Ajker Patrika

ভালো ফলনেও স্বস্তি নেই

দিনাজপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ৫৮
ভালো ফলনেও স্বস্তি নেই

দিনাজপুরসহ গোটা উত্তরাঞ্চলে চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বড় কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা না দেওয়ায় বেশ ভালোভাবেই ফসল ঘরে তুলেছেন কৃষকেরা। দেশের খাদ্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত দিনাজপুর জেলায় এখন পুরোদমে চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। তাই দম ফেলাবার সময় নেই কৃষকদের। ধানের বাজারদর মোটামুটি ভালোই। তবে অস্থিতিশীল বাজার ও চালের চাহিদা কম থাকায় ধানের দাম নিয়ে শঙ্কায় চাষিরা। দাম কমলেই লোকসানের আশঙ্কা তাদের।

কৃষকেরা বলছেন, এ বছর আমন ধানের উৎপাদনে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। প্রতি বছর বর্ষার পানিতে আমন আবাদ করা গেলেও এ বছর সেচ দিতে হয়েছে। সার ও কীটনাশকও লেগেছে অন্য বছরের তুলনায় বেশি। আবার ধান ঘরে তোলার সময়ও শ্রমিক খরচও বেশি লেগেছে। সব মিলিয়ে ধানের উৎপাদন ব্যয় অন্যান্য বছরের তুলনায় দেড় গুণ বেশি হয়েছে।

অবশ্য এ বছর আবাদও ভালো হয়েছে। একরপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ মণ ধান উৎপন্ন হয়েছে। খরচ হয়েছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। গত পনেরো দিনে দিনাজপুরের সদরের গোপালগঞ্জ, আমবাড়ি, বিরল, কাহারোল, বোচাগঞ্জসহ একাধিক হাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শুরুতে ব্রি একান্ন বিক্রি হয়েছে বস্তা প্রতি ১ হাজার ৯৫০ থেকে ২ হাজার টাকায়, সুমন স্বর্ণা ২ হাজার ৫০ টাকা, গুটি স্বর্ণা ২ হাজার, ব্রি উনপঞ্চাশ ২ হাজার ১৫০ টাকায়।

সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি ধানের দাম কমেছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। বাজার অস্থিতিশীল থাকায় শঙ্কার মধ্যে দিন পার করছেন চাষিরা। দাম আরও কমে যায় কিনা এই আশঙ্কা তাঁদের। প্রতিদিনই সকাল-সন্ধ্যা নিয়ম করে খোঁজ খবর নিচ্ছেন তাঁরা। খোঁজ রাখছেন আশপাশের হাট বাজারেরও। দাম আরও কমলে লোকসানের আশঙ্কা কৃষকদের।

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার পুরিয়ার কৃষক মতিউর রহমান। এবার পঞ্চাশ একর জমিতে আমন আবাদ করেছেন তিনি। ভালো ফলন হয়েছে। তবে এ বছর আমন চাষ করতে গিয়ে ঝামেলা পোহাতে হয়েছে তাঁকে। এর আগে তিনি প্রতিবছর বর্ষার পানিতে আমন আবাদ করতেন। তবে এ বছর জমিতে সেচ দিতে হয়েছে। আবার ধান পাকার পর হঠাৎ করে কারেন্ট পোকার (বাদামি ঘাস ফড়িং) আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। মতিউর রহমান জানালেন, বাজারে যে দাম আছে তাতে খুব বেশি লাভ থাকবে না। কিন্তু দাম যদি কমে যায় লোকসান গুনতে হবে।

চিরিরবন্দর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষক হোসাইন সরকার বলেন, ‘গত মঙ্গলবার মোটা ধান ১ হাজার ৮৫০ টাকা বস্তাপ্রতি বিক্রি করেছি। যে দাম তাতে গায়ে গতরে খেটে ধান আবাদের সুফল মিলছে না।’

বিরল উপজেলার ধান ব্যবসায়ী আজমীর হোসেন বলেন, ‘মোটা ধানের বর্তমান বাজার দর ১ হাজার ৯০০ থেকে থেকে ২ হাজার টাকা। আর উনপঞ্চাশ ধান বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১০০ টাকা প্রতি বস্তা।’

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এ বছর জেলায় ২ লাখ ৬০ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। আর এবার চৌদ্দ থেকে পনেরো লাখ মেট্রিকটন ধান উৎপন্ন হতে পারে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ আজকের পত্রিকাকে জানান, এ বছর আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যে ৭০ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। মোটা ধান কাটা প্রায় শেষ। এখন সুগন্ধী ধান কাটা শুরু হচ্ছে।

ধানের বাজার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বর্তমান বাজারদর মোটামুটি। আমরা নিয়মিত বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।’

দিনাজপুরের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. হুমায়ূন কবির বলেন, ‘ইতিমধ্যে সরকারি খাদ্যগুদামে চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। এ মুহূর্তে ধানের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাইকোর্টের বিচারপতি হলেন সারজিস আলমের শ্বশুর

কুমিল্লায় দুই ট্যাংকে পানি, তদন্ত শেষ হয়নি ১ মাসে

জিন সম্পাদনায় নতুন সাফল্য, ডায়াবেটিস রোগীদের আর ইনসুলিন নিতে হবে না

অবৈধ মোবাইল দিয়ে বন্দীরা আমাকে কল করেন, এটা বিস্ময়কর: কারা মহাপরিদর্শক

কনস্যুলেটে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হামলা, ব্যবস্থা নিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে চিঠি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত