Ajker Patrika

ফের বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম

চাটখিল (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
আপডেট : ২২ মে ২০২২, ১৫: ৩৮
ফের বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম

নোয়াখালীর চাটখিলে ঈদের পর আবারও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। কয়েক দিনের ব্যবধানে সয়াবিনের দাম বেড়েছে কয়েক দফা। এ ছাড়া চাল-ডাল, পেঁয়াজ, মাছ, মাংস, তরকারি, ফলমূল, চিনি, লবণসহ সবকিছুর দাম আগের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়েছে।

এতে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে ক্রেতারা। বাজারে যথাযথ তদারকি না করায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বলে মনে করছেন ভোক্তারা।

মুরগির মাংস প্রতি কেজিতে ৪০ থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে, গরুর মাংস বেড়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। এ ছাড়া পটোল কেজিতে ২৫ এবং কাঁচামরিচ ৬০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঈদের পর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য দাম ফের বাড়ায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।

উপজেলার সাহাপুর, সোমপাড়া, দশঘরিয়া, খিলপাড়া, হালিমা দিঘিরপাড়, জনতাবাজার, বদলকোট বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের আগে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে কেজি ১৩০ টাকা। বর্তমানে তা ১৭০ টাকা। ২৬০ টাকার সোনালি মুরগি এখন ৩৫০ আর ৬৫০ টাকার গরুর মাংস ৭৫০-৮০০ টাকা। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। ৩৫ টাকার পরিবর্তে ৬০ টাকায় বিক্রি হয় পটোল। ১৫ টাকার বরবটি ৪০, কাঁচামরিচ ৬০ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোনো কোনো বাজারে কাঁচামরিচ ১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এদিকে মোটা চালের দাম প্রতি কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

একইভাবে বেড়েছে সরিষা ও সয়াবিন তেলের দাম। সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। পাম তেল ২০০ থেকে ২২০, সরিষার তেল ২২০, চিনি ৮০, আর ৭০ টাকার মসুর ডাল ৯৫ টাকা, ছোট দানার মশারির ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাড়তি দামের বিষয়ে সাহাপুর বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মাইনুদ্দিন বলেন, ‘বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই আমরাও বেশি দামে বিক্রি করছি। এদিকে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকার বা আড়তদারদের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন, আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা এ অভিযোগ মানতে নারাজ।

নারায়ণপুর গ্রামের গৃহিণীর শিরিন শারমিন নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘আমার স্বামী সামান্য বেতনে চাকরি করেন, কিন্তু সংসার চালাতে খরচ হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এভাবে চলতে থাকলে দিন দিন আমরা ঋণে জর্জরিত হয়ে যাব।’

দিনমজুর শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দিনে কামলা দিয়ে ৩০০ থেকে ৪০০ হাই, তা দিয়ে তেল কিনমু, না চাইল কিনমু? অন আমরা মরি যাইতাম নি’ রিকশাচালক হেলাল খান বলেন, ভাড়া মাইরা ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কামাই, এইটা কেমনে কি করমু, বাচ্চা দুধ নিয়ুম নাকি চাইল নিয়ুম?

ক্রেতা দেলোয়ার হোসেন মেম্বার বলেন, ‘দোকানদারের কাছে বাড়তি দামের কারণ জানতে চাইলে খুচরা বিক্রেতারা দায় চাপিয়ে দেন পাইকারি বিক্রেতার ওপর। একাধিক পাইকারি ও আড়তদার বলেন, পাইকারি বাজারে মালের দাম বেশি।

সাধারণ ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে প্রশাসন ও ভোক্তা অধিদপ্তরের যথাযথ তদারকি না থাকায় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে চলেছে বলে অনেকে অভিযোগ করছেন। বেশি দামের কারণ জানতে চাইলে একাধিক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, আড়তদাররা যে মূল্য বলেন, তাতেই আমরা বিক্রি করি।’

চাটখিল বাজারের পৌরশহরের কাঁচাবাজার, মাছবাজারসহ বিভিন্ন বাজারে প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে। সাহাপুর বাজারের পরিচালনা কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলম কন্ট্রাক্টর বলেন, সারা দেশে দ্রব্যমূল্যের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, তাই দাম বেশি বলে মনে হচ্ছে। শুধু শাহাপুর বাজারে নয়, সব জায়গায় একই অবস্থা।

চাটখিল পৌর মেয়র ও বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি নিজাম উদ্দিন ভিপি বলেন, হাটবাজারের কোনো ভোক্তা হয়রানি হয় বা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশি রাখা হয়, তাহলে বাজার তদারকি করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সালেহ মোহাম্মদ মোসা বলেন, সরকারের নির্দেশনার বাইরে যদি কেউ ইচ্ছামতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যের দাম বাড়ায় বা বিক্রি করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে; যা ইতিমধ্যে বিভিন্ন বাজারে চলমান রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত