদী হয়ে ইশিতা ও তাঁর স্বামীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাতের ওই মামলা করেন।

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাঈনুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মাঈনুর রহমান বলেন, গত বুধবার ওই তিনজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মামলার সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার কেরানীগঞ্জের ব্যবসায়ী মিরাজুল আলম ২০২১ সালের ৩০ অক্টোবর সন্তানদের নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে যান। তিনি মাহদি প্রপার্টিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কক্সবাজারের একটি হোটেলে ইশিতার সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। এ সময় ইশিতা নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে তাঁর সন্তানদের দেখাশোনার জন্য একটি চাকরি খোঁজেন। বাদী সরল বিশ্বাসে এই নারীকে সন্তানদের দেখাশোনার জন্য নিয়োগ দেন। পরে ইশিতার অনুরোধে তাঁর স্বামী আবদুল্লাহ আল মামুনকেও তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে চাকরি দেন। তখন থেকে তাঁরা এই ব্যবসায়ীর বাসায় থাকতে শুরু করেন। একসময় চক্রটির আরেক সদস্য দেলোয়ার হোসেনও অফিস সহায়ক হিসেবে নিয়োগ পান। একদিন তাঁরা সময়-সুযোগ বুঝে ওই ব্যবসায়ীর বাসা থেকে ১৬ লাখ টাকা ও ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে ১৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান।

এদিকে প্রতারণার মামলায় ওই নারীকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে আরও বিভিন্নজনের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতানোর অভিযোগ।

এর মধ্যে ২০২০ সালে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময় ৫৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ এবং চেক চুরির ঘটনায় চট্টগ্রাম আদালতে মামলা করেন রিপন শেখ নামে এক জাহাজ ব্যবসায়ী। মামলায় আসামি করা হয় ইশিতা, তাঁর মা ফরিদা বেগম ও স্বামী আবদুল্লাহ আল মামুনকে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৯ সালের মার্চে হোটেল আগ্রাবাদে রিপন শেখের সঙ্গে পরিচয় হয় ইশিতার। ওই নারী তখন হোটেলটিতে কর্মরত ছিলেন। এর পর থেকে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ৫৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। মামলার তদন্তে বেরিয়ে আসে, ইশিতা এর আগে তিনটি বিয়ে করেছেন প্রতারণার জন্য। থাকেন বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে।

চান্দগাঁও থানার উপপরিদর্শক রোকন উদ্দিন বলেন, ‘ইশিতা যে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন, সেখানে সাতটি এয়ারকন্ডিশন (এসি) লাগানো রয়েছে। মাসিক ভাড়া ৬৫ হাজার টাকা। 
তাঁদের আয়ের বৈধ কোনো উৎস পাওয়া যায়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত আমদানির ঘোষণা দিতেই ভারতে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’, চিরকুটে লেখা

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উচ্চপদস্থ বোর্ড গঠন: আইএসপিআর

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখামাত্র পুতিনকে গ্রেপ্তারের আহ্বান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত