Ajker Patrika

বাহাত্তরের বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস ও বর্তমান: ২য় পর্ব

অর্ণব সান্যাল
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২২, ১৫: ২৭
বাহাত্তরের বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস ও বর্তমান: ২য় পর্ব

সাহিত্যের বিচারে আমরা কিছুটা এগিয়েছি বটে। আমাদের নিজস্ব প্রকাশনাশিল্প সৃষ্টি হয়েছে, যদিও তা রুগ্‌ণ বেশ। লেখক তালিকাও দীর্ঘ হয়েছে। কিন্তু তার কতটুকু ‘কালজয়ী’ বা ‘দেশজয়ী’, তা নিয়ে সন্দেহ ভালোমতোই আছে। আবার আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বা শহিদুল জহিরদের মতো অনেককে দেশবাসী সময়মতো চিনতেই পারছে না। কারণ অবশ্যই পুঁজিবাদী অর্থনীতির অসম বিকাশ। সেই বিকাশ সমাজ ও অর্থনীতির পাশাপাশি শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিতেও অসমভাবেই হয়েছে।

আমাদের সাহিত্য পুরস্কারগুলো দিনকে দিন স্বজন ও রাজনীতিপ্রীতির চূড়ান্ত প্রদর্শনীর জায়গা হচ্ছে। পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষিত হওয়ার পরই এ নিয়ে গুঞ্জন স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়। কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে, সেলফ সেন্সরশিপে কলম (বা কি-বোর্ড) বেঁধে না রেখে কয়জনই বা সাহিত্যচর্চা করেন? ফলে আকালের দিনে আমরা পুষ্পশোভিত সকালের ছবি দেখি, পেটে ক্ষুধা নিয়ে বাতাবি লেবুর বাম্পার ফলনের গল্প শুনি।

অন্যদিকে এমন ধারার সাহিত্যকর্ম সংখ্যায় বেশি হওয়ায়, ব্যতিক্রমগুলো হারিয়ে যাচ্ছে অতলে। আবার অনুবাদ সাহিত্যে দখলের প্রমাণ শক্তিশালী না হওয়ার দরুন একদিকে আমরা যেমন বিশ্বসাহিত্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকছি না, ঠিক তেমনি বাকি বিশ্বও আমাদের সংখ্যার বিচারে কিঞ্চিৎ মানসম্পন্ন সাহিত্য সম্পর্কেও অবগত হচ্ছে না। এ দেশে বেশ কয়েক দশক ধরেই নতুন সাহিত্যকর্মের বিচার হচ্ছে বাজারে বিকিকিনির পরিমাণে, বইমেলা থেকে করা ফেসবুক লাইভের ওয়াচিং লিস্টের সমাগমে। সেসবের মান নিয়ে উচ্চকণ্ঠে সমালোচনা করছে না কেউ বৃত্তচ্যুত হওয়ার ভয়েই। দেশের বিভিন্ন বিষয়ের মতো শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিতেও আমরা পছন্দের বৃত্ত রচনার এক অবিনাশী ‘কালচার’ চালু করেছি। এসব ভাঙা দূরের কথা; বরং এর শনৈঃশনৈ বৃদ্ধিতে এই ‘আমাদের’ অবদান দিনকে দিন বাড়ছেই!

বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস নামক রচনায় এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ের অবতারণা করেছিলেন আহমদ ছফা। তিনি আঙুল তুলেছিলেন কলকাতার পত্রপত্রিকার দিকে এবং জোর দিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশে ‘নানা বিষয়ে অনেকগুলো সাময়িকপত্রের আত্মপ্রকাশের’ ওপর। ছফার ভাষায়, ‘কিন্তু তা হচ্ছে না, বিনিময়ে কোলকাতার পত্রপত্রিকা এসে আমাদের বাজার ছেয়ে ফেলছে।’ ছফা একদিকে বলেছেন, তিনি কলকাতার পত্রপত্রিকা আসার বিরোধী নন। আবার অন্যদিকে বলেছেন, ‘ওই দেশের সব পত্রপত্রিকা ব্যাপক হারে আমাদের দেশে আসতে থাকলে আমাদের দেশে সাময়িকপত্রের জন্ম এবং বিকাশ অনেক কারণে বিঘ্নিত হবে।’

তাঁর মূল আপত্তি ছিল, এ দেশে কলকাতার পত্রপত্রিকার একাধিপত্য সৃষ্টির বিষয়টিতে। অন্যতম অভিযোগ ছিল, কলকাতার পত্রপত্রিকা ‘কাটতি’ভিত্তিক। এক অর্থে এ দেশে পশ্চিমবঙ্গের পত্রপত্রিকা আসার বিরোধী ছিলেন ছফা। বাহাত্তরের পরও তিনি বইমেলাকে কেন্দ্র করেও এমন বিরোধিতা করেছিলেন বলে সুবিদিত আছে। এ অনেকটা মাথাব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলার মতো। এই একই ধরনের প্রতিবাদ আমরা পরবর্তী সময়ে এ দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনেও দেখতে পেয়েছি, যখন বিদেশি চলচ্চিত্র (বিশেষ করে ভারতীয় চলচ্চিত্র) প্রদর্শনের বিরোধিতা করে আন্দোলন হয়। ছফা যেভাবে এ দেশের সাহিত্য অঙ্গনকে রক্ষার জন্য সংরক্ষণবাদী হতে চেয়েছিলেন, সেভাবে আদৌ কিছু সংরক্ষণ করা যায়? সেই যুক্তিতে তো এক অর্থে বিশ্বসাহিত্য থেকেও দূরে থাকা যায়! কারণ তাতেও যে আমাদের নিজেদের সাহিত্য ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়!

এ দেশে অসংখ্য সাময়িকপত্রের যে প্রয়োজন ছিল এবং এখনো আছে, তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। এখানে বিভিন্ন সময় সেই চেষ্টা হয়েছেও বটে। কিন্তু বরাবরই তা থমকে গেছে ওই কাটতির বিচারেই, স্থূলভাবে বললে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবেই এবং কিছু ক্ষেত্রে আমাদের কবি-সাহিত্যিকদের পরস্পরের পিঠ চুলকানো ও একে-অপরের পেছনে লাগার নীতির কারণে। বুদ্ধিজীবী মহলে এই দুই নীতিই একটি সাধারণ বিষয়। অন্যান্য দেশেও এমনটা দেখা যায়। কিন্তু আমাদের মতো সাহিত্যচর্চা মানেই এ দুটিকেই ‘মূল’ ভেবে নেওয়া কবি-সাহিত্যিক সমাজ একাধিক পাওয়া ভার। বর্তমানে এই লক্ষণ আরও প্রকট হয়েছে।

আহমদ ছফার এই পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যের এ দেশে সঞ্চালনের ঘোরতর বিরোধিতা কি দেশভাগের আগের তৎকালীন পূর্ববঙ্গের ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্সের ফলাফল? হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। পশ্চিমবঙ্গের বাবু কালচারের সুপিরিওরিটি কমপ্লেক্সের অন্যতম প্রধান শিকার পূর্ববঙ্গ হয়েছিল, সাহিত্য-রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রেই। হয়তো সেটিই ছফার মনে গেড়ে বসেছিল। নইলে তিনি হয়তো মান দিয়ে প্রতিযোগিতা করতে চাইতেন, খালি মাঠে গোল দিতে নয়।

আর যা-ই হোক, দ্বার রুদ্ধ করে দিয়ে ভ্রম বা বিভ্রম বা সত্য—কোনোটাই রোখার চেষ্টা বাতুলতা মাত্র।সংরক্ষণনীতি গ্রহণের এই প্ররোচনা হয়তো আহমদ ছফা তৎকালীন বিশ্বের অন্যতম অক্ষশক্তি সাবেক সোভিয়েত রাশিয়া থেকেই পেয়েছিলেন। পাওয়াটা স্বাভাবিকও। তবে এ দেশের সমাজ, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতায় সেটি কতটুকু যুক্তিসংগত, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলগুলোতে পশ্চিমা বিশ্বের পণ্য ও নীতির প্রতি একধরনের অন্ধ বিরোধিতা এবং নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। সেই সংরক্ষণবাদী ব্যবস্থায় সোভিয়েত রাশিয়ার কিঞ্চিৎ উপকার বাদে অপকারিতাই হয়েছে বেশি। মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতাই হলো নিষিদ্ধ বিষয়ের প্রতি আকর্ষণ। এই মানবচরিত্রকে অস্বীকার করে কোনো ‘মহৎ’ উদ্দেশ্যই সফল হওয়ার নয়।

তৎকালীন সমাজতান্ত্রিক কাঠামোর মতো তুর্কি দেশে কামাল আতাতুর্কের আনা সমাজবিপ্লবের প্রতিও অকুণ্ঠ প্রশংসা ধরা পড়ে আহমদ ছফার লেখায়। এ দুটি ঐতিহাসিক ঘটনার বারবার উল্লেখপূর্বক এ দেশে তেমনি নতুন ঘরানার বিপ্লব আনার প্রয়োজনীয়তার কথা ছফা তাঁর ‘বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস’-এ তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এই দুই ঘটনার সঙ্গে আমাদের যোগসূত্র আসলে কতটুকু? এ দেশের জন্ম কোনো জার বা রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে হয়নি; বরং একটি শোষণমূলক রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে হয়েছে। ফলে আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।

সমস্যা হলো, এ দেশে যেকোনো বিপ্লব প্রচেষ্টা বা পরিবর্তন-প্রক্রিয়াই অন্যের ‘কপি ক্যাট’ দোষে দুষ্ট। ফলে কখনোই নিজস্ব কোনো দর্শন আমরা তৈরি করতে পারিনি এবং এই অক্ষমতার কারণেই আমাদের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনীতির ইতিহাস অনেকাংশেই অনুকরণের ইতিহাস। তাতে নিজস্ব ভাবনা-চিন্তাও বেশ কম তাই অনুমিতভাবেই। এই একই কথা অবশ্য ছফাও স্বীকার করেছেন। তাঁর কথায়, ‘আমরা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবার চেষ্টা করছি। আমাদের সব দিকে উদ্ভাবনীশক্তির উদ্বোধনের বদলে আমরা অপরের অনুকরণ করে আত্মপ্রবঞ্চনা করছি। ভালো জিনিস অনুকরণ করার মধ্যে দোষের কিছু নেই, কিন্তু অন্ধ অনুকরণটা কি কখনো ভালো?’

অর্ণব সান্যালএককথায় তবে বর্তমানে এ দেশের বুদ্ধিবৃত্তির বিন্যাসটি কেমন? নিজেকে জড়িয়েই উদাহরণ দিই। ১৯৭২ সালে লেখা ‘বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস’-এ ছফা সদ্য জন্ম নেওয়া একটি দেশে কী ধরনের ধর্মীয় সংস্কার প্রয়োজন, তা নিয়েও বিস্তর কথা বলেছিলেন। তাঁর অন্যতম মন্তব্য ছিল, ‘বাংলাদেশের মানুষ ধর্মীয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে, তার কাঠামো ভেঙে ফেলেছে। এখন সকল সম্প্রদায়ের মানুষ মিলে বাংলাদেশের ধর্মের বদ্ধমতগুলো উড়িয়ে দিতে পারলে মানুষে মানুষে অন্তরের মিলনটা সহজ এবং স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।’ ছফা মনে করেছিলেন, মানুষ শুধু মানুষ—এই পরিচয়ে চিহ্নিত করার সর্বাঙ্গীণ প্রয়াস ও প্রক্রিয়াটি দেশে শুরু হয়েছিল।

কিন্তু ঠিক ৫০ বছর পরে এসে এই আমি ছফার বাহাত্তরে লেখা ধর্ম ও ধর্মীয় সংস্কারবিষয়ক আলোচনায় ঢুকতে গেলে শারীরিক ও মানসিকভাবে অনিরাপদ বোধ করতে বাধ্য হই। এই ৫০ বছরের দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় আমাকে প্রবলভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে ‘ওসব নিয়ে কথা বোলো না, বিপদ আছে!’ আমাকে হামলা দেখানো হয়েছে, রক্ত দেখানো হয়েছে, বইমেলায় ঘুরতে গিয়ে লাশ হয়ে যাওয়া দেখানো হয়েছে এবং মনের গহিনে এই গেঁথে দেওয়া হয়েছে যে—‘চাচা, আপন প্রাণ বাঁচা!’

এবার আপনারাই নাহয় ঠিক করুন, মানুষ শুধু মানুষ—এই প্রক্রিয়ায় আমরা এগিয়েছি নাকি ব্যাপক পিছিয়ে ফিরে গেছি, অসহনশীল সেই নিষ্ঠুর পুরোনো অযৌক্তিক বাস্তবতায়? 
এই প্রশ্নের উত্তরেই লুকিয়ে আছে আমাদের বর্তমান বুদ্ধিবৃত্তির বিন্যাসের প্রকৃত রূপ। 

বাহাত্তরের বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস ও বর্তমান: ১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত