Ajker Patrika

দাদন ব্যবসায় নিঃস্ব মানুষ

খালিদ হাসান, শিবগঞ্জ (বগুড়া)
আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২১, ১৪: ১৩
দাদন ব্যবসায় নিঃস্ব মানুষ

বগুড়ার শিবগঞ্জে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন দাদন ব্যবসায়ীরা। উপজেলার পাড়ায় পাড়ায় চলছে দাদন ব্যবসা। গুজিয়া, কাশিপুর, লস্করপুর, ভায়েরপুকুর, মোকামতলা, ভরিয়া, মালাহার, মুরাদপুর, রহবল, গাংনগর, কিচকসহ বিভিন্ন এলাকায় চলছে সুদের জমজমাট কারবার। দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক হারে চলছে জমজমাট এ ব্যবসা। অনেকেই আবার ঘণ্টাপ্রতি লাভ নিয়ে টাকা দিচ্ছেন বিপদগ্রস্ত মানুষকে। এসব ক্ষেত্রে নিজের ইচ্ছে খুশিমতো সুদের হার নির্ধারণ করেন তাঁরা। এ দিকে, দাদন ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছেন নিম্নআয়ের মানুষ। অনেকেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সুদের টাকাকে কেন্দ্র করে খুন, অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে একাধিক।

জানা গেছে, ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে ফাঁকা স্ট্যাম্প ও ব্যাংকের চেকে স্বাক্ষর নিয়ে জিম্মি করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে আসল ও সুদের কিছু টাকা পরিশোধ করলেও সুদের সুদ দিতে না পারলে আইনের মারপ্যাঁচে ফেলে জেলে পাঠানো হয় অসহায় ঋণগ্রহীতাদের। ফাঁকা চেক দিয়ে জিম্মি হয়ে পড়া ঋণগ্রহীতারা মামলার ভয়ে প্রশাসনের আশ্রয়ও নিতে পারেন না।

উপজেলার লস্করপুর গ্রামের মিজান মিয়া জানান, বিপদে পড়ে এক দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়েছিলেন। তাঁর কাছ থেকে ব্লাঙ্ক চেক জমা ও সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। সেই টাকার ৫ গুন লাভ দিয়েও ঋণের হাত থেকে রেহাই পাননি। পরে সুদ পরিশোধ করতে সমিতি থেকে কিস্তিতে টাকা নেন। এভাবে দেনা বাড়তে বাড়তে বাড়ির জায়গা পর্যন্ত বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান তিনি।

এ দিকে, সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় বাড়িছাড়া হয়েছেন উপজেলার মোকামতলা ইউনিয়নের চলনাকাথী গ্রামের সোহেল রানা। কয়েক বছর তিনি নিরুদ্দেশ বলে জানা গেছে। একই ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের শামছুলও দাদন ব্যবসায়ীদের হুমকি ও চাপে পরিবার নিয়ে বাড়ি ছেড়েছেন। উপজেলা সদরের গুজিয়া উত্তর শ্যামপুর এলাকার কীটনাশক ব্যবসায়ী শিহাব উদ্দিন ব্যাংক চেকের মামলায় বাড়িছাড়া হয়েছেন। একই এলাকার দিনমজুর আনিছার রহমান চড়া সুদে টাকা নিয়ে বিপাকে পড়েন। পরিশোধ করতে না পেরে পরিবার-পরিজন নিয়ে এলাকা থেকে উধাও হয়েছেন। উপজেলার কিচক ইউনিয়নের মাটিয়ান চল্লিশছত্র এলাকার রাইসমিলের মালিক মিলন মিয়া। জরুরি দরকারে এলাকার দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে পরিশোধ করতে না পারায় চাপে অতিষ্ঠ হয়ে দেশান্তর হয়েছেন। পল্লি চিকিৎসক মাধব চন্দ্রের বাড়ি শিবগঞ্জ উপজেলার রহবল এলাকায়। মেয়ের বিয়ের সময় দেউলী এলাকার এক দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মাসে ২৫ হাজার টাকা সুদ দেওয়ার শর্তে ২ লাখ টাকা নেন। ২৪ মাসে প্রায় ৪ লাখ টাকা পরিশোধ করার পরও সুদ ও আসল মিলিয়ে আরও ৪ লাখ টাকা দাবি করা হয় তাঁর কাছ থেকে। চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ দিতে দিতে ভিটেমাটি বিক্রি করে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন তিনি। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে রক্ষা পান মাধব।

উপজেলার গাংনগর দাখিল মাদ্রাসার সুপার আব্দুল ওয়াহাব জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠানের দুজন শিক্ষক-কর্মচারী মোকামতলা এলাকার এক দাদন ব্যবসায়ীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছিলেন। পুরো চেক বইয়ে স্বাক্ষর করে দাদন ব্যবসায়ীকে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁরা। ফলে গত চার বছর বেতন তুলতে পারছিলেন না তাঁরা। পরে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির হস্তক্ষেপে তাঁরা রক্ষা পান।

চাকরিজীবী কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঋণ নেওয়ার আগে দাদন ব্যবসায়ীর কাছে স্বাক্ষর করা চেক বা স্ট্যাম্প জমা রাখতে হয়। তাঁরা চাকরি করলেও মাস শেষে ব্যাংক থেকে বেতনের টাকা তোলেন দাদন ব্যবসায়ীরা।

এ প্রসঙ্গে কোনো দাদন ব্যবসায়ী কথা বলতে রাজি হননি। জোর করে কাউকে টাকা দেন না উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, নিজের প্রয়োজনেই মানুষজন তাঁদের কাছে টাকার জন্য আসেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিবগঞ্জ সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার তানভির হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইরানের ‘দানবীয় ক্ষেপণাস্ত্রের’ সামনে উন্মুক্ত ইসরায়েলের ‘অ্যাকিলিস হিল’

ভারতীয় বিমানবন্দরে ১১ দিন ধরে পড়ে আছে ব্রিটিশ এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, ঘনাচ্ছে রহস্য

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফল আজ, যেভাবে দেখবেন

মামদানি শতভাগ কমিউনিস্ট উন্মাদ, দেখতেও খারাপ: ট্রাম্প

খামেনি কোথায়, কেমন আছেন—উৎকণ্ঠিত ইরানিদের প্রশ্নের বন্যা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত