Ajker Patrika

ছেলে প্রকৌশলী হলে গণেশ ছাড়বেন ভারওয়ালার পেশা

মো. আ. রহিম রেজা, ঝালকাঠি
আপডেট : ২১ জুন ২০২২, ১৩: ১১
ছেলে প্রকৌশলী হলে গণেশ ছাড়বেন ভারওয়ালার পেশা

ঝালকাঠির গণেশ শীল (৬৫)। ৩০ বছর ধরে রেস্তোরাঁয় পানি সরবরাহ করেন। এতে যা পান, তা দিয়ে দুই ছেলে-মেয়েসহ চার সদস্যের সংসার চলে। ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার খরচ জোগাতেও হিমশিম খেতে হয় এই স্বল্প আয়ে। টানাটানির সংসারেও চালিয়ে যাচ্ছেন সন্তাদের লেখাপড়া। স্বপ্ন ছেলেকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। সেই স্বপ্নের পেছনে ছুটেছেন অনবরত। এখন স্বপ্ন তাঁর হাতের নাগালে। শুধু ছুঁয়ে দেখাটা বাকি। বাকি বলতে ছেলে সৌরভ শীল বাবার স্বপ্ন পূরণে দিন-রাত খেটে পড়ালেখা করে অবশেষে ভর্তি হয়েছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট)। ছেলে পড়ালেখা শেষ করে প্রকৌশলী হলেই ছেড়ে দেবেন এ পেশা।

জানা গেছে, ঝালকাঠি শহরে আগে ভারওয়ালা পেশায় শতাধিক ব্যক্তি যুক্ত ছিলেন। কালের বিবর্তনে অন্যরা পেশা ছেড়ে দিলেও ছাড়েননি গণেশ শীল। ৩০ বছর ধরে করছেন ভারওয়ালার কাজ। এই পেশার আয়ে চলেছে সংসার ও সন্তানদের পড়ালেখা। তবে এবার তিনি ছাড়তে চাই সাধের এই পেশা।

গণেশ শীল বলেন, ‘ছেলে প্রকৌশলী হলেই পানি টানা বন্ধ করে দেব। তখন আর কষ্ট থাকবে না।’

জানা গেছে, কাঁধে পানি বহন করে ঝালকাঠি শহরের বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় সরবরাহ করেন গণেশ শীল। তাঁর বাড়ি বরগুনার বেতাগীতে হলেও শৈশবে চলে আসেন ঝালকাঠি শহরে। এরপর থেকে শহরের বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় পানি দেওয়ার কাজ করেন। একটি বাঁশের দুই মাথায় বাঁধা দুটি টিনের জারে সকাল-বিকেল নদী বা পুকুরের পানি ভরে পৌঁছে দেন তিনি। এই পানি রান্নার কাজে ব্যবহার হয়। স্থানীয় লোকজন তাঁকে ভারওয়ালা বলেন। ৩০ বছর ধরে এই কাজ করছেন। এ কাজ করে বর্তমানে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়। এই স্বল্প উপার্জন দিয়েই দুই সন্তানকে পড়ালেখা করাচ্ছেন। তাঁর ছেলে কুয়েটে পড়াশোনা করায় স্থানীয় অনেকেই তাঁকে এখন ইঞ্জিনিয়ারের বাবা বলে ডাকেন। আগে এক কক্ষের বাসায় থাকলেও এখন দুই কক্ষের বাসা নিয়েছেন। তবে নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় চিন্তায় পড়েছেন।

মেয়ে প্রিয়াংকা শীল বেতাগীর একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। ছেলে সৌরভ শীল কুয়েটে প্রথম সেমিস্টারে পড়ছেন। পড়াশোনা শেষে চাকরি করলে আর কষ্ট করতে হবে না—এমনই স্বপ্ন দেখেন গণেশ শীল।

গণেশ শীল বলেন, ‘৩০ বছর আগে হোটেলে প্রতি জার পানি দিলে ২ টাকা পেতাম। এভাবে দিনে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা আয় হতো। তা দিয়ে সংসার ও ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছি। শত কষ্টের মধ্যেও অন্যের কাছে হাত পাতিনি। ছেলে-মেয়ে দুটো লেখাপড়ায় ভালো হওয়ায় ওদের দিয়ে কোনো কাজ করাইনি।’

সৌরভ শীল জানান, মনপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছেন বাবা স্বপ্নপূরণে। আশা করছেন বাবার স্বপ্ন বিফলে যাবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত