Ajker Patrika

এরা কি শিক্ষক!

সম্পাদকীয়
এরা কি শিক্ষক!

গভীর রাতে যখন মাদ্রাসার শিশুরা নিদ্রামগ্ন থাকে, তখন পিরোজপুরের নেছারাবাদ মাদ্রাসার শিক্ষক বেল্লাল হোসেন নাকি ‘শয়তানের ওয়াস-ওয়াসায়’ পড়ে তাদের কাছে যান। এরপর টার্গেট করে সেই শিশুদের মধ্য থেকে কোনো একজনকে বেছে নিয়ে ধর্ষণ করেন।

‘শয়তানের ওয়াস-ওয়াসা’ মাঝে মাঝেই তাঁকে বিভ্রান্ত করে। একের পর এক শিশুকে তিনি দিনের পর দিন আতঙ্কিত করেন। শেষ পর্যন্ত শিক্ষকের যৌনলিপ্সায় আহত শিশুদের কেউ কেউ অভিভাবকদের জানিয়ে দেয় ঘটনা। তখনই শিক্ষক নিজের অপকর্মের ভার চাপিয়ে দেন শয়তানের ওপর। বলার চেষ্টা করেন, তিনি আদতে নিরীহ মানুষ, শিশুদের পুত্রবৎ স্নেহ করেন। কেবল শয়তান এসে ভর করলেই তিনি কামুক হয়ে যান—এ কথা কেউ কি বিশ্বাস করবে বা কারও কি বিশ্বাস করা উচিত? ‘শয়তানের ওয়াস-ওয়াসা’য় পড়ে এখন যদি সব মাদ্রাসার শিক্ষক বলাৎকারের জন্য শিশুশিক্ষার্থীদের বেছে নেন, তাহলে মাদ্রাসাশিক্ষার কী হাল হবে, তা সহজেই অনুমেয়।

একই রকম কাণ্ড ঘটিয়েছেন ঝালকাঠির গুয়াটন হেমায়েত উদ্দিন বিজ্ঞান শিক্ষায়তনের সহকারী শিক্ষক গৌতম মজুমদার। বলিহারি শিক্ষক তিনি, প্রাইভেট পড়ানোর ফাঁকে ছাত্রীর আপত্তিকর ছবি তুলেছেন। এরপর ব্ল্যাকমেল করে সকাল ৭টায় ছাত্রীকে নিজের বাড়িতে ডেকে নিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। বেলা ১১টার দিকে ছাত্রীর বাবাসহ পড়শিরা এসে যখন ছাত্রীকে এ অবস্থায় উদ্ধার করেছিলেন, তখন শিক্ষক ধারণকৃত ভিডিও আর ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এরপর প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দেন তিনি! শিক্ষার্থীর বয়স ১৬, তাই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঝালকাঠি জেলার সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের মামলা হয়েছে।

নামসহ দুজন শিক্ষকের অপকর্মের ঘটনা বলা হলো। দুজনই স্বীকার করেছেন যে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে তাঁরা অপকর্ম করেছেন। এ ধরনের ঘটনা যে সমাজে একেবারে বিরল, তা কিন্তু নয়। এর পেছনে অন্তর্জাল বা নেট দুনিয়ারও প্রভাব আছে। কিন্তু সেটাই সব নয়। এই শিক্ষকেরা শিক্ষার মূল অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছেন। শিক্ষার্থীর সঙ্গে গড়ে তুলেছেন অনৈতিক সম্পর্ক। ফলে তাঁদের শিক্ষক পরিচয়টা গৌণ হয়ে গেছে। এই নৈতিকতা নিয়ে তাঁরা শুধু শিক্ষকতা কেন, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ হতে পারে, এমন কোনো পেশার সঙ্গেই যুক্ত থাকতে পারেন না।

মামলা হয়েছে, গ্রেপ্তার হয়েছেন শিক্ষকদ্বয়। বিচার হবে, রায় হবে। সবই ঠিক আছে। কিন্তু যেটা ঠিক নেই তা হলো—কোন সাহসে অপকর্মে লিপ্ত শিক্ষক ধর্ষণের শিকার, তার বাবাসহ স্বজনদের হুমকি দেন, মামলা করলে অপকর্মের সবটাই ছেড়ে দেবেন ইন্টারনেটে? যেটা ঠিক নেই তা হলো, নিজের যৌনলিপ্সা চরিতার্থ করার জন্য কী করে শয়তানের আমদানি করতে পারেন একজন শিক্ষক!

আমাদের সমাজের গাঁথুনিতেই একটা ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। সেই ধোঁয়াশায় নৈতিক-অনৈতিকের সীমারেখাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।নৈতিকভাবে যাঁরা শিক্ষক হওয়ার যোগ্য নন, সেই মানুষেরাও শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন! বিচার হোক তাঁদের এবং অবশ্যই শয়তানকে বিচারব্যবস্থা থেকে দূরে রেখে বিচার হোক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গভর্নর আমাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়ার কে: বিএফআইইউর প্রধান শাহীনুল

সেই রুহুল আমিনের বসুন্ধরা, বনানী ও উত্তরার জমিসহ ৫০০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক

ছাত্রীকে তিন দিন আটকে রেখে ধর্ষণ, গ্রাম্য সালিসের মাধ্যমে বিয়ে

ঠাকুরগাঁওয়ের ৩টি আসনেই জয়ী হবে জামায়াত: মাওলানা হালিম

কেশবপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বর্ণের কারিগরসহ দুই ব্যক্তি নিহত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত