Ajker Patrika

টকঝালমিষ্টির ধারায় চলছে

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২২, ১১: ৪৪
টকঝালমিষ্টির ধারায় চলছে

৪ এপ্রিল বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে। করোনার অতিমারি সত্ত্বেও ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয়েছে। পৃথিবীর সব রাষ্ট্রই বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিশেষ দিন ও বছরে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছে। বেশির ভাগ রাষ্ট্রই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের প্রতি সম্মান জানিয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে রাজনীতির চড়াই-উতরাই পার হয়ে বাংলাদেশ আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক এবং উন্নয়নের নানা সূচকে যেসব বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধন করেছে, তারও প্রশংসা কুড়িয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ যেমন ছিল এক কঠিন, সামরিক ও কূটনৈতিক যুদ্ধ অতিক্রম করে বিজয় লাভ করার ইতিহাস, একই সঙ্গে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে শূন্য হাতে গড়ে তোলার এক কঠিন চ্যালেঞ্জ, যা ৫০ বছরের পথচলায় আরেক কঠিন অর্জনের ইতিহাস। এরই মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয় এবং উন্নয়নশীল দেশে প্রবেশ করার স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশ যদি মুক্তিযুদ্ধকালের ধ্বংসযজ্ঞের শিকার না হতো, রাজনৈতিক শাসন ধারাবাহিক ও নিরবচ্ছিন্ন হতো, হত্যা, ক্যু ও সামরিক শাসন না ঘটত, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাধাবিপত্তি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সৃষ্টি করা না হতো, তাহলে উন্নয়নের এই পথচলা আরও ত্বরান্বিত হতো। ৫০ বছরের পথচলার অর্ধেকের কম সময় বাংলাদেশ পরিচালিত হয়েছে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দ্বারা। সুতরাং, বাংলাদেশের ৫০ বছর এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ৫০ বছর সব সময় যেমন নিরবচ্ছিন্ন থাকেনি, তেমনি আবার প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠার সুযোগও সব সময় সবার কাছ থেকে পায়নি। তারপরও আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার ইতিহাসকে এখন উন্নয়ন-সহযোগী এবং বিশ্বের উন্নত সব রাষ্ট্রই প্রশংসার দৃষ্টিতে দেখছে। এটি একটি প্রেরণার বিষয়।

যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর প্রধান শক্তিধর রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রের সরকারপ্রধান বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের কাছে যে দীর্ঘ বার্তা প্রেরণ করেছেন, সেটি দৃষ্টি কাড়ার মতো। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা চিঠিতে অনেকগুলো বিষয়ের অবতারণা করেছেন, যা পড়ে বোঝা যায় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের গৌরবময় দিকগুলোকে সবার দৃষ্টিতে আনার চেষ্টা করছে। তবে একই সঙ্গে সম্পর্কের কোনো কোনো পর্বে যুক্তরাষ্ট্রের নেতিবাচক অবস্থানকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টাও তাতে আমাদের দৃষ্টি এড়ায়নি। জো বাইডেন যেমন তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, ‘১৯৫৮ সাল থেকেই এই দুই দেশ শিক্ষা ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। ওই সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত ৩০ দিনের এক মতবিনিময় কর্মসূচিতে অংশ নেন।’ প্রেসিডেন্ট বাইডেন আমাদের দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তিকে স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী পাকিস্তান আমলের মাঝামাঝি তথা ১৯৫৮ সাল থেকে দেখছেন, যখন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং প্রাদেশিক ও জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসেবে টানা এক মাস যুক্তরাষ্ট্রের একটি মতবিনিময় কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে আখ্যায়িত করে সেই অবস্থানকেই সম্পর্কের সূচনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আবার তাঁর লেখা চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘একাত্তরের যুদ্ধের পর দেশ পুনর্গঠনে এবং বর্তমানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে বাংলাদেশিদের কর্মশক্তি, উর্বর মস্তিষ্ক ও উদ্ভাবন গোটা বিশ্বের কাছে একটি মডেল হিসেবে কাজ করে।’

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারীযুক্তরাষ্ট্র সরকার একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করলেও জনগণ এবং কংগ্রেসম্যানসহ প্রভাবশালী অনেকেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধকালে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু গণতন্ত্রের সেরা দাবিদার রাষ্ট্রটির সরকার তখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্যকে বুঝতে পারেনি। এখানেই যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ও আদর্শের বৈপরীত্য বিশ্বে গণতন্ত্রের প্রসারে অনেক সময় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যুক্তরাষ্ট্র কখনো বন্ধুত্বের হাত বাড়ায় আবার কখনো সে হাত গুটিয়ে নেয়। এটি অবশ্য নির্ভর করে কখন কোন সরকার ওই রাষ্ট্রের ক্ষমতায় থাকে তার ওপর। একাত্তরে নিক্সন-কিসিঞ্জার সরকার পাকিস্তানের মতো কসাই রাষ্ট্রের ‘বন্ধুত্বকে’ গুরুত্ব দিতে গিয়ে বাংলাদেশকে দমন করতে সপ্তম নৌবহরও ভারত মহাসাগরে পাঠিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র সে সময় পাকিস্তানের জেনোসাইডকে এভাবে অন্ধের মতো সমর্থন না দিলে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে এত মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারত না। যুদ্ধ শেষে পূর্ব বাংলার ক্ষয়ক্ষতি উপেক্ষা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বিদ্রূপ করে এই দেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ নামে আখ্যায়িত করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের এমন বিদ্রূপ এবং অবস্থান মানবতা, স্বাধীনতা ও উদার গণতন্ত্রের প্রতি ওই রাষ্ট্রের শাসকশ্রেণির সংকীর্ণতার পরিচয়ের বহিঃপ্রকাশ। যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্র হিসেবে সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিলে পৃথিবীর চেহারা অনেক আগেই বদলে যেত। তারপরও মার্কিন জনগণের মনোভাবকে বুঝতে পেরে ১৯৭২ সালে নিক্সন সরকারই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন সম্পর্কের উদ্বোধন ঘটে ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে। ওই বছরের ১ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের আমন্ত্রণে হোয়াইট হাউসে বঙ্গবন্ধু উভয় দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার আলোচনা করেন। এরপর ৩০ অক্টোবর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ১৯ ঘণ্টার জন্য ঢাকা সফরে আসেন। তিনি দুই ঘণ্টা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে গণভবনে অবস্থান এবং উভয় দেশের সম্পর্কোন্নয়নে আলোচনা করেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র সদ্য স্বাধীন দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে দ্বৈত নীতি বজায় রাখায় স্বাধীন যেকোনো রাষ্ট্রের জন্য খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে। কিউবায় বাংলাদেশের পাট রপ্তানির বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র সুনজরে দেখেনি। ফলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চাল আমদানির জাহাজ সময়মতো চট্টগ্রামে ভেড়েনি। এর ফলে বঙ্গবন্ধু সরকার সময়মতো খাদ্যসংকট মোকাবিলা করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নানা বাধা এবং শর্ত আগাগোড়াই ছিল এবং আছে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভূমিকা সামরিক সরকারের প্রতি যতটা সহজ বলে পরিলক্ষিত হয়েছে, তা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি মার্কিন নীতির সাংঘর্ষিকতারই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সত্তর ও আশির দশকে বাংলাদেশকে যে কঠিন বাস্তবতার ভেতর দিয়ে অগ্রসর হতে হয়েছিল, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ও সহযোগিতা সেই রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে যতখানি সাজুয্যপূর্ণ হয়েছে, ততখানি কেবল লাভ করা সম্ভব হয়েছে। নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশ রাজনৈতিক শাসন প্রতিষ্ঠায় ফিরে আসে। দেশের অর্থনৈতিক নীতি-কৌশলের অনেক পরিবর্তন ঘটে। মুক্তবাজার অর্থনীতি অনুসৃত হতে থাকে। বাংলাদেশ পোশাক তৈরি ও রপ্তানিতে দ্রুত উন্নতি লাভ করতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে গত দুই দশক ধরে বাংলাদেশ শীর্ষে অবস্থান করছে। যদিও ট্যারিফ প্রদানের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সুবিধা বাংলাদেশকে দেওয়া হয়নি। তারপরও বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অবস্থান সংহত করতে পেরেছে। এর ফলে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৯ বিলিয়ন ডলার আয় করে। বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের পর যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশ। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস একটি পত্রিকায় এক লেখায় উল্লেখ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এর ৮০ শতাংশই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। করোনার টিকা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ৬ কোটি ১০ লাখ ডোজ টিকা বিনা মূল্যে দিয়েছে। মার্কিন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশকে অংশীদারত্বের সহযোগিতা প্রদানে আশ্বাস দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বিপুলসংখ্যক বাঙালি কর্মসূত্রে অবস্থান করছেন।

ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রে দুই দেশের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন করা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সে দেশে সফর করছে। মন্ত্রী মার্কিন নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সাক্ষাৎও করেছেন। তাতে উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির ধারণাও ব্যক্ত করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ মার্কিন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের সঙ্গে আগামী ৫০ বছরও সম্পর্কের উচ্চতা নির্মাণে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, অংশীদারত্বমূলক নির্বাচনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তবে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ এবং নানা অপশক্তিকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হচ্ছে, তা মার্কিন দৃষ্টিতে যেভাবে দেখা হয়, সেটি বাংলাদেশের বাস্তবতায় বেশ ভিন্নতা রয়েছে। সে কারণেই মাঝেমধ্যে সম্পর্কের ওঠানামা, ভুল-বোঝাবুঝি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের ধারায় বিকশিত করার ক্ষেত্রে দেশের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির ভূমিকা যেমন রয়েছে একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক দেশগুলোরও সহযোগিতা ও সমর্থন আরও নিবিড় হওয়া প্রয়োজন। নানা শর্ত জুড়ে দিয়ে মাঝেমধ্যে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের অভ্যন্তরে উদীয়মান লড়াইরত গণতান্ত্রিক শক্তি; উল্লসিত হয় প্রতিক্রিয়াশীল, সাম্প্রদায়িক অগণতান্ত্রিক অপশক্তি। র‍্যাবের কতিপয় সদস্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর দেশের অভ্যন্তরে যারা মার্কিন-বাংলাদেশ সম্পর্ক ধ্বংস হওয়ার অভিযোগ তুলেছিল, তারাই আবার জো বাইডেনের চিঠির বক্তব্য দেখে হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্ক তখনই উচ্চতায় উঠতে সক্ষম হবে, যখন উদারবাদী গণতান্ত্রিক শক্তি, মৌলবাদী শক্তি, সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী শক্তিকে পরাস্ত করে রাষ্ট্র পরিচালনার সমর্থন ও সুযোগ পাবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসনের ধারণা কেতাবে থাকবে, বাস্তবে দূরে সরে যাবে।

 মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত