জাহীদ রেজা নূর

মন্ত্রীরা বেশ ভালো বোঝেন। ছুটির দিন কয়েকজন সাংবাদিককে ডেকে তিনি জানিয়ে দিতে পারেন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। এরপর যা হয়। সে খবর প্রকাশ পেলেই ফিলিং স্টেশনে হুড়োহুড়ি। অনেক ফিলিং স্টেশনের কর্মচারীরাই নির্বিকার। আপাতত তেল সরবরাহ করা হবে না। আদেশ হয়েছে, রাত ১২টার পর বাড়বে তেলের দাম; অর্থাৎ মাত্র কয়েকটা ঘণ্টা অপেক্ষা করলেই যে দামে তেল কেনা হয়েছে, তা থেকে অনেক বেশি দামে বিক্রি করা যাবে। এটাকে প্যারাডক্স বলব কি না, জানি না—কম দামে তেল কেনার জন্য ফিলিং স্টেশনের লাইনে দাঁড়িয়েছে হাইব্রিড গাড়ি, বিএমডব্লিউ, মার্সিডিসের মতো গাড়িগুলোও।
পরিবহন সেক্টরের মানুষেরা খেপে উঠেছেন তাতে। অবশ্য সেটা সাময়িক। তাঁরা সে রাতেই ধর্মঘটের মতো কিছু একটা করেছেন। আজিমপুর থেকে গাবতলী পর্যন্ত বাস ছিল বন্ধ। মধ্যরাতে রাস্তায় যানজট। জনগণ পরিবহনশ্রমিকদের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছে। পরিবহন সেক্টরের এই ধর্মঘট সাধারণ মানুষের স্বার্থে নয়। পরিবহনের ভাড়া বাড়িয়ে কীভাবে জনগণের গলা কাটা যায়, তা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তারা এই তেজ দেখায়। তারপর যাত্রীদের কাছ থেকে সেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। গ্যাসের দাম বাড়লে তেলে চলা গাড়ি যেমন যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করে, তেমনি তেলের দাম বাড়লে গ্যাসচালিত বাসও বেশি ভাড়া কাটে। এগুলো দেখার কেউ নেই।
রাতের ঘুম দিয়ে সকালে উঠে কৃষকের মাথায় হাত। কখনোই তিনি তাঁর ফলানো ফসলের ন্যায্য দাম পান না। কিন্তু এবার তাঁর করণীয় কী, সেটা বুঝে উঠতে সময় লাগবে। সেচের জন্য ডিজেল প্রয়োজন তাঁর। সারের দাম বেড়েছে, এখন ডিজেলের দাম যেভাবে বাড়ল, তাতে উৎপাদন খরচ সামলে লাভের মুখ দেখা তাঁর জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
এ কথা আমাকে নতুন করে বলতে হবে না যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে সবচেয়ে বড় শিকার হবে গরিব মানুষ। আমাদের দেশ উন্নয়নের মূল সড়কে উঠে সাঁই সাঁই করে সামনে এগিয়ে চলেছে বটে, কিন্তু সেই উন্নয়নের কতটা বহিরঙ্গের উন্নয়ন, কতটা সত্যিকারের উন্নয়ন, সে ভাবনা এখন অনেকের মনেই ঘুরতে শুরু করেছে। উন্নয়নের অর্থনীতিতে চুইয়ে পড়া অর্থনীতির সংযোগ আছে বলে ফাঁকটা চোখে পড়ে কম। নানা উন্নয়ন প্রকল্পে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ লাভবান হয়। আমাদের দেশে যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে কতটা আন্তরিকতা থাকে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কোটি কোটি টাকার প্রকল্পের একটা বৃহৎ অংশ যে আত্মসাৎ হয়ে যায়, এ রকম কথাও তো আমরা শুনি। আজ যার কিছুই ছিল না, কাল সে কোটিপতি কী করে হয়, সে অঙ্ক মেলাতে গিয়ে ধাঁধায় পড়ে যায় মানুষ। এই স্বল্পসংখ্যক কোটিপতির ভিড়ে দেশের কোটি কোটি কৃষক কোনোভাবে টিকে থাকেন। উন্নয়নের গল্প শোনেন।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার অসহায় শিকার হবে মধ্যবিত্ত। সেই মধ্যবিত্ত, যে ধনী ও গরিবের মাঝখানে দাঁড়িয়ে নীতিকথা আওড়ায়। বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় অংশ উঠে আসেন যাদের মধ্য থেকে। যদিও বুদ্ধিজীবী কারা এবং এখনো বুদ্ধিজীবী আছেন কি না, এমন প্রশ্ন উঠেছে; প্রশ্ন উঠেছে দলীয় বুদ্ধিজীবীর বাইরে সত্যিই কি কেউ আছেন এখন? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু বুদ্ধিজীবী প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে যদি আমরা সাধারণ মধ্যবিত্তকে দেখি, তাহলে বুঝতে পারব, এই শ্রেণির টিকে থাকা খুবই মুশকিল হয়ে যাবে।
সংকটে পড়বেন চাকরিজীবীরা। যাঁরা স্বল্প বেতনে চাকরি করেন, তাঁদের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেলে সঞ্চয় তো দূরের কথা, খেয়ে-পরে বাঁচার চিন্তাটাই তো হারাম হয়ে যাবে। চাকরিদাতারা চেষ্টা করবেন চাকরিজীবীদের সমস্যাগুলো আলোচনায় না আনতে। আমাদের এখানে চাকরির সুযোগ এত কম যে কেউ একজন চাকরি ছাড়লে অন্যরা হাভাতের মতো সেই চাকরির দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ফলে চাকরিদাতার হাতেই থাকে সার্কাসের রিংটি। তিনিই খেলা দেখান। অন্যরা বাঁদর নাচ নাচতে বাধ্য হয়।
এই দুদিন বিভিন্ন পত্রিকায় অর্থনীতি-বিশেষজ্ঞদের অনেক পরামর্শ পড়লাম। আইএমএফের ঋণ পাওয়ার জন্য সরকার বোধ হয় এমন পদক্ষেপ নিয়েছে—এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের অনেকেই বলেছেন, এক লাফে যতটা বাড়ানো হয়েছে, তা উচিত হয়নি। আমি বিশেষজ্ঞ নই। এ ব্যাপারে নিজের মতামত জানালে তা পাঠকের উপকারে লাগবে না। আমি শুধু আমার নিজের একটি অভিজ্ঞতা পাঠকের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাইছি। যদিও আমি মনে করি না, এ রকম কোনো দুর্বিষহ অবস্থা আমাদের হতে পারে, কিন্তু অভিজ্ঞতাটা শোনা থাকলে সতর্ক হতে পারে মানুষ। আমি শ্রীলঙ্কা-প্রসঙ্গ এখানে টানছি না। বলছি সোভিয়েত ইউনিয়নে কাটিয়ে আসা শেষ দিনগুলোর কথা এবং গণতান্ত্রিক রাশিয়ায় বসবাসের ঘটনাগুলো।
দুই
আশির দশকের মাঝামাঝি মিখাইল গরবাচেভের পিরিস্ত্রোইকা ও গ্লাসনোস্ত বিষয়ে সবাই জানেন। কিন্তু তাঁরই পথ ধরে সোভিয়েত ইউনিয়নে বরিস ইয়েলৎসিনের উত্থান, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে ১৫টি বন্ধুভাবাপন্ন রাষ্ট্রের জন্ম, সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরসূরি হিসেবে রাশিয়ার আবির্ভাব ইত্যাদি ইতিহাসও পাঠকের অজানা নয়। তাই ফলাফলটা নিয়েই কথা বলা জরুরি।
সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নে রাষ্ট্রের হাতেই ছিল সর্বময় ক্ষমতা। জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করত রাষ্ট্র। পরিবহন, জ্বালানি, যন্ত্রপাতির সরবরাহ থেকে শুরু করে সবকিছুই ছিল রাষ্ট্রের অধিকারে। সেখানেই নেমেছিল ধস। রাষ্ট্র তার অভিভাবকত্ব ধীরে ধীরে ছেড়ে দিতে শুরু করল। ওখানে মুদ্রাস্ফীতির যে বিশাল উল্লম্ফন ছিল, তা ছিল বহুদিনের বদ্ধ একটি সমাজের পরিবর্তন ও তার প্রতিক্রিয়ার। সেটা আমাদের মতো দেশে হয়তো ঘটবে না। কিন্তু তা শুনে রাখা দরকার।
বেড়ে গেল ডলারের দাম। রুবল হয়ে গেল কাগজের মতো। যাঁরা ব্যাংকে টাকা রেখেছিলেন, তাঁদের সেই টাকার অর্থমূল্য গেল কমে। সাড়ে তিন রুবল দিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কেনা যেত ১৯৮৬ সালে। ১৯৯৫ সালে এক কেজি গরুর মাংসের দাম দাঁড়িয়েছিল ১৮ হাজার রুবলে!
পড়াশোনার জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে যে বরাদ্দ ছিল, তা এতটাই কম ছিল যে স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে শুধু মাস্টারি করে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছিল। আমার এক শ্রদ্ধেয় শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের ফেলে দেওয়া মদের বোতল কুড়িয়ে নিয়ে যেতে দেখেছি। সেই বোতলগুলো বিক্রি করে হয়তো সেদিনের রুটির ব্যবস্থা করতে পারবেন।
হঠাৎ করেই বাজার থেকে পণ্য হাওয়া হয়ে যেতে শুরু করল। চোরাবাজারে পাঁচ গুণ-দশ গুণ দামে তা বিক্রি হতে লাগল। সেখানে কি ক্রেতা নেই? আছে। কারা তারা? আর যা-ই হোক, প্রলেতারিয়েত বা বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অর্থাৎ মধ্যবিত্ত শ্রেণি নয়।
গরিব আর মধ্যবিত্তের জীবনে অশনিসংকেত এসে গ্রাস করল তাদের জীবনীশক্তি। কী করে তারা বাঁচবে, তার কূল-কিনারা পেল না। কেউ কেউ ফুটপাতে দাঁড়িয়ে গেল বেশি দামে কিছু বিক্রি করতে, উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করল যারা, তাদের মাথার ওপর আশীর্বাদ না থাকলে তাদের আম ও ছালা দুই-ই হারিয়ে গেল। যারা সেই আশীর্বাদ পেল, তারা কোনোভাবে বেঁচেবর্তে থাকল। আর বেশি আশকারা পেল যারা, তারা সঞ্চিত করল অর্থ। হয়ে উঠল পুঁজিপতি।
অন্যদিকে ছোট্ট একটি শ্রেণি জন্ম নিল, যারা ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করল অর্থনীতি। তারা সিঙ্গাপুর থেকে কম্পিউটার এনে বিক্রি করা শুরু করল। চীন ও তুরস্ক থেকে কাপড় এনে বিক্রি করতে লাগল। চামড়ার জ্যাকেট আর স্পোর্টস কস্টিউম কেনার হিড়িক পড়ে গেল একশ্রেণির মানুষের মধ্যে। অস্ত্র ব্যবসায়ী হয়ে উঠল কেউ কেউ। এরা কোথা থেকে টাকা জোগাড় করছে, তা সব সময় বোঝা যাচ্ছিল না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, কোথাও কোথাও টাকা ঘুরে বেড়াচ্ছে। সবাই তা ধরতে পারছে না।
বাজার নিয়ন্ত্রক শ্রেণির মধ্যেও জন্ম নিল আরেকটি শ্রেণি, যাদের আমাদের দেশের ভাষায় ‘মাস্তান’ বলা হয়। ওরা বলত ‘ক্রিশা’, মানে ছাদ। আপনি ব্যবসা করবেন, করুন, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আপনার মাথায় যদি ছাদ হয়ে মাফিয়া না থাকে, তাহলে লাভের গুড় পিঁপড়ায় খাবে। অতএব বেশি চালাকি করবেন না। অন্য কোনো মাফিয়া দল আপনার কাছে বখরা চাইতে এলে আপনি আপনার ‘ছাদ’-এর নাম উল্লেখ করুন। আপনাকে কেউ ছোঁবে না। মাফিয়া-মাফিয়া নিজেদের মধ্যে আলাপ করে নেবে।
তিন
আরও অনেক কিছুই বলার ছিল। কিন্তু অল্প কথায় মুদ্রাস্ফীতির ফলে যে ঘটনাগুলো ঘটতে পারে, তার আংশিক বর্ণনা করলাম। রাশিয়ায় তখন দুটো পেশায় যেতে বাধ্য হয়েছিল তরুণ-তরুণীরা। মাস্তান হচ্ছিল ছেলেরা, শরীর বিক্রি করে বাঁচার উপায় খুঁজে বের করছিল মেয়েরা। সে দেশের বাস্তবতায় সেটা ছিল বেঁচে থাকার দাবি। এ নিয়ে অন্যদিন লেখা যাবে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর পরিবহন, কৃষি, বাজারসহ যে যে জায়গায় তার আঘাত এসে পড়বে, তাতে কিন্তু অসাধু মানুষের তৎপরতাও বেড়ে যেতে পারে। বাজার থেকে যদি কোনো পণ্য উধাও হয়ে যায়, তাহলে নিশ্চিত থাকুন, বেশি দামে সেগুলো বিক্রি হওয়া শুরু হলেই আবার বাজার ছেয়ে যাবে পণ্যে। সেটা তো আমরা পেঁয়াজ, তেল ইত্যাদি পণ্যের ক্ষেত্রে আগেও দেখেছি।
আরেকটি সংগত প্রশ্নও তোলা যায়। আমাদের নাগরিক সমাজের বা সেলিব্রিটি মহলের কারও মুখ থেকে কি এখন পর্যন্ত তেমন কিছু শুনেছেন, যাতে মনে হয় গরিবের পাশে আছেন তাঁরা? আমি যে মাফিয়ার কথা উল্লেখ করলাম, তার বিস্তার কিন্তু সাংস্কৃতিক মহলেও ছিল। রাজনীতি ও সংস্কৃতি যখন একশ্রেণির পেশিবহুল মানুষের আয়ত্তে থাকে, তখন যে ঘটনাগুলো ঘটতে থাকে, তা মোটেও স্বাভাবিক নয়। সে আলোচনা হবে ভিন্ন কোথাও। পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা করে যেকোনো পণ্যের দাম বাড়তেই পারে। কিন্তু দামের এতটা উল্লম্ফন গরিব আর মধ্যবিত্তের পেটে
যে কত বড় লাথি মারতে পারে, তা কি কেউ বুঝতে পারে?
বেশি কিছু বলব না। আগামী সপ্তাহের ছুটির দিনটিতে শুধু ধানমন্ডির রেস্তোরাঁগুলোয় ঢুঁ মেরে দেখুন, সেখানে বসার জায়গা পান কি না। ফাস্ট ফুড হোক কিংবা হোক তা বুফে খাবার, রেস্তোরাঁ উপচে পড়বে খাবারের সম্ভারে। লিফটে না উঠে পেছনের সিঁড়ি দিয়ে নামার চেষ্টা করুন, দেখবেন ফেলে দেওয়া খাবারের দুর্গন্ধে আপনার নাড়িও উল্টে আসবে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

মন্ত্রীরা বেশ ভালো বোঝেন। ছুটির দিন কয়েকজন সাংবাদিককে ডেকে তিনি জানিয়ে দিতে পারেন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। এরপর যা হয়। সে খবর প্রকাশ পেলেই ফিলিং স্টেশনে হুড়োহুড়ি। অনেক ফিলিং স্টেশনের কর্মচারীরাই নির্বিকার। আপাতত তেল সরবরাহ করা হবে না। আদেশ হয়েছে, রাত ১২টার পর বাড়বে তেলের দাম; অর্থাৎ মাত্র কয়েকটা ঘণ্টা অপেক্ষা করলেই যে দামে তেল কেনা হয়েছে, তা থেকে অনেক বেশি দামে বিক্রি করা যাবে। এটাকে প্যারাডক্স বলব কি না, জানি না—কম দামে তেল কেনার জন্য ফিলিং স্টেশনের লাইনে দাঁড়িয়েছে হাইব্রিড গাড়ি, বিএমডব্লিউ, মার্সিডিসের মতো গাড়িগুলোও।
পরিবহন সেক্টরের মানুষেরা খেপে উঠেছেন তাতে। অবশ্য সেটা সাময়িক। তাঁরা সে রাতেই ধর্মঘটের মতো কিছু একটা করেছেন। আজিমপুর থেকে গাবতলী পর্যন্ত বাস ছিল বন্ধ। মধ্যরাতে রাস্তায় যানজট। জনগণ পরিবহনশ্রমিকদের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছে। পরিবহন সেক্টরের এই ধর্মঘট সাধারণ মানুষের স্বার্থে নয়। পরিবহনের ভাড়া বাড়িয়ে কীভাবে জনগণের গলা কাটা যায়, তা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তারা এই তেজ দেখায়। তারপর যাত্রীদের কাছ থেকে সেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। গ্যাসের দাম বাড়লে তেলে চলা গাড়ি যেমন যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করে, তেমনি তেলের দাম বাড়লে গ্যাসচালিত বাসও বেশি ভাড়া কাটে। এগুলো দেখার কেউ নেই।
রাতের ঘুম দিয়ে সকালে উঠে কৃষকের মাথায় হাত। কখনোই তিনি তাঁর ফলানো ফসলের ন্যায্য দাম পান না। কিন্তু এবার তাঁর করণীয় কী, সেটা বুঝে উঠতে সময় লাগবে। সেচের জন্য ডিজেল প্রয়োজন তাঁর। সারের দাম বেড়েছে, এখন ডিজেলের দাম যেভাবে বাড়ল, তাতে উৎপাদন খরচ সামলে লাভের মুখ দেখা তাঁর জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
এ কথা আমাকে নতুন করে বলতে হবে না যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে সবচেয়ে বড় শিকার হবে গরিব মানুষ। আমাদের দেশ উন্নয়নের মূল সড়কে উঠে সাঁই সাঁই করে সামনে এগিয়ে চলেছে বটে, কিন্তু সেই উন্নয়নের কতটা বহিরঙ্গের উন্নয়ন, কতটা সত্যিকারের উন্নয়ন, সে ভাবনা এখন অনেকের মনেই ঘুরতে শুরু করেছে। উন্নয়নের অর্থনীতিতে চুইয়ে পড়া অর্থনীতির সংযোগ আছে বলে ফাঁকটা চোখে পড়ে কম। নানা উন্নয়ন প্রকল্পে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ লাভবান হয়। আমাদের দেশে যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে কতটা আন্তরিকতা থাকে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কোটি কোটি টাকার প্রকল্পের একটা বৃহৎ অংশ যে আত্মসাৎ হয়ে যায়, এ রকম কথাও তো আমরা শুনি। আজ যার কিছুই ছিল না, কাল সে কোটিপতি কী করে হয়, সে অঙ্ক মেলাতে গিয়ে ধাঁধায় পড়ে যায় মানুষ। এই স্বল্পসংখ্যক কোটিপতির ভিড়ে দেশের কোটি কোটি কৃষক কোনোভাবে টিকে থাকেন। উন্নয়নের গল্প শোনেন।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার অসহায় শিকার হবে মধ্যবিত্ত। সেই মধ্যবিত্ত, যে ধনী ও গরিবের মাঝখানে দাঁড়িয়ে নীতিকথা আওড়ায়। বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় অংশ উঠে আসেন যাদের মধ্য থেকে। যদিও বুদ্ধিজীবী কারা এবং এখনো বুদ্ধিজীবী আছেন কি না, এমন প্রশ্ন উঠেছে; প্রশ্ন উঠেছে দলীয় বুদ্ধিজীবীর বাইরে সত্যিই কি কেউ আছেন এখন? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু বুদ্ধিজীবী প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে যদি আমরা সাধারণ মধ্যবিত্তকে দেখি, তাহলে বুঝতে পারব, এই শ্রেণির টিকে থাকা খুবই মুশকিল হয়ে যাবে।
সংকটে পড়বেন চাকরিজীবীরা। যাঁরা স্বল্প বেতনে চাকরি করেন, তাঁদের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেলে সঞ্চয় তো দূরের কথা, খেয়ে-পরে বাঁচার চিন্তাটাই তো হারাম হয়ে যাবে। চাকরিদাতারা চেষ্টা করবেন চাকরিজীবীদের সমস্যাগুলো আলোচনায় না আনতে। আমাদের এখানে চাকরির সুযোগ এত কম যে কেউ একজন চাকরি ছাড়লে অন্যরা হাভাতের মতো সেই চাকরির দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ফলে চাকরিদাতার হাতেই থাকে সার্কাসের রিংটি। তিনিই খেলা দেখান। অন্যরা বাঁদর নাচ নাচতে বাধ্য হয়।
এই দুদিন বিভিন্ন পত্রিকায় অর্থনীতি-বিশেষজ্ঞদের অনেক পরামর্শ পড়লাম। আইএমএফের ঋণ পাওয়ার জন্য সরকার বোধ হয় এমন পদক্ষেপ নিয়েছে—এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের অনেকেই বলেছেন, এক লাফে যতটা বাড়ানো হয়েছে, তা উচিত হয়নি। আমি বিশেষজ্ঞ নই। এ ব্যাপারে নিজের মতামত জানালে তা পাঠকের উপকারে লাগবে না। আমি শুধু আমার নিজের একটি অভিজ্ঞতা পাঠকের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাইছি। যদিও আমি মনে করি না, এ রকম কোনো দুর্বিষহ অবস্থা আমাদের হতে পারে, কিন্তু অভিজ্ঞতাটা শোনা থাকলে সতর্ক হতে পারে মানুষ। আমি শ্রীলঙ্কা-প্রসঙ্গ এখানে টানছি না। বলছি সোভিয়েত ইউনিয়নে কাটিয়ে আসা শেষ দিনগুলোর কথা এবং গণতান্ত্রিক রাশিয়ায় বসবাসের ঘটনাগুলো।
দুই
আশির দশকের মাঝামাঝি মিখাইল গরবাচেভের পিরিস্ত্রোইকা ও গ্লাসনোস্ত বিষয়ে সবাই জানেন। কিন্তু তাঁরই পথ ধরে সোভিয়েত ইউনিয়নে বরিস ইয়েলৎসিনের উত্থান, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে ১৫টি বন্ধুভাবাপন্ন রাষ্ট্রের জন্ম, সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরসূরি হিসেবে রাশিয়ার আবির্ভাব ইত্যাদি ইতিহাসও পাঠকের অজানা নয়। তাই ফলাফলটা নিয়েই কথা বলা জরুরি।
সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নে রাষ্ট্রের হাতেই ছিল সর্বময় ক্ষমতা। জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করত রাষ্ট্র। পরিবহন, জ্বালানি, যন্ত্রপাতির সরবরাহ থেকে শুরু করে সবকিছুই ছিল রাষ্ট্রের অধিকারে। সেখানেই নেমেছিল ধস। রাষ্ট্র তার অভিভাবকত্ব ধীরে ধীরে ছেড়ে দিতে শুরু করল। ওখানে মুদ্রাস্ফীতির যে বিশাল উল্লম্ফন ছিল, তা ছিল বহুদিনের বদ্ধ একটি সমাজের পরিবর্তন ও তার প্রতিক্রিয়ার। সেটা আমাদের মতো দেশে হয়তো ঘটবে না। কিন্তু তা শুনে রাখা দরকার।
বেড়ে গেল ডলারের দাম। রুবল হয়ে গেল কাগজের মতো। যাঁরা ব্যাংকে টাকা রেখেছিলেন, তাঁদের সেই টাকার অর্থমূল্য গেল কমে। সাড়ে তিন রুবল দিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কেনা যেত ১৯৮৬ সালে। ১৯৯৫ সালে এক কেজি গরুর মাংসের দাম দাঁড়িয়েছিল ১৮ হাজার রুবলে!
পড়াশোনার জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে যে বরাদ্দ ছিল, তা এতটাই কম ছিল যে স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে শুধু মাস্টারি করে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছিল। আমার এক শ্রদ্ধেয় শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের ফেলে দেওয়া মদের বোতল কুড়িয়ে নিয়ে যেতে দেখেছি। সেই বোতলগুলো বিক্রি করে হয়তো সেদিনের রুটির ব্যবস্থা করতে পারবেন।
হঠাৎ করেই বাজার থেকে পণ্য হাওয়া হয়ে যেতে শুরু করল। চোরাবাজারে পাঁচ গুণ-দশ গুণ দামে তা বিক্রি হতে লাগল। সেখানে কি ক্রেতা নেই? আছে। কারা তারা? আর যা-ই হোক, প্রলেতারিয়েত বা বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অর্থাৎ মধ্যবিত্ত শ্রেণি নয়।
গরিব আর মধ্যবিত্তের জীবনে অশনিসংকেত এসে গ্রাস করল তাদের জীবনীশক্তি। কী করে তারা বাঁচবে, তার কূল-কিনারা পেল না। কেউ কেউ ফুটপাতে দাঁড়িয়ে গেল বেশি দামে কিছু বিক্রি করতে, উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করল যারা, তাদের মাথার ওপর আশীর্বাদ না থাকলে তাদের আম ও ছালা দুই-ই হারিয়ে গেল। যারা সেই আশীর্বাদ পেল, তারা কোনোভাবে বেঁচেবর্তে থাকল। আর বেশি আশকারা পেল যারা, তারা সঞ্চিত করল অর্থ। হয়ে উঠল পুঁজিপতি।
অন্যদিকে ছোট্ট একটি শ্রেণি জন্ম নিল, যারা ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করল অর্থনীতি। তারা সিঙ্গাপুর থেকে কম্পিউটার এনে বিক্রি করা শুরু করল। চীন ও তুরস্ক থেকে কাপড় এনে বিক্রি করতে লাগল। চামড়ার জ্যাকেট আর স্পোর্টস কস্টিউম কেনার হিড়িক পড়ে গেল একশ্রেণির মানুষের মধ্যে। অস্ত্র ব্যবসায়ী হয়ে উঠল কেউ কেউ। এরা কোথা থেকে টাকা জোগাড় করছে, তা সব সময় বোঝা যাচ্ছিল না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, কোথাও কোথাও টাকা ঘুরে বেড়াচ্ছে। সবাই তা ধরতে পারছে না।
বাজার নিয়ন্ত্রক শ্রেণির মধ্যেও জন্ম নিল আরেকটি শ্রেণি, যাদের আমাদের দেশের ভাষায় ‘মাস্তান’ বলা হয়। ওরা বলত ‘ক্রিশা’, মানে ছাদ। আপনি ব্যবসা করবেন, করুন, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আপনার মাথায় যদি ছাদ হয়ে মাফিয়া না থাকে, তাহলে লাভের গুড় পিঁপড়ায় খাবে। অতএব বেশি চালাকি করবেন না। অন্য কোনো মাফিয়া দল আপনার কাছে বখরা চাইতে এলে আপনি আপনার ‘ছাদ’-এর নাম উল্লেখ করুন। আপনাকে কেউ ছোঁবে না। মাফিয়া-মাফিয়া নিজেদের মধ্যে আলাপ করে নেবে।
তিন
আরও অনেক কিছুই বলার ছিল। কিন্তু অল্প কথায় মুদ্রাস্ফীতির ফলে যে ঘটনাগুলো ঘটতে পারে, তার আংশিক বর্ণনা করলাম। রাশিয়ায় তখন দুটো পেশায় যেতে বাধ্য হয়েছিল তরুণ-তরুণীরা। মাস্তান হচ্ছিল ছেলেরা, শরীর বিক্রি করে বাঁচার উপায় খুঁজে বের করছিল মেয়েরা। সে দেশের বাস্তবতায় সেটা ছিল বেঁচে থাকার দাবি। এ নিয়ে অন্যদিন লেখা যাবে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর পরিবহন, কৃষি, বাজারসহ যে যে জায়গায় তার আঘাত এসে পড়বে, তাতে কিন্তু অসাধু মানুষের তৎপরতাও বেড়ে যেতে পারে। বাজার থেকে যদি কোনো পণ্য উধাও হয়ে যায়, তাহলে নিশ্চিত থাকুন, বেশি দামে সেগুলো বিক্রি হওয়া শুরু হলেই আবার বাজার ছেয়ে যাবে পণ্যে। সেটা তো আমরা পেঁয়াজ, তেল ইত্যাদি পণ্যের ক্ষেত্রে আগেও দেখেছি।
আরেকটি সংগত প্রশ্নও তোলা যায়। আমাদের নাগরিক সমাজের বা সেলিব্রিটি মহলের কারও মুখ থেকে কি এখন পর্যন্ত তেমন কিছু শুনেছেন, যাতে মনে হয় গরিবের পাশে আছেন তাঁরা? আমি যে মাফিয়ার কথা উল্লেখ করলাম, তার বিস্তার কিন্তু সাংস্কৃতিক মহলেও ছিল। রাজনীতি ও সংস্কৃতি যখন একশ্রেণির পেশিবহুল মানুষের আয়ত্তে থাকে, তখন যে ঘটনাগুলো ঘটতে থাকে, তা মোটেও স্বাভাবিক নয়। সে আলোচনা হবে ভিন্ন কোথাও। পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা করে যেকোনো পণ্যের দাম বাড়তেই পারে। কিন্তু দামের এতটা উল্লম্ফন গরিব আর মধ্যবিত্তের পেটে
যে কত বড় লাথি মারতে পারে, তা কি কেউ বুঝতে পারে?
বেশি কিছু বলব না। আগামী সপ্তাহের ছুটির দিনটিতে শুধু ধানমন্ডির রেস্তোরাঁগুলোয় ঢুঁ মেরে দেখুন, সেখানে বসার জায়গা পান কি না। ফাস্ট ফুড হোক কিংবা হোক তা বুফে খাবার, রেস্তোরাঁ উপচে পড়বে খাবারের সম্ভারে। লিফটে না উঠে পেছনের সিঁড়ি দিয়ে নামার চেষ্টা করুন, দেখবেন ফেলে দেওয়া খাবারের দুর্গন্ধে আপনার নাড়িও উল্টে আসবে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জাহীদ রেজা নূর

মন্ত্রীরা বেশ ভালো বোঝেন। ছুটির দিন কয়েকজন সাংবাদিককে ডেকে তিনি জানিয়ে দিতে পারেন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। এরপর যা হয়। সে খবর প্রকাশ পেলেই ফিলিং স্টেশনে হুড়োহুড়ি। অনেক ফিলিং স্টেশনের কর্মচারীরাই নির্বিকার। আপাতত তেল সরবরাহ করা হবে না। আদেশ হয়েছে, রাত ১২টার পর বাড়বে তেলের দাম; অর্থাৎ মাত্র কয়েকটা ঘণ্টা অপেক্ষা করলেই যে দামে তেল কেনা হয়েছে, তা থেকে অনেক বেশি দামে বিক্রি করা যাবে। এটাকে প্যারাডক্স বলব কি না, জানি না—কম দামে তেল কেনার জন্য ফিলিং স্টেশনের লাইনে দাঁড়িয়েছে হাইব্রিড গাড়ি, বিএমডব্লিউ, মার্সিডিসের মতো গাড়িগুলোও।
পরিবহন সেক্টরের মানুষেরা খেপে উঠেছেন তাতে। অবশ্য সেটা সাময়িক। তাঁরা সে রাতেই ধর্মঘটের মতো কিছু একটা করেছেন। আজিমপুর থেকে গাবতলী পর্যন্ত বাস ছিল বন্ধ। মধ্যরাতে রাস্তায় যানজট। জনগণ পরিবহনশ্রমিকদের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছে। পরিবহন সেক্টরের এই ধর্মঘট সাধারণ মানুষের স্বার্থে নয়। পরিবহনের ভাড়া বাড়িয়ে কীভাবে জনগণের গলা কাটা যায়, তা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তারা এই তেজ দেখায়। তারপর যাত্রীদের কাছ থেকে সেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। গ্যাসের দাম বাড়লে তেলে চলা গাড়ি যেমন যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করে, তেমনি তেলের দাম বাড়লে গ্যাসচালিত বাসও বেশি ভাড়া কাটে। এগুলো দেখার কেউ নেই।
রাতের ঘুম দিয়ে সকালে উঠে কৃষকের মাথায় হাত। কখনোই তিনি তাঁর ফলানো ফসলের ন্যায্য দাম পান না। কিন্তু এবার তাঁর করণীয় কী, সেটা বুঝে উঠতে সময় লাগবে। সেচের জন্য ডিজেল প্রয়োজন তাঁর। সারের দাম বেড়েছে, এখন ডিজেলের দাম যেভাবে বাড়ল, তাতে উৎপাদন খরচ সামলে লাভের মুখ দেখা তাঁর জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
এ কথা আমাকে নতুন করে বলতে হবে না যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে সবচেয়ে বড় শিকার হবে গরিব মানুষ। আমাদের দেশ উন্নয়নের মূল সড়কে উঠে সাঁই সাঁই করে সামনে এগিয়ে চলেছে বটে, কিন্তু সেই উন্নয়নের কতটা বহিরঙ্গের উন্নয়ন, কতটা সত্যিকারের উন্নয়ন, সে ভাবনা এখন অনেকের মনেই ঘুরতে শুরু করেছে। উন্নয়নের অর্থনীতিতে চুইয়ে পড়া অর্থনীতির সংযোগ আছে বলে ফাঁকটা চোখে পড়ে কম। নানা উন্নয়ন প্রকল্পে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ লাভবান হয়। আমাদের দেশে যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে কতটা আন্তরিকতা থাকে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কোটি কোটি টাকার প্রকল্পের একটা বৃহৎ অংশ যে আত্মসাৎ হয়ে যায়, এ রকম কথাও তো আমরা শুনি। আজ যার কিছুই ছিল না, কাল সে কোটিপতি কী করে হয়, সে অঙ্ক মেলাতে গিয়ে ধাঁধায় পড়ে যায় মানুষ। এই স্বল্পসংখ্যক কোটিপতির ভিড়ে দেশের কোটি কোটি কৃষক কোনোভাবে টিকে থাকেন। উন্নয়নের গল্প শোনেন।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার অসহায় শিকার হবে মধ্যবিত্ত। সেই মধ্যবিত্ত, যে ধনী ও গরিবের মাঝখানে দাঁড়িয়ে নীতিকথা আওড়ায়। বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় অংশ উঠে আসেন যাদের মধ্য থেকে। যদিও বুদ্ধিজীবী কারা এবং এখনো বুদ্ধিজীবী আছেন কি না, এমন প্রশ্ন উঠেছে; প্রশ্ন উঠেছে দলীয় বুদ্ধিজীবীর বাইরে সত্যিই কি কেউ আছেন এখন? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু বুদ্ধিজীবী প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে যদি আমরা সাধারণ মধ্যবিত্তকে দেখি, তাহলে বুঝতে পারব, এই শ্রেণির টিকে থাকা খুবই মুশকিল হয়ে যাবে।
সংকটে পড়বেন চাকরিজীবীরা। যাঁরা স্বল্প বেতনে চাকরি করেন, তাঁদের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেলে সঞ্চয় তো দূরের কথা, খেয়ে-পরে বাঁচার চিন্তাটাই তো হারাম হয়ে যাবে। চাকরিদাতারা চেষ্টা করবেন চাকরিজীবীদের সমস্যাগুলো আলোচনায় না আনতে। আমাদের এখানে চাকরির সুযোগ এত কম যে কেউ একজন চাকরি ছাড়লে অন্যরা হাভাতের মতো সেই চাকরির দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ফলে চাকরিদাতার হাতেই থাকে সার্কাসের রিংটি। তিনিই খেলা দেখান। অন্যরা বাঁদর নাচ নাচতে বাধ্য হয়।
এই দুদিন বিভিন্ন পত্রিকায় অর্থনীতি-বিশেষজ্ঞদের অনেক পরামর্শ পড়লাম। আইএমএফের ঋণ পাওয়ার জন্য সরকার বোধ হয় এমন পদক্ষেপ নিয়েছে—এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের অনেকেই বলেছেন, এক লাফে যতটা বাড়ানো হয়েছে, তা উচিত হয়নি। আমি বিশেষজ্ঞ নই। এ ব্যাপারে নিজের মতামত জানালে তা পাঠকের উপকারে লাগবে না। আমি শুধু আমার নিজের একটি অভিজ্ঞতা পাঠকের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাইছি। যদিও আমি মনে করি না, এ রকম কোনো দুর্বিষহ অবস্থা আমাদের হতে পারে, কিন্তু অভিজ্ঞতাটা শোনা থাকলে সতর্ক হতে পারে মানুষ। আমি শ্রীলঙ্কা-প্রসঙ্গ এখানে টানছি না। বলছি সোভিয়েত ইউনিয়নে কাটিয়ে আসা শেষ দিনগুলোর কথা এবং গণতান্ত্রিক রাশিয়ায় বসবাসের ঘটনাগুলো।
দুই
আশির দশকের মাঝামাঝি মিখাইল গরবাচেভের পিরিস্ত্রোইকা ও গ্লাসনোস্ত বিষয়ে সবাই জানেন। কিন্তু তাঁরই পথ ধরে সোভিয়েত ইউনিয়নে বরিস ইয়েলৎসিনের উত্থান, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে ১৫টি বন্ধুভাবাপন্ন রাষ্ট্রের জন্ম, সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরসূরি হিসেবে রাশিয়ার আবির্ভাব ইত্যাদি ইতিহাসও পাঠকের অজানা নয়। তাই ফলাফলটা নিয়েই কথা বলা জরুরি।
সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নে রাষ্ট্রের হাতেই ছিল সর্বময় ক্ষমতা। জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করত রাষ্ট্র। পরিবহন, জ্বালানি, যন্ত্রপাতির সরবরাহ থেকে শুরু করে সবকিছুই ছিল রাষ্ট্রের অধিকারে। সেখানেই নেমেছিল ধস। রাষ্ট্র তার অভিভাবকত্ব ধীরে ধীরে ছেড়ে দিতে শুরু করল। ওখানে মুদ্রাস্ফীতির যে বিশাল উল্লম্ফন ছিল, তা ছিল বহুদিনের বদ্ধ একটি সমাজের পরিবর্তন ও তার প্রতিক্রিয়ার। সেটা আমাদের মতো দেশে হয়তো ঘটবে না। কিন্তু তা শুনে রাখা দরকার।
বেড়ে গেল ডলারের দাম। রুবল হয়ে গেল কাগজের মতো। যাঁরা ব্যাংকে টাকা রেখেছিলেন, তাঁদের সেই টাকার অর্থমূল্য গেল কমে। সাড়ে তিন রুবল দিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কেনা যেত ১৯৮৬ সালে। ১৯৯৫ সালে এক কেজি গরুর মাংসের দাম দাঁড়িয়েছিল ১৮ হাজার রুবলে!
পড়াশোনার জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে যে বরাদ্দ ছিল, তা এতটাই কম ছিল যে স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে শুধু মাস্টারি করে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছিল। আমার এক শ্রদ্ধেয় শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের ফেলে দেওয়া মদের বোতল কুড়িয়ে নিয়ে যেতে দেখেছি। সেই বোতলগুলো বিক্রি করে হয়তো সেদিনের রুটির ব্যবস্থা করতে পারবেন।
হঠাৎ করেই বাজার থেকে পণ্য হাওয়া হয়ে যেতে শুরু করল। চোরাবাজারে পাঁচ গুণ-দশ গুণ দামে তা বিক্রি হতে লাগল। সেখানে কি ক্রেতা নেই? আছে। কারা তারা? আর যা-ই হোক, প্রলেতারিয়েত বা বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অর্থাৎ মধ্যবিত্ত শ্রেণি নয়।
গরিব আর মধ্যবিত্তের জীবনে অশনিসংকেত এসে গ্রাস করল তাদের জীবনীশক্তি। কী করে তারা বাঁচবে, তার কূল-কিনারা পেল না। কেউ কেউ ফুটপাতে দাঁড়িয়ে গেল বেশি দামে কিছু বিক্রি করতে, উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করল যারা, তাদের মাথার ওপর আশীর্বাদ না থাকলে তাদের আম ও ছালা দুই-ই হারিয়ে গেল। যারা সেই আশীর্বাদ পেল, তারা কোনোভাবে বেঁচেবর্তে থাকল। আর বেশি আশকারা পেল যারা, তারা সঞ্চিত করল অর্থ। হয়ে উঠল পুঁজিপতি।
অন্যদিকে ছোট্ট একটি শ্রেণি জন্ম নিল, যারা ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করল অর্থনীতি। তারা সিঙ্গাপুর থেকে কম্পিউটার এনে বিক্রি করা শুরু করল। চীন ও তুরস্ক থেকে কাপড় এনে বিক্রি করতে লাগল। চামড়ার জ্যাকেট আর স্পোর্টস কস্টিউম কেনার হিড়িক পড়ে গেল একশ্রেণির মানুষের মধ্যে। অস্ত্র ব্যবসায়ী হয়ে উঠল কেউ কেউ। এরা কোথা থেকে টাকা জোগাড় করছে, তা সব সময় বোঝা যাচ্ছিল না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, কোথাও কোথাও টাকা ঘুরে বেড়াচ্ছে। সবাই তা ধরতে পারছে না।
বাজার নিয়ন্ত্রক শ্রেণির মধ্যেও জন্ম নিল আরেকটি শ্রেণি, যাদের আমাদের দেশের ভাষায় ‘মাস্তান’ বলা হয়। ওরা বলত ‘ক্রিশা’, মানে ছাদ। আপনি ব্যবসা করবেন, করুন, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আপনার মাথায় যদি ছাদ হয়ে মাফিয়া না থাকে, তাহলে লাভের গুড় পিঁপড়ায় খাবে। অতএব বেশি চালাকি করবেন না। অন্য কোনো মাফিয়া দল আপনার কাছে বখরা চাইতে এলে আপনি আপনার ‘ছাদ’-এর নাম উল্লেখ করুন। আপনাকে কেউ ছোঁবে না। মাফিয়া-মাফিয়া নিজেদের মধ্যে আলাপ করে নেবে।
তিন
আরও অনেক কিছুই বলার ছিল। কিন্তু অল্প কথায় মুদ্রাস্ফীতির ফলে যে ঘটনাগুলো ঘটতে পারে, তার আংশিক বর্ণনা করলাম। রাশিয়ায় তখন দুটো পেশায় যেতে বাধ্য হয়েছিল তরুণ-তরুণীরা। মাস্তান হচ্ছিল ছেলেরা, শরীর বিক্রি করে বাঁচার উপায় খুঁজে বের করছিল মেয়েরা। সে দেশের বাস্তবতায় সেটা ছিল বেঁচে থাকার দাবি। এ নিয়ে অন্যদিন লেখা যাবে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর পরিবহন, কৃষি, বাজারসহ যে যে জায়গায় তার আঘাত এসে পড়বে, তাতে কিন্তু অসাধু মানুষের তৎপরতাও বেড়ে যেতে পারে। বাজার থেকে যদি কোনো পণ্য উধাও হয়ে যায়, তাহলে নিশ্চিত থাকুন, বেশি দামে সেগুলো বিক্রি হওয়া শুরু হলেই আবার বাজার ছেয়ে যাবে পণ্যে। সেটা তো আমরা পেঁয়াজ, তেল ইত্যাদি পণ্যের ক্ষেত্রে আগেও দেখেছি।
আরেকটি সংগত প্রশ্নও তোলা যায়। আমাদের নাগরিক সমাজের বা সেলিব্রিটি মহলের কারও মুখ থেকে কি এখন পর্যন্ত তেমন কিছু শুনেছেন, যাতে মনে হয় গরিবের পাশে আছেন তাঁরা? আমি যে মাফিয়ার কথা উল্লেখ করলাম, তার বিস্তার কিন্তু সাংস্কৃতিক মহলেও ছিল। রাজনীতি ও সংস্কৃতি যখন একশ্রেণির পেশিবহুল মানুষের আয়ত্তে থাকে, তখন যে ঘটনাগুলো ঘটতে থাকে, তা মোটেও স্বাভাবিক নয়। সে আলোচনা হবে ভিন্ন কোথাও। পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা করে যেকোনো পণ্যের দাম বাড়তেই পারে। কিন্তু দামের এতটা উল্লম্ফন গরিব আর মধ্যবিত্তের পেটে
যে কত বড় লাথি মারতে পারে, তা কি কেউ বুঝতে পারে?
বেশি কিছু বলব না। আগামী সপ্তাহের ছুটির দিনটিতে শুধু ধানমন্ডির রেস্তোরাঁগুলোয় ঢুঁ মেরে দেখুন, সেখানে বসার জায়গা পান কি না। ফাস্ট ফুড হোক কিংবা হোক তা বুফে খাবার, রেস্তোরাঁ উপচে পড়বে খাবারের সম্ভারে। লিফটে না উঠে পেছনের সিঁড়ি দিয়ে নামার চেষ্টা করুন, দেখবেন ফেলে দেওয়া খাবারের দুর্গন্ধে আপনার নাড়িও উল্টে আসবে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

মন্ত্রীরা বেশ ভালো বোঝেন। ছুটির দিন কয়েকজন সাংবাদিককে ডেকে তিনি জানিয়ে দিতে পারেন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। এরপর যা হয়। সে খবর প্রকাশ পেলেই ফিলিং স্টেশনে হুড়োহুড়ি। অনেক ফিলিং স্টেশনের কর্মচারীরাই নির্বিকার। আপাতত তেল সরবরাহ করা হবে না। আদেশ হয়েছে, রাত ১২টার পর বাড়বে তেলের দাম; অর্থাৎ মাত্র কয়েকটা ঘণ্টা অপেক্ষা করলেই যে দামে তেল কেনা হয়েছে, তা থেকে অনেক বেশি দামে বিক্রি করা যাবে। এটাকে প্যারাডক্স বলব কি না, জানি না—কম দামে তেল কেনার জন্য ফিলিং স্টেশনের লাইনে দাঁড়িয়েছে হাইব্রিড গাড়ি, বিএমডব্লিউ, মার্সিডিসের মতো গাড়িগুলোও।
পরিবহন সেক্টরের মানুষেরা খেপে উঠেছেন তাতে। অবশ্য সেটা সাময়িক। তাঁরা সে রাতেই ধর্মঘটের মতো কিছু একটা করেছেন। আজিমপুর থেকে গাবতলী পর্যন্ত বাস ছিল বন্ধ। মধ্যরাতে রাস্তায় যানজট। জনগণ পরিবহনশ্রমিকদের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছে। পরিবহন সেক্টরের এই ধর্মঘট সাধারণ মানুষের স্বার্থে নয়। পরিবহনের ভাড়া বাড়িয়ে কীভাবে জনগণের গলা কাটা যায়, তা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তারা এই তেজ দেখায়। তারপর যাত্রীদের কাছ থেকে সেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। গ্যাসের দাম বাড়লে তেলে চলা গাড়ি যেমন যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করে, তেমনি তেলের দাম বাড়লে গ্যাসচালিত বাসও বেশি ভাড়া কাটে। এগুলো দেখার কেউ নেই।
রাতের ঘুম দিয়ে সকালে উঠে কৃষকের মাথায় হাত। কখনোই তিনি তাঁর ফলানো ফসলের ন্যায্য দাম পান না। কিন্তু এবার তাঁর করণীয় কী, সেটা বুঝে উঠতে সময় লাগবে। সেচের জন্য ডিজেল প্রয়োজন তাঁর। সারের দাম বেড়েছে, এখন ডিজেলের দাম যেভাবে বাড়ল, তাতে উৎপাদন খরচ সামলে লাভের মুখ দেখা তাঁর জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
এ কথা আমাকে নতুন করে বলতে হবে না যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে সবচেয়ে বড় শিকার হবে গরিব মানুষ। আমাদের দেশ উন্নয়নের মূল সড়কে উঠে সাঁই সাঁই করে সামনে এগিয়ে চলেছে বটে, কিন্তু সেই উন্নয়নের কতটা বহিরঙ্গের উন্নয়ন, কতটা সত্যিকারের উন্নয়ন, সে ভাবনা এখন অনেকের মনেই ঘুরতে শুরু করেছে। উন্নয়নের অর্থনীতিতে চুইয়ে পড়া অর্থনীতির সংযোগ আছে বলে ফাঁকটা চোখে পড়ে কম। নানা উন্নয়ন প্রকল্পে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ লাভবান হয়। আমাদের দেশে যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে কতটা আন্তরিকতা থাকে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কোটি কোটি টাকার প্রকল্পের একটা বৃহৎ অংশ যে আত্মসাৎ হয়ে যায়, এ রকম কথাও তো আমরা শুনি। আজ যার কিছুই ছিল না, কাল সে কোটিপতি কী করে হয়, সে অঙ্ক মেলাতে গিয়ে ধাঁধায় পড়ে যায় মানুষ। এই স্বল্পসংখ্যক কোটিপতির ভিড়ে দেশের কোটি কোটি কৃষক কোনোভাবে টিকে থাকেন। উন্নয়নের গল্প শোনেন।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার অসহায় শিকার হবে মধ্যবিত্ত। সেই মধ্যবিত্ত, যে ধনী ও গরিবের মাঝখানে দাঁড়িয়ে নীতিকথা আওড়ায়। বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় অংশ উঠে আসেন যাদের মধ্য থেকে। যদিও বুদ্ধিজীবী কারা এবং এখনো বুদ্ধিজীবী আছেন কি না, এমন প্রশ্ন উঠেছে; প্রশ্ন উঠেছে দলীয় বুদ্ধিজীবীর বাইরে সত্যিই কি কেউ আছেন এখন? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু বুদ্ধিজীবী প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে যদি আমরা সাধারণ মধ্যবিত্তকে দেখি, তাহলে বুঝতে পারব, এই শ্রেণির টিকে থাকা খুবই মুশকিল হয়ে যাবে।
সংকটে পড়বেন চাকরিজীবীরা। যাঁরা স্বল্প বেতনে চাকরি করেন, তাঁদের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেলে সঞ্চয় তো দূরের কথা, খেয়ে-পরে বাঁচার চিন্তাটাই তো হারাম হয়ে যাবে। চাকরিদাতারা চেষ্টা করবেন চাকরিজীবীদের সমস্যাগুলো আলোচনায় না আনতে। আমাদের এখানে চাকরির সুযোগ এত কম যে কেউ একজন চাকরি ছাড়লে অন্যরা হাভাতের মতো সেই চাকরির দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ফলে চাকরিদাতার হাতেই থাকে সার্কাসের রিংটি। তিনিই খেলা দেখান। অন্যরা বাঁদর নাচ নাচতে বাধ্য হয়।
এই দুদিন বিভিন্ন পত্রিকায় অর্থনীতি-বিশেষজ্ঞদের অনেক পরামর্শ পড়লাম। আইএমএফের ঋণ পাওয়ার জন্য সরকার বোধ হয় এমন পদক্ষেপ নিয়েছে—এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের অনেকেই বলেছেন, এক লাফে যতটা বাড়ানো হয়েছে, তা উচিত হয়নি। আমি বিশেষজ্ঞ নই। এ ব্যাপারে নিজের মতামত জানালে তা পাঠকের উপকারে লাগবে না। আমি শুধু আমার নিজের একটি অভিজ্ঞতা পাঠকের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাইছি। যদিও আমি মনে করি না, এ রকম কোনো দুর্বিষহ অবস্থা আমাদের হতে পারে, কিন্তু অভিজ্ঞতাটা শোনা থাকলে সতর্ক হতে পারে মানুষ। আমি শ্রীলঙ্কা-প্রসঙ্গ এখানে টানছি না। বলছি সোভিয়েত ইউনিয়নে কাটিয়ে আসা শেষ দিনগুলোর কথা এবং গণতান্ত্রিক রাশিয়ায় বসবাসের ঘটনাগুলো।
দুই
আশির দশকের মাঝামাঝি মিখাইল গরবাচেভের পিরিস্ত্রোইকা ও গ্লাসনোস্ত বিষয়ে সবাই জানেন। কিন্তু তাঁরই পথ ধরে সোভিয়েত ইউনিয়নে বরিস ইয়েলৎসিনের উত্থান, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে ১৫টি বন্ধুভাবাপন্ন রাষ্ট্রের জন্ম, সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরসূরি হিসেবে রাশিয়ার আবির্ভাব ইত্যাদি ইতিহাসও পাঠকের অজানা নয়। তাই ফলাফলটা নিয়েই কথা বলা জরুরি।
সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নে রাষ্ট্রের হাতেই ছিল সর্বময় ক্ষমতা। জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করত রাষ্ট্র। পরিবহন, জ্বালানি, যন্ত্রপাতির সরবরাহ থেকে শুরু করে সবকিছুই ছিল রাষ্ট্রের অধিকারে। সেখানেই নেমেছিল ধস। রাষ্ট্র তার অভিভাবকত্ব ধীরে ধীরে ছেড়ে দিতে শুরু করল। ওখানে মুদ্রাস্ফীতির যে বিশাল উল্লম্ফন ছিল, তা ছিল বহুদিনের বদ্ধ একটি সমাজের পরিবর্তন ও তার প্রতিক্রিয়ার। সেটা আমাদের মতো দেশে হয়তো ঘটবে না। কিন্তু তা শুনে রাখা দরকার।
বেড়ে গেল ডলারের দাম। রুবল হয়ে গেল কাগজের মতো। যাঁরা ব্যাংকে টাকা রেখেছিলেন, তাঁদের সেই টাকার অর্থমূল্য গেল কমে। সাড়ে তিন রুবল দিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কেনা যেত ১৯৮৬ সালে। ১৯৯৫ সালে এক কেজি গরুর মাংসের দাম দাঁড়িয়েছিল ১৮ হাজার রুবলে!
পড়াশোনার জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে যে বরাদ্দ ছিল, তা এতটাই কম ছিল যে স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে শুধু মাস্টারি করে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছিল। আমার এক শ্রদ্ধেয় শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের ফেলে দেওয়া মদের বোতল কুড়িয়ে নিয়ে যেতে দেখেছি। সেই বোতলগুলো বিক্রি করে হয়তো সেদিনের রুটির ব্যবস্থা করতে পারবেন।
হঠাৎ করেই বাজার থেকে পণ্য হাওয়া হয়ে যেতে শুরু করল। চোরাবাজারে পাঁচ গুণ-দশ গুণ দামে তা বিক্রি হতে লাগল। সেখানে কি ক্রেতা নেই? আছে। কারা তারা? আর যা-ই হোক, প্রলেতারিয়েত বা বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অর্থাৎ মধ্যবিত্ত শ্রেণি নয়।
গরিব আর মধ্যবিত্তের জীবনে অশনিসংকেত এসে গ্রাস করল তাদের জীবনীশক্তি। কী করে তারা বাঁচবে, তার কূল-কিনারা পেল না। কেউ কেউ ফুটপাতে দাঁড়িয়ে গেল বেশি দামে কিছু বিক্রি করতে, উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করল যারা, তাদের মাথার ওপর আশীর্বাদ না থাকলে তাদের আম ও ছালা দুই-ই হারিয়ে গেল। যারা সেই আশীর্বাদ পেল, তারা কোনোভাবে বেঁচেবর্তে থাকল। আর বেশি আশকারা পেল যারা, তারা সঞ্চিত করল অর্থ। হয়ে উঠল পুঁজিপতি।
অন্যদিকে ছোট্ট একটি শ্রেণি জন্ম নিল, যারা ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করল অর্থনীতি। তারা সিঙ্গাপুর থেকে কম্পিউটার এনে বিক্রি করা শুরু করল। চীন ও তুরস্ক থেকে কাপড় এনে বিক্রি করতে লাগল। চামড়ার জ্যাকেট আর স্পোর্টস কস্টিউম কেনার হিড়িক পড়ে গেল একশ্রেণির মানুষের মধ্যে। অস্ত্র ব্যবসায়ী হয়ে উঠল কেউ কেউ। এরা কোথা থেকে টাকা জোগাড় করছে, তা সব সময় বোঝা যাচ্ছিল না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, কোথাও কোথাও টাকা ঘুরে বেড়াচ্ছে। সবাই তা ধরতে পারছে না।
বাজার নিয়ন্ত্রক শ্রেণির মধ্যেও জন্ম নিল আরেকটি শ্রেণি, যাদের আমাদের দেশের ভাষায় ‘মাস্তান’ বলা হয়। ওরা বলত ‘ক্রিশা’, মানে ছাদ। আপনি ব্যবসা করবেন, করুন, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আপনার মাথায় যদি ছাদ হয়ে মাফিয়া না থাকে, তাহলে লাভের গুড় পিঁপড়ায় খাবে। অতএব বেশি চালাকি করবেন না। অন্য কোনো মাফিয়া দল আপনার কাছে বখরা চাইতে এলে আপনি আপনার ‘ছাদ’-এর নাম উল্লেখ করুন। আপনাকে কেউ ছোঁবে না। মাফিয়া-মাফিয়া নিজেদের মধ্যে আলাপ করে নেবে।
তিন
আরও অনেক কিছুই বলার ছিল। কিন্তু অল্প কথায় মুদ্রাস্ফীতির ফলে যে ঘটনাগুলো ঘটতে পারে, তার আংশিক বর্ণনা করলাম। রাশিয়ায় তখন দুটো পেশায় যেতে বাধ্য হয়েছিল তরুণ-তরুণীরা। মাস্তান হচ্ছিল ছেলেরা, শরীর বিক্রি করে বাঁচার উপায় খুঁজে বের করছিল মেয়েরা। সে দেশের বাস্তবতায় সেটা ছিল বেঁচে থাকার দাবি। এ নিয়ে অন্যদিন লেখা যাবে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর পরিবহন, কৃষি, বাজারসহ যে যে জায়গায় তার আঘাত এসে পড়বে, তাতে কিন্তু অসাধু মানুষের তৎপরতাও বেড়ে যেতে পারে। বাজার থেকে যদি কোনো পণ্য উধাও হয়ে যায়, তাহলে নিশ্চিত থাকুন, বেশি দামে সেগুলো বিক্রি হওয়া শুরু হলেই আবার বাজার ছেয়ে যাবে পণ্যে। সেটা তো আমরা পেঁয়াজ, তেল ইত্যাদি পণ্যের ক্ষেত্রে আগেও দেখেছি।
আরেকটি সংগত প্রশ্নও তোলা যায়। আমাদের নাগরিক সমাজের বা সেলিব্রিটি মহলের কারও মুখ থেকে কি এখন পর্যন্ত তেমন কিছু শুনেছেন, যাতে মনে হয় গরিবের পাশে আছেন তাঁরা? আমি যে মাফিয়ার কথা উল্লেখ করলাম, তার বিস্তার কিন্তু সাংস্কৃতিক মহলেও ছিল। রাজনীতি ও সংস্কৃতি যখন একশ্রেণির পেশিবহুল মানুষের আয়ত্তে থাকে, তখন যে ঘটনাগুলো ঘটতে থাকে, তা মোটেও স্বাভাবিক নয়। সে আলোচনা হবে ভিন্ন কোথাও। পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা করে যেকোনো পণ্যের দাম বাড়তেই পারে। কিন্তু দামের এতটা উল্লম্ফন গরিব আর মধ্যবিত্তের পেটে
যে কত বড় লাথি মারতে পারে, তা কি কেউ বুঝতে পারে?
বেশি কিছু বলব না। আগামী সপ্তাহের ছুটির দিনটিতে শুধু ধানমন্ডির রেস্তোরাঁগুলোয় ঢুঁ মেরে দেখুন, সেখানে বসার জায়গা পান কি না। ফাস্ট ফুড হোক কিংবা হোক তা বুফে খাবার, রেস্তোরাঁ উপচে পড়বে খাবারের সম্ভারে। লিফটে না উঠে পেছনের সিঁড়ি দিয়ে নামার চেষ্টা করুন, দেখবেন ফেলে দেওয়া খাবারের দুর্গন্ধে আপনার নাড়িও উল্টে আসবে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

মন্ত্রীরা বেশ ভালো বোঝেন। ছুটির দিন কয়েকজন সাংবাদিককে ডেকে তিনি জানিয়ে দিতে পারেন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। এরপর যা হয়। সে খবর প্রকাশ পেলেই ফিলিং স্টেশনে হুড়োহুড়ি। অনেক ফিলিং স্টেশনের কর্মচারীরাই নির্বিকার। আপাতত তেল সরবরাহ করা হবে না। আদেশ হয়েছে, রাত ১২টার পর বাড়বে তেলের দাম; অর্থাৎ মাত্র কয়েকটা ঘণ
০৮ আগস্ট ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

মন্ত্রীরা বেশ ভালো বোঝেন। ছুটির দিন কয়েকজন সাংবাদিককে ডেকে তিনি জানিয়ে দিতে পারেন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। এরপর যা হয়। সে খবর প্রকাশ পেলেই ফিলিং স্টেশনে হুড়োহুড়ি। অনেক ফিলিং স্টেশনের কর্মচারীরাই নির্বিকার। আপাতত তেল সরবরাহ করা হবে না। আদেশ হয়েছে, রাত ১২টার পর বাড়বে তেলের দাম; অর্থাৎ মাত্র কয়েকটা ঘণ
০৮ আগস্ট ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

মন্ত্রীরা বেশ ভালো বোঝেন। ছুটির দিন কয়েকজন সাংবাদিককে ডেকে তিনি জানিয়ে দিতে পারেন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। এরপর যা হয়। সে খবর প্রকাশ পেলেই ফিলিং স্টেশনে হুড়োহুড়ি। অনেক ফিলিং স্টেশনের কর্মচারীরাই নির্বিকার। আপাতত তেল সরবরাহ করা হবে না। আদেশ হয়েছে, রাত ১২টার পর বাড়বে তেলের দাম; অর্থাৎ মাত্র কয়েকটা ঘণ
০৮ আগস্ট ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

মন্ত্রীরা বেশ ভালো বোঝেন। ছুটির দিন কয়েকজন সাংবাদিককে ডেকে তিনি জানিয়ে দিতে পারেন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। এরপর যা হয়। সে খবর প্রকাশ পেলেই ফিলিং স্টেশনে হুড়োহুড়ি। অনেক ফিলিং স্টেশনের কর্মচারীরাই নির্বিকার। আপাতত তেল সরবরাহ করা হবে না। আদেশ হয়েছে, রাত ১২টার পর বাড়বে তেলের দাম; অর্থাৎ মাত্র কয়েকটা ঘণ
০৮ আগস্ট ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫