‘অরণ্য আমাদের সুপারমার্কেট। আমরা এই দ্বীপপুঞ্জের অরণ্য থেকে প্রায় সবকিছু পাই। এর ওপরই বেঁচে আছি আমরা।’ বলেন অ্যানিস জাস্টিন।
এই নৃবিজ্ঞানী ভারতের পূর্ব উপকূলের অদূরে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বড় হয়েছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত এই অঞ্চলটি ৮৩৬টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত, যার মধ্যে মাত্র ৩৮টি জনবসতিপূর্ণ। নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ হলো অঞ্চলটির দক্ষিণ অংশে অবস্থিত এক অনন্য দ্বীপগুচ্ছ, যা আন্দামান দ্বীপ থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার (৯৩ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত।
এখন মি. জাস্টিন উদ্বেগের সঙ্গে দেখছেন, ভারত গ্রেট নিকোবর দ্বীপে একটি বহু-বিলিয়ন ডলারের ‘হংকং-এর মতো’ উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা করছে। দ্বীপটি নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম বৃহৎ এবং বিচ্ছিন্ন এলাকা। ৭২ হাজার কোটি রুপির এই প্রকল্পটি ১৬৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে। এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে একটি ট্রান্সশিপমেন্ট পোতাশ্রয়, একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, একটি বিমানবন্দর এবং একটি নতুন শহর। ভারত মহাসাগর এবং সুয়েজ খালের গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক বাণিজ্য রুটের সঙ্গে এলাকাটিকে সংযুক্ত করার জন্য পরিকল্পনাটি নেওয়া হয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত জাহাজ চলাচলের পথগুলোর একটি মালাক্কা প্রণালির কাছাকাছি অবস্থিত এলাকায় হাতে নেওয়া কার্যক্রম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং পর্যটন বাড়ানোর সুযোগ করে দেবে। সরকারের ধারণা অনুযায়ী, প্রকল্পটি শেষ হতে ৩০ বছর লাগবে এবং তখন এই দ্বীপে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষ বসবাস করবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই বহু-বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পটি এ অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলা করতে ভারতের বৃহত্তর লক্ষ্যগুলির অংশ।
কিন্তু এটি দ্বীপবাসীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এই মানুষেরা তাদের জমি, সংস্কৃতি এবং স্বাভাবিক জীবন-যাপন পদ্ধতি হারানোর ভয় পাচ্ছে। তাদের আশঙ্কা, এই প্রকল্প তাদের অস্তিত্বকে হুমকির দিকে ঠেলে দিতে পারে।
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ পৃথিবীর অন্যতম বিচ্ছিন্ন এবং ঝুঁকিতে থাকা কিছু জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল, যার মধ্যে পাঁচটি গোষ্ঠীকে ‘বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।
এদের মধ্যে রয়েছে জারাওয়া, নর্থ সেন্টিনেলিজ, গ্রেট আন্দামানিজ, ওংগে এবং শোম্পেন। জারাওয়া এবং নর্থ সেন্টিনেলিজরা বাইরের জগতের সঙ্গে সংস্পর্শহীন থাকলেও, গ্রেট নিকোবর দ্বীপের শোম্পেন গোষ্ঠী বাইরের চাপের কারণে তাদের জীবনধারা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। এই যাযাবর জনগোষ্ঠীর ৪০০-র মতো সদস্য টিকে আছে এখন।
শোম্পেন জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই গভীর অরণ্যে বসবাস করে এবং তাদের জীবিকাও অরণ্যনির্ভর। তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায়নি, কারণ এদের খুব কমসংখ্যকই বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
‘তাদের জন্য এটা বড় ক্ষতি এবং মানসিক আঘাতের কারণ হবে,’ বলেন মি. জাস্টিন, যিনি ১৯৮৫ সাল থেকে দ্বীপটি নিয়ে গবেষণা করছেন।
‘বাইরের পৃথিবীর যেটিকে আমরা উন্নয়ন বলি, সেটি তাদের কাছে আকর্ষণীয় নয়। তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী জীবনধারা রয়েছে।’ বলেন তিনি।
এদিকে পরিবেশবিদরা বলছেন, এই প্রকল্পের কারণে পরিবেশেরও ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।
৯২১ বর্গকিলোমিটার (৩৫৫ দশমিক ৬ বর্গমাইল) এলাকাজুড়ে বিস্তৃত গ্রেট নিকোবর দ্বীপের প্রায় ৮০ শতাংশ অঞ্চল চিরসবুজ বনে আচ্ছাদিত, যা এক হাজার ৮০০ প্রজাতির বেশি প্রাণী এবং ৮০০ টিরও বেশি উদ্ভিদ প্রজাতির বাসস্থান। এদের মধ্যে অনেকেই স্থানীয় এবং অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, প্রকল্পটির জন্য দ্বীপের মোট এলাকার মাত্র ১৩০ বর্গকিলোমিটার বা ১৪ শতাংশ পরিষ্কার করা হবে, কিন্তু তবুও এতে প্রায় ৯ লাখ ৬৪,০০০ গাছ কাটতে হবে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
‘সরকার সব সময় দাবি করে যে অরণ্যের কেবল একটি অংশ পরিষ্কার করা হবে। কিন্তু আপনি যে পরিকাঠামো তৈরি করছেন, তা আরও দূষণ সৃষ্টি করবে, যা পুরো বাস্তুতন্ত্রকে প্রভাবিত করবে।’ বলেন পরিবেশবিদ মাধব গাড়গিল।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে বিবিসির প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়নি।
তবে পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব গত আগস্টে বলেছিলেন, এই প্রকল্পে ‘কোনো জনগোষ্ঠীকে বিরক্ত বা স্থানান্তর করবে না’ এবং ‘কঠোর পরিবেশগত মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা’ গ্রহণের পরই এটি অনুমোদন পেয়েছে।
তবুও, সবাই এই আশ্বাসে সন্তুষ্ট নয়।
এ বছরের শুরুর দিকে, সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার ৩৯ জন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে বলেছিলেন যে এই উন্নয়ন প্রকল্প শোম্পেন জনগোষ্ঠীর জন্য একটি ‘মৃত্যুদণ্ড’ হয়ে উঠতে পারে, কারণ এটি তাদের বাসস্থান ধ্বংস করবে।
এই আশঙ্কা মি. জাস্টিনকেও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তিনি বলেন, ‘শোম্পেন জনগোষ্ঠীর শিল্পবিশ্বের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জ্ঞান বা উপায় নেই।’
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে এই জনগোষ্ঠীও হয়তো নিকোবারিজদের মতো ভাগ্যের শিকার হতে পারে। নিকোবারিজরা দ্বীপের সবচেয়ে বড় জনজাতি এবং ২০০৪ সালের ভারত মহাসাগরের ভয়াবহ সুনামির সময় তাদের গ্রাম ধ্বংস হয়ে যায়, যার ফলে তারা বাস্তুচ্যুত হয়।
বছরের পর বছর ধরে সরকার তাদের অন্য অঞ্চলে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করেছে, তবে সেটিও একটি মূল্য দিয়ে এসেছে।
‘এখানকার বেশির ভাগ নিকোবারিজ এখন শ্রমিক এবং তাদের পূর্বপুরুষের জমির বদলে একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে বসবাস করছে,’ বলেন মি. জাস্টিন, ‘তাদের আর ফসল চাষ বা প্রাণী পালনের কোনো জায়গা নেই।’
এই প্রকল্পটি শোম্পেন জনগোষ্ঠীকে রোগের ঝুঁকিতেও ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংরক্ষণ সংস্থা সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনালের কর্মকর্তা ক্যালাম রাসেল বলেন, ‘বাইরের সংস্পর্শহীন জনগোষ্ঠীর ফ্লু বা হাম জাতীয় রোগের প্রতি খুব কম বা কোনো প্রতিরোধক্ষমতাই থাকে না, যা তাদের ধ্বংস করে দিতে পারে। সাধারণত সংস্পর্শের পরে তাদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জনগণ হারিয়ে যায়।’
এই প্রকল্পটি দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত গ্যালাথিয়া উপসাগরে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। অঞ্চলটি শত শত বছর ধরে বিশালাকার লেদারব্যাক সামুদ্রিক কচ্ছপের বাসা বাঁধার স্থান।
সামাজিক পরিবেশবিদ ড. মণীশ চান্ডি বলছেন, প্রকল্পটি নোনা পানির কুমির, দ্বীপের গুইসাপ, মাছ এবং পাখিদের ওপরও প্রভাব ফেলবে।
সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এসব প্রজাতির বাসা বাঁধা ও প্রজননস্থল পরিবর্তন করা হবে না।
তবে ড. চান্ডি উল্লেখ করেছেন, এই এলাকায় আরও অনেক প্রজাতি রয়েছে, যারা বড় সংখ্যায় এখানে বাসা বাঁধে। তিনি বলেন, ‘সরকার এমন স্থানে প্রবাল স্থানান্তরের প্রস্তাব করছে, যেখানে তারা প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় না। তবে অন্য প্রজাতিদের কী করা হবে?’
যদিও প্রকল্পটি শেষ হতে ৩০ বছর সময় লাগবে। তবে এটি পরিবেশ এবং দ্বীপের আদিবাসী জনগণের জীবনের সূক্ষ্ম ভারসাম্যের অপূরণীয় পরিবর্তন করে দেওয়ার আশঙ্কায় ইতিমধ্যে উদ্বিগ্ন পরিবেশবিদ এবং স্থানীয় অধিবাসীরা।
‘অরণ্য আমাদের সুপারমার্কেট। আমরা এই দ্বীপপুঞ্জের অরণ্য থেকে প্রায় সবকিছু পাই। এর ওপরই বেঁচে আছি আমরা।’ বলেন অ্যানিস জাস্টিন।
এই নৃবিজ্ঞানী ভারতের পূর্ব উপকূলের অদূরে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বড় হয়েছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত এই অঞ্চলটি ৮৩৬টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত, যার মধ্যে মাত্র ৩৮টি জনবসতিপূর্ণ। নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ হলো অঞ্চলটির দক্ষিণ অংশে অবস্থিত এক অনন্য দ্বীপগুচ্ছ, যা আন্দামান দ্বীপ থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার (৯৩ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত।
এখন মি. জাস্টিন উদ্বেগের সঙ্গে দেখছেন, ভারত গ্রেট নিকোবর দ্বীপে একটি বহু-বিলিয়ন ডলারের ‘হংকং-এর মতো’ উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা করছে। দ্বীপটি নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম বৃহৎ এবং বিচ্ছিন্ন এলাকা। ৭২ হাজার কোটি রুপির এই প্রকল্পটি ১৬৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে। এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে একটি ট্রান্সশিপমেন্ট পোতাশ্রয়, একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, একটি বিমানবন্দর এবং একটি নতুন শহর। ভারত মহাসাগর এবং সুয়েজ খালের গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক বাণিজ্য রুটের সঙ্গে এলাকাটিকে সংযুক্ত করার জন্য পরিকল্পনাটি নেওয়া হয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত জাহাজ চলাচলের পথগুলোর একটি মালাক্কা প্রণালির কাছাকাছি অবস্থিত এলাকায় হাতে নেওয়া কার্যক্রম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং পর্যটন বাড়ানোর সুযোগ করে দেবে। সরকারের ধারণা অনুযায়ী, প্রকল্পটি শেষ হতে ৩০ বছর লাগবে এবং তখন এই দ্বীপে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষ বসবাস করবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই বহু-বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পটি এ অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলা করতে ভারতের বৃহত্তর লক্ষ্যগুলির অংশ।
কিন্তু এটি দ্বীপবাসীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এই মানুষেরা তাদের জমি, সংস্কৃতি এবং স্বাভাবিক জীবন-যাপন পদ্ধতি হারানোর ভয় পাচ্ছে। তাদের আশঙ্কা, এই প্রকল্প তাদের অস্তিত্বকে হুমকির দিকে ঠেলে দিতে পারে।
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ পৃথিবীর অন্যতম বিচ্ছিন্ন এবং ঝুঁকিতে থাকা কিছু জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল, যার মধ্যে পাঁচটি গোষ্ঠীকে ‘বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।
এদের মধ্যে রয়েছে জারাওয়া, নর্থ সেন্টিনেলিজ, গ্রেট আন্দামানিজ, ওংগে এবং শোম্পেন। জারাওয়া এবং নর্থ সেন্টিনেলিজরা বাইরের জগতের সঙ্গে সংস্পর্শহীন থাকলেও, গ্রেট নিকোবর দ্বীপের শোম্পেন গোষ্ঠী বাইরের চাপের কারণে তাদের জীবনধারা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। এই যাযাবর জনগোষ্ঠীর ৪০০-র মতো সদস্য টিকে আছে এখন।
শোম্পেন জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই গভীর অরণ্যে বসবাস করে এবং তাদের জীবিকাও অরণ্যনির্ভর। তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায়নি, কারণ এদের খুব কমসংখ্যকই বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
‘তাদের জন্য এটা বড় ক্ষতি এবং মানসিক আঘাতের কারণ হবে,’ বলেন মি. জাস্টিন, যিনি ১৯৮৫ সাল থেকে দ্বীপটি নিয়ে গবেষণা করছেন।
‘বাইরের পৃথিবীর যেটিকে আমরা উন্নয়ন বলি, সেটি তাদের কাছে আকর্ষণীয় নয়। তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী জীবনধারা রয়েছে।’ বলেন তিনি।
এদিকে পরিবেশবিদরা বলছেন, এই প্রকল্পের কারণে পরিবেশেরও ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।
৯২১ বর্গকিলোমিটার (৩৫৫ দশমিক ৬ বর্গমাইল) এলাকাজুড়ে বিস্তৃত গ্রেট নিকোবর দ্বীপের প্রায় ৮০ শতাংশ অঞ্চল চিরসবুজ বনে আচ্ছাদিত, যা এক হাজার ৮০০ প্রজাতির বেশি প্রাণী এবং ৮০০ টিরও বেশি উদ্ভিদ প্রজাতির বাসস্থান। এদের মধ্যে অনেকেই স্থানীয় এবং অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, প্রকল্পটির জন্য দ্বীপের মোট এলাকার মাত্র ১৩০ বর্গকিলোমিটার বা ১৪ শতাংশ পরিষ্কার করা হবে, কিন্তু তবুও এতে প্রায় ৯ লাখ ৬৪,০০০ গাছ কাটতে হবে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
‘সরকার সব সময় দাবি করে যে অরণ্যের কেবল একটি অংশ পরিষ্কার করা হবে। কিন্তু আপনি যে পরিকাঠামো তৈরি করছেন, তা আরও দূষণ সৃষ্টি করবে, যা পুরো বাস্তুতন্ত্রকে প্রভাবিত করবে।’ বলেন পরিবেশবিদ মাধব গাড়গিল।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে বিবিসির প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়নি।
তবে পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব গত আগস্টে বলেছিলেন, এই প্রকল্পে ‘কোনো জনগোষ্ঠীকে বিরক্ত বা স্থানান্তর করবে না’ এবং ‘কঠোর পরিবেশগত মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা’ গ্রহণের পরই এটি অনুমোদন পেয়েছে।
তবুও, সবাই এই আশ্বাসে সন্তুষ্ট নয়।
এ বছরের শুরুর দিকে, সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার ৩৯ জন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে বলেছিলেন যে এই উন্নয়ন প্রকল্প শোম্পেন জনগোষ্ঠীর জন্য একটি ‘মৃত্যুদণ্ড’ হয়ে উঠতে পারে, কারণ এটি তাদের বাসস্থান ধ্বংস করবে।
এই আশঙ্কা মি. জাস্টিনকেও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তিনি বলেন, ‘শোম্পেন জনগোষ্ঠীর শিল্পবিশ্বের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জ্ঞান বা উপায় নেই।’
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে এই জনগোষ্ঠীও হয়তো নিকোবারিজদের মতো ভাগ্যের শিকার হতে পারে। নিকোবারিজরা দ্বীপের সবচেয়ে বড় জনজাতি এবং ২০০৪ সালের ভারত মহাসাগরের ভয়াবহ সুনামির সময় তাদের গ্রাম ধ্বংস হয়ে যায়, যার ফলে তারা বাস্তুচ্যুত হয়।
বছরের পর বছর ধরে সরকার তাদের অন্য অঞ্চলে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করেছে, তবে সেটিও একটি মূল্য দিয়ে এসেছে।
‘এখানকার বেশির ভাগ নিকোবারিজ এখন শ্রমিক এবং তাদের পূর্বপুরুষের জমির বদলে একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে বসবাস করছে,’ বলেন মি. জাস্টিন, ‘তাদের আর ফসল চাষ বা প্রাণী পালনের কোনো জায়গা নেই।’
এই প্রকল্পটি শোম্পেন জনগোষ্ঠীকে রোগের ঝুঁকিতেও ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংরক্ষণ সংস্থা সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনালের কর্মকর্তা ক্যালাম রাসেল বলেন, ‘বাইরের সংস্পর্শহীন জনগোষ্ঠীর ফ্লু বা হাম জাতীয় রোগের প্রতি খুব কম বা কোনো প্রতিরোধক্ষমতাই থাকে না, যা তাদের ধ্বংস করে দিতে পারে। সাধারণত সংস্পর্শের পরে তাদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জনগণ হারিয়ে যায়।’
এই প্রকল্পটি দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত গ্যালাথিয়া উপসাগরে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। অঞ্চলটি শত শত বছর ধরে বিশালাকার লেদারব্যাক সামুদ্রিক কচ্ছপের বাসা বাঁধার স্থান।
সামাজিক পরিবেশবিদ ড. মণীশ চান্ডি বলছেন, প্রকল্পটি নোনা পানির কুমির, দ্বীপের গুইসাপ, মাছ এবং পাখিদের ওপরও প্রভাব ফেলবে।
সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এসব প্রজাতির বাসা বাঁধা ও প্রজননস্থল পরিবর্তন করা হবে না।
তবে ড. চান্ডি উল্লেখ করেছেন, এই এলাকায় আরও অনেক প্রজাতি রয়েছে, যারা বড় সংখ্যায় এখানে বাসা বাঁধে। তিনি বলেন, ‘সরকার এমন স্থানে প্রবাল স্থানান্তরের প্রস্তাব করছে, যেখানে তারা প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় না। তবে অন্য প্রজাতিদের কী করা হবে?’
যদিও প্রকল্পটি শেষ হতে ৩০ বছর সময় লাগবে। তবে এটি পরিবেশ এবং দ্বীপের আদিবাসী জনগণের জীবনের সূক্ষ্ম ভারসাম্যের অপূরণীয় পরিবর্তন করে দেওয়ার আশঙ্কায় ইতিমধ্যে উদ্বিগ্ন পরিবেশবিদ এবং স্থানীয় অধিবাসীরা।
দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ সুরক্ষায় একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে
১১ ঘণ্টা আগেআজ শুক্রবার, বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের সকাল ১০টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান ৯৩, যা সহনীয় পর্যায়ের বাতাসের নির্দেশক। আজ দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ১৫। গতকাল বৃহস্পতিবার ১১৯ বায়ুমান নিয়ে ৮ম স্থানে ছিল ঢাকা।
১৮ ঘণ্টা আগেঢাকার আকাশ আজ আংশিক মেঘলা থেকে অস্থায়ীভাবে মেঘলা থাকতে পারে বলে পূর্বাভাসে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় হালকা বৃষ্টি হতে পারে। আজ শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়া পূর্বাভাসে এ কথা বলা হয়েছে।
১৯ ঘণ্টা আগেবিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার তথ্যানুযায়ী, বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির তুলনায় এশিয়া দ্বিগুণ গতিতে উষ্ণ হয়ে উঠছে। সম্প্রতি জলবায়ু ঝুঁকি সূচক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত তিন দশকে বন্যা, তাপপ্রবাহ ও খরার মতো চরম আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে এশিয়া অঞ্চলের আর্থিক ক্ষতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলার...
২ দিন আগে